skip to Main Content

ছুটিরঘণ্টা I দালাতের ডায়েরি

মনোরম এক শহর। সেখানে হ্রদ, পাহাড়, পাইন বনের সৌন্দর্য। পুরোনো ক্যাথিড্রাল। বিচিত্র নকশার বাড়ি। লিখেছেন মঈনুস সুলতান

ভিয়েতনামের দালাত শৈলশহরটি গড়ে উঠেছে নীল পাহাড়ের আঁকেবাঁকে। উত্তর থেকে আসা হিমেল হাওয়ায় পাইন বনের অজস্র পত্রালি এখানে যেন সারাক্ষণ কথা বলে। এখানকার মৃত্তিকার রঙ কোথাও পিংক লালচে, আবার কোথাও মেটে ধূসর ছাই বর্ণ। এখানে যত্রতত্র অযত্নে ফোটে মৌসুমি ফুল। শহরটি ফরাসিদের হাতে গড়া। তাই আছে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ক্যাথিড্রাল।

ফরাসি স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি বিশাল ক্যাথিড্রাল

আজ সকালে স্ত্রী হলেন, কন্যা কাজরিসহ আমরা শহরের প্রধান ক্যাথিড্রালটি দেখতে যাই। রোমান ক্যাথলিক ধর্মের উপাসনার বিশাল এ চকমিলানো অট্টালিকাটির অবস্থান শহর-সংলগ্ন লাং বিয়াং পাহাড়ে। ট্যাক্সি থেকে নেমে আঙিনায় দাঁড়িয়ে আমরা অনেকক্ষণ ধ্রুপদি অঙ্গের ফরাসি স্থাপত্যকলার অসাধারণ নিদর্শনটির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। গলায় একাধিক ক্রুশ ঝোলানো একজন ধর্মযাজক এসে আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দালানটির ভেতরে নিয়ে যান। তাঁর মুখ থেকে মূলত ফরাসি ও খানিক ভাঙাচোরা ইংরেজিতে জানতে পারি— বিশাল এ গির্জার পোশাকি নাম সেন্ট নিকোলাস ক্যাথিড্রাল, তবে ভিয়েতনামিরা তাদের মাতৃভাষায় একে ‘নাহ থো চিন তোয়া’ বা ‘চিকেন ক্যাথিড্রাল’ বলে থাকে। একটি বিশাল গির্জাকে কেন চিকেন ক্যাথিড্রাল বলা হয়, তা জানতে চাইলে যাজক আমাদের নিয়ে আসেন রঙিন কাচ বসানো বিশাল একটি জানালার পাশে। ওখান থেকে আমরা ঘাড় বাঁকিয়ে বেল টাওয়ার বা ঘণ্টা ঝোলানো মিনারের চূড়া দেখতে পাই। চূড়াটির চাঁদিতে বসানো হয়েছে ব্রোঞ্জের একটি মোরগের মূর্তি। জানতে পারি, দালাতে যিশুখ্রিস্টের ধর্ম প্রবর্তনের আগে এই এলাকার মানুষজন কাঠ বা পোড়ামাটি দিয়ে মোরগের মূর্তি বানিয়ে তার পূজা করত। তারা রোমান ক্যাথলিক হয়েছে বটে, তবে পূর্বপুরুষদের মোরগ প্রতীকটিকে আজ অব্দি ভুলতে পারছে না। ক্যাথিড্রালটি নির্মাণের বিষয়ে যাজক আরেকটি তথ্য দেন, তা হলো ১৯৩১-১৯৪২ সাল অব্দি মোট এগারো বছর অজস্র শ্রমিকের বিপুল মেহনতে গির্জাটি তৈরি হয়। আমরা স্থাপত্যকলা সম্পর্কিত তথ্যের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানালে তিনি মিষ্টি হেসে আমাদের জননী মরিয়ম ও যিশুখ্রিস্টের শিশু বয়সের মূর্তিরাজির দিকে যেতে ইশারা করেন।

