skip to Main Content

ফিচার I শরীরচর্চার খাবারদাবার

খাওয়ার নিয়ম না মানলে ব্যায়ামের সুফল মিলবে কীভাবে? ক্যালরি, প্রোটিন, লবণ ও পটাশিয়াম নিশ্চিত করা গেলে হওয়া যাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। অন্যথায় হিতে বিপরীত

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। তবে তা হতে হবে নিয়ম মেনে। ব্যায়ামের আগের ও পরের খাদ্য গ্রহণেও হতে হয় হিসেবি। কেননা, পরিশ্রমের সঙ্গে খাবারের সঠিক সমন্বয় না হলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। ফলে ব্যায়াম ও সময়— উভয়ই বৃথা যেতে পারে। আগের ও পরের খাবার শরীরে সরাসরি মন্দ প্রভাব ফেলে। নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। উভয় সময়ে খাদ্য গ্রহণে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আছে। যেমন খালি পেটে ব্যায়াম মোটেও উচিত হবে না।

এমন কিছু খেয়ে নিতে হবে, যা তাৎক্ষণিক পুষ্টি জোগায়। অন্যথায় ব্যায়ামের সময় শরীরে যে চাপ পড়ে, তাতে শর্করার পরিমাণ খুব দ্রুত কমে যায়। ফলে হাইপোগ্লেসিমিয়ার প্রকোপে অবসন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। হাঁটা কিংবা ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে ক্যালরি ক্ষয় হয়। সে সময় পেট খালি থাকলে কিডনি ও হৃদপিন্ডে চাপ পড়ে। অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও আক্রান্ত হয়। তাই ব্যায়াম শুরু করার আধঘণ্টা আগে হালকা খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো। যেমন ফল। টোস্ট অথবা কর্নফ্লেক্সও খাওয়া যেতে পারে। ভারী খাবার খেয়ে ব্যায়ামে লেগে পড়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করা ভালো। ব্যায়াম শুরুর দুই ঘণ্টা আগে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যকর। এতে শকর্রার মাত্রা ঠিক থাকবে। ব্যায়ামের শুরুতে এক গ্লাস পানি পান করলে শরীরের আর্দ্রতা নিশ্চিত হবে।
ব্যায়ামের আগে খাওয়া যেতে পারে কলা, সেদ্ধ ডিম, মধু, যব, ব্রাউন ব্রেড, দই, ফ্রুট স্যালাড কিংবা স্মুদি। নিমেষে পুষ্টি জোগাতে কলার জুড়ি নেই। ব্যায়াম শুরুর ত্রিশ মিনিট আগে এ ফল খাওয়া ভালো। উপাদেয় হতে পারে যবও। এটি ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেবে। এ কারণেই তা খেয়ে দিন শুরু করেন অনেকে। সকালে জিমে যাওয়ার অভ্যাস থাকলে, এক বাটি যব খেয়ে ব্যায়াম শুরু করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্রাউন ব্রেডও উপাদেয়। এটি শকর্রা বাড়ায়। ব্যায়ামের সময় প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। সেই চাহিদা মিটতে পারে ডিম, মধু কিংবা দই খেলে।
একটানা বেশিক্ষণ ব্যায়াম করা ঠিক নয় বলে মনে করেন ফিজিওথেরাপিস্টরা। ক্লান্ত লাগলে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ সময় দুই ঢোঁক পানি পান করলে ক্ষতি নেই। এর বেশি করলে ব্যায়ামের সময় তা উগরে আসার আশঙ্কা থাকে।
