skip to Main Content

এক্সক্লুসিভ I বাগদানের মেগা ইভেন্ট

ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানির মেয়ের বাগদানের অনুষ্ঠানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশের ছেলে রিপন বিশ্বাস। পুরো আয়োজনে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। কাছ থেকে তদারক করেছেন সূচনা থেকে সমাপ্তি। আর অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ভারতীয় মহাতারকাদের সঙ্গে। তারই হাতে-গরম অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন আপনাদের সঙ্গে

আল্পস পর্বতমালার অধিকাংশটা জুড়ে সুইজারল্যান্ড। সেই সুইস সৌন্দর্যের এক টুকরো আমি দেখতে পাই এই লেক কোমোকে ঘিরে। সুইজারল্যান্ড ইতালির সীমানাকেন্দ্রিক হওয়ায় এখানে কোনো সন্ত্রাসীর হুমকি নেই। হবে বলেও মনে হয় না। হয়তোবা এই সৌন্দর্য, শৃঙ্খলা আর ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধার কারণে প্রায় ছয় শ অতিথির বিশাল বহর নিয়ে ভারতের ধনকুবের রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি এসেছিলেন লেক কোমোতে। উপলক্ষ, যমজ ছেলের পর তাঁর একমাত্র মেয়ে ইশা আম্বানির বাগদান। পাত্র দীর্ঘদিনের বন্ধু আনন্দ পিরামল। যা হয় আরকি! আনন্দের বাবা অজয় পিরামলও যে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক। মুকেশের সঙ্গে তাঁর আছে ব্যবসায়িক সখ্য। ছেলে-মেয়ের বাগদানের আয়োজন যে নান্দনিক হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে অনুষ্ঠানের দিন দশেক আগ থেকেই কাজ শুরু। আমার দায়িত্ব ছিল লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি দোভাষী হিসেবে তাঁদের কাজে গতিসঞ্চার করা।
হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনি থেকে জুলিয়া রবার্টস, আন্তনিও বান্দোরাস, ডেভিড বেকহামরা প্রায়ই ছুটি কাটাতে আসেন এই লেক কোমোতে। গত মাসেও প্রিন্স হ্যারি তাঁর প্রিন্সেস মেগান মারকেলকে সঙ্গে নিয়ে জর্জ ক্লুনির বাড়িতে এসেছিলেন। আমার মতো কিছু সৌভাগ্যবান তাঁদের দেখলাম বোটে ঘুরতে। বিশ্ববিখ্যাত সংগীতশিল্পী ম্যাডোনার কেনা একটি বাড়ি আছে এখানে।
এ বছরের শুরুতেই মহারাষ্ট্রের মহাবালেশ্বর মন্দিরে ইশাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন আনন্দ পিরামল। তারই পরিণতি লেক কোমোর এই বাগদান অনুষ্ঠান। গত ২১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ইশা ও আনন্দের বাগদান অনুষ্ঠান কার্যক্রমের সূচনা হয়। চাঁদের হাট বসে লেক কোমোতে। অভিনেত্রী সোনাম কাপুর ও তাঁর স্বামী আনন্দ আহুজা মিলান ফ্যাশন উইক এই উপলক্ষে লেক কোমোতে হাজির হন। শ্রীদেবী কন্যা খুশী আর জাহ্নবীকেও দেখা গিয়েছে এই অনুষ্ঠানে। সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা আমির খান। ছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও তাঁর সঙ্গী নিক জোনাস। ফ্যাশন ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রার পোশাকে বাগদানে দেখা যায় এই যুগলকে। মনীশ মালহোত্রা নিজেও উপস্থিত ছিলেন এই আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে। উপস্থিত হয়েছিলেন বলিউডের পরিচালক করণ জোহর আর অভিনেতা অনিল কাপুর। ছিলেন জুহি চাওলাও।
এই অনুষ্ঠানে দেখলাম, মুকেশ আম্বানি স্বয়ং মেয়েকে হাঁটিয়ে নিয়ে বাগদানের মঞ্চে নিয়ে গেলেন। সঙ্গে ছিলেন আম্বানিপুত্র অনন্ত ও আকাশ আর পূত্রবধূ শুকলা মেহতা। এ সময় কন্যা ইশা পরেছিলেন বেজ রঙের পোশাক। আনন্দ সেজেছিলেন ঐতিহ্যবাহী পোশাকে।
২১ সেপ্টেম্বর স্বাগত মধ্যাহ্নভোজনের মাধ্যমে বাগদান অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পর্দা নামে ফেয়ারওয়েল ডিনারের মধ্য দিয়ে। এই জমকালো অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন জন লিজেন্ড। ছিল আতশবাজির রোশনাই। ফর্মাল এনগেইজমেন্ট পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল লম্বার্ডি টাউনে।
