skip to Main Content

কভারস্টোরি I এজলেস

অনেকটাই দ্ব্যর্থক। কারও কারও কাছে গোলমেলে। তবে এর আবেদন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। বাকিটা রত্না রহিমার লেখায়

বয়স শুধু একটি সংখ্যা? কী মনে হয় আপনার? আপনি, মানে যিনি পঞ্চাশ পার করেছেন অথবা মাত্র পঁচিশ ছুঁই ছুঁই করা তরুণ-তরুণী—যে কেউ হতে পারেন। এজ ইজ জাস্ট আ নাম্বার কথাটি পুরোনো এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেকেই মনে করেন, এই বুলি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে মূল কারণ আসলে বার্ধক্যকে সম্মান জানানো। আসলেই কি তাই? সমস্যা হলো, তথ্যটির সত্য-মিথ্যা যাচাই করা মুশকিল। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সেটিকে মিথ্যা হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। ইদানীং তো এমনও বলা হচ্ছে, আমাদের বার্ধক্যের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব কতটা জোরালোভাবে সমর্থন করি, সেটি এই বাক্যের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। তার মানে, বিশেষজ্ঞরা প্রমাণের চেষ্টা করছেন, বয়স আসলেই এখন কেবল একটি সংখ্যা, যার সঙ্গে তরুণ থাকা বা না থাকার সম্পর্ক খুব ক্ষীণ। চল্লিশ পেরোলেই চালসের যুগ শেষ।
বয়স ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করে। বলা হয়, বয়সের হিসাব নিয়ে যিনি নিজেকে বৃদ্ধ প্রমাণের চেষ্টা করেন, তিনি আসলে নিজের কাছে পৃথিবী থেকে অবসর নেওয়ার এবং নতুন কিছু নিয়ে ঝুঁকি না নেওয়ার অজুহাত তৈরি করেন। যারা সে দলে নেই, তারা তারুণ্য ধরে রাখতে পারেন সত্তরেও। প্রকৃত সত্য হলো, বয়স আসলে একধরনের পরিবর্তন সৃষ্টি করে। যাতে সবকিছু পাল্টে যায়—শরীর, মন, মনোভাব, শক্তি, ভূমিকা, চাহিদা, চাওয়া-পাওয়া। বিষয়টি মেনে নিয়ে তরুণ থাকার চেষ্টা করলে তারুণ্য ধরে রাখা কঠিন নয়। ওই যে বলে না, তারুণ্যের সজীবতা ত্বকের চেয়ে বেশি থাকা চাই মনে। তাহলে সেই সজীবতার ছোঁয়ায় ত্বকও তরুণ হয়ে উঠবে। কীভাবে সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ইচ্ছাশক্তির কথা। আমার বয়স হয়ে গেছে, এখন আগের মতো পোশাক পরতে পারব না, সাজতে পারব না, দৌড়াতে পারব না, খেলতে পারব না ইত্যাদি ভাবনা ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে মাথা থেকে। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাও জরুরি। বয়স হয়ে গেছে বলেই ফ্যাশন-প্যাশন সব ভুলে নিজেকে বাতিলের খাতায় ফেলে রাখা চলবে না। ষাট বছর বয়সে এলিজাবেথ টেলরকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার এজলেস থাকার রহস্য কী? উত্তরে বলেছিলেন, ‘এর কোনো নিয়ম নেই। ব্যাপারটি মনের। নিজেকে অভিনব লাগে—আমি সব সময় এমন কিছু পরার চেষ্টা করি। আর তাতেই তোমরা আকৃষ্ট হও আমার প্রতি।’
