skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I লাউড লোগো

একদিকে এটি প্রকাশ করে ডিজাইনের সৌন্দর্য; অন্যদিকে ভোক্তার অবস্থান ও নৈতিকতাকেও নির্দেশ করে। ফলে এটি হয়ে উঠেছে ফ্যাশনের চিরায়ত ধারা

লোগো ট্রেন্ডটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। বর্তমানে এটি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে দখল করে নিয়েছে। আইকনিক ব্র্যান্ডগুলো তাদের লোগোকেই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বানিয়ে তুলেছে। নব্বইয়ের দশকের বিখ্যাত এই ট্রেন্ড যেন কখনো পুরোনো হওয়ার নয়। ফেন্দি, গুচি, বারবেরি, ভ্যালেন্তিনোসহ আরও অনেক নামিদামি ডিজাইনার ব্র্যান্ড সহস্রাব্দে পৌঁছানোর একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে এ ট্রেন্ডকে। পোশাকের ওপর বড় করে ব্র্যান্ডের লোগোর এই ডিজাইনগুলো এখনকার প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর একটি পছন্দের উপায় বলেই মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ বিশ বছর পর ফ্যাশন জগতে ট্রেন্ডটির পুনরায় প্রবেশের পেছনে সবচেয়ে বড় হাত রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার। এতে প্রভাবিত প্রজন্মের জন্য নতুন কোনো ট্রেন্ড সেট করা অথবা পুরোনো ট্রেন্ড ফিরিয়ে আনা কঠিন কিছু নয়।
এই বছর লোগো ফ্যাশনের এই প্রবণতা আগের বছরগুলোর তুলনায় আরও বেশি পরিমার্জিত। টি-শার্ট এমনকি বিভিন্ন ড্রেসেও লোগো পরিধান করাটা এখন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তৈরির একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্র্যান্ডগুলোর জন্য এটি অর্থ উপার্জন এবং নিজের বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে কার্যকর কৌশল বলা চলে। মানুষজনও ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাদের বিলাসবহুল লোগো পরিধান করে থাকে।
মিডিয়ায় মিলান ফ্যাশন উইকেও লোগো ম্যানিয়া দেখা গেছে। তবে এটা যে শুধু ড্রেসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এমন কিছুই নয়। মোজা, জুতা, ব্যাগের মতো জিনিসগুলোতেও বেশ জনপ্রিয় এই ট্রেন্ড।
আমেরিকান টিভি সেলিব্রিটি কাইলি জেনার নিজের পোশাকে সুপরিচিত ব্র্যান্ডের লোগো পরে লাখো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি যখন ইনস্টাগ্রামে ফেন্দির মনোগ্রাম দেওয়া পোশাকের ছবি পোস্ট করেন, মুহূর্তেই মিলিয়নের বেশি লাইক চলে আসে। আবার সুপারমডেল গিগি হাদিদকেও তার ফেন্দি লোগো দেওয়া সোয়েট শার্ট পরতে দেখা গেছে।
অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড তাদের স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখে লোগো পরিবর্তন করছে। সম্প্রতি বিখ্যাত ব্র্যান্ড ভ্যালেন্তিনোর নতুন লোগোটি ব্র্যান্ডেরই নামের ব্লক লেটার দিয়ে ডিজাইন করা, অর্থাৎ VLTN। এই লোগো আবার হ্যান্ডব্যাগ, জ্যাকেট এমনকি হুডিতেও দেখা গেছে। তাহলে কেন এই বিগ বোল্ড লোগোগুলো আবার ট্রেন্ডে এসেছে? নব্বই দশকে এটি ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। লোগো এখন বার্তা পৌঁছে দিতে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানান দিতে ব্যবহৃত হয়।
