skip to Main Content

ইভেন্ট I ঢাকা আর্ট সামিট ২০২০

জাতীয় চিত্রশালায় অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা আর্ট সামিট। ৯ দিন ধরে। দেশ-বিদেশের বহু শিল্পীর সমাগম ঘটল। হলো প্রদর্শনী। শিল্পকলার বিভিন্ন শাখায়

পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা আর্ট সামিট। ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ৯ দিনের আয়োজনটির উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, ঢাকা আর্ট সামিটের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক সোবহান এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক নাদিয়া সামদানী।
ঢাকা আর্ট সামিটের প্রধান ভেন্যু ছিল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবন। আয়োজনের অংশ হিসেবে জাতীয় চিত্রশালা সংলগ্ন জায়গায় তৈরি করা হয় স্কাল্পচার গার্ডেন। উদ্বোধনীর দিন প্রথম পরিবেশনা ছিল চিত্রশালার ৬ নম্বর গ্যালারিতে। একই দিন সকালে সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড পারফরম্যান্সে অংশ নেন বাংলাদেশি শিল্পী আরিফুল কবির। এবং সন্ধ্যায় ‘টুগেটার’ শিরোনামের পরিবেশনায় অংশ নেন করাকৃত অরুণাদ্ধচল এবং অ্যালেক্স ভোজিও।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ছিল একটি বিশেষ প্রদর্শনী। চিত্রশালার প্রথম তলায় ‘লাইটিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। সহায়তা প্রদান করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। যেখানে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক আলোকচিত্রের বিশাল সংগ্রহ।
সামিটে অংশ নেন বাংলাদেশ ছাড়াও ৪৪টি দেশের ৫০০ জনের বেশি চিত্রশিল্পী-ভাস্কর, কিউরেটর, শিল্প-সমালোচক, আর্ট প্রফেশনাল, শিল্প সংগ্রাহক, স্থপতি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে ছিলেন দিলারা বেগম জলি, রোকেয়া সুলতানা, সেলিমা কাদের চৌধুরী, লুইস হ্যান্ডারসন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, আরিফুল কবির, ইয়াসমিন জাহান নূপুর, হেক্টর জামোরাহ, সালেহ হাসান, রাফেল হেফটি, টনি কোকস, রশিদ চৌধুরী, শেনাই জাভেরি, থেরেসে চৌধুরী খান, মরগান কোয়ানট্যান্সে, আয়ো আকিনবেদ, রেহানা জামান, এসি এশুন, ড. অর্নব বিশ্বাস, সাজেদুল হক, অ্যানা পাই, আনিয়কায় ইগনে, ফায়হাম ইবনে শরীফ, আলফ্রেড সান্টানা, শীন অ্যান্ডারসন, ফারহান করিম, সাইম সুন, নূরুর রহমান খান, জয়দেব রওজা, অঞ্জলিকা সাগর, রানিয়া স্টেফেন, কৌদ ইশুন, মুস্তাফা জামান, স্নেহা রাগাভান, শায়লা শারমিন, মাহমুদুল হাসান দুলাল, ইফতিখার দাদি, সামিনা ইকবাল, মিং টিয়ামপো, রাফায়েল গ্রিসে, বোবা টোরে, লুটা-তা কাবা ইন্দ্রি, শিমুরেনজা, সালমান নাওয়াতি, কাদ্দু ইয়ার্যাক্স, হ্যাডিল অ্যাশলি, মোহাম্মদ হার্ব, এলিজাবেথ প্রভিনীল, জন টাইন, চৌং-ডাল বো, লোট্টে হিয়েক, এলিজাবেথ জর্জিস, সংযুক্ত স্যান্ডারসন প্রমুখ।
এ বছরও সামিট আয়োজনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পচর্চার ওপর আন্তর্জাতিক বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন। যেখানে একসঙ্গে ৫০০-এর অধিক প্রতিষ্ঠিত এবং দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পী তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেন। এর মধ্যে ৩০০ জনই ছিলেন বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্পী। ছিলেন প্রথিতযশা শিল্পীরাও। সামিটে বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন চিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী। তার তত্ত্বাবধানে ‘রুটস’ বা ‘শেকড়’ শিরোনামে এক বিশেষ প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। যেখানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, কামরুল হাসানসহ দেশের চিত্রকলা শিক্ষাদানে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন শিল্পীদের জীবনকর্ম তুলে ধরা হয়।
ঢাকা আর্ট সামিটে অংশ নেন বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, ফ্রান্স, ইতালি, ইরান, শ্রীলঙ্কা, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সুপরিচিত শিল্পী ও শিল্পীদের পরিচালিত বিভিন্ন আর্ট প্রজেক্ট। ছিল দেশ-বিদেশের শিল্প-সমালোচক, শিল্প-সংগ্রাহকদের অংশগ্রহণে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, একক ও দলবদ্ধ বক্তৃতা। শিল্পকলা বিষয় প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।
সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে ১২ জন বাছাইকৃত শিল্পীর সমন্বয়ে ‘সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদর্শনীর আয়োজনও ছিল এবার। এই দ্বিবার্ষিক আয়োজনের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের ২২ থেকে ৪০ বছর বয়সী উদীয়মান ও প্রতিভাবান শিল্পীদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানে সহায়তা করা।
সামিটে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ১২টি আর্টিস্ট গ্রুপকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেগুলো দলবদ্ধ হয়ে শিল্পকর্ম চর্চা করে। গ্রুপগুলোর মধ্যে ছিল আর্টপ্রো, ব্যাক আর্ট, চারুপীঠ, আকালিকো, গিদরি বাউলি, হিলস আর্টিস্ট গ্রুপ, যথাশিল্প, সাঁকো, শনি মঙ্গল আড্ডা অন্যতম।
ঢাকা আর্ট সামিটের এবারের আয়োজনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল সম্পূর্ণ ‘প্লাস্টিকমুক্ত’ প্রদর্শনী। কোনো কিছুতেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি আসনেও। বিশেষ করে পরিবেশসম্মত কাগজ, বাঁশ, বেত ও কাঠ ব্যবহার করা হয়। সাজসজ্জার জন্য সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রদর্শনীতে ছিল না কোনো এয়ারকন্ডিশনের ব্যবহার।
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

 আব্দুল্লাহ আল মামুন
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top