তার মানে, মনের পাশাপাশি পোশাকও বড় ভূমিকা রাখে এজলেস স্টাইলে। চল্লিশ না পেরোতেই যারা ব্যসন-ভূষণে বুড়ো হয়ে যান, তাদেরকে বুড়ো না বলে উপায় আছে? অথচ ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শরীর অনুযায়ী সঠিক পোশাক পরে বয়সকে অস্বীকার করা যেতে পারে খুব সহজে। কেউ সেটা করেন, কেউ করেন না। বিশ্বজুড়ে একই অবস্থা। ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করা যাক।
ফ্যাশনবিশ্বে বয়সহীনতা এবং বয়স-উপযুক্ততা—এই দুটো কনসেপ্ট একেবারে মেরুর বিপরীত বলে ধারণা করা হয়। একটিতে আপনি নিয়মের ধার না ধেরে দাবি করেন, ‘বয়স কেবল একটি সংখ্যা’ এবং অন্যরা আরোপ করতে পারে এমন যেকোনো স্বেচ্ছাচারী নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বেড়ান। অন্যটিতে আপনি বাধ্যতার সঙ্গে সমাজের বয়সবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পরে বয়স্ক মানুষদের যে আচরণ ও পোশাকের কোড মেনে চলার কথা বলা হয়, তা মানতে বাধ্য থাকেন। বেশির ভাগ বিশ্লেষকের মতে, আসল নিয়ম হচ্ছে, এ দুটোর মাঝামাঝি অবস্থান করা। বয়সটাকে একেবারে অস্বীকার না করে পোশাক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বার্ধক্যের হিসাব রাখাটাও জরুরি। বয়স-উপযুক্ত কিংবা বয়সহীন নয়, এটি একটি বিকল্প পদ্ধতি। যে কেউ অনুসরণ করতে পারেন। তবে বেশির ভাগ ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পঞ্চাশের পরের ফ্যাশন অযৌক্তিক ফ্যাশন। যেখানে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই, শুধুই সুন্দর! আপনাকে প্রথমে যা করতে হবে, তা হলো নিজস্ব ফ্যাশনে ‘বয়স-উপযুক্ততা’ ধারণাটি বাদ দেওয়া। এর অর্থ এই নয়, আপনি টিনএজারের মতো পোশাক পরবেন। পোশাক পরতে হবে আপনার শরীরের কাঠামো এবং স্বচ্ছন্দের ওপর ভর দিয়ে। এ ক্ষেত্রে একজন ভালো দর্জি আপনার নতুন বন্ধু হতে পারে। মনমানসিকতাতেও একটু পরিবর্তন আনুন। নিজেকে যেভাবে দেখতে চান তা নয়, বরং ব্যাপারটি নির্ভর করে আপনি ‘নিজ’কে নিয়ে কেমন অনুভব করছেন, তার ওপর। পছন্দের পোশাক পরার পর যদি নিজেকে সুন্দর, আবেদনময়ী এবং আত্মবিশ্বাসী মনে করেন, তার মানে, আপনি আসলেই সুন্দর, আবেদনময়ী ও আত্মবিশ্বাসী!
নিজেকে বয়সহীন ভাবার চেষ্টা করুন, যা পরতে ভালো লাগে পরুন; তবে আপনার কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতেও ভয় পাবেন না। একবার ভেবে দেখুন, ম্যাগাজিন ও অনলাইনে যেসব ট্রেন্ডি শৈলী দেখেন, সেগুলো কি আপনার জন্য কাজ করবে? উত্তর যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে ট্রেন্ড প্রাধান্য দেওয়ার কিছু নেই; বরং নজর দিন নিচের বিষয়গুলোর প্রতি।
কমফোর্ট
পোশাক নির্বাচনে সাহসী হোন, নতুন কিছু চেষ্টা করুন—সবই ঠিক আছে। তবে সেখানেও মূল বিষয় কমফোর্ট। চেহারার বয়স ১৫ হোক কিংবা ৩৫; পোশাক হওয়া চাই আরামদায়ক। অর্থাৎ যে পোশাক পরে অস্বস্তি বোধ করবেন, তা যতই ট্রেন্ডি হোক, আপনার জন্য নয়। এ ক্ষেত্রে আপনি কোন বয়সে জীবনযাপন করছেন, তা বিবেচ্য নয়। আবার বয়স হয়ে গেছে বলেই ফ্যাশনের হাল ছেড়ে দিয়ে শুধু আরাম খুঁজতে হবে, তা-ও নয়। তাহলে কমফোর্ট লেবেল