skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I চিরকালীন কার্ল

ফ্যাশনবিশ্বের কিংবদন্তি কার্ল লেগারফেল্ডকে নিয়ে একটি আড়ম্বরপূর্ণ স্মরণানুষ্ঠান আয়োজিত হলো প্যারিসে। তাঁর জীবন ও সৃষ্টিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জানাচ্ছেন ফাহমিদা শিকদার

কিংবদন্তি ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল লেগারফেল্ড গত হয়েছেন ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু ফ্যাশন বিশ্ব কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না এই মানুষটির শূন্যতা। তাই তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে, প্রতিদিন। ২০ জুন লেগারফেল্ডের বিখ্যাত ডিজাইনগুলো নিয়ে স্মরণমূলক একটি অনুষ্ঠান হয়েছে সাড়ম্বরে।
জীবদ্দশায় যে তিনটি ফ্যাশন হাউসের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি, সেই শ্যানেল, ফেন্দি আর স্বনামের ব্র্যান্ড কার্ল লেগারফেল্ডের এই আয়োজনের খবর আগেই জানানো হয়েছে। আয়োজকেরা চেয়েছিলেন, কার্লের জীবনের মতোই সাড়ম্বর হোক এই অনুষ্ঠান। মেমোরিয়ালটি নিছক একটি স্মরণানুষ্ঠান ছিল না, বরং এটা ছিল একাধারে ট্রিবিউট এবং সেলিব্রেশন। এতে সবাই কার্লের স্মৃতিকে উদ্যাপন করেছেন নানা মাত্রায়। এ জন্য অনুষ্ঠানের নামও দেওয়া হয় ‘কার্ল ফর এভার: আ সেলিব্রেশন’।
প্যারিসের গ্র্যান্ড প্যালাইস মিউজিয়ামের সঙ্গে কার্লের ছিল আত্মিক যোগ। এখানে শ্যানেলের অসাধারণ সব ফ্যাশন শোর আয়োজন করেছেন কার্ল। একেকটি র‌্যাম্প কতটা সৃষ্টিশীল হতে পারে, তা শ্যানেলের ফি বছরের শো না দেখলে অনুধাবন করা কঠিন। কী না করতেন কার্ল এখানে! গ্রোসারি শপ থেকে শুরু করে এয়ারপোর্ট, রেসকোর্স থেকে সমুদ্রসৈকত, মোহজাগানো বন থেকে সুইজারল্যান্ডের গ্রাম মায় স্পেসশিপ— আরও কতভাবেই যে সাজিয়েছেন তিনি এই মিউজিয়ামকে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সব অভিনব আবহে হেঁটেছেন সেরা মডেলরা। কার্লের সৃষ্টি শরীরে ধারণ করে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গ্র্যান্ড প্যালাইসের চেয়ে আদর্শ ভেন্যু আর কী হতে পারে? আয়োজকেরা এই অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন থিয়েটার ও অপেরা ডিরেক্টর রবার্ট কারসেনকে।
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেছে নেওয়া হয় প্যারিস মেনস ফ্যাশন উইককে। সারা বিশ্বের প্রায় ২৫০০ কার্ল-অনুরাগী অংশ নেন এই স্মরণানুষ্ঠানে। উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত মডেল, ডিজাইনার, ফ্যাশন এডিটর, অভিনেতা, অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পীসহ সব সেলিব্রিটি। তবে এরা কেউ নিজেদের সেলিব্রিটি পরিচয়ে নয়, উপস্থিত হয়েছিলেন কার্লের বন্ধু, সহকর্মী ও ভক্ত হিসেবে। অতিথি তালিকা আলো করেছিলেন কার্লের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ভোগ ইউএসের এডিটর ইন চিফ আনা উইন্টর, সাবেক ফরাসি মডেল এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি কার্লা ব্রুনি সারকোজি, ফ্রান্সের বর্তমান ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত ম্যাখঁ, ভোগ প্যারিসের এডিটর ইন চিফ ইমান্যুয়েল আল্ট, বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার ভ্যালেন্তিনো, স্টেলা ম্যাককার্টনি, আলেক্সা চুঙ, অলিভিয়া পালেরমো, সুপারমডেল ক্লদিয়া শিফার, গিগি হাদিদসহ অনেকেই। সবাই উজ্জ্বল ছিলেন কার্লের সৃজনে।
