skip to Main Content

কুন্তলকাহন I ব্যায়ামপর্বের চুল

চুলের প্রস্তুতি চাই ব্যায়ামের আগে। পরে এর পরিচর্যা। হেয়ারস্টাইলের ব্যাপারও তো আছে

শরীর ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষমাত্রই কমবেশি ব্যায়াম করে থাকেন। এতে শরীর তো বটেই, মনও ভালো থাকে। কিন্তু ব্যায়ামের মতো পরিশ্রমে যখন ঘেমে-নেয়ে চুল ভিজে যায় এবং ড্যামেজের শিকার হয়, তখন? প্রতিটি ওয়ার্কআউট শেষে সবার মনে এই প্রশ্ন আসে। ঘামে ভেজা চুল কারোরই পছন্দ নয়, আবার তা ধুয়ে নেওয়াও সব সময় ভালো সমাধান নয়। আবার ঘামভীতি রয়েছে অনেকের। কেননা এতে চুলের গোড়ার দিকে জট তৈরি হয় এবং হেয়ারস্টাইলও এলোমেলো হয়ে যায়। তাই বলে শঙ্কিত হয়ে ব্যায়াম ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। ব্যায়ামের পর কীভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে, তা জানতে ভালো কোনো হেয়ারস্টাইলিস্টের পরামর্শ নিন।
এ ক্ষেত্রে চুল কতটুকু ভিজেছে, তা দেখা দরকার। শুধু হেয়ারলাইন ভিজে গেলে চুল ধোয়া এড়িয়ে যেতে পারেন। পরিবর্তে হালকাভাবে চুলের স্টাইল করে নিন। এতে এটি সহজেই একটি পোস্ট-ওয়ার্কআউট স্টাইলে রূপান্তরিত হবে। সোজা চুল সাধারণ বিনুনিতে বেঁধে নেওয়াই ভালো। এর উপকারিতা পাবেন, যখন বিনুনি খুলে দেবেন। এই আইডিয়া কার্লি বা টেক্সচার হেয়ারেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। চুল যদি মিডিয়াম লেভেলে ভিজে থাকে, তবে একটি সাইড বেণি করে বা পেঁচিয়ে চুল বেঁধে নেওয়া যায়। অনেকে সব ধরনের পনিটেইলে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ব্যায়ামের সময় চুল বেশি ভিজে গেলে কার্লি হেয়ারে ব্যবহার করুন সোয়েট ব্যান্ড বা হেয়ার র‌্যাপ। এ ক্ষেত্রে জিম র‌্যাপ বা সোয়েট-উইকিং হেডব্যান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। হেয়ারব্যান্ড বা র‌্যাপটি চুল শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রাখুন। দ্রুত শুকাতে চাইলে ব্লো ড্রায়ারের সাহায্য নিতে পারেন।
অনেকেই ঘামে ভেজা চুল ঝরঝরে করে তুলতে প্রতিবার ব্যায়ামের পর চুল শ্যাম্পু করে নেন। এটি চুলের পক্ষে মোটেও ভালো নয়। যদি প্রতিদিন হেভি কার্ডিও করে থাকেন, তবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার চুল ধুয়ে নিতে হবে। মাথার ত্বক ভালো করে ধুয়ে নিন, যাতে শ্যাম্পু পরিষ্কার হয়ে যায়। আর যদি কার্লি বা টেক্সচারড হেয়ার হয়, তবে মাঝে মাঝে শুধু কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নেবেন। বেশির ভাগ হেয়ারস্টাইলিস্ট এখন প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্নের পরামর্শ দেন এবং যত ঘাম হোক না কেন, শ্যাম্পু ছাড়া চুল ধুয়ে ফেলতে বলেন। কেননা শ্যাম্পু চুলকে শুষ্ক তো করেই, ফ্লাফিও করে তোলে।
অতিরিক্ত ঘামে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর আয়ু কমে যায়। এ কারণে চুলে ময়শ্চার লক করাটা বেশ জরুরি। ব্যবহার করতে পারেন লিভ-ইন কন্ডিশনার। এতে হেয়ারস্টাইলের জন্য চুল প্রস্তুত হবে এবং এর ভেতরে ময়শ্চারকে লক করে নিতে এটি বেশ কার্যকর। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করে চুলকে শুষ্ক, রুক্ষ করে ফেলা থেকে বিরত থাকুন এবং চুল হাইড্রেট করতে ব্যবহার করুন ময়শ্চারাইজিং প্রডাক্ট।
অনেকেই ঘামে ভেজা চুলে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও ঠিক নয়। ড্রাই শ্যাম্পু তৈরি হয় শুকনো চুলে কাজ করার জন্য। যদি এটি ভেজা চুলে ব্যবহার করা হয়, তবে পাউডার ও পানির মিশ্রণের ফলাফল হিসেবে থাকবে ফেটে যাওয়া চুলের অবশিষ্টাংশ। তাই ওয়ার্কআউটের আগেই ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। আগে থেকে ড্রাই শ্যাম্পু দিয়ে চুল প্রস্তুত করে নিলে হেয়ারলাইন যেকোনো লেভেলের ঘাম শোষণ করে নিতে সাহায্য করতে পারে।
ঘাম হচ্ছে একটি ন্যাচারাল সল্ট স্প্রে। ঘাম ও তেল দুটি একেবারে আলাদা জিনিস। ঘাম আসলে লবণাক্ত পানি, তাই ওয়ার্কআউটের সময় সার্ফ স্প্রে মুক্ত থাকুন।