ঠিক করার উপায় কী? পশ্চিমা বিশ্বের কথা বাদ দিলাম; কিন্তু আমাদের দেশে একটু বয়স হতে শুরু করলেই মন, দেহ ও ত্বক বুড়িয়ে যেতে থাকে। যে পোশাকই পরা হোক না কেন, মনে হয় কিছুই যেন মানায় না। শরীরের সঙ্গে পোশাক মানানসই করার জন্য তাই এক্সট্রা এফোর্টের প্রয়োজন পড়ে। স্লিম, স্টাইলিস্টের পাশাপাশি কমফোর্টেবল দেখানোর জন্য সঠিক পোশাক নির্বাচন তাই জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। তাতে বয়সকে যেমন লুকিয়ে ফেলা যায়, তেমনি নিজের কাছেও ‘আমি বুড়িয়ে যাচ্ছি’—এই মানসিকতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রথমেই যা করা দরকার, তা হলো মানসিকতার পরিবর্তন। বয়স হয়ে গেছে বলেই সেই পুরোনো ধাঁচের একঘেয়ে পোশাক পরার মানসিকতা—তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ, এতে প্রকৃত বয়সের চেয়ে অনেক বেশি বয়স্ক দেখায়। আবার সমস্যা হলো, আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বয়স্কদের খুব স্টাইলিস্ট পোশাক পরাটাকে দৃষ্টিকটু হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তাই যারা নিয়ম ভাঙতে চান না কিংবা পুরোনো ধাঁচের পোশাকে অভ্যস্ত থাকতে চান, তাদের জন্যও উপায় আছে। রোজকার একঘেয়ে পোশাকের সঙ্গে যোগ করে নিন স্টাইলিস্ট জ্যাকেট, ফ্যাশনেবল জুতা, ঘড়ি অথবা হাল ফ্যাশনের কোনো ব্যাগ বা বেল্ট। তাতে পোশাকের চেহারা যেমন পাল্টে যাবে, আপনাকেও দেখাবে তারুণ্যদীপ্ত। খেয়াল রাখতে হবে সঠিক মাপের দিকেও। বয়স মানেই ঢিলেঢালা পোশাক, তা কিন্তু নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি সঠিক মাপের পোশাক না পরা হয়, তাহলে আরও বেশি বুড়ো দেখাবে। বেশি আঁটসাঁট পোশাকে বেমানান লাগবে, আবার বেশি ঢোলা হলেও দেখাবে বাজে। যারা নিয়ম ভাঙতে চান তাদের বলছি, ত্বক অপেক্ষাকৃতভাবে কুঁচকে গেছে বলে ছোট হাতা, ছোট ফতুয়া কিংবা স্কার্ট পরা বাদ দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। স্লিভলেস ব্লাউজও চলতে পারে অনায়াসে; যা দেখতে বেশি ভালো লাগে। তবে নিজের কাছে অস্বস্তি লাগলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে ছোট পোশাকের সঙ্গে বেছে নিতে পারেন টাইটস বা লেগিংস। লম্বা কিংবা ঢিলেঢালা পোশাকেও নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, যদি সেটা শারীরিক কাঠামোর সঙ্গে মানানসই হয়। দেশীয় স্টাইলে লম্বা সালোয়ার-কামিজ কিংবা নকশাদার ঢিলেঢালা আরামদায়ক পাজামা পরতে ভালো লাগলে তা-ই পরুন। মোট কথা, সব ক্ষেত্রেই কমফোর্ট আসল বিষয়। নিজের কাছে আরাম লাগলে অন্যরাও আপনাকে দেখে আরাম পাবে। মেয়েরা বিশেষ করে নজর দিন সঠিক মাপের বক্ষবন্ধনীর দিকে। লো কোয়ালিটি এবং মাপে গড়বড় ব্রাও বয়স্ক লাগার জন্য অনেক সময় দায়ী। যেহেতু আপনার স্তনের আকৃতি আগের মতো সুডৌল নেই, তাই বক্ষবন্ধনীর সাহায্য আপনাকে নিতেই হবে। সেটি যেন পারফেক্ট থাকে, সে ব্যাপারটা ভীষণ জরুরি।
অ্যাকসেসরাইজ এবং অ্যাকসেসরিজ
