skip to Main Content

ইভেন্ট I ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৯ বিশ্বসাহিত্যের বর্ণাঢ্য উৎসব

নবমবারের মতো বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা লিট ফেস্ট। বিভিন্ন দেশ ও ভাষার সাহিত্যিকদের সমাগম ঘটল এই উৎসবে

৭-৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা লিট ফেস্টের নবমবারের মতো আসর। এ সাহিত্য উৎসবে প্রতিবারের মতোই বিভিন্ন দেশের প্রায় তিন শ লেখক-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-সমালোচকের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। আলোচনার বিষয়বৈচিত্র্য এবং সাহিত্যপ্রেমী দর্শক-শ্রোতাদের অংশগ্রহণে তিন দিনের এই আয়োজন বিশ্বসাহিত্যের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন বুকারজয়ী বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মনিকা আলী। ৭ নভেম্বর সকালবেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্ল্যানারি ফিকশন: ‘রেজিস্ট অর রিফিউজ’-এর মধ্য দিয়ে আয়োজনের ধারাবাহিক পর্ব শুরু হয় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে। এতে উপস্থিত ছিলেন মনিকা আলীসহ পাঁচ দেশের পাঁচজন নারী লেখক। অন্যরা হচ্ছেন ব্রাজিলীয় লেখক মারিয়া ফিলোমেনা বইসো লেপেসকি, ফিনল্যান্ডের মিন্না লিন্ডগ্রেন এবং ব্রিটিশ-ব্রাজিলীয় লেখক জারা রদ্রিগেজ ফাউলার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভারতীয় লেখক সুমনা রায়।
পরে দিনের অন্যান্য ধারাবাহিক পর্বে অংশ নেন কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, জহর সেন মজুমদার, গৌতম গুহ রায়, প্রিয়াংকা দুবে, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কামাল চৌধুরী, মাসরুর আরেফিন প্রমুখ। বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্মরণে ছিল কবিতাপাঠের আসর। উদ্বোধনী দিনের বড় আকর্ষণ ছিল জেমকন সাহিত্য পুরস্কার। এ বছর কথাসাহিত্যে অভিষেক সরকার এবং কবিতায় রফিকুজ্জামান রণি পুরস্কৃত হন।
৮ নভেম্বর শুক্রবার ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলোচনা ও সেশনগুলোর প্রধান বিষয় হয়ে ওঠেন। সবার দৃষ্টি কাড়ে ‘শেখ মুজিব : আইকন অব পোস্ট কলোনিয়াল লিবারেশন’ শিরোনামের আলোচনা। এতে অংশ নেন ভারতীয় কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক সামসাদ মর্তুজা।
দ্বিতীয় দিনে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘ইন দ্য টাইম অব দ্য আদারস’ শিরোনামের আয়োজনটিও আকর্ষণীয় ছিল। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের লেখক নাদিম জামান। ‘ইন দ্য টাইম অব দ্য আদারস’ নাদিম জামানের প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস, যার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনে কসমিক টেন্ট ও নজরুল মঞ্চ মুখর ছিল শিশুদের কলতানে। ওদের সঙ্গে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কসমিক টেন্টে বিজ্ঞান বাক্সের রাতুল খানের সঙ্গে শিশুরা মেতেছিল মজার সব খেলায়। ‘ফান উইদ ফিজিকস’ অনুষ্ঠানে রাতুল খান ৭-১০ বছর বয়সী শিশুদের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উপহার হিসেবে বিজ্ঞানসামগ্রী পেয়ে খুশি হয় শিশুরাও। একই সময়ে শিশুদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ চিত্রকর, অ্যানিমেটর এবং লেখক ক্রটিস জবলিং। নজরুল মঞ্চে ‘চিলড্রেনস ওয়ার্ল্ডস ফ্যান্টাসি’ শীর্ষক আয়োজন ছিল ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য। শিশুরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনে জবলিং সৃষ্ট বিভিন্ন চরিত্রের গল্প। এদিন আরও প্রায় ২৪টি বিষয়ে সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশের শতাধিক লেখক, গবেষক, সমালোচক অংশ নেন।
