skip to Main Content

এডিটরস কলাম I সৌন্দর্যের সমগ্রতা

পরিবেশ, সংস্কৃতি, পরিবার ইত্যাদি মানুষের অন্তঃসৌন্দর্য গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। সততা, উদারতা, কল্যাণবোধ, অন্যের সুখে আনন্দিত ও দুঃখে ব্যথিত হওয়া, জ্ঞানপিপাসা, ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হওয়া, সৃষ্টিশীলতায় অনুরাগ, বিনয়, বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা- ইত্যাদি মানবিক গুণ যাদের রয়েছে, তারাই সত্যিকারের সুন্দর মানুষ

শুধু সাজসজ্জায় সুন্দর হওয়া যায়- সৌন্দর্যের ধারণা এত খন্ডিত নয়। বাহ্যিক রূপের আবেদন ক্ষণস্থায়ী। হৃদয়ের প্রকাশ বরং চিরকালীন। তাই সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতায় মনও হতে হয় সুন্দর। মনের সৌন্দর্য চেহারায় ফুটে উঠবেই।
ভাবনাটা এবার আরেকটু বড় করে ভিন্নভাবে প্রকাশ করতে বসেছি। আগেই বলে রাখি, আমার কাছে সব মানুষই শেষ পর্যন্ত সুন্দর। কেননা, সবার মধ্যে রয়েছে শুভবোধ এবং এর প্রকাশ কোনো না কোনোভাবে ঘটবেই। তবে সৌন্দর্যের নিজস্ব একটা সমগ্রতা রয়েছে, এর সঙ্গে একাকার হতে পারলেই মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সেই সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু কী সেই রূপ?
মহান ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করলে সেই রূপের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। কবি আবুল হাসানের কথা মনে আছে? তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, তখন তাঁর এক দরিদ্র সহপাঠী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছিলেন না, ফর্ম ফিলআপের টাকা জোগাড় করতে পারেননি বলে। আবুল হাসান নিজের সেই অর্থই তাঁকে দিলেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য, যা তিনি পরিবার থেকে পেয়েছিলেন। কবির আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না। সহপাঠীর প্রতি ভালোবাসার এই নিদর্শনে আমি আলোড়িত হয়েছি। আমার ইচ্ছা হলো, কবির ছবিটি একবার দেখি! পোর্ট্রেট দেখলাম তাঁর। সেকালের সব ছবিই তো সাদাকালো। কিন্তু কী সুন্দর লাগছিল তাঁকে! ছবির ওপর হাত বোলাতে লাগলাম। আগের চেয়ে বেশি করে পড়তে থাকলাম তাঁর কবিতা। হৃদয় যেমন মহৎ তাঁর, কবিতাগুলোও তেমনই। কেন এই কবির প্রতি আমার আগ্রহ আর আকর্ষণ বেড়ে গেল, নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন। মহৎ হৃদয়ের প্রকাশেই তিনি হয়ে উঠেছেন সুন্দর।
তাই বলি- সৌন্দর্য বিচ্ছিন্ন কোনো ধারণা বা প্রকাশ নয়, এর সঙ্গে বিচিত্র মানবিক গুণের সম্পর্ক রয়েছে। এটি সামগ্রিক বিষয়, তবে এর সবই একসঙ্গে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে না। গুণগুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে, সময়ের প্রয়োজনে একেকটির প্রকাশ ঘটে। এর মূলে কাজ করে মহৎ মানবিক আবেগ। এক দিনে তা গড়ে ওঠে না। পরিবেশ, সংস্কৃতি, পরিবার ইত্যাদি মানুষের অন্তঃসৌন্দর্য গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। সততা, উদারতা, কল্যাণবোধ, অন্যের সুখে আনন্দিত ও দুঃখে ব্যথিত হওয়া, জ্ঞানপিপাসা, ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হওয়া, সৃষ্টিশীলতায় অনুরাগ, বিনয়, বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা- ইত্যাদি মানবিক গুণ যাদের রয়েছে, তারাই সত্যিকারের সুন্দর মানুষ।
প্রসাধন, পোশাক, অলংকার প্রভৃতি বাহ্যিক সৌন্দর্যে বেশ কাজে লাগে। কিন্তু প্রকৃত মানুষ না হতে পারলে তা ক্ষণিকের আকর্ষণ সৃষ্টি করে মাত্র, এর বেশি কিছু নয়। বাস্তবতা হলো, সাজসজ্জা যত জমকালো হোক, মনে যদি কলুষতা থাকে, কোনো না কোনোভাবে তা বেরিয়ে আসবেই। যেমন লুকানো থাকে না মানবিক গুণাবলি কিংবা অন্তরের সৌন্দর্য। এর ছাপ চেহারায় উদ্ভাসিত না হয়ে পারে না।
শুরুতে বলেছিলাম, আমার কাছে সবাই শেষ পর্যন্ত সুন্দর এবং সবার মধ্যেই লুকিয়ে আছে রূপে-গুণে পুরোপুরি সুন্দর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। আসুন না, এই সম্ভাবনাটুকু কাজে লাগাই! পৃথিবী নামের এই গ্রহটিকে আরও মানবিক, মঙ্গলময় আর সুন্দর করে তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top