ফ্যাশনেবল পোশাক পরার জন্য শরীরটাকেও তো ফিট রাখা চাই। সুস্থ থাকার জন্যও তা আবশ্যক। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত ডায়েটও এজলেস স্টাইলের অংশ। ফিগার ঠিক রাখতে পারলে বয়স তখন আসলেই মাত্র একটি সংখ্যা হয়ে যায়। বলিউড তারকা মালাইকা অরোরার কথা ধরুন। পঞ্চাশেও তাকে দেখলে অনায়াসে পঁচিশ বছরের তরুণী মনে হয়। কারণ, আপনি যখন নিজেকে এবং নিজের পোশাককে আপডেট করবেন, তখন কেউ আপনার আসল বয়স অনুমান করতে পারবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এতে আপনি ভেতরে-বাইরে আরও সুন্দরবোধ করবেন; হয়ে উঠবেন আত্মবিশ্বাসী। চমৎকার দেহকাঠামো, ফ্যাশনেবল পোশাক এবং সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরিজ—ব্যস, আপনাকে আর পায় কে? বলা হয়, পোশাককে যদি একটি কেক ধরে নেওয়া যায়, গয়না হলো কেকের ওপর আইসিং! গতানুগতিক পোশাকের সঙ্গে স্টেটমেন্ট নেকলেস, চমৎকার ব্রেসলেট, স্টেটমেন্ট রিং, মজাদার ট্রেন্ডি কানের দুল কিংবা এমনকি একটি স্কার্ফ ব্যবহার করে দেখুন! এগুলো আপনার মুখের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করবে; শরীরের দিকে নয়। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে উজ্জ্বল রঙের বড় দুল এবং সুন্দর ও রঙিন একটি স্টাইলিস্ট ব্যাগও সৌন্দর্যে যোগ করে নতুন মাত্রা। সেই সঙ্গে জুতার ব্যাপারটিও মাথায় রাখা চাই। ছেলেরা স্টাইলিস্ট এক জোড়া বুট জুতা কিংবা টাই পরে সহজেই বয়স লুকিয়ে নিতে পারবেন। মেয়েরা শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ব্লক হিল, ফ্ল্যাট হিল পরতে পারেন। বয়স মানেই হিল ছেড়ে ফ্ল্যাটে ঝুঁকতে হবে, এমন দিব্যি কেউ দেয়নি!
রং
এজলেস ফ্যাশনে রঙের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোশাকের রংও হালকা হতে হয়। ধারণাটি ভুল কিংবা উল্টো বলা যেতে পারে। কারণ, বয়স বেড়ে গেলে হালকা রঙের কাপড়ে যে কাউকে আরও বেশি ম্লান দেখায়। বরং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোশাকের রংও উজ্জ্বল হওয়া চাই। বিশেষ করে লালের একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে। ত্বকে তারুণ্যের প্রভা আনতে এ রঙের জুড়ি নেই। পাশাপাশি সবুজ, কমলা, তীব্র গোলাপি, গাঢ় নীল ইত্যাদি রঙের পোশাকে সাধারণত বোরিং কিংবা বয়স্ক মনে হয় না। তবে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। অনেকে এ সময় হালকা রং ব্যবহার পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে ব্যালেন্স করার জন্য সঙ্গে কোনো একটি উজ্জ্বল রঙের কম্বিনেশন ঘটাতে পারেন। সেটি হতে পারে ওড়না, শাল, স্কার্ফ, হেয়ার ব্যান্ড, টাই, বেল্ট—যেকোনো কিছুর মাধ্যমে। তাতে একধরনের পপ-আপ হবে গেটআপে। শারীরিক স্থূলতা ঢাকতে কালো একটি আদর্শ রং। এ রঙের পোশাকে সাধারণত যে কাউকে স্লিম লাগে। যদিও এ সময়ে কালো রং এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মুখের কাছাকাছি কালো রং দেখতে বয়স্ক লাগে। বরং