skip to Main Content

এই শহর এই সময় I দুটি প্রযোজনা

১৯৩৯ সালে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের প্রবল উত্থানের কালে জার্মান নাট্যকার ব্রের্টল্ট ব্রেখটের লেখা যুদ্ধবিরোধী এপিকধর্মী ক্রনিক্যাল প্লে বা মহাকাব্যিক ধারাবিবরণী নাটক ‘মাদার কারেজ অ্যান্ড হার চিলড্রেন’-এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন কবীর চৌধুরী। নাম ‘জননী সাহসিকা’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ সম্প্রতি জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকটি মঞ্চস্থ করল, যার নির্দেশনায় ছিলেন সঞ্জীব কুমার দে। অভিনয় করেন নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় আবর্তনের ছাত্রছাত্রীরা। জাতীয় নাট্যশালায় নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পাশাপাশি টানা ৪-৬ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনেও প্রদর্শিত হয়েছে।
অ্যানা ফিয়ার্লিং, এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তিনি একটি ভ্রাম্যমাণ ক্যান্টিনের মালিক। যুদ্ধের বীভৎসতা ও ধ্বংসলীলার মধ্যে বুদ্ধি এবং অসীম সাহসের সঙ্গে অ্যানা তাঁর জিনিসপত্র যেভাবে বাঁচিয়েছেন, তারই স্বীকৃতিস্বরূপ লোকজন তাঁকে উপাধি দেয় ‘জননী সাহসিকা’। অ্যানা ফিয়ার্লিংয়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে এলিফ বেপরোয়া ও দুঃসাহসী। তবে ছোট ছেলে খুবই সৎ। তাকে ডাকা হয় সুইস পনির বলে। মেয়ে ক্যাট্রিন অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ। কিন্তু বাক্শক্তিহীন। আর খাবার-গাড়ি বা ভ্রাম্যমাণ ক্যানটিনটি যেন পরিবারের পঞ্চম সদস্য। জননী সাহসিকা যুদ্ধে তাঁর তিন সন্তানকেই হারান। অতঃপর শুরু হয় যুদ্ধ আর জীবনসংগ্রামে একাই এগিয়ে চলার গল্প। নির্দেশনাসহ আবহ সংগীত, আলোকসম্পাত—সবকিছুই নাটকের মুডের সঙ্গে দারুণভাবে সংগতিপূর্ণ। নাটকটি শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে এনেছেন বলে জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ।
মে মাসে আরও একটি সুন্দর নাট্য প্রযোজনার সাক্ষী থেকেছে এই শহর। সম্প্রতি রাজধানীর নাটক সরণি বা বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে পরপর দুদিন মঞ্চস্থ হয় তাড়ুয়া নাট্যদলের নতুন নাটক ‘লেট মি আউট’। রুনা কাঞ্চনের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন বাকার বকুল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ১৯২৮ সালের একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে এটি রচিত। যাকে ঘিরে এ ঘটনা, সেই মার্কিন মহিলা ক্রিস্টিন কলিন্সের সাক্ষাৎকার, ওই ঘটনা নিয়ে রচিত একটি বই এবং একটি সিনেমাকে কেন্দ্র করে নাটকটি রচনা করেছেন রুনা কাঞ্চন।

নয় বছরের ছেলে ওয়াল্টার কলিন্সকে হারিয়ে ক্রিস্টিন লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দ্বারস্থ হয়। ক্রিস্টিন কলিন্স ফিরে পেতে চায় তার সন্তানকে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় অসহায় হয়ে পড়ে ক্রিস্টিন। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে ক্রিস্টিন কলিন্সের অভিযোগ আলোড়ন ফেলে দেয়। এদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যা বা গুম-খুন ঘটনার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে এক পুলিশ আধিকারিক আত্মদ্বন্দ্বে ভোগেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের নাগরিক জীবন ক্রমেই সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় শহরের শান্তি প্রার্থনায় এবং একাকিনী সন্ত্রস্ত মিসেস কলিন্সের পাশে এসে দাঁড়ান প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জার ধর্মযাজক।
উপমহাদেশসহ বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতায় নাটকটির তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কেননা, রাষ্ট্রীয় অবিচার আর ক্ষমতার সে¦চ্ছাচারিতার শিকার কমবেশি সবাই। এই জায়গা থেকে এমন একটি নাটকের নির্দেশনা, প্রযোজনার জন্য বাকার বকুলের ধন্যবাদ প্রাপ্য। নাটকটির মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন আসলাম অরণ্য, সংগীত পরিকল্পনা করেছেন রবিউল ইসলাম শশি ও ইসমাইল পাটোয়ারী। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন শাহনাজ জাহান। কোরিওগ্রাফ ফরহাদ শামীম। শিল্পনির্দেশনায় মোহাম্মদ শামিম শেখ। প্রযোজনাটির সার্বিক সমন্বয় করছেন ইসতিয়াক হোসাইন। প্রত্যেকেই নিজেদের শিল্পপ্রতিভাকে নাটকটির মঞ্চায়নে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেছেন। তাই প্রযোজনাটি হয়ে উঠেছে শিল্পসম্মত এবং সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top