ক্রেইজি হাউসে ওঠার সিঁড়ি

দালাতের আকাশে শ্বেতপাথরে গড়া গরুড়ের ডানার মতো মেঘ ভাসে সারাক্ষণ। এ শহরে মোটরগাড়ির সংখ্যা কম, তবে মোটরসাইকেল বেশি। রাস্তায় বেরোলে মনে হয়, এখানকার অধিকাংশ নাগরিক মোটরবাইক হাঁকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হামেশা। আমরা শহরের এখানে-ওখানে এলোমেলো হাঁটি। মোটরবাইকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বাইসাইকেল আরোহীরা। কোনো কোনো আরোহী তার বাইসাইকেলটি ব্যবহার করছেন পণ্যসামগ্রী ফেরি করার কাজে। বাইসাইকেলে ঝোলানো ঝুড়িতে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাজা শাকসবজি, চিংড়ি, প্লাস্টিকের খেলনা ও রুটি-বিস্কিট। সবচেয়ে বর্ণাঢ্য বাইসাইকেল হচ্ছে ফুলওয়ালাদের। কিছুক্ষণ আগে ফুল ফেরি করা সৌরভ ছড়ানো একটি বাইসাইকেল আমাদের পাশে থেমেছিল। আমরা এখনো বসবাসের জন্য গেস্টহাউস খুঁজে পাইনি, তাই তৎক্ষণাৎ ফুল কিনতে চাইনি। কিন্তু ফুলওয়ালা বেজায় নাছোড়বান্দা, তিনি পুষ্প বিক্রির ধান্দা থেকে এক চুলও নড়েন না। অতঃপর হলেন বেশ বড়সড় একটি ফুলের তোড়া কিনে নেয়। ফুলের সওদাগর দেঁতো হেসে তার বাইসাইকেলে প্যাডেল মারেন।
আমরা শহরের কোথাও সুস্থির হতে পারি না। তবে সন্ধান করছি সাময়িক একটি বাসস্থানের। শহরটির কেন্দ্রে আছে বৃহৎ কৃত্রিম সরোবর। জলের স্নিগ্ধ দৃশ্য ঘিরে গড়ে উঠেছে শৌখিন কিছু পান্থনিবাস। আমরা হাঁটতে হাঁটতে সরোবরের কাছাকাছি চলে আসি। এখান থেকে হ্রদ এবং তার প্রেক্ষাপটে পাহাড়ের ধাপে ধাপে বেড়ে ওঠা পাইন বনের দিকে একদিশা হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হয়। মনে হয়, পাহাড় যেন আধশোয়া রমণী হয়ে সরোবরের আয়নায় দেখছে তার শ্যামল মুখশ্রী। আমরা লঘু পায়ে হ্রদটির পাড়ে এসে দাঁড়াই। কাউবয়দের মতো পোশাক পরা এক ঘোড়সওয়ার আমাদের পাশ দিয়ে দ্রুত চলে যায়। আমরা হ্যাট পরা একজন দীর্ঘ শ্মশ্রুর বৃদ্ধের পাশ দিয়ে হাঁটি। তিনি বড়শি হাতে মাছ ধরার তপস্যায় বসেছেন, আমাদের দেখে হেসে হ্যাট খুলে অভিবাদন করেন। আমরা অতি প্রাচীন এক বৃক্ষের ছায়ায় একটি সাদা ঘোড়াকে একাকী ঘাস খেতে দেখি। নিমেষের জন্য পানিতে গাছের প্রতিফলনের ডালপালায় ঘোড়াটির ছায়াচিত্র যেন জলের অতলে ডুবে যায়।