সেখানে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার চেহারায় তারুণ্য বাড়ায় এবং সতেজ ভাব ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। তবে কালোর সঙ্গে অন্য রঙের কম্বিনেশনে তৈরি পোশাক পরতে আপত্তি নেই। তাতে সুন্দর দেখানোর পাশাপাশি স্লিমও লাগবে। আমেরিকান ফ্যাশন ডিজাইনার প্রিসিলা ভন সেরোলার মতে, কালো ও বাদামি—দুটোই নিরপেক্ষ রং। এই দুই রং পরিপূরক হিসেবে কিংবা সংমিশ্রণে নকশা করা পোশাকে যে কাউকে আকর্ষণীয় লাগে। আরেকটি কম্বিনেশনও চমৎকার। কালো ও গাঢ় নীল। রং দুটো প্রায় কাছাকাছি বলে অনেক ডিজাইনার একসঙ্গে পরতে উৎসাহিত করেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার লিজ জেনাল্ট মনে করেন, এ রকম কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই; বরং ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেটের সঙ্গে ব্রাইট ব্লু জিনস ও ব্ল্যাক শু এক অসাধারণ কম্বিনেশন। আরও বিধিনিষেধ রয়েছে ব্রাইট কালার ও লাউড মোটিফের সংমিশ্রণ ঘটানোর ব্যাপারে। তবে ফ্যাশনে যারা সাহসী হওয়ার পরামর্শ দেন, ভন সোরেলা তাদেরই একজন। তার মতে, কোনো চিন্তা না করে বিন্দাস উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে নকশাদার পোশাক মিলিয়ে পরতে থাকুন। শুধু খেয়াল রাখা চাই, রং ও নকশা যেন সাংঘর্ষিক হয়ে না ওঠে। পোশাকে কাপড়ের ধরন এবং প্রিন্টও এখানে মুখ্য। যার ওপর নির্ভর করে, আপনাকে কতটা কম বয়স্ক দেখাবে। কিছুটা চকচকে স্যাটিন টাইপ ফ্যাব্রিক এবং বড় প্রিন্ট বেছে নিলে ভালো। তাতে অবয়বে বয়সের ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবটা লুকিয়ে ফেলা যাবে অনায়াসে।
এ তো গেল থিওরিটিক্যাল পদ্ধতি। তবে ভিন্নমতের কেউ কেউ বলতেই পারেন, বয়স লুকিয়ে রাখতে হবে কেন? আসলে এজলেস কনসেপ্টটি ঠিক বয়স লুকিয়ে রাখার কথা বলে না; বরং বয়সেও যেন আপনাকে বয়স্ক মনে না হয় কিংবা আপনার শরীর বা সাজপোশাক নিয়ে নিজের মধ্যে কোনো অনুশোচনা না থাকে, সে কথা বলে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা অনেকেই জানি, বয়স জয় করেছেন এমন তারকার অভাব নেই। জেন ফন্ডা, সিন্ডি ক্রফোর্ড, নাওমি ক্যাম্পবেল, ক্লডিয়া শিফার, কার্লা ব্রুনি ও হেলেনা ক্রিস্টেনসেনের মতো তারকারা প্রমাণ করেছেন, মঞ্চে আত্মবিশ্বাস ও গ্লামার শো করার ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা নয়। যেকোনো বয়সেই সেটা সম্ভব। বিশেষ করে জেন ফন্ডার কথা উল্লেখ করতে হয়। ৭৯ বছর বয়সেও এই আমেরিকান তারকা যেভাবে রেড কার্পেটে হেঁটেছিলেন, আধুনিক ডিজাইনারদের ডিজাইন ওয়্যার পরে ফ্যাশন ইভেন্টগুলোতে অংশ নিয়েছেন, বিশ্ব রীতিমতো থমকে গিয়েছিল! বলা যায়, বয়সের ধারণাকে অস্বীকার করে তিনি রীতিমতো ঘোষণা দিয়েছেন, সুন্দর চেহারা একচেটিয়াভাবে তরুণ প্রজন্মের জন্য নয়। শুধু তারকাদের পক্ষেই এসব সম্ভব—এ কথা যারা ভাবছেন, তাদের বলছি, ব্যাপারটি তা নয়। এজলেস কনসেপ্ট এসেছে সে কারণেই। গবেষকেরা অনেক গবেষণা করে বেশি বয়সেও বয়সহীন থাকার কয়েকটি সাধারণ নিয়মের কথা জানিয়েছেন, যা মানতে পারেন যে কেউ। আর তা মেনে নিজেই হয়ে উঠতে পারেন একজন জেন ফন্ডা। নিয়মগুলো বলি।
