skip to Main Content

ত্বকচর্চা I ওনলি ফর অয়েলি

ত্বক যখন তেলের নিঃসরণ ঘটিয়েই চলে, তার যত্নে দরকার আলাদা ও বিশেষ মনোযোগ। তেলতেলে ভাব কমিয়ে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে

মাত্রাতিরিক্ত তেলে ভাব তৈলাক্ত ত্বকের অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। ফলাফল- চকচকে তেল চিটচিটে চেহারা, বড় এবং দৃশ্যমান লোমকূপ, সঙ্গে বাড়তি উপদ্রব- ব্রণ আর ব্ল্যাকহেড। স্বভাবত দাগছোপও বেশি থাকে তৈলাক্ত ত্বকে। তবে সুবিধাও আছে বেশ কিছু। প্রাকৃতিকভাবে বেশি আর্দ্র হওয়ায় অন্যান্য ত্বকের তুলনায় তৈলাক্ত ত্বক কোমল হয়। আর বয়সের ছাপও খুব দ্রুত পড়ে না।
ত্বকের তৈলাক্ততা মানুষের জন্মগত প্রাপ্তি। বিজ্ঞানের ভাষায় জেনেটিক। এ ছাড়া পরিবেশও ত্বকের তৈলাক্ততার বড় প্রভাবক। বেশি আর্দ্রতা আর গরম তেলগ্রন্থির তেল উৎপাদনের হার বাড়ায়। ফলে তেলতেলে হয়ে ওঠে ত্বক। ওভারওয়াশিংও ত্বকের তৈলাক্ততার আরেকটি কারণ। খুব বেশি এক্সফোলিয়েশন কিংবা সহনীয় নয় এমন পণ্য কিংবা যন্ত্রের ব্যবহার ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট করে দেয়। ফলে তেলগ্রন্থিগুলো অতিরিক্ত তেল উৎপাদন শুরু করে। দেখা দেয় তৈলাক্ততা। ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্টের ওষুধও এই সমস্যা বাড়ায়। বয়ঃসন্ধিকাল, মেনস্ট্রুয়েশনের আগে, গর্ভাবস্থায় আর মেনোপজের সময় হরমোনাল বিভিন্ন পরিবর্তন আসে দেহে। যা ত্বকের তেল নিঃসরণেও প্রভাব ফেলে। ফলে তৈলাক্ততা দেখা যায়। এমনকি অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর অসুস্থতাও ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়িয়ে দেয়। চিনি, রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট আর দুগ্ধজাতীয় খাবার বেশি খেলেও ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়ে।
ত্বক তৈলাক্ত কি না, তা নির্ধারণের জন্য রয়েছে সহজ পদ্ধতি। বেশি যন্ত্রপাতির দরকার হয় না এ কাজে। বেয়ার ফেসড মেথডে ভালো কোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হয় প্রথমে। তারপর ত্বকে কোনো ধরনের ময়শ্চারাইজার, সেরাম কিংবা ট্রিটমেন্ট ক্রিম না মেখে আধঘণ্টার অপেক্ষা। নির্দিষ্ট সময় পর নাক, কপালসহ গালের অংশ চকচকে উজ্জ্বল হয়ে উঠলে বুঝতে হবে ত্বক তৈলাক্ত। ব্লটিং শিট মেথডও জনপ্রিয় ত্বকের ধরন যাচাইয়ের কাজে। মূলত ত্বকের বিভিন্ন অংশে ব্লটিং পেপার চেপে চেপে করা হয় এ পরীক্ষা। যদি পেপার তেলে সিক্ত হয়ে যায়, তাহলেই বুঝতে হবে ত্বক তৈলাক্ত।
প্রতিদিনকার পরিচর্যায়
ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং- সব ধরনের ত্বকের মতো তৈলাক্ত ত্বকেরও নিয়মিত যত্ন নেয়ার সর্বোত্তম উপায় এগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেলে ভাব ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। এই ব্যাকটেরিয়া থেকে হয় ব্রণ। অ্যাকনে আর ব্ল্যাকহেডের মতো সমস্যা দেখা যায়। তৈলাক্ত ত্বকে জেল বেসড কিংবা ফোম জাতীয় ক্লিনজারগুলো সবচেয়ে কার্যকর। এগুলো সালফেট ফ্রি হলে তো আরও ভালো। তবে বেশি রুক্ষ উপাদানযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলো ত্বকের তৈলাক্ততার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতাও কেড়ে নিতে পারে। টোনিংও জরুরি এ ধরনের ত্বকে। সে ক্ষেত্রে অ্যালকোহল ফ্রি টোনার বেছে নেয়া উচিত; বরং এতে থাকুক সোডিয়াম পিসিএ, জেরানিয়াম আর উইচ হেজেলের মতো উপাদানগুলো। সোডিয়াম পিসিএ এমন এক হিউমিকটেন্ট, যা ত্বকে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। জেরানিয়াম মূলত একধরনের এসেনশিয়াল অয়েল, যা ত্বকের বাড়তি তৈলাক্ততা কাটাতে সহায়ক। আর উইচ হ্যাজেল হচ্ছে একধরনের প্রাকৃতিক অ্যাসট্রেনজেন্ট, যা ত্বক শুষ্ক না করেই তৈলাক্ততা কমায়। অনেকেরই ধারণা, তৈলাক্ত ত্বকে ময়শ্চারাইজারের প্রয়োজন নেই। এটা একদমই ভুল। এ ধরনের ত্বকেও ময়শ্চারাইজার মাস্ট। কারণ, ত্বক যদি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, তা আরও তেলে হয়ে ওঠে। বেছে নেয়া যেতে পারে হালকা, অয়েল ফ্রি ময়শ্চারাইজারগুলো। গ্লিসারিন কিংবা সোডিয়াম পিসিএ যুক্ত ময়শ্চারাইজার ত্বক আর্দ্র রাখতে সহায়ক, এর তেলে ভাব না বাড়িয়েই। সকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। জিঙ্ক অক্সাইডযুক্ত সানস্ক্রিনগুলো ত্বকে ম্যাট ফিনিশ দেয়। