skip to Main Content

কভারস্টোরি I মন্ত্রে মজবুত চুল

নারীসৌন্দর্যের লক্ষণীয় অংশ চুলের ভিত হওয়া চাই পাকাপোক্ত। তাই এরও প্রয়োজন পরিপুষ্টি। যা পৌঁছে যাবে একদম ভেতরে। ছড়িয়ে পড়বে গোড়া থেকে ডগা অব্দি। তবেই না দেখাবে সুস্থ, দৃঢ় ও সুন্দর। নজর কাড়বে সবার। লিখেছেন জাহেরা শিরীন

কেমন দেখায় সুন্দর, সুস্থ, মজবুত চুল? অনেকের কাছে দৈর্ঘ্যে আর প্রস্থে এর বাড়ন্ত রূপটাই সুস্থতার সহজ পরিচায়ক। কেউ আবার চুলের শক্তি মাপেন এর ঘনত্বের ঘেরে। কতটা ঝলমলে, কতটা উজ্জ্বল শরীরের এ জড় অংশ, এরও প্রভাব পড়ে চুলের দৃঢ়তা পরিমাপে। কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা, এগুলোর বাইরেও মজবুত চুল শনাক্তকরণে আরও কার্যকর উপায় আছে। খেয়াল করে দেখা যেতে পারে প্রতিদিনের চুল পড়ার পরিসংখ্যান। বাথরুম থেকে বিছানায় কিংবা রোজকার হেয়ার ব্রাশের দিকে একটু নজর দিলেই বোঝা যাবে চুল টেকসই কি না। প্রকৃতির নিয়মে প্রতিদিনই কিছু না কিছু চুল ঝরে যায় মাথা থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সংখ্যা ৮০ থেকে ১২০ এর মধ্যে থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তাই চুল পড়ার হার এর আশপাশে ওঠানামা করলে বুঝতে হবে তা বেশ টেকসই। মসৃণতাও চুলের মজবুত অবস্থার পরিচায়ক। চুলজুড়ে হাত বুলিয়ে গেলে কোনোভাবেই আঙুল আটকে যাবে না; বরং অনুভূত হবে কোমল ও মসৃণ ভাব। আর্দ্র আবহাওয়াতেও আঁচ করা যায় আসল অবস্থা। চুল দুর্বল হলে এ রকম আবহাওয়ায় নেতিয়ে যাওয়া ভাব ফুটে ওঠে নিমেষেই। কিন্তু যদি মজবুত হয়, তেমন কোনো পরিবর্তনই পরিলক্ষিত হয় না। প্রাকৃতিকভাবে সোজা চুল সোজাই দেখায় আর কোঁকড়া চুল বজায় রাখে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। স্ক্যাল্পের সুস্থতাও শক্তিশালী মজবুত চুলের প্রধান একটি শর্ত। খুশকিমুক্ত স্ক্যাল্পে পুষ্টিগুণ সহজেই পৌঁছে যায় চুলের গোড়ায়। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই শক্তিশালী হয়ে ওঠে চুল। মজবুত চুল ভঙ্গুরমুক্ত। দূষণক্লিষ্ট পরিবেশ থেকে হেয়ারস্টাইলিং নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা– কোনোটাতেই সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এ রকম চুল। বজায় রাখে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব। উজ্জ্বলতার পাশাপাশি মজবুত চুলের স্থিতিস্থাপকতাও লক্ষ্যযোগ্য। ভেজা চুলে এ পরীক্ষাটা সেরে নেওয়া যায়। একটা চুল নিয়ে টেনে ধরে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে তা যদি ছিঁড়ে না গিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যায়, বুঝতে হবে স্থিতিস্থাপকতার পরীক্ষায় সেটি উত্তীর্ণ। মজবুত ভাব বুঝতে আরেকটা মজার পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। পানিভর্তি বড় একটা গামলায় চুল ছেড়ে দিয়ে দেখা যেতে পারে। মজবুত চুল অনায়াসে ভেসে বেড়াবে পানিতে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত চুল টুপ করে ডুবে যাবে। এ ছাড়া সুস্থ শক্তিশালী চুলে প্রাণময় উচ্ছল ভাব থাকে। থাকে বাড়তি বাউন্স আর ভলিউম। আর এই লক্ষণগুলো যদি কারও চুলের সঙ্গে মিলে যায়, তার প্রতি অভিনন্দন। মাত্রাছাড়া দূষণ আর দুরবস্থার মধ্যেও প্রাকৃতিকভাবেই মজবুত চুলের অধিকারী তিনি। আর তা যদি না হয়, চুলের চিত্র যদি একদম উল্টোটাও হয়, অস্থির হয়ে ওঠার কিছু নেই। কারণ, টেকসই চুলের মিশন মোটেও ইম্পসিবল নয়।
পরিচর্যা