আত্মবিশ্বাস
নিজেকে বুঝুন। আপনার শরীর, সৌন্দর্য, ফ্যাশন-রুচি—সবকিছুর জন্যই নিজেকে বোঝার চেষ্টা জরুরি। এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস থাকলে বাইরে সেটা প্রকটভাবে প্রতীয়মান হয়। তখন অন্যের চোখে আপনাকে সুন্দর লাগবেই; কারণ, নিজেকে আপনি অসুন্দর ভাবছেন না। যা পরছেন, যেভাবে পরছেন তাতে আপনাকে ভালো লাগছে—মন থেকে এ বিশ্বাস থাকা চাই।
নিয়ম ভাঙার খেলা
বয়সের নানা নিয়মে আবদ্ধ থাকি বলে যথেষ্ট বয়স না হতেই আমরা বেশির ভাগ মানুষ বুড়ো হয়ে যাই। এসব নিয়ম ভুলে যান। এটা করা যাবে না, ওটা পরা যাবে না, ওভাবে চললে লোকে কী বলবে—এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আপনার কমফোর্ট লেভেলের মধ্যে থেকেই সময়ে সময়ে কিছু নিয়ম ভাঙতে পারেন। প্রতিদিন শাড়ি পরছেন, একদিন একটু জিনস টি-শার্ট ট্রাই করে দেখুন। নিজেকে তরুণ লাগবে। নিজস্ব স্টাইলের বাইরে কিছু করলে নিজেকে দেখে চমকে উঠবেন।
নাটকীয়তার মাত্রা
বয়স যত বাড়বে, আপনার পোশাকে থাকা চাই তত চকচকে আইটেমের কম্বিনেশন; যা পোশাকে নাটকীয়তা যোগ করবে। শুধু খেয়াল রাখুন, ব্যাপারটা যেন খুব উচ্চকিত না হয়ে ওঠে কিংবা দৃষ্টিকটু না দেখায়। মেকআপ গেটআপে কমনীয়তা প্রাধান্য পাওয়াও জরুরি। ফ্যাব্রিক বাছাইয়ে নজর দেওয়া চাই। সেটি যেন উৎকৃষ্ট হয়। চমৎকার কাট, উচ্চমানের ফ্যাব্রিক আর ড্রামাটিক কালার—এই তিনের কম্বিনেশনে আপনার লুকে অন্য রকম সৌন্দর্য যোগ হবে। নিজের কাছে ভালো তো লাগবেই, অন্যরাও ঘুরে তাকাতে বাধ্য হবে।
এবার ছোট্ট একটা টিপস। বয়স কমাতে ডেনিমের বিকল্প নেই। ওয়েস্টার্ন পরতে অভ্যস্ত হলে উচ্চমানের প্রিমিয়াম ডেনিমে বিনিয়োগ করুন। সব ধরনের শরীরের সঙ্গে মানানসই জিনসের অনেক স্টাইল ও কাট রয়েছে। বুট লেগ, স্লিম, লো রাইজ, স্ট্রেট লেগ প্রভৃতি। বয়সকালে একটি ভালো মানের স্ট্রেচ ডেনিমও হতে পারে বইয়ের মতো আপনার বন্ধু। পশ্চিমা বিশ্বে এজলেস ফ্যাশনে একটি কথা খুব পরিচিত। ওয়্যারড্রোবে ক্ল্যাসিক ডেনিম জ্যাকেট, ডেনিম ব্লেজার, কার্ডিগান, বোম্বার জ্যাকেট, ট্রেঞ্চ কোট বা ভেস্ট থাকলে বয়স জানালা গলে পালায়! এত কিছু না রাখতে পারলে নিদেনপক্ষে একটা ভালো ডেনিম তো থাকতেই পারে আপনার আলমিরায়।
অনেক নিয়মের কথা হলো। ইচ্ছে হলে মানুন; না মানলেও ক্ষতি নেই। আসলে, আপনি নিজেই জানেন এই বয়সে আপনার শরীর ও মুখের সঙ্গে কোনটি মানানসই। তবে আয়নায় নিজের প্রতিফলন দেখে এর অপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে অস্বস্তি বোধ করলে কিন্তু চলবে না। বয়সের কাছে আত্মসমর্পণ না করাই মূল মন্ত্র। অস্বীকারের উপায় নেই, পরিহিত পোশাক আসলেই অন্যদের চোখে আপনার সমর্থন অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। তাই ফ্যাশনশৈলী বয়সহীন