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচায়, সঙ্গে এর ন্যাচারাল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ইফেক্ট বিভিন্ন ধরনের ত্বক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে সুস্থতা নিশ্চিত করে। মিনারেল বেসড পাউডার সানস্ক্রিনও দারুণ কাজের।
এ ধরনের ত্বকের রাতের রুটিনও প্রায় এই রকম। তবে সানস্ক্রিন আর ময়শ্চারাইজারের বদলে সেরাম ব্যবহার করা যেতে পারে এ সময়। আলফা কিংবা বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিডযুক্ত সেরাম তৈলাক্ত ত্বকের বড় লোমকূপগুলো দৃষ্টিগোচরতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। কমায় দাগছোপ। ব্রণপ্রবণ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আর টি ট্রি অয়েলযুক্ত সেরাম বেশ কার্যকর।
এগুলো ত্বককে দাগছোপ মুক্ত রাখে। রেনিটলযুক্ত সেরামও উপকারী। এগুলো দিনের দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারাইয়ের কাজ করে রাতভর। জোগায় জরুরি পুষ্টি। বজায় রাখে তৈলাক্ত ত্বকের স্বাভাবিকতা।
সপ্তাহ শেষে
তৈলাক্ত ত্বকে দু থেকে তিনবার এক্সফোলিয়েশন দরকার। এ ক্ষেত্রে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের মতো কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্টগুলো ত্বকের যত্নে চমৎকার। এটা মৃত কোষগুলো সারাইয়ে সাহায্য করে, নতুন ত্বককোষ উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। এই অ্যাসিড অয়েল সলিউবল, অর্থাৎ তেলে দ্রবণীয়। ফলে এই এক্সফোলিয়েটরগুলো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে দূর করে বাড়তি তৈলাক্ততা আর দূষণ। স্ক্রাব ব্যবহার করতে চাইলে জোজোবা বিডস কিংবা চারকোল এক্সট্র্যাক্টযুক্তগুলো বেছে নিলেই ভালো। সঙ্গে তৈলাক্ত ত্বক উপযোগী ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে নিয়ম করে। ক্লে বেসড প্যাক সবচেয়ে ভালো কাজ করে এই ত্বকে। কেওলিন ক্লে ত্বকের দূষণ দূর করতে সাহায্য করে। মৃত কোষ দূর করে। সারায় ব্রণ। ইতালিয়ান আম্ব্রিয়ান ক্লে ভারসাম্য বজায় রেখে মসৃণ করে তোলে ত্বক। গ্রিন টি দেয়া ফেসপ্যাকও তৈলাক্ত ত্বকের বাড়তি তেলে ভাব শুষে নেয়। ফলে নানা ধরনের সমস্যা থেকে দূরে থাকে ত্বক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ফেস অয়েল তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অপরিহার্য। গ্রেপ সিড, সুইট আমন্ড, অ্যাপ্রিকট, জোজোবা আর সানফ্লাওয়ার অয়েল বেশি উপযোগী। এগুলো হালকা ও চিটচিটে নয়। সহজেই শুষে নেয় ত্বক। লোমকূপ বন্ধ না করেই। ত্বকের গভীরে প্রবেশ করায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি। ফলাফল তেলমুক্ত, উজ্জ্বল, মসৃণ ও নিখুঁত ত্বক।
পনেরো দিন পর
শুধু মুখত্বক নয়, গলা, ঘাড়, পিঠসহ অন্যান্য অংশের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন পনেরো দিন পর। বিটা আর আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড পিলের মিশ্রণ তৈরি ও ব্যবহার করা যেতে পারে ঘরে বসেই। যা ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। দেবে দীপ্তিময় নতুন ত্বক।
মাসে একবার
প্রফেশনাল ফেশিয়াল জরুরি অন্তত একবার। ডিপ ক্লিন কিংবা ডিটক্সিফাইং ফেশিয়ালগুলো তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চমৎকার। এগুলো মৃতকোষ দূর করে, ভেতর থেকে পরিষ্কার করে বলে লোমকূপগুলো সংকুচিত থাকে, অতিরিক্ত তেলে ভাব রোধ হয়। কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টও করিয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারও সঙ্গে আলোচনা করে।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: কারিশমা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top