skip to Main Content

এডিটরস কলাম I অটুট থাকুক জীবনের সৌন্দর্য

একবার লাইফস্টাইলে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে পাল্টে ফেলা যায় পুরো জীবন। তা যেকোনো সময় থেকে হতে পারে। তবে শীতে এই বদল ভালো, কারণ পুরো প্রকৃতিই তো এই মৌসুমে বদলে ফেলে তার রূপ ও স্বভাব। এর সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে, এমন কথা নেই।

দিন ছোট হয়ে গেছে। রাত বড়। এই সূর্য দেখা গেল কুয়াশা ঠেলে, কাজে আর কথায় তা হেলে পড়লো সন্ধ্যার আকাশে। রোদ ম্লান আর মিষ্টি। সন্ধ্যাও অন্য মৌসুমের চেয়ে গভীর আহ্লাদে ভরা। রাত আরও মোহনীয় ও সুখকর, যদি দিনের কাজগুলো ঠিকঠাক সেরে ফেলা যায়।
দিন ছোট হয়ে গেল বলে এটা ভাবা ঠিক নয়- যে কাজগুলো করতে হয়, সবই ছোট হয়ে গেছে। কাজ তো কাজই। সময়মতো সুষ্ঠুভাবে করতে পারলে তার ফল পাওয়া যায়, সার্থকতাও মেলে। রুটিনটা ঠিক রাখা চাই। পরিস্থিতি বুঝে, গুরুত্ব মেনে কোনটা আগে করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত জরুরি। ঢাকায় যে ট্রাফিক জ্যাম, তাতে পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে যে কাজের উদ্দেশে রওনা দিন না কেন, এই বাস্তবতা মাথায় নিয়ে পথে বের হতে হবে। ধরা যাক, আপনার একটা মিটিংয়ে হাজির হওয়ার কথা সকাল দশটায়, রাস্তার চরিত্র ইতিমধ্যে জানা হয়ে থাকলে এটা নিশ্চয়ই বুঝবেন যে কটায় বের হতে হবে। এসব কেউ কাউকে শিখিয়ে দেয় না। কেননা, সবাই প্রায় একই অবস্থায় আছে এবং আপনা থেকে প্রত্যেকের একটা ছক তৈরি হয়ে যায়। তবে, আগের রাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া থাকলে ভালো, সকালে উঠে প্রথম কাজ কী হতে পারে। শীতের মৌসুমে সন্ধ্যার পর বিনোদনের হাতছানি থাকে, এমন অনেক আমন্ত্রণ থাকে, যা এড়ানো যায় না। এড়াবেন কেন! সময়মতো যাবেন, কিন্তু যদি পরের দিন সকালে কর্মস্থলে যেতেই হয় বা জরুরি কোনো কাজ থাকে- যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখবেন, রাত গভীর করা যাবে না। ওভারলোডেড হওয়া থেকে নিজেকে সামলে রাখতে হবে। বাড়ি ফিরে অনেকেই, বিশেষত ছেলেরা বাইরের পোশাক গায়ে নিয়ে শরীর এলিয়ে দেন বিছানায়। কিন্তু এটা একেবারেই উচিত নয়। যত ক্লান্তি থাকুক, পোশাক পাল্টে বাসায় পরার পোশাক পরে নিতে হবে। তবে তা যেন পরিষ্কার হয়। তারপর হালকা গরম পানিতে হাত-মুখ-পা ধুয়ে পরিষ্কার তোয়ালেতে মুছে ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে শুয়ে পড়–ন। তবে এর আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেওয়া ভালো। শোয়ার সময় কোনো গ্যাজেট সঙ্গে রাখবেন না। যাদের দেরিতে ঘুম আসে, তারা শুয়েই পরের দিনের প্ল্যান করতে থাকুন, কোন কাজের অগ্রাধিকার দেওয়া যায়, ভাবুন, সিদ্ধান্ত নিন। কিন্তু দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ একেবারেই নয়। সব ইচ্ছা, চিন্তা, পরিকল্পনা আর কাজের মধ্যে আশার স্থানটা বড় করে রাখুন।
