skip to Main Content

এডিটরস কলাম I অভিযোজিত হই

পরিবেশ সব সময় একই অবস্থায় থাকে না। এর বদলে যাওয়া গতিশীল একটা ব্যাপার, ফলে কোনো পরিবর্তনই দীর্ঘস্থায়ী নয়। পরিস্থিতি মেনে যে নিজেকে পাল্টাতে পারে, সেই টিকে থাকে এবং বিকশিত হতে পারে

আমরা জানি, প্রতিকূল কিংবা অনুকূল যা-ই হোক, পরিবেশ সব সময় একই অবস্থায় থাকে না। এর বদলে যাওয়া গতিশীল একটা ব্যাপার, ফলে কোনো পরিবর্তনই দীর্ঘস্থায়ী নয়। পরিস্থিতি মেনে যে নিজেকে পাল্টাতে পারে, সেই টিকে থাকে এবং বিকশিত হতে পারে। এটা সবারই জানা—মানুষ মরে গেলে পৃথিবীতে তার কিছুই করার থাকে না, বেঁচে থাকলে প্রয়োজন মেনে ক্রমাগত বদলাতে হয় নিজেকে। সত্যটি সব সময় প্রীতিকর নয়, কখনো কখনো নিন্দাসূচকও বটে; কিন্তু কথাটার মধ্যে প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষের অভিযোজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তার জীবনসংগ্রাম, অস্তিত্ব রক্ষা ও বিকাশের পথটি দেখানো হয়েছে।
বিষয়টি আমি অন্যভাবে দেখি। বিশ্বপ্রকৃতি কখনো একই অবস্থায় থাকেনি, ফলে মানুষকে এর পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়েছে। গ্রীষ্মে যেমন সে শীতকালীন জীবন যাপন করে না, তেমনি তাকে বিভিন্ন পরিবেশে অভিযোজিত হতে বা খাপ খাওয়াতে হয়। এই প্রক্রিয়া শুরুতে কেবল জৈবিক তাগিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সভ্য হওয়ার পর, বিশেষত ঐতিহাসিক কালপর্ব থেকে তাতে ক্রমে যুক্ত হয় সামাজিক প্রয়োজন এবং মানুষ জড়িয়ে পড়তে শুরু করে মানসিক ও সাংস্কৃতিক অভিযোজনের সঙ্গে।
এখন আর পরিবেশ বলতে কেবল চারপাশের প্রাকৃতিক অবস্থাকে বোঝায় না; বোঝায় সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকেও। মানুষই এগুলো তৈরি করেছে, বিপন্নও কম করেনি। কিন্তু পরিবর্তনটা সত্য, এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে টিকে থাকা মুশকিল। যেমন ধরুন, এই ঢাকা শহরে বাসস্থান থেকে কর্মস্থলে প্রয়োজনীয় কোনো গন্তব্যে যেতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। এই বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েই আপনাকে চলতে হবে। এর মানে এই নয় যে, ব্যাপারটা মেনে নিয়ে রাস্তাতেই সময় নষ্ট করতে থাকলেন। অ্যাডজাস্টমেন্টের অর্থ হচ্ছে পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে বদলে নেওয়া। তাহলে এই ক্ষেত্রে কী করতে হবে? এমনভাবে নিজের সময়শৃঙ্খলা তৈরি করুন, যাতে কোথাও দেরি না হয়ে যায়। হলেও তা যেন কোনো ক্ষতির কারণ হতে না পারে। বাস্তবতা হলো, অফিসে দেরি হলে কাজে বিলম্ব হবে, হাসপাতালে দেরি হলে রোগী বিপন্ন হবে। তাই সময় হাতে নিয়ে রওনা দেওয়াই ভালো। ট্রাফিক জ্যাম মাঝেমধ্যে এত তীব্র হয়ে ওঠে যে, হাতে নেওয়া সময়ও পার হয়ে যায় রাস্তায়। এটাও সামলানো যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। পরিবার কিংবা সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগের কাজটা যাত্রাপথে তো সেলফোনে সেরে নেওয়া যায়ই; ইন্টারনেটযুক্ত ল্যাপটপ সঙ্গে থাকলে প্রয়োজনীয় ড্রাফট, ই-মেইল ইত্যাদি কাজও করে নিতে পারেন। রাস্তায় বসে থাকাকে তখন সময়ের অপচয় বলে মনে হবে না, আর কাজও মিটে গেল! এটাই পরিস্থিতির সঙ্গে আপনার খাপ খাওয়ানো বা সঠিক বোঝাপড়া।
উল্লিখিত বাস্তবতা না হয় নিজেই সামলানো গেল। এমন অনেক সমস্যা রয়েছে আমাদের জীবনে, যেগুলোর সমাধান একার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনিতেই এখনকার শহুরে জীবন বহুমুখী সমস্যা, চাপ আর জটিলতায় ভরা। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা ইস্যু ব্যক্তির একার পক্ষে সামলে ওঠা কঠিন এবং কখনো কখনো অসম্ভব। তবে নিয়মিত যোগাযোগ, শেয়ারিং ইত্যাদি অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সহজ করে দেয়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ ও শেয়ারিংয়ের একটা অর্থ আছে। তা হলো, আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে তিনিও আপনাকে গুরুত্ব দেবেন। এই সম্পর্কই বেশি দরকার। কেবল প্রয়োজনেই কারও সঙ্গে সম্পর্কিত থাকাটা যান্ত্রিক দেখায়। এখন হয়তো ভাবছেন, এর জন্য সময় কোথায়। সময় আছে, উপায়ও আছে। পড়িমরি ছুটতে হবে না। দিনের একটা সময়, বিশেষত যখন আপনাকে রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে, তখনকার অবসরটা কাজে লাগানো যায়। ডিভাইস তো আছেই। পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের বিকাশের অনুকূল অভিযোজন বা খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কী হতে পারে! কিন্তু কখনোই অস্থির হবেন না। অস্থিরতায় মানুষ ভুল করে বেশি। এটা আমাদের কোথাও অভিযোজিত হতে দেয় না। বরং আত্মবিনাশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিদিনের বাস্তবতা কীভাবে মোকাবিলা করবেন, তা ঠিক করতে হয় নিজের প্রয়োজন ও পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের নিরিখেই। এই লেখায় বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিজেকে কেমন করে খাপ খাইয়ে নেবেন, তা বোঝানোর জন্য একটা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছি মাত্র। বৃহৎ বা সামগ্রিক বিবেচনায় এটুকু বলতে পারি, জগৎ ও জীবনচক্র টিকে আছে অভিযোজনের মধ্য দিয়ে। বিকাশও এর ওপর নির্ভরশীল। শেক্‌সপিয়ার বলেছিলেন, লাইফ ইজ অ্যাডজাস্টমেন্ট অ্যান্ড কম্প্রোমাইজ। মানে, খাপ খাওয়ানা আর বোঝাপড়াই জীবন। কিন্তু কিসের সঙ্গে? অবশ্যই পরিবেশের সঙ্গে। মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে হয়তো সবচেয়ে বেশি, ফলে জীবজগতে তারা টিকে আছে। বিকশিতও হতে পেরেছে। ডাইনোসরের মতো অতিকায় প্রাণী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি বলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবীর বুক থেকে। আজ তাদের দেহাবশেষগুলো জাদুঘরে প্রদর্শনের বস্তু। যা হোক, মানুষের এই টিকে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে পরিবেশ বা পরিস্থিতি অনুযায়ী তার বুদ্ধি, শ্রম আর নিয়মানুবর্তিতার ধারাবাহিক অনুশীলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top