skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ফ্যাশন উইক ফল ২০২০

নিউইয়র্ক, লন্ডন ও মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত হলো ফল ফ্যাশন উইক। ভিন্নতা ও নতুনত্ব নিয়ে এবারও হাজির হয়েছেন ডিজাইনাররা। রানওয়েতে শোভা পেয়েছে উৎসববান্ধব আর গ্রীষ্মসম্মত কালেকশন

নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইককে বিশ্লেষণ করা যায় মাত্র দুটি শব্দে—ভিন্নতা ও নতুনত্ব। টানা ১০ দিন ধরে তরুণ মেধাবী ডিজাইনাররা দেখিয়েছেন চমক আর জ্যেষ্ঠরা ছিলেন স্বমহিমায় ভাস্বর। তবে এবার দেখা যায়নি টম ফোর্ড, রালফ লরেন, টমি হিলফিগার প্রমুখ ডিজাইনারকে। তাদের শূন্যতা কমবেশি সবাই অনুভব করেছেন।
মার্ক জ্যাকব
৫৫ জন নৃত্যশিল্পীর চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স দিয়ে শুরু হয় মার্ক জ্যাকবের শো। এরপর তার কালেকশন পরে রানওয়েতে হাঁটেন অন্তত ৮০ জন মডেল। ছিলেন মাইলি সাইরাসও। ওল্ড স্কুল টাইপ কালেকশনগুলোতে ছিল রঙের বাহার। সিম্পল এ লাইন কোট, মিনি শিফট ড্রেস যেমন ছিল তেমনি ছিল অড্রে হেপবার্ন, জ্যাকি ও কেনেডির মতো আমেরিকান ফ্যাশন আইকনদের প্রেরণায় তৈরি ড্রেসের বাহার।
মারিনা মসকোন
নট সো মিনিমালিস্টিক কালেকশনের শোভা নিয়ে উপস্থিত হন মারিনা। তার রেডি টু ওয়্যার পোশাকগুলো সান্ধ্য অনুষ্ঠানে অনায়াসে পরা যেতে পারে। কালো রঙের প্রাধান্য ছিল বেশি। আরও ছিল ব্রোকেড স্যুট, লেপার্ড প্রিন্ট লং কোট, অ্যানিমেল প্রিন্টেড ফ্রিঞ্জ গাউন।
মাইকেল করস
এবারের ফ্যাশন উইকে মাইকেল করসের ইকুয়েস্ট্রিয়ান ইমেজের আরামদায়ক পোশাকগুলো ছিল দেখার মতো। চেক প্রিন্টের ব্যবহার বেশি দেখা গেছে তার সংগ্রহে। কিছু জেন্ডার নিউট্রাল পোশাকও ছিল। নজর কেড়েছে বুটের ওপর সিকুইন গাউন ও প্লিটেড গাউন, নানা ডিজাইনের পাঞ্চো ও টারটল নেক বডিস্যুট।
রোডারটে
লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড রোডারটের শো নিয়ে আলোচনা থামছেই না। কেট এবং লরা মলেভি ভগিনিদ্বয়ের ডিজাইন করা পোশাকগুলো ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। সেসব ছিল গথিক, ডার্কার, পাঙ্ক এবং রেট্রো অনুপ্রাণিত। পাওয়ার স্লিভ, ফ্লোরাল প্রিন্ট, স্পাইডার ওয়েব প্রিন্ট ও সিকুইনড, ক্ল্যাসিক সিলুয়েট—কিছুই বাদ যায়নি। রেডি টু ওয়্যার হলে, কতুর ড্রেস থেকে কোনো অংশে কম যায় না এই সংগ্রহ। মডেলদের পরা ডার্ক শেড লিপস্টিক আর ফ্ল্যামিংগো ড্যান্সারদের ফ্লোরাল হেডপিসের কথা না বললেই নয়। আসছে বছর বিউটি ট্রেন্ডে এই দুটির থাকার সম্ভাবনা বেশি।
দ্য রো
মাত্র দশ বছর বয়স হয়েছে হলিউডের জনপ্রিয় যমজ ভগিনি মেরি কেট ও অ্যাশলে ওলসেনের ব্র্যান্ড। এরই মধ্যে বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই ফ্যাশন উইকে উপস্থাপিত হয়েছে তাদের ডিজাইন করা আরামদায়ক, ইউনিসেক্স, কুল রেডি টু ওয়্যার কালেকশনগুলো। সুইপিং স্যুট, ইজি ট্রাউজার, কাশ্মীর সোয়েটার, থ্রি পিস স্যুটগুলো একই সঙ্গে মিনিমাল ও লাক্সারির দারুণ মেলবন্ধন।
ট্রেন্ড ফ্রম রানওয়ে