ভিয়েতনামের শৈলশহর দালাত

খানিক দূরে ছোট্ট একটি নৌকা অতি ধীরে ভাসে। নৌকায় বৈঠা হাতে বসে এক বৃদ্ধা। তিনি অতি ধীরে আলতো হাতে বৈঠা নাড়েন। তার মনে হয় নাও বেয়ে কোথাও যাওয়ার নেই। আমরা অবাক হয়ে নৌকার পণ্যের দিকে তাকাই। নাওখানা ভরে আছে রাশি রাশি চন্দ্রমল্লিকার ফুলে। মধ্যবয়সী এক দম্পতি তিনটি বাচ্চাসহ লেকের পাড়ে এসে দাঁড়ান। বুড়ির নাওখানা কাছে ভেড়ে। দম্পতিটি এবার দরদাম করে কিনছেন গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল।
আমরা হ্রদ-সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁর জলের ওপর কাঠের ডেকে বসি। এখানে বসে জল ছোঁয়া হাওয়ায় যেমন স্নিগ্ধ হওয়া যায়, আবার খানিক দূরের সড়কটির দিকেও দৃষ্টি রাখা যায়। এখানে বসে বসে আমাদের ট্যুর গাইড মি. হানের জন্য অপেক্ষা করি। ওয়েটার কফি ও তপ্ত কোঁয়াসো পরিবেশন করে। আমরা কফি খেতে খেতে সম্ভাব্য গেস্টহাউসের কথা ভাবি। গেল রাত আমাদের কেটেছে প্রায় বিনিদ্র। মি. হান আমাদের রাত্রিবাসের জন্য অ্যারেঞ্জ করেছিলেন সাবেক গভর্নর জেনারেলের প্রাসাদ। সেটি আকারে বিপুল ও আচরণে বিচিত্র। দরিদ্রের পাকস্থলীতে গুরুপাক ঘৃতের মতো সুরম্য অট্টালিকাটি আমাদের আড়াইজনের পারিবারিক রুচিতে খাপ খায়নি। তাই আমরা শরণার্থী হয়ে থাকার জায়গা খুঁজি। আমরা চাই পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, নিরিবিলি একটি নিবাসে রাত তিনেক কাটতে। দালাতে আমাদের একমাত্র ভরসা মি. হান। তিনি যেসব হোটেল বা পান্থনিবাসের প্রস্তাব করেন, সেগুলোর মূল্য আকাশছোঁয়া। ওসব তারকাচিহ্নিত হোটেলে বাস করলে মি. হানের কমিশন হয়তো খারাপ হবে না। কিন্তু এতে আমাদেরও ফতুর হতে বেশিক্ষণ লাগবে না। কাজরি আঙুল দিয়ে সড়কের দিকে নির্দেশ করে বলে, ‘লুক কিডস আর ওয়াকিং উইথ ফ্লাওয়ারস।’ আমরা সড়কের দিকে তাকাই। তিনটি ছোট্ট ছেলেমেয়ে আঁটি আঁটি ফুল নিয়ে হেঁটে যায়। তাদের বেশ পেছনে এক বৃদ্ধা। বুড়িটি যেন কায়-ক্লেশে মস্ত বড় একটি ফুলের সাজি হাতে পথ চলছেন। বাচ্চাগুলো দ্রুত হাঁটতে থাকলে, তিনি চেঁচিয়ে বুঝি তাদের ধীরে পথ চলতে বলেন। সাঁই করে একটি মোটরসাইকেল তাদের পাশ দিয়ে চলে যায়। সাইকেলে চালকের পেছনে বসে ছিল হাওয়ায় উড়ন্ত ফ্রিল দেওয়া গাউন পরা তরুণী। আমরা চকিতে তরুণীর হাতে একঝাঁক ক্রিসেনতিমাম দেখতে পাই। তখনই মি. হান সিগারেটের শেষাংশ লেকের জলে ছুড়ে ফেলে কাঠের ডেকে এসে ওঠেন। তিনি হাসিমুখে বলেন, ‘চলো, তোমাদের জন্য সঠিক একটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছি।’