শীতের সকালটা খুব অন্য রকম। ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমাতে পারলেই ভোরে শয্যাত্যাগ সম্ভব। সকালটাও উপভোগ করা যায়, বাইরে হাঁটতে গিয়ে। কুয়াশার মধ্যে গাছগাছালি, জলাশয়, রাস্তা ইত্যাদি দেখার অন্য এক আনন্দ আছে। অধিকন্তু শিশিরভেজা আর প্রশান্তিকর হাওয়ার মধ্যে হাঁটার ফলে শরীরের জড়তা কাটে, সারা দিনের স্ট্রেস সামলানোর উপযুক্ত হয়। মন তো প্রফুল্ল হয়ই। অন্যদিকে, দিনের শুরুটা খোলা আকাশের নিচে স্বচক্ষে দেখার মধ্যে সুখ আছে। তাতে জীবনের নতুন আস্বাদ অনুভব করা যায়। শীতের সকালে যারা আলস্যবশত লেপ কিংবা কম্বলের আরামদায়ক উষ্ণতার ফাঁদে পড়ে থাকেন, তাদের বলি- শয্যা ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়–ন। সপ্তাখানেক এই প্র্যাকটিস করলে দেখবেন, শরীর আগের চেয়ে সতেজ ও নির্ভার লাগছে।
একবার লাইফস্টাইলে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে পাল্টে ফেলা যায় পুরো জীবন। তা যেকোনো সময় থেকে হতে পারে। তবে শীতে এই বদল ভালো, কারণ পুরো প্রকৃতিই তো এই মৌসুমে বদলে ফেলে তার রূপ ও স্বভাব। এর সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে, এমন কথা নেই। শীতের নির্জীবতাকে স্বাগত না জানিয়ে তা প্রতিরোধ করে নিজেকে সজীব ও সুখী রাখার অনুশীলনটাই জরুরি। সে জন্য একটা রুটিন তৈরি করা গেলে এবং তা সুষ্ঠুভাবে অনুসরণ করতে পারলে কেবল সুস্থতা নিশ্চিত হবে না, জীবনও আনন্দদায়ক হতে বাধ্য।
শীত বলবে, গোসল করো না। কিন্তু তা মানবেন কেন? প্রতিদিনই, সম্ভব হলে দুবেলা গোসল করবেন। সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। হালকা গরম পানি দিয়ে। ফ্রেশ লাগবে। ক্লান্তি দূর হবে। ত্বক উপযুক্ত হবে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের জন্য। খেতে ভালো লাগবে, ঘুমও হবে প্রশান্তিকর। রাত জেগে চ্যাটিং, টিভি দেখা, গেমিং- এসব বাদ দিন। নিজের দেহমনের প্রশান্তির জন্য নিজেকেই প্রস্তুত করতে হয়। কেউ তো অন্যের জীবন যাপন করে না।
বছরের শেষ মাসটা উপভোগ করার ভালো একটা উপায় হলো পরিবার নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। সে জন্য একটা পরিকল্পনা হাতে নিন। পরিবারের সবার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করুন, মতামত নিন। পেশা, জীবিকা কিংবা ক্যারিয়ারের চাপে বছরজুড়ে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সম্পর্কে খানিকটা জড়তা এসেছে, তা কেটে যাবে। পরিবারের মতো নির্ভরযোগ্য ও সুখকর আশ্রয় পৃথিবীতে নেই।
প্রকৃতি যত নির্জীব হোক, প্রাণবন্ত থাকতে হবে আমাদের। জীবনের সৌন্দর্য ও গতিশীলতা অটুট রাখার জন্য।

মডেল: শারলিনা
ওয়্যারড্রোব: রি’লাস
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: স্পার্কেল
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top