হওয়া চাই। কেননা, গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাশনেবল ড্রেসিং নারীর আত্মবিশ্বাসের ধাপ তৈরি করে এবং সেখানে বাউন্স ফিরিয়ে আনে। যে ড্রেসিং ও মেকআপ আপনি উপভোগ করেন, সেটিকে বয়সের দোহাই দিয়ে পরিবর্তন করার মানে নেই। এজলেস আইকন, বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সী জেন ফন্ডা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি এখনো প্রতিদিন ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক পরি; কারণ, এটি আমাকে আনন্দ দেয় এবং আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আমার বয়স কোনো গোপন বিষয় নয়। বয়স নিয়ে আমি গর্বিত।’
সুতরাং, পঞ্চাশ পার করেছেন? সমস্যা নেই। বয়সের বেড়াজাল ডিঙিয়ে এবার সময় নিয়ম ভাঙার, নিজেকে নিয়ে গর্ব করার।

সাহসের স্রোতে

নাজিফা তুষি

ফ্যাশন আর প্রেম বয়সের সীমারেখা মানে না বলেই মনে হয় আমার। ফ্যাশন প্রকাশ করে ব্যক্তিত্বকে আর প্রেমে প্রকাশিত হয় ব্যক্তি। বয়স নিজেকে চিনতে সাহায্য করে। কী চাই, কেন চাই—এর উত্তর খোঁজার পথ বাতলে দেয়। বয়সের সৌন্দর্য তাই স্নিগ্ধতায় ভরপুর। যে বয়সে একসময় নিজেকে গুটিয়ে নিতেন নারী, এখন অনেকেই সেই বয়সে নিজেকে নতুনভাবে প্রকাশ করছেন। যেন পাখনা মেলে উড়তে শিখেছে পাখি!
কর গুনে বয়সের পাল্লা ভারী করে নিজেকে রঙের উজ্জ্বলতা, নকশার নতুনত্ব, প্যাটার্নের আধুনিকায়ন থেকে সরিয়ে দেওয়ার দলে আমি নই। অগ্রজদের সৌন্দর্যের সাহসী উদাহরণ দেখে মুগ্ধ হয়েছি বারবার। অগ্রযাত্রায় জয়া আহসান, পূর্ণিমা, আজমেরী হক বাঁধন আমাদের দেখিয়েছেন কীভাবে বয়স উদ্‌যাপন করতে হয়।
বয়স লুকিয়ে রাখা ছিল বহু নারীর জীবনে এক গুপ্তধন। এখন সেই তালিকা আগের মতো নেই। ছোট হয়েছে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হবে, সেই আশায় বুক বাঁধি। প্রতিদিন যেমন নিজেকে জানার সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে ওঠে, তেমনি সৌন্দর্যবোধও শাণ লেগে উজ্জ্বল হয়। বয়স বাড়ছে ভেবে নিজেকে, নিজের মাধুর্যকে সীমারেখায় আটকে দেওয়ার চর্চা কমেছে। আমাকে এই দারুণ দীপ্তি সাহস দেয়। নিজের মতো করে নিজেকে চেনা যায় বুদ্ধির পরিপক্বতায়। নিজেকে বুঝলে তবেই নিজের স্টাইল তৈরি করা যায়। সেখানে ব্যক্তিসত্তা আলাদা করে প্রত্যেককে। নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরির এই তো সময়।
তথাকথিত রূপ-লাবণ্যের ব্যাকরণের বাইরে আমাকে মোহিত করেছেন দুই নারী। তাদের সাদা চুল, চামড়ার ভাঁজ, ত্বকরেখায় সৌন্দর্য প্রবলভাবে প্রকাশিত। নাদিয়া বসেটা আর সীমা আনন্দ—এই দুই বিদেশিনীর ফ্যাশনের প্রতাপও চোখ জুড়ায়। সেই সাহসের স্রোতে ভাসি আমি।

 অনুলিখন: সারাহ্‌ দীনা

মডেল: নাজিফা তুষি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: মুক্তা
কনসেপ্ট অ্যান্ড স্টাইলিং: ফারিয়া মেহমুদ
ছবি: শেখ সুরাইয়া রেহনুমা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top