হ্রদের আশ্চর্য দৃশ্যপট

তার জিপে চড়ে বাড়িটির সামনে এসে আমরা থ হয়ে যাই! জীবনে এ রকম বিচিত্র ছাদের স্থাপত্য দেখিনি কখনো! একদিক থেকে তাকালে ঘরটিকে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বটগাছের মতো মনে হয়। অন্যদিক থেকে দেখা যায়, গ্রীবা বাড়িয়ে জিরাফ যেন শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। আমাদের বিস্ময়ে মি. হানের মুখে সাফল্যের হাসি ফোটে। তিনি কেস থেকে একটি সিগারেট বের করে ধাতব কৌটাটির উপর ঠুকতে ঠুকতে বলেন, ‘ভিয়েতনামের সাবেক প্রেসিডেন্টের মেয়ে রাশিয়া থেকে আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং পাস দিয়ে এসে বিচিত্র এ বাড়ি তৈরি করতে শুরু করেন। প্রতিবছর তিনি এতে জুড়ে দিচ্ছেন নতুন করে লতানো সিঁড়ি বা অষ্টবক্র কোনো শয়নকক্ষ।’ অবশেষে আমাদের কিম্ভুতকিমার এ ঘরে থাকতে হবে ভেবে আমার প্রকাশ্যে আর্তনাদ করতে ইচ্ছা হয়। মি. হান বোধ করি আমার মনের ভাব বুঝতে পারেন। তিনি সান্ত¦না দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন, ‘দালাতের লোকজন এ বাড়িকে ক্রেইজি হাউস বলে থাকে।’ নামকরণ যে যথার্থ হয়েছে, এ নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ থাকে না। কাজরি অধৈর্য হয়ে বলে, ‘হোয়েন আর উই গোয়িং টু এক্সপ্লোর দিস হাউস?’ আমরা গত্যন্তর না দেখে ‘ইয়াহু’ বলে ক্রেইজি হাউসে প্রবেশ করি।
আমরা যে সিঁড়িপথ দিয়ে উঠি, তা বাইরে থেকে দেখতে পাকুড়গাছের প্রকা- ঝুরির মতো। এর আধো অন্ধকার ফাঁপানো ভেতর দিয়ে যেতে যেতে গিরিপথে হাঁটার অনুভূতি হয়। সিঁড়ির প্রান্তে আছে কৃত্রিম গুহা। গুহায় কাঠের বাকলায় তৈরি তিনটি চেয়ার। গোলাকার আস্ত পাথরখণ্ডের উপর রাখা পেয়ালা-পিরিচ ও টিপটে চায়ের সরঞ্জাম। গুহায় আলো আসার জন্য আছে গোটা দুই গুলগুলি। এ বাতায়নকে পুরোনো দিনের কোনো বৃক্ষের বাজপড়া খোঁদলের মতো মনে হয়। আমরা গুহা পরিদর্শন শেষে চলে আসি ষড়ভুজাকৃতির একটি কক্ষে। এখানকার দেয়ালে গাছপালা লতাপাতার কৃত্রিম প্রতিকৃতি। প্রকা- সব মানকচুর ঝোপের আড়ালে লুকানো বিছানা-বালিশ। আধো আলো আধো অন্ধকারে কাজরি আবিষ্কার করে, কক্ষটির এক পাশে লম্ফোদ্যত ডোরাকাটা বাঘ। প্রাণীটিকে হঠাৎ দেখলে জীবন্ত মনে করে পরিত্রাহি চিৎকার করে ওঠা অসম্ভব নয়! হলেন পাতার আড়ালে ইলেকট্রিক সুইচের সন্ধান পেয়ে তা স্পর্শ করে। তাতে ব্যাঘ্রটির চোখে জ্বলে ওঠে লালচে আলো। আমরা আরও আলোর প্রত্যাশায় জানালাটি খুলি। ওখানে ঝুলে আছে প্রকান্ড এক মাকড়সার জাল। জালটি মোটেই নিঃসঙ্গ নয়। মাঝ বরাবর চর্তুদিকে অনেক পা ছড়িয়ে ঈষৎ নড়েচড়ে পতঙ্গটি বেশ খানিকক্ষণ আমাদের বিভ্রান্ত করে। আমরা এখানে রক্তচোষা বাদুড় বা গোখরা সাপ আবিষ্কারের আগেই ভালোয় ভালোয় কামরাটি ত্যাগ করি।