দারুণ কিছু ট্রেন্ড আসছে রানওয়ে থেকে। যেমন আবার ফিরে আসছে কেপ। গাউন, স্কার্ট, শর্ট ড্রেস—সবকিছুর উপর এটি পরা যাবে। ডিজাইনে থাকবে ভিন্নতা। ব্লেজার ট্রেন্ডে ছিল। তবে সাধারণ স্টাইলের ব্লেজারকে হটিয়ে জায়গা করে নেবে কাট এবং ক্রপ। কুল ও ক্যাচি কাটের গাউন, বিশেষ করে কোমরের এক পাশে বা দুই পাশে চারকোনা বা গোলাকার কাট খুব চলবে। ৭০ এর ডিস্কো ভাইবের হেড টু টো স্পার্কল ড্রেস আর বোহিমিয়ান ধাঁচের পঞ্চো ফিরে আসবে। এক্সট্রা ভ্যাগান্ট স্কাল্পচার্ড অদ্ভুত ডিজাইনের ইভনিংওয়্যার দেখা যাবে। লেদার আর লিটল ব্ল্যাক ড্রেসের এভারগ্রিন স্টাইলে নতুন সংযোজন ‘লেদার লিটল ব্ল্যাক ড্রেস’। স্ট্রিট স্টাইল ও রানওয়েতে ফ্লোরাল প্রিন্টের আধিপত্য ছিল বেশ। রঙের দিক দিয়ে এগিয়ে অরেঞ্জ ও চকলেট।
লন্ডন ফ্যাশন উইক ২০২০
ব্রেক্সিট উত্তর লন্ডনে প্রথম ফ্যাশন উইক। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। ৫ দিনের এই আয়োজনে শো করা হয় নামী ডিজাইনারদের কালেকশন। প্রতিবারের মতোই লন্ডনের ফ্যাশন উইক ছিল প্রেপি, পাঙ্ক এবং রয়্যালি রোমান্টিক। তারকায় ভরপুর শোগুলোতে ডিজাইনাররা নিজেদের সেরাটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বারবেরি
লন্ডনে অবস্থিত সার্টিফাইড সাসটেইনেবল হল অলিম্পিয়াতে উপস্থাপিত হলো বারবেরির নতুন সংগ্রহগুলো। ডিজাইনার রিকারডো টিসি তার পোশাকগুলোর মধ্য দিয়ে ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি গ্লোবাল ইনফ্লুয়েন্স সম্পর্কে নিজের আইডিয়া তুলে ধরেছেন। সফিসটিকেটেড টেইলরিং ও উদ্ভাবনী ডিটেইলে সমৃদ্ধ কালেকশনগুলো ছিল এককথায় অসাধারণ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ল্যাসিক প্লেইড লেয়ারিং স্যুট, ট্রেঞ্চ, ক্রিস্টাল ফ্রিঞ্জ গাউন, ছেলেদের হিপ নটেড শার্ট।
ভিক্টোরিয়া বেকহাম
তার এবারের কালেকশনগুলো ছিল অত্যন্ত শিক। নানা রকমের লিটল ব্ল্যাক ড্রেসের সম্ভার ছিল এই কালেকশনে। কালো রঙের সঙ্গে মুগ্ধ করেছে কর্ন ফ্লাওয়ার ব্লু ও এগ ইয়ক ইয়েলো সোয়েটার। সাধারণ পোশাকে আভিজাত্য আনতে একটা হালকা ডিজাইনের বেল্টই যথেষ্ট—তা আবার প্রমাণ করলেন ভিক্টোরিয়া। ব্লাউজ এবং গাউনের বেল স্লিভগুলো ছিল বেশ আকর্ষণীয়।
রিচার্ড কুইন
নবীন ডিজাইনার রিচার্ড কুইনের শো দেখলে কে বলবে যে ব্র্যান্ডটির বয়স মাত্র তিন বছর! অথচ পরিপক্ব কালেকশন আর ‘লেগারফেল্ড স্টাইলড’ শো সবাইকে করেছে মন্ত্রমুগ্ধ। কুইন এবার তার শো দিয়ে তৈরি করেছেন একটি ফ্যাশন ফ্যান্টাসি থিয়েটার। একে বলা যেতে পারে ওয়ার্কিং ক্লাস কতুর। কুইনের সিগনেচার স্টকিং মাস্কের পাশাপাশি ছিল একটু ডার্ক ও লাইট স্টাইলের ফ্লোরাল গাউন, ছেলেদের জন্য স্কিনি বেল বটম প্যান্টের সঙ্গে ফ্লোরাল টপস। চোখধাঁধানো বিডেড ড্রেস ও স্যুটে পিনস্ট্রাইপ ও ডগসটুথ টুইড তৈরি করতে কুইন ব্যবহার করেছেন মিলিয়নের উপর সিলভার ও ব্ল্যাক বিড।
ক্রিস্টোফার কেইন
ত্রিকোণাকার প্যাচওয়ার্কের ড্রেস, স্কার্ট আর কোটের সমাহার ছিল ক্রিস্টোফার কেইনের কালেকশনে। তার মতে ত্রিকোণাকৃতি প্রকৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতীক, যা নারী-পুরুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ককে নির্দেশ করে। এই কালেকশনে ছিল ডাবল ব্রেস্টেড ট্রাউজার স্যুট, কোট এবং লেস ব্র্যালেট ড্রেস।