৯ নভেম্বর ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তুমুল বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি সন্ধ্যার সেশনগুলো। এর আগে তৃতীয় দিনের সকাল শুরু হয় ইসকনের সংগীত দলের ভজন কীর্তন দিয়ে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্য দিয়েই সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় দিনের পর্বগুলো।
সকালে নজরুল মঞ্চে একটি শিশুতোষ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির নাম ‘সাগর তীরে’। উšে§াচনের পর লেখক নাজিয়া জেবীন বই থেকে শিশুদের গল্প পড়ে শোনান। পরে একই মঞ্চে ‘দ্য এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’ বইয়ের লেখক নন্দিতা খান তার বই থেকে শিশুদের গল্প শোনান।
পরে আবারও একই মঞ্চে ওঠেন কার্টিস জবলিং। তিনি শিশুদের বিভিন্ন শব্দজট ও ছবির মাধ্যমে নানা জিনিস শেখান। কয়েকটি গল্পের সঙ্গে অভিনয় করেও দেখান। তিনটি সেশনেই শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এই পর্বে ‘লনে রিভাইভিং দ্য আর্ট অব স্টোরিটেলিং’ শীর্ষক শিশুতোষ আলোচনায় মাদিহা মোরশেদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন শিশুবিশেষজ্ঞ ফ্রান হুরলি, নিউরোসায়েন্টিস্ট নাইলা জামান খান ও সাজিয়া জামান।
সকালের পর্বে বাংলা একাডেমির কসমিক টেন্টে ‘পাওয়ার অব পিকচার’ সেশনে উপস্থিত ছিলেন গ্রাফিক নভেলিস্ট ও কার্টুনিস্ট ফাহিম আঞ্জুম এবং চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপননির্মাতা আবরার আখতার। সঞ্চালক ছিলেন কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়। স্থিরচিত্র ও সচলচিত্রের শক্তি ও সমাজে এর প্রভাব নিয়ে সেশনের আলোচনা শুরু হয়। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক নিউইয়র্ক টাইমসের পূর্ব আফ্রিকাবিষয়ক ব্যুরোপ্রধান জেফরি গেটেলম্যান তার বই ‘লাভ, আফ্রিকা: আ মেমোয়ার অব রোমান্স, ওয়ার অ্যান্ড সারভাইভাল’ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। ‘লাভ, আফ্রিকা’ শীর্ষক সেশনটি সঞ্চালনা করেন জাফর সোবহান।
সকালে সবচেয়ে জমজমাট আলোচনা ছিল ভারতীয় রাজনীতিক শশী থারুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সি আর আবরারের আলাপ। পরে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত ‘সাহিত্য ও সাংবাদিকতা: দ্বৈত সত্তার মিল-অমিল’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কবি ও সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত, লেখক ও সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী।
বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘অন দ্য রোড: ট্রাভেল রাইটিং উইদ উইলিয়াম ডালরিম্পল’ শীর্ষক সেশন। এই সেশনে প্রধান আলোচক ছিলেন ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল। বেলা তিনটায় মঞ্চ ও ব্যক্তিজীবনের অনন্য জুটি ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদার আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মঞ্চে বসেন জীবন ও পেশার গল্প নিয়ে। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন নাট্যকার ও শিক্ষক আব্দুস সেলিম।
দিনের সর্বশেষ সেশনে ‘শংকর’ নামে খ্যাত দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মনিশংকর অংশ নিতে পারেননি শারীরিক অসুস্থতার কারণে। দক্ষিণ ভারতীয় সাংবাদিক ও সাহিত্যিক তিশানি দোশির আবৃত্তি ও নৃত্যনাট্যের মধ্য দিয়ে ২০২০ সালে দশম ঢাকা লিট ফেস্ট আরও বড় পরিসরে করার প্রত্যয়ে পর্দা নামে বিশ্বসাহিত্যের বর্ণাঢ্য এই উৎসবের। সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, আয়োজনের পরিচালক সাদাফ সায ও ব্রাজিলিয়ান লেখক মারিয়া ফিলোমেনা বৈসো লেপেস্কি।

 আব্দুল্লাহ মামুন
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top