skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ফ্যাশন উইক পরিক্রমা

ফ্যাশন উইক পরিক্রমাশীত পেরিয়ে আগমন ঘটেছে বসন্তের। প্রকৃতিতে এসেছে রঙের আভাস। এখন থেকেই ফ্যাশনবিশ্বে তোড়জোড় চলছে গ্রীষ্ম আগমনের। বরাবরের মতো এবারও বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও ডিজাইনাররা কাজ করছেন চলতি বছরের সামার কালেকশন নিয়ে। এই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার রিসোর্ট ২০১৯ এবং নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক ২০১৯। ফ্যাশন উইক তিনটির আদ্যোপান্ত থাকছে এবারের আয়োজনে। লিখেছেন সাকিব শাহমাত

ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার রিসোর্ট ২০১৯

কয়েক বছর ধরে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ফ্যাশন বিশ্বে অনেক এগিয়ে রয়েছে। গেল বছর অনুষ্ঠিত হওয়া ইন্ডিয়া ফ্যাশন উইকের মাধ্যমেও দেশটির ফ্যাশন-বৈচিত্র্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এবারের ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার রিসোর্ট ২০১৯ ও তার ব্যতিক্রম নয়। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুম্বাইয়ের জিও গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হওয়া ৫ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন স্বনামধন্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। উন্মোচন করেছেন তাঁদের নতুন বছরের সামার কালেকশন নিয়ে ভাবনা। আলোচিত অনুষ্ঠানটিতে আরও অংশগ্রহণ ছিল বিভিন্ন ব্র্যান্ড, বলিউড সেলিব্রিটি এবং ফ্যাশন রিটেইলারদের।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ওপেনিং নাইটে দর্শকের জন্যও মূল প্রদর্শনীর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেন ডিজাইনার গৌরব গুপ্তা। রয়েল ওয়েডিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত এই ডিজাইনারের পছন্দ চিকঞ্জরি, জারদৌসি এবং ব্রোকেডে টেক্সটাইল ধরনের ফেব্রিক। তাই, এবারের আসরের প্রথম প্রহরে তিনি হাজির হলেন জমকালো সব পোশাক নিয়ে। সঙ্গে ছিল থিয়েটার প্যাটার্নের প্রদর্শনী এবং ভিজ্যুয়াল প্রোজেকশন। একটি ২০ ফুট উচ্চতার ওয়েডিং গাউনে মুম্বাইয়ের রয়েল অপেরা হাউজে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে হাজির হন ডিজাইনারের খুব কাছের বন্ধু নাভকিরাত সোধি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বলিউড তারকা টাবু। জমকালো এই প্রদর্শনীর শো স্টপার ছিলেন বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক করণ জোহর। তাঁর পরনে ছিল একটি ফ্ল্যাম্বয়েন্ট রেড ভেলভেট জ্যাকেট।
প্রদর্শনীর এবারের আসরের দ্বিতীয় দিনের মূল থিম ছিল টেকসই এবং নির্মল পরিবেশ। এই থিম নিয়ে একদিকে যেমন কাজ করেছেন ভারতের বিখ্যাত সব ফ্যাশন ডিজাইনার, তেমনি ছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীণ শিল্পীরা।