সূচনাদিনের মধ্যাহ্নভোজে অতিথিরা ক্যাজুয়াল শিকে সমবেত হয়েছিলেন। ডিনার ছিল ‘ব্ল্যাক টাই ইভেন্ট’। তবে সেখানে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাককেও স্বাগত জানানো হয়। ২২ তারিখ দুপুরের পার্টির খাবারের থিম ছিল ইতিলিয়ান ফিয়েস্তা। কোমোয় অনুষ্ঠান। তাই কোমো ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে পোশাকের থিম ছিল কোমো শিক। রাতে ডিনার ও ড্যান্স পার্টিতে ছিল ককটেল অ্যাটায়ার। বিদায়ী মধ্যাহ্নভোজে অতিথিরা সমবেত হয়েছিলেন স্মার্ট ক্যাজুয়ালে।
মিউজিক, ড্যান্স, ককটেল ডিনারকে মাত্রাময় করে আলোর রোশনাই। ইশা ও আনন্দের বাগদান অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে মেগা কার্নিভ্যাল। রাজাউজিরদের বিয়ে কিংবা বাগদান, অঙ্গুরি বিনিময়ের অনুষ্ঠান চাক্ষুষ করার অভিজ্ঞতা সবার হয় না। সেটাই হয়েছে অতিথিদের। আমার তো বটেই। কারণ আমার কাজ এটা নয়। আমি খেলার মাঠের মানুষ। তবে এই ধরনের কাজে অফার পেয়ে ছাড়তে চাইনি। বরং নিয়মিত কাজ বাদ দিয়ে লেগে পড়ি অনন্য আয়োজনের সাক্ষী থাকতে। ফলে আমার সুবিধা হয় খুব কাছ থেকে মহাতারকাদের দেখার। তাঁদের সঙ্গে কিছুটা হলেও সময় কাটানোর। তাঁদের যেসব ছবি আমি দেখেছি সেগুলো নিয়েও কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তবে এখানেও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ক্রেজ আমাকে মুগ্ধ করেছে।
এখানে বলে রাখা ভালো, এই বাগদান অনুষ্ঠানের জন্য চারটি সুসজ্জিত ভিলা ভাড়া করা হয়। প্রতিটির জন্য ভাড়া দিতে হয়েছে ৪-৫ কোটি রুপি। আলোকসজ্জা থেকে অন্যান্য আর পাঁচ শতাধিক কর্মীর বেতনভাতার জন্য গুণতে হয়েছে নিযুত অর্থ। গোটা পঞ্চাশেক বোট ভাসানো হয় ভিলাগুলোর পাশে। আর এই ভিলাগুলো ছিল লেক কোমোর ধারে। নয়নাভিরাম লোকেশনে। অতিথিদের জন্য আরো ছিলো কোমো এভিয়েশন ক্লাবের উড়োজাহাজ। নিরাপত্তা নিচ্ছিদ্র করার দায়িত্ব দেয়া হয় তিনটি বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানকে। অন্য দিনগুলো তো বটেই, বিশেষ করে তাদের দৃষ্টি ছিল একটি শনিবারকে ঘিরে। সেটা ছিল ২২ সেপ্টেম্বর। এদিন অতিথিরা নাস্তা সারেন লেকের ধারের সবচেয়ে সুন্দর ভিলা ভাল রিয়েল্লোয়। এই ভিলার এক কোণে দাঁড়িয়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আর নিক জোন্স যে ছবিটি তোলেন তা পোস্ট করে তাদের ইন্সটাগ্রাম পেজে। বিশ্ববিখ্যাত ডিজাইনার ডলশে গ্যাবানার স্যুটে উপস্থিত ছিলেন অনিল কাপুর।
সকাল ১১টায় অতিথিরা উপস্থিত হন ভিলা ডি এস্টে। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর এই বাড়িটি সেই ১৫৬৮ থেকেই বিত্তবানদের অবকাশ যাপনের প্রথম পছন্দ। বৃটিশ রাজপরিবারের বাকিংহাম প্রাসাদের মতই এর ব্যালকনি। মুকেশ আম্বানি সেখানে উপস্থিত হন মেয়ে ইশাকে নিয়ে। দিনের তৃতীয় পর্বের অনুষ্ঠান ছিল দুই কিলোমিটার দূরের ভিলা গ্যাস্টেলে। আমির খানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অতিথিরা মেতে ওঠেন উদযাপনে। আমার দায়িত্ব ছিল টাইমকিপারের। আমি স্টপওয়াচ নিয়ে দাঁড়িয়ে। আর লগন-এর নায়ক আমিরের হাতে মাইক্রোফোন। অনুষ্ঠানে একটা পর্ব ছিল দড়ি টানাটানি। এখানে খানাপিনার সাঙ্গে ছিল উপহারের ব্যবস্থাও। অতিথিদের জন্য রাখা হয়েছিল ডলশে গ্যাবানার স্টল। ফলে যে যার খুশিমতো সেখান থেকে নিতে পেরেছে।
বিজনেস ম্যাগনেট মুকেশ আম্বানিকে দেখলাম এই আনন্দ-অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। খুব সাধারণ তার সাজপোশাক। কিন্তু ভীষণ হাস্যোজ্জ্বল। ইশা নিজেও আমির আর শাহরুখ খানদের কতটা কাছের স্নেহেরও, তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ২৬ বছরের ইশা আমিরকে নাম ধরেই ডাকছে।
নিরাপত্তার কারণে একজন ইভেন্টকর্মীর ছবি তোলার কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু অনিল কাপুরের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে তিনি বললেন তুলেই ফেলো একটা সেলফি। বাকিটা আমি দেখছি। যেমন কথা তেমন কাজ।