পুরো হল সাজানো হয়েছিল তাঁর জীবনের বিশেষ মুহূর্তের ৫৬টি ছবি দিয়ে। বানানো হয়েছিল একটি বিশাল স্টেজ। যেখানে শুরুতে দেখানো হয় একটি ভিডিও, যাতে কার্লকে নিয়ে কথা বলেন তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা। বিশাল এক লাইব্রেরি গড়ে গেছেন লেগারফেল্ড। তিন লাখের বেশি বইয়ে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারেই ধারণ করা হয় ভিডিওটি।
এতে কার্লের বন্ধু ও সহকর্মীরা শেয়ার করেন তাঁর সঙ্গে তাঁদের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত; ব্যক্তি কার্লের কথা বলেছেন তাঁরা, যিনি কখনো পেছন ফিরে তাকাতে চাইতেন না, শুধু চাইতেন এগিয়ে যেতে; সব বিতর্ক, বাধা উপেক্ষা করে। যিনি সবার মতামতকে সব সময় গুরুত্ব দিতেন, বন্ধুদের ভালোবাসতেন সব উজাড় করে দিয়ে। ভিডিওতে কিছু সময়ের জন্য দেখা যায় কার্লের সবচেয়ে প্রিয় বিড়াল শুপেতকেও।
সব সময় তিনি শিল্পকলা এবং পারফরম্যান্সের অনুরাগী ছিলেন। তাই রবার্ট কারসেন পুরো অনুষ্ঠানটি সাজিয়েছেন নাচ, গান আর সাহিত্যপাঠে; যেখানে পারফর্ম করেন কার্লের প্রিয় শিল্পী। সাহিত্য-অনুরাগী এই কিংবদন্তির প্রিয় লেখক ভার্জিনিয়া উলফের ‘অরল্যান্ডো’ থেকে তাঁর প্রিয় অংশ পড়ে শোনান বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেত্রী এবং কার্লের বিশেষ বন্ধু টিল্ডা সুইনটন। প্রিয় বিড়াল শুপেতকে ট্রিবিউট দিতে তাঁর প্রিয় মডেল কারা ডেলেভি আবৃত্তি করেন কবি কলেটের বিড়াল নিয়ে রচিত একটি কবিতা। বিখ্যাত অভিনেত্রী হেলেন মিরেন পড়ে শোনান সান্দ্রিন গুলবেনকিয়ানের কার্লকে নিয়ে লেখা ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাকরডিং টু কার্ল’ বইয়ের একটি অংশ। হেলেন মিরেনের সঙ্গে তখন পারফর্ম করেন ভায়োলিনবাদক চার্লি সিয়েম।
পিয়ানো কোম্পানি স্টেনওয়ের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কার্ল একটি পিয়ানো ডিজাইন করেন। তাতে একটি এক্সক্লুসিভ রিসাইটাল বাজিয়ে শোনান চায়নিজ কনসার্ট পিয়ানিস্ট ল্যাং ল্যাং। এ ছাড়া পারফর্ম করেন জুকিন ড্যান্সার লিল বাক, আর্জেন্টাইন কোরিওগ্রাফার এবং ট্যাংগো ড্যান্সার জার্মান করনেখো এবং তাঁর বিশাল ড্যান্স গ্রুপ। এদের প্রত্যেকেই কার্লের প্রিয় আর্টিস্ট। তবে ফেরেল উইলিয়াম ছিলেন একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ। ‘ফেস অব শ্যানেল’। কার্লের প্রিয় বন্ধু— ফেরেল তাঁকে ট্রিবিউট দেন ‘গাস্ট অব উইন্ড’ গেয়ে। গানটির একদম শেষে দাঁড়িয়ে বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ৯০ মিনিটের এই স্মরণানুষ্ঠান।
এত বড় একটি রানআপের পর কে বলবে না কার্ল চিরকালের? এখন থেকে আগামী কয়েক দশকজুড়ে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করবে তাঁর সব সৃষ্টি। ফ্যাশন ডিজাইনের ছাত্ররা পড়বে, দেখবে এবং প্রেরণা নেবে তাঁর থেকে। ভবিষ্যতের ট্রেন্ডে ঘুরেফিরে আসবেন তিনি; ফ্যাশন-অনুরাগীরা বারবার প্রেমে পড়বেন তাঁর সৃজনের। কার্লের কালেকশন হবে সবচেয়ে সমাদৃত ভিনটেজ কালেকশন। তাঁর লিগ্যাসি এভাবেই চলতে থাকবে বছরের পর বছর— দশক থেকে দশকে। তাই বলা যায়, এই ফ্যাশন সম্রাটের রাজত্বকাল ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top