skip to Main Content

এই শহর এই সময় I দৃশ্যকল্প ছাপিয়ে

চিত্রকলার ভাষা শুধু রেখা ও রঙে সীমাবদ্ধ নয়। মুড, চিহ্ন, প্রতীক, টোন ইত্যাদি সহযোগে প্রকাশ্য ফ্রেমের ভেতর বর্ণনার মধ্যে অব্যক্ত থাকে বহুস্তরীয় ভাবনা। আর তার আবহের স্তর ভেদ করলে উপলব্ধ হয় ভেতরে থাকা এসেন্স বা সারমর্ম। আবার এমনও তো হয়, পরিপার্শ্বের নিয়ত বদলের ফলে এক প্রতীক থেকে আমরা চলে যাই প্রতীকান্তরে, এমনকি প্রতীক, রূপক ও টেক্সট- এসবই ফুরায়। থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন, যে বনলতা আসলেই বর্ণনা অতিক্রম করে যাওয়া প্রতীক ফুরানো এম্পটি টাইম ও স্পেসের ধারণা।
সোজা কথায় বলতে হলে, চিত্রভাষা যেমন বর্ণনাধর্মী হয়, তেমনই বর্ণনাও বহুরৈখিক মাঝেমধ্যে, টেক্সটের নীরবতা থেকে যেমন সাবটেক্সট উঁকি দেয়, তেমনই চিত্রকলার ভেতরে থাকে আরও অথৈ কিছু চিত্রকল্প। অথবা বর্ণনাতীত আরও কিছু, যা ইঙ্গিতময়।
আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক দুটি চিত্র প্রদর্শনীর প্রসঙ্গ উত্থাপনে আমরা এই বিষয়ে আরও একটু আলাপ চালাতে পারি। কথা হচ্ছিল দৃশ্যকল্পের বিবরণ প্রসঙ্গে। শুরুতেই শিল্পী গোলাম মোহাম্মদের ‘রূপসী বাংলা’ শিরোনামের চিত্র প্রদর্শনীর কথা বলা যেতে পারে। গত ৬ থেকে ১৭ জুলাই লা গ্যালারিতে চলেছে এই প্রদর্শনী। ‘রূপসী বাংলা’ প্রদর্শনীতে বহুস্তরীয়ভাবে প্রকৃতি, মানুষ আর স্মৃতি ও সত্তাকে প্রকাশ করা হয়েছে বর্ণনার অন্তর্ভাব থেকে, বিমূর্তভাবে। জলরঙ, অ্যাক্রিলিক, চারকোল ও মিক্সড মিডিয়ায় মোট ৩৯টি ছবি ছিল প্রদর্শনীতে। গ্র্যাভিটি কালার ব্যবহারে যেসব চিত্রকলা শিল্পীর অর্ন্তদৃষ্টিকে ফুটিয়ে তুলেছে। চটের উপরে অ্যাক্রিলিক দিয়ে বন্ধ কোনো দফতর অথবা জেলখানার একটি গেটের মতো কিছু একটা তিনি সৃষ্টি করেছেন, যার নাম দিয়েছেন ‘ওল্ড মেমোরিজ’। ছবিটি দেখে মনে হতে পারে অবচেতনের দরজার ভেতরে স্মৃতিরা আটকে রয়েছে, আর তার উপরে পড়েছে সময়ের আস্তরণ। অথবা পুরোনো স্মৃতির নেহাতই একটি স্ট্যাটিক ফ্রেম। আর ‘বুড়িগঙ্গা নদীর কান্না’ ছবিতে টাইমের মতো করে বয়ে চলা নদীকে ধরতে চেয়েছেন। থমকে যাওয়া সময়ের মতো ভারাক্রান্ত বুড়িগঙ্গার স্থবিরতা ধরা পড়েছে ছবিটিতে।
বিবরণের ভেতরকার বিমূর্ত উপলব্ধির চিত্রকলার খ- খ- ফ্রেমের ভেতরে শিল্পী একটি ন্যারেটিভের ইঙ্গিতও রেখেছেন। ওই প্রদর্শনীতে তার মোট ৩৯টি ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল।
লা গ্যালারিতেই আরও একটি প্রদর্শনী উপভোগ করা গেল। ‘ইমেজেস অব ইনার ভিশন’ বা ‘অন্তর্নিহিত ভাবের প্রকাশ’ শিরোনামে শিল্পী হালিমুল ইসলাম খোকনের চিত্র প্রদর্শনী। বিবরণধর্মিতাকে অস্বীকার করে এসব ছবি। কখনো পশুজগতের প্রতি ইঙ্গিত, কখনো শেওলাধরা রঙচটা বিবর্ণ দেয়াল অথবা পানিতে তৈরি হওয়া কোনো জলবিম্ব- ইত্যাদি উপাদান বিমূর্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। আঙ্গিকে কখনো ফুটে উঠেছে গুহাচিত্রের শিল্পরীতি, কখনোবা বিমূর্ত টেক্সচারের ফর্মের ভেতর দিয়ে বর্ণনাতীত কোনো মুডকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। দৃশ্যমান টেক্সচার ও তার শূন্যতা জোরালো করেছে এই ছবিগুলোর কম্পোজিশনকে। শিল্পীর অন্তর্দৃষ্টিতে যে ছবি দেয়ালার মতো ফুটে ওঠে অথবা কোনো গভীর এক আচ্ছন্নতার মুহূর্তের যে চিত্রভাষা, তা প্রকাশ পেয়েছে হালিমুল ইসলাম খোকনের ছবিতে। ২০ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলেছে।
 অতনু সিংহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top