মজবুত চুলের যথাযথ পরিচর্যার জন্য প্রথমেই এর ধরন জেনে নেওয়া জরুরি। তবেই না প্রয়োজন বুঝে তা পূরণের সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ঘনত্ব, টেক্সচার আর শক্তি মাত্রার ওপর নির্ভর করে আলাদা করতে হবে চুলের ধরন। উপর থেকে কারও মাথার দিকে লক্ষ করলে যদি চুলের জন্য স্ক্যাল্প দেখা না যায়, তবে তার চুল ঘন ও মজবুত। অন্যদিকে চুল ভেদ করে সহজেই স্ক্যাল্প চোখে পড়লে চুলের ঘনত্ব কম। এমন দুর্বল চুলের দরকার বাড়তি যত্নআত্তি। টেক্সচার যাচাইয়ের জন্য একটা চুল নিয়ে টানটান করে টেনে ধরলেই বোঝা যাবে এর ধরন। মোটা টেক্সচারের চুল স্বভাবতই বেশি শক্তিশালী হয়, সহজে ভেঙে যায় না। অন্যদিকে পাতলা টেক্সচারের চুল ভঙ্গুর। একে মজবুত করতে দরকার হয় মেরামতের। ছিদ্রতা আর ইলাস্টিসিটি দিয়েও নির্ধারিত হয় চুলের ধরন। ক্ষতিগ্রস্ত চুলে ছিদ্রের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। চুল হয়ে পড়ে ভঙ্গুর। অন্যদিকে মজবুত চুলের স্থিতিস্থাপকতাই এর প্রধান শক্তি, ফলে সহজেই তা ভাঙে না। ব্যাপারগুলো বুঝে প্রথমেই যদি ধরনটা নির্ণয় করা যায়, পরে চুলের যত্ন নেওয়া যেমন সুবিধাজনক হয়, তেমনি পণ্যও বেছে নেওয়া যায় প্রয়োজন অনুসারে।
ধরন জানার পর পণ্য বাছাইয়ের পালা। পাতলা চুলের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে ভলিউমনাইজিং কিংবা থিকেনিং শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার। অন্যদিকে চুল মোটা হলে ডিপ ক্লিনজিং শ্যাম্পু আর লাইট কন্ডিশনারই বেশি জুতসই হবে। ব্র্যান্ড বাছাইয়েও হওয়া চাই সতর্ক। নামিদামি স্যালনে ব্যবহৃত হাই এন্ড ব্র্যান্ডগুলোতে চুল মজবুত করার উপাদানগুলোর কার্যকর মাত্রা বেশি থাকে। ফলে এগুলো বেছে নেওয়াই ভালো। শ্যাম্পু ছাড়া তেলে নিশ্চিত হয় চুলের শক্তি। এ ক্ষেত্রে নারকেল তেলকে বলা হয় মাল্টিটাস্কার। সব ধরনের চুলের যত্নে ব্যবহারোপযোগী। কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলে পরিপূর্ণ এ তেল ভঙ্গুরতা দূর করে মজবুত করে তোলে চুলকে। এ ছাড়া চুলের শক্তি বাড়াতে বাদাম তেলও দারুণ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই, ফ্যাটি অ্যাসিড আর প্রোটিনযুক্ত আমন্ড অয়েলে ম্যাগনেশিয়ামও থাকে প্রয়োজনীয় মাত্রায়। যা চুলের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমায় ভঙ্গুর ভাব। ফলে ক্রমেই মজবুত হতে শুরু করে চুল। নতুন বেশ কিছু তেলের নাম যুক্ত হয়েছে তালিকায়, যা শক্তিশালী চুল পেতে সাহায্য করে। নিগূঢ় আর্দ্রতা আর পূর্ণ পরিপুষ্টির জোগান দেওয়া ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ বায়োবার অয়েল সেগুলোর একটি। এ ছাড়া ভিটামিন এ, ডি, ই এবং এফ সমৃদ্ধ এই তেল চুলের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। ফলে ভেতর থেকে মজবুত আর দৃঢ় হয়ে ওঠে চুল। আর এবিসিনিয়ান অয়েল তো তৈরিই হয়েছে দুর্বল চুলের কথা চিন্তা করে। আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ পলকা এ তেল গভীর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে করে শক্তিশালী।
স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক সুস্থ হলে চুল এমনিই সুস্থ থাকে। সে জন্য নিয়মিত ম্যাসাজ জরুরি। এতে স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন বাড়ে। পুষ্টি পৌঁছে যায় চুলের গভীরতম কোষে। সুস্থ স্ক্যাল্প দেয় মজবুত চুলের নিশ্চয়তা। কমায় চুল পড়ার হার। মাথায় তেল দেওয়ার সময় কিংবা শ্যাম্পুইংয়ের সময় স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করে নেওয়া যায় হালকা হাতে।
