skip to Main Content
fashion-tube-into

কাভারস্টোরি I ফ্যাশন টিউব

ইউটিউবের জনপ্রিয়তা ফ্যাশনের জগতে বাড়ছে প্রতিদিন। বিশ্বজুড়ে। দেখা দিচ্ছেন নতুন নতুন ডিজাইনার, ফ্যাশন ব্লগার এবং টিউটর

উৎসব, অনুষ্ঠান, পার্টি কিংবা প্রতিদিনের পোশাক নিয়ে অনেকেই থাকেন দ্বিধায়। কোন পোশাকটি মানানসই আর সময় উপযোগী- এ নিয়ে ফ্যাশন-সচেতন বন্ধুদের পরামর্শের অপেক্ষায় থাকতে হয় অনেক সময়। এমনকি নতুন পোশাক কেনার সময়ও দ্বিধায় থাকেন অনেকে। কিন্তু এখন পকেটে থাকা গ্যাজেটই দিতে পারে এর সমাধান, যা নিয়ে যাবে ইউটিউবের ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়। ইউটিউবের ফ্যাশন ব্লগাররা প্রতিমুহূর্তে হাজির হচ্ছেন নতুন সব ফ্যাশন ভিডিও নিয়ে। ডিজিটাল রিসার্চ সেন্টার এল টুর জরিপে বলা হয়, প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার ঘণ্টার ভিডিও আপলোড করা হয় এখানে। এর মধ্যে দুই হাজার ঘণ্টার ভিডিও ফ্যাশন বিষয়ে। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। কেননা ব্লগাররা ফ্যাশনের প্রতিটি বিষয় তুলে ধরেন ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। প্রতিদিনের স্টাইল স্টেটমেন্টে যে সাধারণ ভুলগুলো আয়নায় ধরা পড়ে না, তা দেখিয়ে দেন অনেক ইউটিউবার। বুঝিয়ে দেন অফিস পার্টি, বিজনেস মিটিং বা প্রেজেন্টেশনে কোন ধরনের জামা, জুতা, টাই পরা উচিত। আবার ঘরোয়া অনুষ্ঠান বা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় কোন পোশাকটি মানানসই, তা-ও তুলে ধরা হয়। সঙ্গে বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে থাকে ট্রেন্ডি এবং বাজারে আসা নতুন পোশাকের রিভিউ। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, পণ্যের আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনের জন্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো এখন টেলিভিশনের চেয়ে ইউটিউবকে বেশি প্রাধান্য দেয়। অন্য একটি জরিপে বলা হয়, আমেরিকার ফ্যাশন বাজারে পণ্যের বিজ্ঞাপনে এনবিএ কিংবা হলিউড তারকাদের পরই ফ্যাশন ব্লগারদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী সুজান ওজসিসকি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ১৮০ কোটি মানুষ এখানে ভিডিও দেখেন। এর মাঝে স্মার্ট টিভিতে প্রতিদিন ইউটিউব দেখা হয় ১৫ কোটি ঘণ্টা। গেল বছর ১৫০ কোটি ব্যবহারকারী লগইন করে ইউটিউব ব্যবহার করেছেন। এই সংখ্যা এক বছরের মধ্যে বেড়েছে ৩০ কোটি। ফরচুন লর্ড নামের একটি ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্যে, প্রতিদিন এ সাইটে প্রায় ৫০০ কোটি ভিডিও দেখা হয়, যার ১৫ শতাংশ ফ্যাশন নিয়ে। এই ইউটিউব দর্শকদের ৮০ শতাংশই আমেরিকার বাইরের। এদের ৬২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮ শতাংশ নারী।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৮ লাখ। আর আন্তর্জাতিক সংস্থা জিএসএমএর তথ্য অনুযায়ী এ দেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৩ কোটি ৫০ লাখ। যার ৮০ শতাংশই দীর্ঘ সময় ফেসবুক ও ইউটিউব ব্রাউজ করে। আর গত কয়েক বছরে ইউটিউবে নিজের চ্যানেল খুলে ইউটিউবার বনে গেছেন অনেকেই। দ্রুত জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশি ইউটিউবারদের তালিকায় মিউজিশিয়ান, বিউটিশিয়ান, কমেডিয়ান, হোমকুক, এন্টারটেইনার, পারফরমার, মোটিভেশনাল স্পিকারের সংখ্যাই বেশি। লক্ষণীয়, শুধু ফ্যাশন নিয়ে কাজ করেন এমন কোনো ইউটিউবার নেই এই তালিকায়। কখনো কখনো দু-একজন ডিজাইনার ফ্যাশন বিষয়ে টুকিটাকি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তা-ও