skip to Main Content

এডিটরস কলাম I যে সাজ মঞ্চে ওঠার জন্য

বউ সাজাতে গিয়ে দেখেছি- কেউ ফর্সা হতে চান, কেউ হতে চান জাঁকালো, কেউবা প্রিয় কোনো তারকার রূপে নিজেকে দেখতে চান। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ করেছি, তারা যা চান, তার সঙ্গে তাদের মুখশ্রী, দেহকাঠামো, ব্যক্তিত্ব, অবস্থান ইত্যাদির কোনো না কোনোটি মেলে না

আড়াই দশক ধরে কনে সাজিয়ে আসছি। কত অভিজ্ঞতা যে হয়েছে আজ পর্যন্ত, লিপিবদ্ধ করতে গেলে তা বিপুলাকৃতির একটা গ্রন্থের রূপ নেবে। নানা বয়সের, চেহারার, রঙের, গড়নের মেয়েরা এসেছে নববধূর সাজ নিতে, বিভিন্ন পেশা-পরিবার-সম্প্রদায় থেকে। সব মিলিয়ে এই সত্য আমার কাছে বড় হয়ে ধরা দিয়েছে- প্রত্যেকেই নিজের মতো করে সুন্দর হতে চান। এটাও লক্ষ করেছি, নববধূর সাজ সম্পর্কে প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা ধারণা রয়েছে। এই বিদ্যমানতার মধ্য থেকে আমাকে কাজ করতে হয় এমনভাবে, যাতে সে নিজেকে দেখে সুখী বোধ করে, আবার কনেসৌন্দর্য সম্পর্কে আমার যে স্টেটমেন্ট, তা-ও লক্ষ্যযোগ্য হয়ে ওঠে। পেশার সূত্রে প্রায়ই আমাকে কিছু-না-কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।
এক নারী তার হবু পুত্রবধূকে নিয়ে এলেন আমার কাছে, কনেসাজের জন্য। তিনি নিজের মতো করে তার ছেলের বউকে সাজাতে চান, অন্যদিকে কনে চান নিজের মনমতো সাজতে। আমি ভেবে উঠতে পারছিলাম না, কার কথা মেনে তাকে সাজাবো। আমরা জানি, কনের সাজে সমকালীন ট্রেন্ড মানতে হয়, তার মুখশ্রী, ত্বকের রঙ, পোশাক, অ্যাকসেসরিজ- সবই ভাবনায় রাখা জরুরি। এত কিছুর মধ্যে আমার অভিজ্ঞতালব্ধ সৌন্দর্যবোধ, বিশেষত কনের সাজ কেমন হওয়া দরকার, তা-ও বিবেচনায় রাখতে হয়। ফলে, এমন এক সমন্বয় মুখ্য হয়ে ওঠে, যাতে সাজতে আসা কনের ইচ্ছা, তার স্বজনের চাওয়া, ট্রেন্ড, আমার নিজের অভিপ্রায়- সবকিছুর একটা হারমোনি তৈরি হয়। অন্তত বিয়ের মঞ্চে তাকে যেন সুন্দর দেখায়, নিজের দিকে তাকিয়ে সে আনন্দ বোধ করে এবং তার স্বজনেরা খুশি হয়।
বউ সাজাতে গিয়ে দেখেছি- কেউ ফর্সা হতে চান, কেউ হতে চান জাঁকালো, কেউবা প্রিয় কোনো তারকার রূপে নিজেকে দেখতে চান। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ করেছি, তারা যা চান, তার সঙ্গে তাদের মুখশ্রী, দেহকাঠামো, ব্যক্তিত্ব, অবস্থান ইত্যাদির কোনো না কোনোটি মেলে না। সমস্যাটি বেশ জটিল। এর সমাধান কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। তাদের উদ্দেশে আমি বলি, আপনি খুব সুন্দর, অন্য কারও সঙ্গে এর তুলনা হয় না। বিয়ের যে মঞ্চে আপনি বসবেন, সেখানে আপনার অনন্য সৌন্দর্যই সবাই দেখবেন, সেটাকে আরও অনুকূল ও আকর্ষণীয় করে তোলা বেশি জরুরি। আপনাকে নিজের মতোই অসামান্য সৌন্দর্যের অধিকারী হয়ে উঠতে হবে। কেননা, এখান থেকে শুরু হচ্ছে আপনার একান্ত ও নতুন জীবন। অন্যের রূপ কিংবা বেশ ধরে কেউ নিজের হতে পারে না। আপন সৌন্দর্য অন্যের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারাটাই ব্যক্তিত্বের মূল কথা। অধিকন্তু, আপনি দেখতে যেমনই হোন, যত জমকালো সাজই নিন না কেন, ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য ধারণ করতে না পারলে সবই বৃথা।
কনে সাজানোর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাকে অনেকের আবদারের মুখোমুখি হতে হয়। এই মুহূর্তটা আমি বেশ পছন্দ করি, কেননা আমি অনুভব করি- কীভাবে কনের রূপে সুন্দর হওয়া যায়, সে ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বিপুল। এতে আমার কাজের সঙ্গে তাদের রুচির একরকম আনন্দদায়ক বিনিময়ও ঘটে। আমার কথা হচ্ছে, কিছুই অসম্ভব নয়, বরং মেকআপ এমন এক বিদ্যা, যার সঠিক প্রয়োগ আপনার রূপ বদলে দিতে যথেষ্ট সক্ষম। তবে শেষ পর্যন্ত সবার সামনে নিজের ব্যক্তিত্বসম্মত সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হওয়াই আসল কথা। আপনি যে সত্যিই সুন্দর, এ বিশ্বাস সব সময়ই জরুরি।
নববধূর সাজ হবে নববধূর মতোই। তার নিজের অবস্থান, রূপ, রুচি, সমকালীন সৌন্দর্যধারা- যিনি সাজাবেন, তার অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও পদ্ধতি- সবকিছুর সমন্বিত সাজ নিয়ে কনে উঠবেন বিয়ের মঞ্চে। নতুন ও সুখকর জীবনে প্রবেশের জন্য।

মডেল: স্পৃহা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top