ব্যায়ামে যাওয়ার সময় অবশ্যই চুল প্রস্তুত করে নেবেন। বেঁধে নেওয়ার আগে পছন্দের ট্রিটমেন্ট মাস্ক গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। তারপর চুল পেছনের দিকে টেনে নিয়ে একটি পনিটেইল, বান বা বেণি করে ফেলুন। ওয়ার্কআউটের সময় যে অতিরিক্ত তাপ উৎপাদিত হয়, সেটি মাস্ককে চুলের আরও গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি চুলকে আরও সুন্দর ও ব্যায়ামের সময় ঠিকঠাকভাবে পেছনের দিকে রাখতে সাহায্য করবে। পোস্ট-ওয়ার্কআউট ট্রিটমেন্ট হিসেবে চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিন, ধুয়ে নিন বা এয়ার ড্রায়ারে শুকিয়ে নেওয়ার যেকোনোটি করুন। অথবা চুল পেছনের দিকে পরিপাটি করে টেনে নিয়ে পনিটেইল করে ফেলুন, যতক্ষণ না গোসল করে নিচ্ছেন।
ধুয়ে নেওয়ার পর খুব ভালো করে চুল মুছে নেওয়াটা জরুরি। পছন্দের প্রাকৃতিক ব্র্যান্ড ব্যবহার করুন। স্ট্রেইট চুলে সি সল্ট স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে আর কার্লি বা ওয়েভি হেয়ার হলে কার্লি পোশন।
যদি ব্যায়ামের আগে চুল ভালো অবস্থায় থাকে, তবে একে ঘামে ভেজা থেকে রক্ষার উপায় আছে। উপরের দিকের অর্ধেকটা চুল আলতো করে মাথার ক্রাউন পোরশনে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিন। এবার বাকি অংশ নিয়ে নরম চুলের একটি বাঁধুনি দিয়ে লুজ পনিটেইল বেঁধে ফেলুন। মূল কথা হলো, চুল লুজ বা আলতো করে বেঁধে নিতে হবে, শক্ত বা টাইট করে নয়।
ঘামে ভিজে দুর্বল হয়ে যাওয়া চুল হেলদি করে তুলতে নিয়মিত ডিপ কন্ডিশনিং জরুরি। মাখতে হবে তেল। এতেও চুল মজবুত হয়। হারবাল উপাদানে তৈরি তেল সবচেয়ে কার্যকর। কারণ, এর প্রাকৃতিক উপাদান প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। ফলে আলাদা করে কেমিক্যাল প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করতে হয় না। এমন হারবাল অয়েল বেছে নেওয়া প্রয়োজন, যাতে হার্বগুলো দৃশ্যমান থাকে। এতে সুবিধা হচ্ছে, হার্বগুলোর নির্যাস তেলের সঙ্গে মিশতে থাকে। এতে ব্যবহৃত হার্বের কার্যকারিতা বাড়ে প্রতিদিন। ব্যবহারের আগে তেল ঝাঁকিয়ে নিতে হবে, তারপর ম্যাসাজ করতে হবে স্ক্যাল্পে। ভিটামিন ই যুক্ত তেলও চুলের যত্নে দারুণ উপকারী। এটা চুলকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। চুল পড়া কমায়। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। স্টিমের মাধ্যমেও ডিপ কন্ডিশনিংয়ের চেষ্টা করুন, এটি চুলের তন্তুতে ভালোভাবে ময়শ্চার লক করতে সাহায্য করবে।
ব্যায়ামের সময় চুলের বান বা হেয়ারস্টাইল কেমন হওয়া উচিত, তা রেড কার্পেট সেলিব্রিটিদের কাছ থেকেও শিখে নেওয়া যেতে পারে। দেখা যায়, বেণি থেকে শুরু করে মারমেইড ওয়েভ কিংবা কোনো কঠিন ধরনের হেয়ারস্টাইল তারকারা অনায়াসেই বিকেল থেকে রাত অবধি তা ঠিকঠাক রেখে ম্যানেজ করে চলেছেন। এদের মধ্যে অনেকের হেয়ারস্টাইল জিমের জন্যও প্রেরণাদায়ক। যদি গতানুগতিক পনিটেইলে বোর হয়ে থাকেন, তবে এখানে রয়েছে অসংখ্য অপশন, যা একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেবে। যেমন রেড কার্পেটে উপস্থিত জোয়ান স্মলসের লো পনিটেইল। সব সময় যেভাবে পনিটেইল করা হয় ব্যাক কম্ব করে, তার থেকে এটি একটু ব্যতিক্রম। মাঝে সিঁথি করে তিনি চুল উল্টে আঁচড়ে নিয়েছিলেন।
কেন্ডেল জেনারের লুক দেখে মনে হতেই পারে যে তিনি মাত্র শাওয়ার ছেড়ে বেরিয়েছেন। শুরু করতে হবে পরিষ্কার স্যাঁতসেঁতে চুল দিয়ে, তবে তা যেন খুব ভেজা না হয়। এবার বেশ খানিকটা সিরাম এবং চুল আটকে রাখার জন্য একটি স্ট্রং জেল। এরপর চুল পেছনের দিকে আঁচড়ে নিন।
ভেনেসা হাডেনসের রেড কার্পেট হেয়ারস্টাইল সব সময়ই বেশ ভালো হয়। এই চমৎকার ক্রাউন ব্রেইড তো মোটেই হতাশ করবে না। এটি পিলাটিজ, হিপ হপ ড্যান্স থেকে শুরু করে ওয়ার্কআউট— যেকোনো লুকের জন্য জুতসই।

 আহমেদ বুবলি
মডেল: মিথিলা ও ওশিন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও ক্যানভাস আর্কাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top