নিয়মিত ট্রিম করাও জরুরি। ছেঁটে ফেলা চাই ক্ষতিগ্রস্ত অংশের পুরোটা। এতে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায়। বেড়ে ওঠে আরও মজবুতভাবে। কোনো কোনো স্টাইলিস্ট পাঁচ সপ্তাহ অন্তর চুল ছেঁটে ফেলার পরামর্শ দেন। তবে অবস্থা বুঝে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর ট্রিমিং করে নিলেও চুলের ডগা ফাটা রোধ হবে। চুল দেখাবে শক্তিশালী, সুন্দর।
চুল মজবুত করার জন্য ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্টও চাই। সপ্তাহে এক দিন বাসায় বসেই সেরে নেওয়া যায় এর পুরো প্রক্রিয়া। সে জন্য বাজার থেকে ব্র্যান্ডেড ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্টগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। অথবা বাসায় বসে সাধারণ কিছু ধাপ মেনেই করে নেওয়া যায় চুলের এ চর্চা। সে ক্ষেত্রে পছন্দসই হেয়ার অয়েল সামান্য গরম করে ম্যাসাজ করে নিতে হবে মাথার ত্বকে। তারপর একটি তোয়ালে নিয়ে গরম পানিতে ডুবিয়ে চিপে নিয়ে পেঁচাতে হবে পুরো মাথায়। এতে স্ক্যাল্পের তেল সহজেই চুলের গভীরে প্রবেশ করবে। তবে খেয়াল রাখা চাই– খুব বেশি গরম যেন না হয়ে যায় তোয়ালে। তারপর হেয়ার মাস্ক মাখতে হবে চুলে। চুলের ধরন বুঝে। শুষ্ক চুলের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে ডিম আর মধুর মিশ্রণে তৈরি প্যাক। চটচটে তেলে চুলের জন্য অ্যালোভেরা জেল, আমলা পাউডার আর পানির মিশ্রণে তৈরি প্যাক।
প্রতিরক্ষা
চুল মজবুত রাখতে পরিচর্যা যেমন প্রয়োজন, তেমনি একে রক্ষাও করতে হবে নানান প্রতিকূলতা থেকে। এড়িয়ে চলতে হবে প্রচলিত সব ভুল প্রক্রিয়া। যেমন অনেকেরই ধারণা, চুল পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতিদিনই চুল ধোয়া প্রয়োজন। মজবুত সুন্দর চুলের জন্য চুল পরিষ্কার রাখা জরুরি বটে, কিন্তু ওভার ওয়াশিং একদমই ঠিক নয়। এতে চুল ও মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া মাথা ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য বেশি ঘষামাজাও এড়িয়ে যাওয়া উচিত একদমই, বরং হালকা হাতে কোমলভাবে গোড়া থেকে ডগা অব্দি চুল পরিষ্কার করতে হবে। এড়িয়ে যাওয়া উচিত ওভার ব্রাশিংও। সাধারণত দিনে শখানেক বার চুলে ব্রাশ বোলানোর একটা পরামর্শ প্রচলিত থাকলেও তা একদমই ভুল। এতবার চুল আঁচড়ালে চুল ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। বাড়ে ডগা ফাটার প্রবণতা। হেয়ার ব্রাশ বাছাইয়ের কাজেও সাবধান থাকা ভালো। মোটা দাতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালেই চুল কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফ্ল্যাট আয়রন, স্ট্রেইটনিং আয়রন, ব্লো ড্রায়ার আর কার্লারের মতো হেয়ারস্টাইলিং টুলগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ, এগুলোর অতিরিক্ত এবং অসতর্ক ব্যবহার চুলকে নির্জীব করে দেয়। বাড়ায় ক্ষতি। তাই চুল সুস্থ রাখার সঙ্গে স্টাইলিং অব্যাহত রাখার জন্য বাড়তি সাবধানতা জরুরি। স্টাইলিংয়ের শুরুতেই প্রোটেকশন স্প্রে আর বাম ব্যবহার করতে হবে। আর টুলগুলো লো থেকে মিডিয়াম সেটিংয়ে ব্যবহার করাই শ্রেয়। এতে ক্ষতির মাত্রা কমে যায়।