ব্যায়ামের আগের চেয়ে পরের খাবারে গুরুত্ব দেওয়া বেশি জরুরি। শারীরিক পরিশ্রম শেষ করেই ভারী খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। আধা ঘণ্টা পর হালকা খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এ সময় জরুরি। কেননা, ব্যায়াম শেষ করার আধঘণ্টার মধ্যেই পেশিতে আমিষের প্রয়োজন হয়। জোগান দেওয়া সম্ভব হলে শক্তি বাড়ে। ব্যায়ামের সময় পেশিতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ব্যয় হয়। সাঁতার কাটলে, দৌড়ালে বা সাইকেল চালালে শরীরে কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি দেখা দেয়। সবচেয়ে ভালো হবে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার মিলিয়ে খেলে। এ জন্য কলা ও আপেল একসঙ্গে ব্লেন্ড করে খাওয়া যায়। ব্যায়ামের ৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। তাই ফলের রস ও পানি পান করা যেতে পারে। এতে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকবে। কর্মক্ষমতা ফিরে আসবে। প্রোটিন হজম করা কিছুটা কঠিন। তাই এর পাশাপাশি আঁশজাতীয় খাবার ও সবুজ শাকসবজি খেলে ভালো হবে। তবে আধা ঘণ্টার মধ্যেই খাওয়া জরুরি। কেননা, ব্যায়ামের পর শরীরের করটিসল নামের এক প্রকার ধ্বংসাত্মক হরমোনের মাত্রা বাড়ে; যা বিভিন্ন রোগ বয়ে আনতে পারে। ব্যায়াম-পরবর্তী সময়কে ‘ওইনডো পিরিয়ড’ বলে। তখন শরীরে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতিরোধ করতে চাইলে আধা ঘণ্টার মধ্যেই কিছু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময়ের জন্য উপযুক্ত কিছু খাদ্য হতে পারে ওটস, স্যুপ, প্যানকেক, পুডিং, কিনওয়া, বাজরা, দুধ, ছানা, দই, চকলেট, পিনাট বাটার, অ্যাভোকাডো, বাদাম ও ফ্ল্যাক্সসিড।
ব্যায়ামের পর শরীরে আমিষের জোগান দিতে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াই ভালো হবে। বাজারে যে ‘হোয়ে প্রোটিন’ পাওয়া যায়, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। কিডনির ক্ষতি করে এবং ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়। ব্যায়ামের পর অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তৃষ্ণা দূর করতে কোমল পানীয় কিংবা এনার্জি ড্রিংক গ্রহণ মোটেও উচিত হবে না। এ সময় চিনি ছাড়া আইস চা পান করা যেতে পারে। ব্যায়ামের ফলে খুব বেশি ঘেমে গেলে ভালো মানের একটি স্পোর্টস ড্রিঙ্ক তৃষ্ণা দূর করে। লবণও চিনির মতো অস্বাস্থ্যকর। ব্যায়ামের পর ঘামের সঙ্গে প্রচুর সোডিয়াম ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। ঘাটতি পূরণ করতে অনেকেই বাড়তি লবণযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন। তা এড়িয়ে স্বাভাবিক খাবার খেলেই ভালো হবে। সাধারণ খাদ্যই ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট। বাদ দিতে হবে ফ্যাটযুক্ত খাবারও। ফাস্ট ফুড ও তেলে ভাজা খাদ্য এড়ানোই ভালো। তা না করলে কোলেস্টেরল বেড়ে হার্টের অসুখ হতে পারে। ফলে ব্যায়াম কাজে লাগে না। ওজন কমার বদলে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। ব্যায়ামের ফলে শরীরে গ্লাইকোজেনের কমতি মেটাতে কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন। তা মেটাতে অনেকেই কেক বা পেস্ট্রি খান। এসব খাবারে কার্বোহাইড্রেট থাকলেও পুষ্টি উপাদান কম। এগুলোর বদলে লাল আটার রুটি কিংবা লাল চালের ভাত খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনীয় ক্যালরি ফিরে পেতে ব্যায়ামের পর প্রয়োজন সুষম খাবার। শুধু স্যালাড বা কাঁচা শাকে চাহিদা পূরণ হবে, এমন নয়। তাই অল্প তেলে রান্না সবজি ও মুরগির মাংস খেলে ভালো হবে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। ব্যায়ামের ফলে যে পরিমাণ ক্যালরি ক্ষয় হয়, বাড়তি খেয়ে তার চেয়ে বেশি ফিরিয়ে আনলে ব্যায়াম ফলপ্রসূ হবে না। কত ক্যালরি ক্ষয় হলো আর কতটা যোগ হলো, সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top