রাজপথে অনেক মোটরবাইক

এবার আমরা জিরাফের পাকস্থলীর ভেতর দিয়ে গড়া সিঁড়িপথ বেয়ে উঠে তার গ্রীবার দিকে চলি। বলা বাহুল্য, চিত্রিত এ জানোয়ারের গলা বেজায় লম্বা। স্থানে স্থানে আলো-হাওয়ার জন্য আছে ছোট্ট ছোট্ট জানালা। কাজরি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আবিষ্কার করে, সত্যিকারের গাছের ডালে বসে ঝাঁক ঝাঁক কবুতর ও বনঘুঘু। আমরা এবার যে কামরাটিতে আসি, তা আগেরটির তুলনায় অনেক সাদামাটা। তবে এখানে আছে একটি ফায়ারপ্লেস, যা দেখতে ক্যাঙারুর মতো। আমরা সুইচ টিপে কক্ষে বাতি জ্বালাই। সঙ্গে সঙ্গে সারা ঘর ভরে যায় ঝিঁঝি পোকার রহস্যময় ডাকে। কাজরি ক্যাঙারুর পেটের থলিতে আবিষ্কার করে অনেকগুলো খেলনা। আমরা যখন এখানে থাকব না, অন্যত্র বাসস্থানের তালাশ করব, এসব দোনোমনা হয়ে ভাবছি, কাজরি খেলনা কুমিরের লেজ মোচড়াতে মোচড়াতে এখানে থাকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ঠিক তখনই কুম্ভীরের বাচ্চার নাসারন্ধ্র দিয়ে বেরিয়ে ফোয়ারার মতো ঝরে পড়ে ঝিরিঝিরি জল। আমরা ভাবি, থাকিই নাহয় বিচিত্র এ বাড়িটিতে দিন দুয়েক। দেখা যাক তারপর কী হয়?
আজব বাড়িখানার আড়ালে আছে ফরাসি যুগের তৈরি নোনাধরা মলিন এক ভিলা। বারান্দায় সাক্ষাৎ পাওয়া যায় ক্রেইজি হাউসের স্থপতির। মহিলার বয়স তেমন বেশি হয়নি, তবে তার তাবৎ চুল পেকে ফকফকে সাদা। কাঠের ড্রয়িং টেবিলের পাশে বসে, ফাইল দিয়ে তিনি নখ মসৃণ করতে করতে তার সৃষ্ট আজব ঘরখানার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমাদের সাড়া পেয়ে ফরাসি ভাষায় বলেন, ‘তোমরা এখানে থাকছ শুনে খুশি হয়েছি। এ ঘর হচ্ছে হাউস ইন আ ফরেস্ট অথবা বলতে পারো ফরেস্ট ইন আ হাউস। আগামী বছর আবার ফিরে এসো, তত দিনে আমি এক্সিমোদের বাসোপযোগী ইগলু তৈরি করে ফেলব।’ আমার এবার বুঝতে বাকি থাকে না, মহিলার কেশ এত অল্প বয়সে কেন পক্ব হয়েছে। মনে মনে বলি, একবার এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয় না।
ক্রেইজি হাউসে নিয়ে আসার জন্য কাজরি ও হলেন মি. হানের ওপর ভীষণ খুশি হয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে হলেন তাজা ফুলের বিশাল তোড়াটি বয়ে বেড়াচ্ছে। সে বিচিত্র বাড়িটি দেখানোর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তোড়াটি মি. হানের হাতে তুলে দেয়। তিনি খুশি হয়ে বলেন, ‘তোমাদের দালাত শহরের সম্পূর্ণ ভিউটি পাহাড়ের উপর থেকে দেখাতে চাই। এর জন্য আমাকে আলাদা কোনো ফি দিতে হবে না।’ তো আমরা তার জিপে চড়ে চলে আসি, ক্যাথিড্রালের পেছন দিকে লাং বিয়াং পাহাড় কেটে সমতল করা উপরভাগে। এখান থেকে দালাতের দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাই, লেক দালাতের আশ্চর্য এক দৃশ্যপট। হলেন হ্রদের দিকে তাকিয়ে রুদ্ধ স্বরে বলে ওঠে, ‘দিস ইজ দ্য ফাইনেস্ট লেক ভিউ আই এভার সিন।’ আমিও মুগ্ধ হয়ে হ্রদের রুপালি জলরাশির দিকে তাকিয়ে থাকি।

mainussultan@hotmail.com
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top