skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ফার্স্ট লেডি ফ্যাশন

মার্থা ওয়াশিংটন থেকে জিল বাইডেন। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বর্তমান কাল। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশের প্রেসিডেন্টের জীবনসঙ্গী সব সময়ই চর্চায়

ফার্স্ট লেডি দাপ্তরিক কোনো পদ নয়। আন-অফিশিয়াল টাইটেল। প্রেসিডেন্টের জীবনসঙ্গীই ফার্স্ট লেডি। হোয়াইট হাউসে ফার্স্ট লেডিকে শর্টহ্যান্ড টার্ম ‘ফ্লোটাস’ ডাকা হয়। ধারাটি মূলত পশ্চিমা বিশ্বের। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রায় পাল্লা দিয়ে আলোচনায় থাকেন ফার্স্ট লেডি। প্রবল ক্ষমতাধর দেশটিতে এ পর্যন্ত শুধু পুরুষেরাই প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। বিশ্ব নতুন প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পরিচিত হয়েছে নতুন ফার্স্ট লেডির সঙ্গে। ইতিহাসের পাতায় তাই ফার্স্ট লেডিদের তালিকার কলেবর বড়।
ফ্যাশন পাওয়ারফুল একটি টুল। জনসাধারণের সামনে যাদের আসতে হয়, তাদের জন্য এটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক—দুই ধরনের ভূমিকাই রাখে। ফার্স্ট লেডি নানাভাবে জনসংযোগে সক্রিয় থাকেন। রাষ্ট্রীয় উৎসব-আয়োজন, অফিশিয়াল প্রোগ্রাম আর মিডিয়া—সবই থাকে তাকে ঘিরে। হোয়াইট হাউস হোস্ট তিনি। পলিটিশিয়ান, রাষ্ট্রীয় অতিথি আর জনগণ—সবার নজর থাকে তার দিকে। তাকে ঘিরে আগ্রহের পারদ থাকে উঁচুতে। দেশ-বিদেশ—যেখানেই যান, পরিণত হন টক অব দ্য টাউনে। রাজনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখার বাধ্যবাধকতা তার নেই। তিনি নির্বাচিত নেতা নন, তবে ‘পাবলিক অ্যাটেনশন’। মিডিয়ার ‘স্পট লাইট চয়েজ’। দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি তিনি। তাই ফার্স্ট লেডি কী পরছেন, স্টাইলিং কেমন, তা নিয়ে আলোচনা চলেছে, চলছে, চলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ফার্স্ট লেডি মার্থা ওয়াশিংটন। জানা যায়, তিনি ছিলেন রাশভারী। কলোনিয়াল যুগে স্টাইলিশ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তবে আড়ম্বরপূর্ণ পোশাকের কদর সেভাবে করতেন না। লাইট টোন শেড পছন্দ করতেন। সঙ্গে লেইসে সম্পন্ন হতো মার্জিত অলংকরণ।
দীর্ঘ সময় এই ‘লেইস’ ড্রেস ট্রেন্ডে আটকে ছিল ফার্স্ট লেডিদের ফ্যাশন। হালকা টোন, সঙ্গে সাদা আর লেইসের টপিং। এসবের মিলমিশে বহুকাল কাটিয়েছেন এই প্রেসিডেন্ট পত্নী। মার্থার পরে ডলি ম্যাডিসন যখন আসেন, তাকে দেখা যেত প্যারিসে তৈরি করা এম্পায়ার কাট গাউন পরতে। জেমস ম্যাডিসনের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা গ্রহণের দিন তিনি বাফ কলারের গাউন পরেছিলেন, সঙ্গে ছিল মুক্তা এবং একটি ফেদার অ্যাক্সেন্টেড টারবান। ফার্স্ট লেডি শিপ ফ্যাশনের হাইট বাড়ানোর ক্ষেত্রে ডলির ক্লদিং আইটেম এবং স্টাইলের রয়েছে জোরালো ভূমিকা। নিজেকে ফ্যাশনেবল লেডি হিসেবে জনগণের সামনে নিয়ে এসেছিলেন তিনি।