আবার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে নয়। নিজের অথবা প্রতিষ্ঠিত কোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ডের চ্যানেলেই আপলোড হয় ভিডিওগুলো। উৎসবকেন্দ্রিক ভিডিওগুলোতেও দর্শকদের খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে শুধু জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্লগারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। যাদের একেকজনের চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার লাখের বেশি। ফরচুন লর্ড ও এল টুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে প্রতি মাসে ৩০০ কোটি ঘণ্টা ইউটিউব ভিডিও দেখে থাকেন ব্যবহারকারীরা। স্মার্টফোন থেকে প্রতিদিন তা দেখেন গড়ে ১০০ কোটি গ্রাহক। ফ্যাশন ভিডিওগুলোর প্রতি ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষ বেশি আগ্রহী বলে জানায় প্রতিষ্ঠান দুটি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ১৮-২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ১১ শতাংশ, ২৫-৩৪ বছরের মধ্যে ২৩ শতাংশ, ৩৫-৪৪ বছরের মধ্যে ২৬ শতাংশ, ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে ১৬ শতাংশ।
ফিনল্যান্ডের আল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন ইউটিউবে সবচেয়ে জনপ্রিয় কনটেন্টের মধ্যে রয়েছে মিউজিক ভিডিও। গবেষকেরা এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন ব্যবহারকারীদের ভিডিও দেখা এবং শেয়ারিংয়ের ওপর পর্যালোচনা করে। গানের লিরিক্যাল গ্রাফিকসসহ ভিডিও ও মিউজিক ভিডিও ইউটিউবের সবচেয়ে জনপ্রিয় কনটেন্ট। গবেষক দলের একজন জানান, তিন ধরনের মিউজিক ভিডিও ইউটিউবে বেশি খোঁজা হয়। যার প্রথমেই রয়েছে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় গান। এরপর ব্যবহারকারীরা বেশি খোঁজেন তাদের পছন্দের গান, যে গানগুলো ব্যক্তিগত অনুভূতিকে নাড়া দেয়। সবশেষে আছে হঠাৎ পেয়ে যাওয়া মিউজিক ভিডিও।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, শুধু গান শোনার জন্যও ব্যবহারকারীরা ইউটিউব ব্যবহার করেন। কারণ, গানের ক্ষেত্রে ইউটিউবের ভান্ডার বেশ সমৃদ্ধ। এর কারণ শিল্পীদের পাশাপাশি ব্যবহারকারীরাও জনপ্রিয় গানগুলোর ভিডিও আপলোড করেন। কখনো কখনো লাইভ পারফরম্যান্সের ভিডিও দেওয়া থাকে। একটি গানের অনেক সংস্করণ পাওয়া যায় বলেই ইউটিউব এত জনপ্রিয়।
এগুলো ছাড়াও ইউটিউব লাইভ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান এখন এই লাইভে উপভোগ করা যায়। এ ছাড়া তরুণেরা বিশেষ করে যারা খেলা দেখতে পছন্দ করেন, তাদের কাছে ইউটিউব লাইভের জনপ্রিয়তা বেশি। পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতেও অনেকে ইউটিউবের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। কারণ, এতে প্রায় সব ধরনের টিউটোরিয়ালের ভিডিও পাওয়া যায়। সম্প্রতি প্রায় ৫০ জন তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক কোনো সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে ইউটিউবের ওপর আস্থা রাখেন তারা।
ইউটিউবের নিজস্ব ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতিবছর ৬৩৫ কোটি ডলারের বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়। ইউটিউব থেকে বছরে গুগলের আয় হয় ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। এই আয়ের পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে।

 জাহিদুল হক পাভেল
মডেল: রাবা খান
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: জড়োয়া হাউজ
ওয়্যারড্রোব: সিকোসো
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top