skip to Main Content

এই শহর এই সময় I চিত্র ও কবিতা

স্বপ্ন আর স্মৃতির রঙে বাংলার রূপজগৎকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন এস এম সুলতান। এই ভূখন্ডের প্রকৃতি ও গণমানুষের বস্তু আর ভাবজগতের লীলা প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর চিত্রকর্মে। সেসব চিত্রকলা যেমন গাঢ় সব রঙে বর্ণময়; তেমনই প্রকৃতি, জীবজগতের সান্নিধ্যে চিত্রবহুল ছিল সুলতানের জীবন। তবে সে সব অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে। ছবি আঁকার পাশাপাশি তিনি বাঁশি বাজাতেন, সময় যাপন করতেন পশুপাখিদের সঙ্গে। খোলা আকাশে চাঁদের তলায় ভাবমগ্ন হয়ে কাটিয়ে দিতেন গোটা রাত। তবে দৈনন্দিন নানা সংগ্রামের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছিল সুলতানের জীবন। কয়েক দশকজুড়ে নাসির আলী মামুন শিল্পী এস এম সুলতানের নিঃসঙ্গ যাত্রা, উদ্দীপনা, সংগ্রাম দেখেছেন। সম্প্রতি ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে শিল্পী সুলতানের জীবনের ওপর নাসির আলী মামুনের ক্যামেরায় ফ্রেমবদ্ধ হওয়া ২৭টি আলোকচিত্র নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো একটি বিশেষ প্রদর্শনী। আশ্বিনের রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় এসব সাদা-কালো আলোকচিত্রে ফুটে উঠেছিল মগ্ন চিত্রকরের জীবনের কিয়ারোস্কিউরো। এই আলোকচিত্রগুলোয় সুলতানের শিল্প-অন্বেষণের যাত্রা যেমন প্রকাশিত হয়েছে, সেভাবেই নাসির আলী মামুনের জন্যও ভিন্নমাত্রার এক শিল্পযাত্রায় পরিণত হয়েছে এই প্রদর্শনী।
‘এক ভবঘুরের মহাজাগতিক পরিভ্রমণ’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে ধরা পড়েছে চিত্রকর সুলতানের নানা মুহূর্ত। বাঁশির সুরে মগ্ন, চিত্রকর্মে ধ্যানস্থ, আদরের বিড়াল কোলে সুলতান, শিল্পীর পোর্ট্রেট, তাঁর হাতের ভঙ্গিমার ক্লোজআপ, রঙের জগৎ- এসবই সাদাকালো আলোকচিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন ফটোগ্রাফার নাসির আলী মামুন। তিনি সুলতানের প্রকৃতিপ্রেম, জীবপ্রেম, প্রকৃতির সঙ্গে মানবজীবনের সম্পর্ক আবিষ্কারের যে ভ্রমণ, তাকে পরম যত্নে তুলে এনেছেন তাঁর ক্যামেরায়। সাদাকালোয় আলোকচিত্রীর ছবি যে বৈভব নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল গ্যালারির দেয়ালে, তা দর্শকেরা প্রত্যক্ষ করেছেন।
এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন উপলক্ষে গত ২০ সেপ্টেম্বর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে আয়োজন করা হয়েছিল এক বিশেষ অনুষ্ঠানের। পাশাপাশি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শিরোনামেই ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি আনিক বুখডা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, বিশিষ্ট শিল্পী মনিরুল ইসলাম, স্থপতি ও শিল্পী মুস্তাফা খালিদ পলাশ এবং সমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ। সভাপতিত্ব করেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক অলিভিয়ে দন্তজে।
চিত্রকরের অন্তর্জগতের ক্যানভাসে রঙ-তুলি-পেন্সিল-প্যালেট-তেল-পানি-চারকোল ইত্যাদি যেমন মহাজগৎ নির্মাণ করে, মহাজাগতিক আলোছায়া ঝাঁপিয়ে নামে চিত্রকরের ক্যানভাসজুড়ে, তেমনই কবির অন্তর্জগত প্রকাশিত হয় শব্দে, চিত্রকল্পে, কাব্যিক সৃষ্টিশীলতায়। যেমন তরুণ কবি, খুলনার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অনুপম মন্ডলের সন্ধান পেয়েছিল অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা ‘পরস্পর’ ও ‘অগ্রদূত’ প্রকাশনা। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ১২৯ জন কবির পান্ডুলিপি থেকে বাছাই করে তাঁরা পেয়ে যান অনুপম মন্ডলের ‘অহম ও অশ্রুমঞ্জরি’ নামক কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপিটি। ২০১৮ সালের ঢাকা বইমেলায় সেটি মলাটবদ্ধ হয়। ওই পান্ডুলিপির জন্যই পরস্পর-অগ্রদূত যৌথভাবে অনুপমকে সম্মানিত করলো আবুল হাসান পুরস্কার, ২০১৭-এ।
২৪ সেপ্টেম্বর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অনুপম মন্ডলকে আবুল হাসান পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। কবির হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তাঁর হাতে ১ লাখ ১ হাজার ১০১ টাকার চেক তুলে দেন ইউসিবি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল্লাহ আল মামুন। ওই একই অনুষ্ঠানে পরস্পর-অগ্রদূতের তরফে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় অধ্যাপক হায়াৎ মামুদকে। শিক্ষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য। তাঁকে সম্মাননা তুলে দেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। গল্পের বাঁকবদলে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় কাজল শাহনেওয়াজকে। তাঁর হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। কবিতায় বাঁকবদলের জন্য সম্মান জ্ঞাপন করা হয় কবি সাজ্জাদ শরিফকে। তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেন কবি আলতাফ হোসেন। পুরো অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন কবি সোহেল হাসান গালিব।

 অতনু সিংহ
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top