ট্রেন্ড ফ্রম রানওয়ে
ভলিউম গাউন ও স্লিভ সঙ্গে শার্প টেইলরিং স্যুট বেশ দেখা গেছে এবারের লন্ডন ফ্যাশন উইকের রানওয়েতে। এ ছাড়া আগামী শীতে উষ্ণতা দিতে ধারায় আসছে বিচিত্র ডিজাইনের নিটওয়্যার। ফ্লোরাল প্রিন্ট তো থাকছে, সঙ্গে দেখা যাবে নানা ধরনের গ্রাফিক প্রিন্ট। ট্রেন্ডে আরও আসছে শাইনি আউটফিট।
ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২০
মুম্বাইয়ের বান্দ্রার জিও গার্ডেনে ১২ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল উপমহাদেশের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ফ্যাশন ইভেন্ট ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার/রিসোর্ট ২০২০। এই আয়োজনে ডিজাইনাররা পরিবেশন করেছেন গ্রীষ্মসম্মত আরামদায়ক ও উৎসবের পোশাক। প্রবীণ ডিজাইনারদের পাশাপাশি পোশাক প্রদর্শন করেন তরুণ মেধাবী ডিজাইনাররা। আর মডেলদের সঙ্গে র‌্যাম্পের মঞ্চ আলোকিত করেন বলিউড তারকারা।
পাঁচ দিনব্যাপী চলা এই ফ্যাশন মহাযজ্ঞে প্রথম দুদিনের দিকে বিশেষ নজর থাকে ফ্যাশন-সংশ্লিষ্টদের। কারণ, এই সময়ে প্রদর্শিত হয় আইএনআইএফডির সারা দেশ থেকে বাছাই করা চারজন মেধাবী ডিজাইনারের পোশাক এবং সাসটেইনেবল কালেকশন। এবারের জেন নেক্সট আয়োজনে মঞ্চে অভিষেক হলো অখিল নাগপাল, অনন্যা মোদী জৈন, চন্দ্রিমা অগ্নিহোত্রী, মন্নর শেঠী-হরনা কান্দারি। নবীন ডিজাইনারদের পোশাকের থিম সিলেকশনে ছিল অভিনবত্ব। কারও অনুপ্রেরণা ছিল ভারতের মিষ্টির রঙ ও টেকশ্চার, কেউ বেছে নিয়েছে কোনো একটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব সূচিকর্ম। কারও পোশাকে শোভা পেয়েছে বোল্ড স্লোগান।
আর আইএনআইএফডি লঞ্চপ্যাড আয়োজিত শোতে বাংলাদেশে ডিজাইনার সাদিয়া রেজওয়ানার পোশাক প্রদর্শিত হয়। তার সংগ্রহের নাম ‘রিকশা রংবাহারি’। বলাকা সিল্ক নামের নতুন ধরনের কাপড়ে ওপর রিকশাচিত্র বেশ প্রশংসিত হয়েছে। রিকশাশিল্পীরাই পোশাকের ওপর রঙতুলির আঁচড় টেনেছেন।
দ্বিতীয় দিনের সাসটেইনেবল ফ্যাশন ডেতে ছিল প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকলা ও কাপড়ের বাহার। সার্কুলার ডিজাইন চ্যালেঞ্জ ২০২০, ভেগান ফ্যাশন ক্যাম্পেইন ইত্যাদি আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রদর্শিত হয় ডিজাইনারদের পরিবেশবান্ধব কালেকশন। এই দিন সৌনক-অনুর ‘কুমারী কন্ডাম’ সংগ্রহে ছিল তামিলনাড়ুর কাঞ্জিভরম ও বাংলার তাঁত মসলিন ও জামদানি মিলিয়ে তৈরি নতুন শিল্পকলা। রিতু কুমার কোলাবরেশন করেন টেক্সটাইল ডেভেলপার লার্নিং ইকোভেরার সঙ্গে। তার সংগ্রহের মডার্ন কাট মেক্সি ড্রেস, কাফতান, ট্রাউজার, কোটগুলো বানানো হয়েছে হাই কোয়ালিটি ভিসকস কাপড়ের উপর এথনিক প্রিন্ট ব্যবহার করে।
অন্য দিনগুলোতে মঞ্চ উজ্জ্বল করে ভারী কাজের উৎসবপোশাক। পাশাপাশি দেখা গেছে অনেক পাশ্চাত্য প্রাণিত সংগ্রহের উপস্থিতি। প্রতিবারের মতোই শেষ রাতে শো স্টপার ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর খান।

 ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top