বিংশ শতাব্দীতে পরিবর্তন আসে প্রেক্ষাপটে। ফার্স্ট লেডির গুরুত্ব রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাড়তে থাকে। প্রেস কনফারেন্স, ক্যাম্পেইন—সব জায়গাতেই প্রেসিডেন্ট হাজির হতে শুরু করেন জীবনসঙ্গীকে পাশে নিয়ে। ১৯৫০ সালে রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারে, নারী ভোটারদের ভোট প্রাপ্তিতে ভবিষ্যৎ ফার্স্ট লেডি কে হবেন, তা উপঘটক হিসেবে কাজ করে। আমেরিকান ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপার’স বাজার ১৯৬০ সালে একটি ফিচার প্রকাশ করে ‘দ্য ফার্স্ট লেডি’ শিরোনামে। সেখানে তৎকালীন দুই প্রার্থীর জীবনসঙ্গী জ্যাকুলিন কেনেডি ও প্যাট্রিসিয়া নিক্সনের কথা উঠে আসে, যাদের একজন হবেন ভবিষ্যৎ ফার্স্ট লেডি। ওই লেখায় লেখক কেইথ কাইলি ধারণা প্রকাশ করেন, স্টাইল ও মুখশ্রীর তুলনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন নারী ভোটাররা।
ফার্স্ট লেডি কেনেডি প্যারিস ফ্যাশনকেন্দ্রিক পোশাক পরতেন। জিভাঁশি ও শ্যানেল—এই দুই কতুর হাউস তার হাত ধরে স্পটলাইটে জ্বলজ্বল করেছে। স্কার্ট স্যুটে সাবলীল ছিলেন তিনি। প্রায়ই বেছে নিতেন এই পোশাক। সঙ্গে থাকত পিলবক্স হ্যাট। তার পিংক শ্যানেল ইন্সপায়ারড স্যুট এখনো আছে আলোচনায়। প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে যখন গুলি করা হয়, তখন জ্যাকুলিন এই স্যুটেই ছিলেন। অন্য দেশের ব্র্যান্ডের প্রতি তার আগ্রহকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। হারপার’স বাজারের ফ্যাশন এডিটর ডায়ানা ভেরিল্যান্ড তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন নিজের দেশ থেকে পোশাক কেনার জন্য।
অন্যদিকে, হিলারি ক্লিনটন লাল রঙের এক স্যুটে হাজির হয়ে চমকে দিয়েছিলেন মার্কিন মুলুক। রেড ওম্যানস ডে স্যুট নামে পরিচিতি পেয়েছিল এই পোশাক। তিনি হয়ে ওঠেন ট্রেইল ব্লেজার। ট্রেন্ডে পরিণত হয় এটি। হটেস্ট ট্রেন্ডের তালিকায় যুগে যুগে নাম এই রেড স্যুটের।
এরপরে ১৯৯৩ সালে ডোন্না কারানের ড্রেসে হিলারিকে প্রথম দেখা যায় কোল্ড শোল্ডার ড্রেসে। স্টেট ডিনারে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে এই পোশাকে নিমন্ত্রিতদের অভ্যর্থনা জানান তিনি। বাহু নিয়ে বহু বিড়ম্বনায় পড়েন সে বেলা। আলোচনা দখল করে নেয় নেতিবাচক সমালোচনা।
পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্সে ফ্যাশন টুলের পাওয়ারফুল ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, এ কথা সম্ভবত মিশেল ওবামা হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগে থেকেই জানতেন। ডিজাইনার গাউন পরেই প্রথম পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স তার। জেসন উ নকশা করেছিলেন সেটি। বলা যেতে পারে, পাঁচজন ডিজাইনারের পোশাকে নিয়মিত দেখা গেছে এই ফার্স্ট লেডিকে। শুরুতে ডিজাইনার থাকুনের নকশায় ভরসা রেখেছিলেন বেশ দীর্ঘ সময়। ইবোনি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে এসেছিলেন ডিজাইনার ট্রেসি রেসির লেবেলে। মিশেলের পরনের ব্ল্যাক রিবন ড্রেস ফ্যাশনসচেতনদের কাছে বাহবা পেয়েছে অনেক। এটি ছিল সোফি থ্যালেটের নকশা। মেয়াদের শেষের দিকে ওবামা পত্নীর পছন্দের তালিকার ওপরে ছিল ব্রান্ডন ম্যাক্সওয়েল। তার নকশার আইভরি গাউনে মিশেলকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনেকে।
মেলানিয়া ট্রাম্পের ইনফেমাস জ্যাকেট নিয়ে তুমুল আলোচনা দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই আর্মি স্টাইল জ্যাকেটে ছিল শক্তিশালী এক বার্তা। তাতে লেখা ছিল, ‘আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার। ডু ইউ?’ এই বার্তা ছবিতে স্পষ্ট করে তুলে ধরে মিডিয়া। আর সে নিয়ে নেটিজেনদের তুমুল আলোচনা। মেলানিয়া কাকে কেয়ার করেন না, সে চিন্তায় নিজেকে কেয়ার করাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন তারা! ঠিক তখনই আসে চমক। মিসেস ট্রাম্প ঠিক কাকে ‘কেয়ার’ করেন না, টুইটারে তা ফাঁস করে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! তিনি টুইট করেন, ‘মেলানিয়ার পোশাকের বার্তাটি ছিল ফেইক নিউজ মিডিয়ার উদ্দেশ্যে।’ এই আলোচিত জ্যাকেটটি জারা ব্র্যান্ডের। মেলানিয়া কিংবা মিশেল—পোশাক নিয়ে তারা ছিলেন আলোচনায়। সমালোচনায় সরব জনগণ পেয়েছিলেন ফার্স্ট লেডি প্যাট নিক্সনও। হোয়াইট হাউসের দিনগুলোর প্রথম দিকে তার অন্যান্য পোশাকের লেংথ খুব বেশি ছিল না। খাটো জামা পরতেন। ১৯৭০ সালে র‌্যাডিকেল স্টাইল মেইনস্ট্রিমে ফিরে আসে। তিনিই প্রথম ফার্স্ট লেডি, যিনি জনসমক্ষে স্যুট পরে হাজির হয়েছিলেন। আর এই যে খাটো জামা থেকে ফুলপ্যান্ট, এখানেই আলোচনা শুরু; শেষ হয় সরস সমালোচনাতে। ‘প্যাট নিক্সন ওয়ারিং প্যান্টস’ লাইনটি সেখান থেকেই এসেছে। তবে নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়েছে এই সাহসী ফার্স্ট লেডির স্যুট। মেইল অ্যাটেয়ার হিসেবে পরিচিত এই পোশাক পরে জনগণের সামনে আসার বিষয়টি ইতিহাস মনে রেখেছে ‘সিম্বলিক মার্ক অব দ্য ওম্যানস মুভমেন্ট ফর ইক্যুয়ালিটি’ তকমায়।
জ্যাকি কেনেডি, হিলারি ক্লিনটন, মিশেল ওবামা স্টাইলিশ ফার্স্ট লেডি হিসেবে জনপ্রিয়তার তালিকায় সামনের সারিতে আছেন। ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের মতো স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে আছেন তারা। জনগণের কাছেও পেয়েছেন ফ্যাশন আইকনের মর্যাদা।
বর্তমান ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ফ্যাশন বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে পা ফেলছেন, এমনটা বলা যেতে পারে। কারণ, তার আউটফিটে প্রকাশিত হয়েছে মিনিমালিজম ও রিপিটেশন। পেশায় তিনি ভার্জিনিয়া কমিউনিটি কলেজের এডুকেটর। আবার হোয়াইট হাউস হোস্টও। স্টেট ডিনারে হাজির হয়েছিলেন একটি নেভি ব্লু কলাম গাউনে। ডিজাইনার ছিলেন অস্কার ডে লারেন্টা। অফ শোল্ডার নেক লাইন, লং স্লিভ, বোটানিক্যাল লেইস প্যাটার্ন এবং নুড লাইনিং পরিপূর্ণ করেছিল পোশাকটিকে। আমেরিকান লেবেলের পোশাকেই দেখা যায় এই ফার্স্ট লেডিকে। রেনাটার ডিজাইনের লেমন প্রিন্ট ড্রেস জিলের পছন্দের তালিকায় অন্যতম বলে মনে করা হয়। কারণ, একাধিকবার এই উজ্জ্বল ড্রেসে দেখা দিয়েছেন তিনি।
জিলের অন্যতম আলোচিত পোশাকটি ডিজাইনার গ্যাব্রিয়েল হার্টসের নকশায় হোয়াইট লেদার ড্রেস। এর দাম ১৫ হাজার ৯০০ ডলার বলে ধারণা করা হয়। লেইট স্প্রিং এবং আর্লি ফলে জিলকে স্ট্রাইপ শার্ট ড্রেসে দেখা যায়। কোস্টাল গ্র্যান্ডমাদার ইন্সপিরেশনে তিনি একটি নেভি ব্লু ও সাদা শার্ট পরেছিলেন। পায়ে ছিল ওয়েজেস। এ ধরনের লেইড ব্যাক শু রয়েছে তার গো টু আউটফিটের তালিকায়। তিনি নিটওয়্যারেও আগ্রহী বলে মনে করা হয়। গোল্ড শেভরন নিট টপ আর মিডি স্কার্ট পরেছেন একাধিকবার। মনোক্রোমাটিক লুক বেইডেড বেল্ট, গোল্ড ব্রেসলেট আর রাউন্ড শেপ কানের দুলে তিনি সাবলীল। রাতের আয়োজনে সিকুইন ড্রেসে হাজির হতে দেখা গেছে তাকে। রালফ লরেনের ডিজাইনের এই পোশাক একাধিকবার জিল বাইডেনের সঙ্গী হয়েছে।
রাজনীতি আর ফ্যাশন দুনিয়া—দুই মেরুর দুই জগৎ হলেও ফার্স্ট লেডির বিষয়ে আগ্রহের কমতি নেই। এ কথা তারা ভালোই জানেন। তাই পছন্দের ডিজাইনারের নকশায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে হাজির হন মানুষের সামনে।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top