skip to Main Content

ইভেন্ট I সপ্তম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা ২০১৯

স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এসএমই ফাউন্ডেশন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিয়ে এর কাজ। প্রতিষ্ঠার প্রায় সাত বছর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি করে আসছে জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা। সম্প্রতি শেষ হয়েছে সপ্তম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা।
নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৬ মার্চ শনিবার বেলা ১১টায় এর উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি এবং শিল্পসচিব মো. আবদুল হালিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কে এম হাবিব উল্লাহ। মেলাটি ২২ মার্চ শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে।
এবারের আসরে সারা দেশ থেকে ২৫০টি এসএমই উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১৮৮ জন নারী এবং ৯২ জন পুরুষ। অর্থাৎ, ৬৭ শতাংশই নারী।
মেলায় দেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াজাত সামগ্রী, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, আইটি পণ্য, প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিক, হস্তশিল্প, ডিজাইন ও ফ্যাশনওয়্যার ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শিত ও বিক্রি হয়েছে। কোনো বিদেশি পণ্য মেলায় প্রদর্শন বা বিক্রি হয়নি। এসএমই ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার স্টল ছিল মেলায়। শিফা তেমনই একজন, যিনি মেলায় থাই ক্লে পণ্যসম্ভার নিয়ে স্টল নিয়েছেন। স্টলের নাম ‘স্বর্ণলতা’। শিফা জানালেন, বিসিক থেকে বেশ কিছু পণ্যের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঢাকার রামপুরায় গড়ে তুলেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তার সঙ্গে কাজ করছেন আরও অর্ধশত নারী। ঋণ নিয়ে স্বনির্ভর হয়েছেন নীলফামারী জেলার ফরিদা ইয়াসমিনও। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পুষ্প হস্তশিল্প’। এসএমইর সন্ধান পাওয়ার আগে ছোট ছোট এনজিও থেকে অল্প ঋণ নিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিলেন। ৫২ জন নারীকে স্বাবলম্বী করেছেন ফরিদা। কাজ করেন পাট নিয়ে। দোলনা, শিকা, ফতুয়া, চাদর, নকশিকাঁথা, বেডশিট ও কুশন কভার তৈরিতে সিদ্ধহস্ত তারা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাটের তৈরি করপোরেট সামগ্রী সরবরাহ করেন। পাটের কাজ করে ২০১২ সালে জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেন ফরিদা।
মেলায় দেখা মিলল ‘পায়েল নকশি’ স্টলের। কর্ণধার ঊর্মিতা জানালেন, বর্তমানে আড়াই শ নারী কাজ করছেন তার সঙ্গে। সবাই নকশিকাঁথা সেলাইয়ে পটু। এ ছাড়া বেডশিট, শাড়ি ও থ্রিপিসের কাজ করেন ঊর্মিতা ও তার কর্মীরা।
হাতে সেলাই করা বেড কভার, অ্যাপ্লিকে, মেশিনে করা অ্যাপ্লিকে এবং প্রিন্টের বেডকভার নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে ‘রং বাহার’। প্রতিষ্ঠাতা মৌসুমী শারমিন এবং শতাধিক নারীর পরিশ্রমে তৈরি হয় বেড কভারগুলো। বিভিন্ন রং ও নকশার বেড কভারগুলো পাওয়া যাবে ঢাকার ইস্টার্ন মল্লিকায়, তাদের শোরুমে।
পাটপণ্যের পাশাপাশি মেলায় চামড়াজাত পণ্যের আধিক্যও ছিল। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘কে জি লেদার লিমিটেড’ চামড়া পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিল। ব্যাগ, বেল্ট, মানিব্যাগ, করপোরেট গিফট আইটেম—সবই চামড়ার। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কে এম মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ভারতের তুলনায় আমাদের দেশের চামড়ার মান ভালো। তবে ভারতীয়রা চামড়াশিল্পের আনুষঙ্গিক কেমিক্যালগুলো অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহ করতে পারে। আমরা সেদিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি। কেমিক্যালগুলো বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের।’
সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী পণ্য নিয়ে হাজির ছিল বসুদেবের প্রতিষ্ঠান ‘এক্সিল্যান্ট ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রো ফুডস অ্যান্ড কসমেটিকস লিমিটেড’। ৮০টির বেশি সৌন্দর্যপণ্য উৎপাদন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। দেশীয় ভেষজ উপাদানে তৈরি হয় এগুলো। অ্যালোভেরা, নিম, তুলসী, পুদিনা, আদা, আমলকী, রসুন ব্যবহার করা হয় কাঁচামাল হিসেবে। বসুদেবের ভাষায়, তাদের পণ্যগুলো ক্ষতিকর নয়। বিএসটিআই থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নিম ও অ্যালোভেরা টুথপেস্ট, ভেজিটেবল ফেয়ারনেস ক্রিম, অ্যালোভেরা জেল, নিম তুলসী ও অ্যালোভেরা ফেসওয়াশ, অরেঞ্জ ফেসওয়াশ, নিম তেল, নিম অর্গানিক সাবান, অ্যালোভেরা সাবান, তুলসী সাবান, হারবাল শ্যাম্পুসহ প্রায় ৩০টি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির উদ্দেশ্যে মেলায় এনেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বসুদেব। অর্গানিক পণ্যের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্রের স্টলও ছিল মেলায়। এম ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এনেছিল পরিবেশবান্ধব কাগজের কাপ এবং স্কচটেপ। প্রতিষ্ঠানের কর্মী রাজিব জানান, কাগজের কাপগুলো ডিসপোজেবল। অর্থাৎ, ২০ দিনের মধ্যেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়। মেলায় শতরঞ্জি, ডাইনিং টেবিল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট ও ব্যাগ নিয়ে এসেছিল রংপুর ক্রাফট। পাট ও কটন দিয়ে তৈরি হয় তাদের পণ্যগুলো। পাট, কাপড় ও চামড়ার সমন্বয়ে তৈরি জুতা নিয়ে এসেছিল ইমপ্রুভ গ্রুপের নবাবী ফুটওয়্যার লিমিটেড। জুতার উপরের অংশ কাপড় এবং নিচের অংশ পাটের, তার উপর চামড়ার আবরণ। নেত্রকোনায় শতাধিক কর্মীর প্রচেষ্টায় তৈরি হয় এ ধরনের ফুটওয়্যার। নারী-পুরুষ ছাড়াও শিশুদের জুতা ছিল নবাবী ফুটওয়্যারে। এ জুতাগুলো বিদেশে রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। স্থানীয় বাজারের সঙ্গে এ ধরনের জুতার পরিচয় করিয়ে দিতেই এসএমই পণ্য মেলায় তাদের উপস্থিতি।
সিলেটের প্রতিষ্ঠান ‘মোইরং’-এর স্টলে ছিল শতভাগ কটনের মণিপুরি শাড়ি। কর্মী প্রণয় সিংহীর দাবি, অন্যান্য জায়গায় যেসব মণিপুরি শাড়ি পাওয়া যায়, সেগুলো মিক্সড ম্যাটেরিয়ালে তৈরি। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ কটন নয়। কিন্তু মোইরাংয়ের মণিপুরি শাড়ি শতভাগ কটনের। শাড়ি ছাড়াও থ্রিপিস ও গামছা তৈরি করে ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এ প্রতিষ্ঠান। শাড়ির কথা যখন এলো, তখন জামদানি বাদ থাকবে কেন! রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে তৈরি হওয়া জামদানি প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য এনেছিল আজিজুল জামদানি। প্রতিষ্ঠানের মালিক নবী হোসেন জানান, ঘুড্ডি ফুল, ইয়ারিং ফুল, সন্দেশ ফুলসহ বাহারি সব রঙ নকশার জামদানি তৈরি করেন তারা। মোট ৪০ জন প্রশিক্ষিত কারিগর আছেন আজিজুল জামদানিতে। হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি নানা ধরনের পণ্য মেলায় এনেছিল ফাইটেক্স বিডি। হোগলার এসব পণ্য কোনো প্রকার মেশিন ছাড়াই তৈরি হয়। তাদের কারখানা কাপাসিয়ায়। প্রতিষ্ঠাতা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা চাকরি করব না, চাকরি দেবো—এ উদ্দেশ্যে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। হোগলা ছাড়াও অরিগামী নিয়ে কাজ করছি আমরা।’
এদিকে ঝালকাঠির হারিয়ে যাওয়া শীতলপাটি শিল্প পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে ঝালকাঠির শীতল পাটি উন্নয়ন সমবায় সমিতি। ‘মোত্রাক’ নামের একজাতীয় গাছের ছাল দিয়ে তৈরি হয় এসব পাটি। বর্তমানে ২০০ জন কর্মী কাজ করেন সমিতিতে। এসব তথ্য দেন সমিতির সভাপতি তাপস কুমার।
আইটি উদ্যোগ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মেলায় ছিল গিকি সোশ্যাল লিমিটেড। এটি মূলত বিজনেস সল্যুশন। একটি ওয়েবসাইট। মার্কেটিংয়ের সব রকম সল্যুশন পাওয়া যাবে এ ওয়েবসাইট থেকে। ফেসবুকে কোনো পোস্ট বুস্ট করতে চাইলে তাদের ওয়েবসাইট থেকে করা যাবে বলে জানিয়েছেন গিকির শাওন।

 শিবলী আহমেদ
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top