অনিল কাপুরের সঙ্গে লেখক

ডিনার ছিল কোমোর মিউজিয়াম ভিলা আলমোতে। এর ভাড়া পাঁচ কোটি রুপি। নিক-প্রিয়াঙ্কা, আমির-রীনা, শাহরুখ, অনিল কাপুর, জুহি চাওলা, সোনম-আনন্দসহ বলিউডের তারকা আর ভারতীয় ধনাঢ্যদের পাশপাশি ছিলেন বিদেশি অতিথিরাও। সব মিলিয়ে সংখ্যায় অন্তত পাঁচ শতাধিক। রাতে খানাপিনার এলাহি আয়োজন ছিলই। জ্বলেছে রঙিন আলো। বেজেছে সুর। এসবে মাত্রা দিয়েছে আতশবাজির রোশনাই। ফলে কখন ভোর চারটে হয়েছে, তা কারো খেয়াল ছিল না।
তবে যে দায়িত্ব ছিল তা চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা এই ধরণের আয়োজনের সঙ্গে থাকা। অভিজ্ঞতা অর্জন। মহাতারকাদের সান্নিধ্যসুখ উপভোগ। সেটা আমার হয়েছে।
এই অনুষ্ঠান লেক কোমো আর আশপাশে বসবাসরত দক্ষিণ এশীয়দের ভাবমূর্তিকে দারুণ উজ্জ্বল করেছে।

ছবি: লেখক ও সংগ্রহ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top