গ্রামীণ হস্তশিল্পের সঙ্গে আধুনিক ফ্যাশনের ফিউশন নিয়ে হাজির হয়েছিল ফ্যাশন ব্র্যান্ড আনাম। ভারতের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিল্পীদের ডিজাইন করা এসব পোশাকের মধ্যে অন্যতম ছিল উজ্জ্বল সবুজ, রয়েল পার্পল, ইলেকট্রিক ব্লু ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের কুর্তা ও সালোয়ার। আনামের শো স্টপার হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত হেয়ারস্টাইলিস্ট স্বপ্না ভাবনানি। তাঁর পরনে ছিল ট্রায়ো এসেম্বেলড প্যান্ট, শার্ট এবং ক্রপ টপ।
গ্রামীণ ধাঁচের পোশাক নিয়ে প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে আরও হাজির হন জ্যোতি রেড্ডি, রোজবেল ও উশা দেবীর মতো খ্যাতনামা ডিজাইনাররা। তাঁদের মধ্যে জ্যোতি রেড্ডির ডিজাইন করা ‘ইরিনা’ সিরিজটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সিরিজটির শো স্টপার ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী মালিভকা মোহানন।
এ ছাড়া প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন সবচেয়ে আকর্ষণীয় কালেকশন নিয়ে উপস্থিত হন ডিজাইনার জুটি সুকৃতি ও আকৃতি গ্রোভার। তাঁদের ডিজাইন করা ‘রাস্টিক বোটওনিয়ের’-এ ছিল ডিজাইনার ইন্ডিয়ান লেহেঙ্গা ও কনটেম্পরারি ফ্যাশনের মিশ্রণ। শো স্টপার হিসেবে র‌্যাম্পে ছিলেন বর্তমান সময়ের বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কৃতি খারবান্দা।
ল্যাকমের সামার রিসোর্ট প্রদর্শনীর বাকি দিনগুলোতে নিজেদের ডিজাইন ও কালেকশনের জন্যও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন নরেন্দ্র কুমার ও পার্বতী দাসারির মতো ডিজাইনাররা। নরেন্দ্র কুমারের অ্যাথলেইজার ধাঁচের ট্র্যাকসুট ও হুডি সবার নজর কেড়েছে। পার্বতী দাসারি প্রশংসিত হয়েছেন নিজের ন্যাচার ইন্সপায়ার্ড সিরিজ ‘দ্য ট্রপিক্যাল প্যারাডাইস’-এর জন্য।
তবে সবাইকে ছাপিয়ে এবারের ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার রিসোর্ট ২০১৯-এ আলোচনার শীর্ষে ছিলেন ডিজাইনার জুটি শান্তনু ও নিখিল। অনুষ্ঠানের শেষ দিনে তাঁদের প্রদর্শিত বোল্ড কালেকশন ‘ম্যাট রিইনভেন্ট’ সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছে। যা অনেকের কাছে তাঁদেরকে আসরের সেরা ডিজাইনার করে তুলেছে।
চলতি বছরের আগস্টে জিও গার্ডেনেই বছরের দ্বিতীয়াংশের কালেকশন নিয়ে হাজির হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পর্দা নামে ল্যাকমে ফ্যাশন উইক সামার রিসোর্ট ২০১৯-এর এই আসরের।

নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক
ফ্যাশন বিশ্বের প্রধান চারটি ফ্যাশন ক্যাপিটালের মধ্যে অন্যতম নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ডিজাইনারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল পরিলক্ষিত হয় এই ফ্যাশন উইকটিতে। অন্য সব ফ্যাশন উইকের তুলনায় নিউইয়র্ক সব সময়ই উপহার দেয় ভিন্নতা ও নতুনত্ব। এবারও হয়নি তার ব্যতিক্রম। ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এবারের নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক ফল উইন্টার ২০১৯ চলে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক সাধারণত মেনজ এবং ওমেন্স দুটি ভাগে বিভক্ত থাকলেও এবারই প্রথম তা একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এটিই ছিল ফ্যাশন উইকটির এবারের আসরের সবচেয়ে বড় চমক।
নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে এবার স্ট্রিট ওয়্যারের ব্যাপক প্রাধান্য লক্ষ করা যায়, বিভিন্ন বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে নতুন ডিজাইনারদের উদ্বোধন করা ব্র্যান্ড- সবখানেই রয়েছে স্ট্রিট ওয়্যারের ছোঁয়া। কেলভিন ক্লেইন, দ্য রো, লংচ্যাম্প, হেলমুট ল্যাঙ, প্রোয়েঞ্জা স্কলার- সবার প্রদর্শনীতেই খুব সুন্দর করে ফুটে উঠেছে নতুন সব স্ট্রিট ওয়্যার কালেকশন।
২০১৮-এর মতো এবারও নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে প্রশংসিত হয়েছে মিডিওকার ব্র্যান্ড ক্যাসেল। ২০১৮ তে যেমন ক্যাসেলের ডিজাইন করা ওভারকোট ফুটে উঠেছে, তেমনি এবারও আলোচনায় ছিল ট্র্যাডিশনাল ফিশারম্যান জ্যাকেট, লেদার হুডি, রোপ বেল্ট ইত্যাদি।
কোটের ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল ফ্যাশন হাউজ জাজি ভিন্টেজ। ২৪ বছর বয়সী ডিজাইনার জিন জিজি মার্গট ডি ক্রুন বলা যায় একাই সামলে রেখেছেন ব্র্যান্ডটি। তাঁর ডিজাইন করা সাইকেডেলিক সুজানি কোটটি যে কাউকে মুগ্ধ করার মতো। এর সঙ্গে আরও ছিল সুজানি এমব্রয়ডেড শার্লিং কোট এবং ট্রান্সপারেন্ট এমব্রয়ডারি কোট।
কোট নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় আরও দুটি নাম ছিল একদম প্রথম দিকে। কমন লেইসার ও ওচি। কমন লেইসারের ছিল হোয়াইট বেল্ট শিপ্সকিন লাভ কোট, ফার কোট ইত্যাদি। অন্যদিকে ইউক্রেনিয়ান ডিজাইনার ইয়ানা কুজনেতসোভার ব্র্যান্ড ওচি নিয়ে এসেছে মাস্টার্ড হিউ সফট লেদার ট্রেঞ্চ কোট ও টোনাল ড্রেস নিয়ে।
উৎসবের শেষ দিনে ছিল শর্ট জ্যাকেটের আধিপত্য। স্ট্রিট স্টাইলের অন্যতম অনুষঙ্গ লেদার জ্যাকেটের বাহারি ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রদর্শনীতে। নতুন ডিজাইনারদের অনেকের কালেকশনেই লক্ষ করা যায় মিড সামার আউটফিটের সঙ্গে শর্টকাটের লেদার জ্যাকেটের ফিউশন।
পোশাকের পাশাপাশি জুতার ক্ষেত্রেও গতবারের ফ্যাশন উইকগুলোর থেকেও অনেকখানি এগিয়ে ছিল নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক। নানুশকার পাইপ মিউল উডেন হিল, ডিওন লি এর আলট্রা স্ট্রাপি ফ্ল্যাট স্যান্ডেল, জিমারম্যান এর ফ্লোরাল বুট- এ সবকিছুই এবারের আসরে বহুল প্রশংসিত হয়েছে।
তবে, সবকিছুকে ছাপিয়ে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইক ঘিরেই রয়েছে আনন্দের ও গৌরবের এক সংবাদ। এই প্রথম নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের র‌্যাম্প মডেল হয়েছেন কোনো বাংলাদেশি। তিনি মডেল ও অভিনেত্রী মোজেজা আশরাফ মোনালিসা। র‌্যাম্পে তিনি হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান সপ্তপর্ণার হয়ে। এ সময় তাঁর পরনে ছিল সম্পূর্ণ বাঙালি পোশাক। হলুদ শাড়ি ও সবুজ ব্লাউজ, হাতের চুড়ি ও কানের দুলে তাঁকে একদম পরিপাটিভাবে মানিয়ে গিয়েছিল। মোনালিসা ছাড়াও সপ্তপর্ণার হয়ে আরও ১২ জন বিদেশি মডেল হাজির হন রানওয়েতে।
সর্বোপরি এই ছিল ২০১৯-এর প্রথম দিককার উল্লেখযোগ্য দুটি ফ্যাশন প্রদর্শনীর সমীকরণ।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top