হেয়ারস্টাইলিংয়েও সতর্ক থাকা জরুরি। খুব বেশি টেনে শক্ত করে চুল না বাঁধাই ভালো। এতে গোড়া দুর্বল হতে শুরু করে। ভেজা চুল কোনোভাবেই বাঁধা যাবে না। আর বাঁধার জন্য কাপড়ে ঢাকা ইলাস্টিক ব্যান্ড বেছে নেওয়া উচিত। কোনোভাবেই রাবারের ব্যান্ডে চুল বাঁধা ঠিক নয়।
চুল ভেজা থাকা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো অনুচিত। একটু শুকানোর পর মোটা দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নেওয়া যেতে পারে। ভেজা অবস্থায় চুল খুব দুর্বল থাকে। ভেঙে যেতে পারে সহজেই। তাই চুল ধোয়ার পর টাওয়েল দিয়ে চেপে চেপে শুকিয়ে নেওয়া উচিত। কোনোভাবেই বেশি ঘষাঘষি করা যাবে না।
চুল মজবুত রাখতে পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা থেকেও রক্ষা করা চাই। সূর্যালোকের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি চুলের মারাত্মক শত্রু। এটা চুলকে ব্লিচ করে ফেলে। ফলে তা হয়ে যায় শুষ্ক আর কোঁকড়ানো। বৃষ্টির পানিও যে চুলের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক, তা কিন্তু নয়; বরং ক্ষতির আশঙ্কাটাই এতে বেশি। তাই সূর্যের ক্ষতি থেকে বাঁচতে ইউভি প্রোটেক্টিং স্প্রে কিংবা লিভ ইন কন্ডিশনার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আর বৃষ্টি থেকে চুল বাঁচাতে ছাতা, হ্যাট কিংবা ওয়াটারপ্রুপ হুডেড জ্যাকেটই ভরসা। যাদের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার অভ্যাস, তাদেরও সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ, পুলের পানিতে থাকা ক্লোরিন চুল শুষ্ক করে দেয়। তাই সাঁতার শুরুর আগে তেল বা সিলিকনে তৈরি হেয়ার প্রোটেক্টিং প্রডাক্ট মেখে নেওয়া চাই মাথায়। এ ছাড়া ক্লোরিনকে ধুয়ে দিতে পারে এমনভাবে তৈরি বিশেষ হেয়ার ক্লিনজারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
চুলচর্চার পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানতে হবে ‘লেস ইজ মোর’-এর মন্ত্র। কারণ, এগুলোর অতিরিক্ত এবং অসাবধান ব্যবহার চুলকে ভারী এবং তেলে করে তোলে। ফলে এগুলোর আসল পুষ্টিগুণই পৌঁছাতে পারে না চুলের গভীরে। যতটুকু জরুরি, ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করা উচিত চুলের যত্নে। এড়িয়ে যাওয়া চাই রুক্ষ রাসায়নিকে তৈরি পণ্যগুলো।
পরিবর্তন জীবনধারায়
সুন্দর মজবুত চুলের জন্য সুষম খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের তালিকায় প্রথমেই থাকা চাই সামুদ্রিক মাছ। স্যামন, সার্ডিন আর ম্যাকারেলের মতো মাছগুলো ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত হওয়ায় এগুলো চুলের সুস্থতা রক্ষায় দারুণ উপকারী। পালংয়ের মতো শাক প্রচুর খেতে হবে। এতে থাকা ভিটামিন এ, আয়রন, বেটা ক্যারোটিন ফোলেট আর ভিটামিন সি স্ক্যাল্পের সুস্থতায় দারুণ কার্যকর। চুল মজবুত করে তুলতেও এর জুড়ি নেই। এ ছাড়া মিষ্টিআলু, আর কমলা রঙা সব সবজি আর ফল যেমন গাজর, কুমড়া, আমও চুলের শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক। প্রোটিন, আয়রন, বায়োটিন আর ভিটামিন বি এর দারুণ উৎস ডিম চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য তো করেই, শক্তিশালী করে গোড়া থেকে। সয়াবিন, ডাল, মাংস আর কলিজাও রাখতে হবে মেন্যুতে। কারণ, আয়রনযুক্ত এ খাবারগুলো চুলের সুস্থতা রক্ষায় খুব প্রয়োজনীয়।
শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে স্ক্যাল্পে। দেখা দেয় শুষ্কতা, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে ওঠে চুল। তাই নিজের সম্পূর্ণ ওজনের অর্ধেকটা আউন্সে হিসাব করে সে পরিমাণ পানি প্রতিদিন পান করা উচিত।