বিগ বোল্ড লোগোগুলোর আরেকটা বড় কারণ হলো কোলাবোরেশন। যেমন ফেন্দির ক্ষেত্রে একটা সফট এফ রয়েছে, যা মূলত স্পোর্টস ব্র্যান্ড ফিলার সঙ্গে কোলাবোরেশন চিত্রিত করে। দীর্ঘদিন ধরে বেছে নেওয়া স্ট্যাটাস সিম্বল, বেছে নেওয়ার একটি উপায়।
যে ফ্যাশন হাউসগুলো নামের পুনরাবৃত্তিমূলক লোগো বানিয়েছিল, সেই ব্র্যান্ডগুলো বহু বছর পর আবারও লেবেল ফিস্ট নিয়ে ফিরে এসেছে। ফেন্দি ব্র্যান্ডের মনোগ্রাম যুক্ত ব্যাগগুলোতে এসেছে পরিবর্তন। এবার এফ লোগোতে জ্যামিতিক নকশা তৈরি করা হয়েছে। ফেন্দি এবং ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের মতো ব্র্যান্ডগুলোর হ্যান্ডব্যাগ থেকে পাফার জ্যাকেট—সবকিছুর ওপর তাদের ব্র্যান্ডের ছাপ ও লোগো ডিজাইনে নান্দনিকতা যোগ করে। ২০১০-এর মাঝামাঝি ম্যানিয়া আবারও চূড়ান্ত উচ্চতায় পৌঁছেছিল, বিলাসবহুল স্ট্রিট ওয়্যার ব্র্যান্ড ভেটেমন্টসের আগমনের ফলে। ডিএইচএল লোগো টি-শার্টের কথা মনে আছে? যার জন্য ক্যাটনিপ প্রমাণিত হয়েছিল স্ট্রিট স্টাইল সেট হিসেবে। উল্লেখ ২০১৫ সালে আলেক্সান্দ্র মিশেল গুচির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি এই কাজে অপ্রতিরোধ্য। তৈরি করেন প্লে-ফুল সব লোগো।
কিন্তু এখন আমরা একটি বৈশ্বিক মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আমাদের অর্থনীতির মন্দাকাল চলছে। তাহলে কি লোগো ম্যানিয়া আবারও হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে? ডেটা অ্যানালিটিকস ফার্ম হিউরিটেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যবেক্ষণ করে। তাদের পরিসংখ্যান এসেছে প্রথম লকডাউনের সময় বিলাসবহুল সামগ্রী-পোস্টগুলো ৪০% হ্রাস পেয়েছিল। সর্বোপরি ডিওর, শ্যানেলের মত ব্র্যান্ড ব্যবহারকারী অনেকেই যখন তাদের চাকরি, জীবিকা হারাচ্ছেন, তখন ব্র্যান্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটাই স্বাভাবিক। মহামারির ফলে ওয়্যারড্রোবের পায়জামা এবং আরামদায়ক লাউঞ্জওয়্যারের দিকে ঝুঁকেছেন অনেকেই। অগ্রাধিকারগুলো পরিবর্তিত হয়েছে।
WGSN-এর সিনিয়র প্রিন্ট এবং গ্রাফিক স্ট্র্যাটেজিস্ট হ্যানা ওয়াটকিন্স বলেন, নব্বই দশকের স্পোর্টস-ড্রিভেন লোগো ম্যানিয়া কমতে শুরু করেছে। ব্র্যান্ডিং নয়, বরং এর পরিবর্তে আরও পরিশীলিত এবং সূক্ষ্ম উপায়ে কাজ করা হচ্ছে।
অতীতে, কঠিন সময়গুলোতে প্রায়শই ফ্যাশন ট্রেন্ডগুলো হারিয়ে যেত। কিন্তু লোগো ট্রেন্ডগুলোর চাহিদা এই সময়েও কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে ফ্যাশনবোদ্ধাদের পরামর্শ, যেকোনো ব্র্যান্ড বেছে নেওয়ার পেছনে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ব্র্যান্ডের মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসে মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন। সুন্দর পোশাক তৈরির জন্য শুধু লোগোই যথেষ্ট নয়। সেটি কি টেকসই? তাতে কি পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে; কিংবা সামাজিক কারণগুলোর পক্ষে দাঁড়াচ্ছে কি না, এসবের সন্তোষজনক উত্তর থাকা জরুরি।
 বৃষ্টি আলম
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top