মানসিক অবসাদ চুলের জোর কমিয়ে দিতে যথেষ্ট। তাই দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকা চাই যেকোনোভাবে। প্রতি রাতে অন্তত সাত ঘণ্টার ঘুম খুবই জরুরি। সঙ্গে মেডিটেশন করা যেতে পারে। সামাজিক সক্রিয়তাতেও অনেকের মনের গুমোট ভাব কাটে। এ ছাড়া নিয়ম করে ব্যায়ামের অভ্যাস করা যেতে পারে। স্ট্রেস দূর করার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো পুরো শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। স্ক্যাল্প থেকে সেবাম নির্গমনে সাহায্য করে। ফলে হেয়ার ফলিকলের গোড়ায় ময়লা আর দূষণ জমাট বাঁধতে পারে না। মৃত কোষও সরে যায়। ফলাফল– সুস্থ, সুন্দর, মজবুত চুল।
প্রাকৃতিক প্রযত্নে
প্রকৃতিপ্রদত্ত নানা উপাদান চুলকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে নারকেল তেল সবচেয়ে সক্রিয় ও সহজলভ্য। যা চুল মজবুত করে, চুলের কোষগুলোর গভীরে প্রবেশ করে পুনরায় প্রাণোচ্ছল ভাব ফিরিয়ে দেয়। চুলের সঙ্গে মাথার ত্বককে দেয় পরিপূর্ণ পরিপুষ্টি। ক্ষতি সারিয়ে, দেয় সমস্যামুক্ত, সুস্থ, সুন্দর চুল। আর দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, নারকেল তেল দিয়ে বাসায় বসেই তৈরি করে নেওয়া যায় চুলচর্চার চমৎকার সব উপকরণ। যেগুলোর নিয়মিত ব্যবহারে চুল হয় আরও মজবুত ও উজ্জ্বল।
হেয়ার স্প্রে
একটা স্প্রে বোতলে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ৩-৫ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল আর এক কাপ গোলাপজল দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিয়ে তৈরি করা হয় এটি। শুকনো কিংবা সামান্য ভেজা চুলে ব্যবহার করা যায়। নারকেল তেল চুলে শক্তি জোগায়। গোলাপজল কন্ডিশনারের মতো কাজ করে, যা চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। আর ল্যাভেন্ডার অয়েল মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, চুল পড়া কমায়।
হেয়ার মাস্ক
সমপরিমাণে অ্যালোভেরা জেল আর নারকেল তেল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এটা মাথার ত্বক থেকে চুলের আগাগোড়া মাখিয়ে রেখে দিতে হবে আধা ঘণ্টা। তারপর ঈষদুষ্ণ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে ভালো করে। এই মাস্ক চুলকে মজবুত করে। কমায় চুল পড়ার প্রবণতা।
হেয়ার ক্রিম
দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল আর পছন্দসই কোনো এসেনশিয়াল অয়েলের কয়েক ফোঁটা নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে দিতে হবে। হুইপড ক্রিমের আদলে তৈরি হলে তা মাথায় মাখিয়ে রাখতে হবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। তারপর ধুয়ে নিতে হবে। এই ক্রিম চুলকে দেয় ডিপ কন্ডিশনিং ইফেক্ট। দৃঢ়, মজবুত রাখে গোড়া থেকে। দেয় সুস্থ, সুন্দর চুল।
হেয়ার গ্রোথ অয়েল
নারকেল তেল চুলের যত্নে এমনই দারুণ। এর সঙ্গে যদি দুই ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে নেওয়া যায়, তা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সে সঙ্গে করে তুলবে আরও বেশি শক্তিশালী।

মডেল: অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা, শারলিনা ও মেঘলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও ক্যানভাস

This Post Has One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top