skip to Main Content

টেকসহি I প্রি-লাভড

সেলিব্রিটি স্টাইল আইকনরা প্রভাবিত এ শপিং ট্রেন্ডে। অনুপ্রাণিত ভক্তরাও

এক পোশাক দ্বিতীয়বার না পরার অভ্যাস অনেকের আছে। ইমপালসিভ শপারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। নতুন পোশাকের লোভ সামলাতে না পেরে কেনা হয় বটে, কিন্তু কখনোই সেটা পরে দেখা হয় না। লাইফস্টাইল কোম্পানি ওয়েট ওয়াচারস তাদের এক গবেষণায় খুঁজে পেয়েছে, সারা বিশ্বে মহিলারা তাদের ওয়্যারড্রোবে থাকা পোশাকের ৩০ শতাংশ পরেন; বাকি ৭০ শতাংশ অব্যবহৃতই রয়ে যায়। আরেকটি লাইফস্টাইল কোম্পানি মুভিনগারের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মানুষের মালিকানায় কতটা পোশাক আছে এবং তারা আসলে কতটা পরিধান করছে—সে সম্পর্কে বিভ্রান্তি রয়েছে। এমনকি আমাদের সবচেয়ে ভালো পোশাকগুলোর ৫০ শতাংশও পরা হয় না।
অবস্থা যখন এই, তখনই ত্রাতা হিসেবে হাজির প্রি-লাভড ফ্যাশন। এটি সেকেন্ডহ্যান্ড বা থ্রিফটিংয়ের সমার্থক। সাশ্রয়ী ও টেকসই। তাই দিন দিন বাড়ছে এর জনপ্রিয়তা।
সেলিব্রিটি ওয়্যারড্রোব বরাবরই ফ্যাশন বিশ্বকে প্রভাবিত করে। ফ্যাশনসচেতনেরা তাদের প্রিয় তারকারা কী ধরনের ফ্যাশন আইটেম ব্যবহার করছেন, সেদিকে যেমন বিশেষ নজর দিয়ে থাকেন; অনেকে আবার নিজের সাধ্য অনুযায়ী তাদের অনুসরণও করেন। সম্প্রতি প্রি-লাভড ফ্যাশনে ঝুঁকছেন তারকারাও। রিসাইকেলড ফ্যাশনের প্রতি তাদের বাড়তি আকর্ষণের খবরও মিলছে অহরহই। পরিবেশ ভালো রাখাই এর লক্ষ্য—এমন বিশ্বাস থেকেই প্রি-লাভড ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। অষ্টপ্রহর পরা যায়, আবার মানিয়ে যায় রেড কার্পেটেও—হন্যে হয়ে এমন সব ভিন্নধর্মী পোশাক খুঁজে বের করার রোমাঞ্চটাও আবার টানে কাউকে কাউকে।
ক্লুলেস খ্যাত নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অ্যালিসিয়া সিলভারস্টোন প্রায়শই ইনস্টাগ্রামে তার প্রিয় সেকেন্ডহ্যান্ড পণ্যগুলো নিয়ে ছবি পোস্ট করেন। লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ইনস্টাইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘একজন অ্যাভারেজ আমেরিকান প্রতিবছর ৮০ পাউন্ড পোশাক ফেলে দেন। আমাদের ল্যান্ডফিলগুলো বিলিয়ন পাউন্ড টেক্সটাইল বর্জ্যে ভরা। সেকেন্ডহ্যান্ড কেনা সব সময় আমার “গো-টু”। এটি যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি পৃথিবীর জন্য অনেক বেশি ভালো। কারণ, এভাবে অত্যধিক উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’ ক্রসরোড ট্রেডিং সেকেন্ডহ্যান্ড পণ্য কেনাকাটার জন্য অ্যালিসিয়ার পছন্দের জায়গাগুলোর অন্যতম। এটি আমেরিকার একটি ইকো-ফ্রেন্ডলি রিটেইল শপ, যা সেকেন্ডহ্যান্ড পণ্য কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত।
প্রি-লাভড ফ্যাশন সবার কাছে পরিচিত হওয়ার অনেক আগে থেকে হলিউডের সার্টিফাইড ফ্যাশন আইকন সারা জেসিকা পার্কার থ্রিফটিং করে থাকেন; সেই তরুণ বয়স থেকে। এ নিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটির আগে থ্রিফট স্টোর আমার জীবনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছিল।’ শত ব্যস্ততার মাঝে তিনি এখনো সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক কেনার জন্য সময় বের করে নেন। শুধু নিজের বা তার সন্তানদের ক্লোজেটের জন্য নয়, টিভি সিরিজ বা মুভির সেটেও তার চরিত্রের স্টাইলিংয়ের পোশাকগুলো তিনি থ্রিফট স্টোর থেকে সংগ্রহ করেন। কিছুদিন আগে এইচবিওতে প্রচারিত হয়েছে জেসিকা অভিনীত ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ টিভি সিরিজের রিবুট ‘অ্যান্ড জাস্ট লাইক দ্যাট’। সিরিজটির বেশির ভাগ পোশাক সংগ্রহ করা হয়েছে অনলাইন থ্রিফট স্টোর থ্রেডআপ ও দ্যারিয়ালরিয়াল থেকে। এর আগেও ‘ডিভোর্স’ টিভি সিরিজে তার চরিত্রকে সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকে দেখা গেছে। এভাবে তিনি তার ভক্তদের প্রি-লাভড পোশাক কিনতে অনুপ্রাণিত করছেন প্রতিনিয়ত।
হলিউড অভিনেত্রী শাইলিন উডলি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশগত ও সামাজিকভাবে সচেতন। তাই তার সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকপ্রীতি দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দ্য হলিউড রিপোর্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি একচেটিয়াভাবে (কাজ ছাড়া) মানুষের ব্যবহৃত পোশাক কিনি।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এই গ্রহের নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেই আমার এ সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করার পরিবর্তে প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপন করতে হবে।’
শাইলিন উডলির মতো মেধাবী অভিনেত্রী অ্যান হ্যাথওয়েও সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাকের ভক্ত। হ্যাথওয়ের স্টাইলিশ পেনি লাভেলের ইনস্টাগ্রাম পেজে তার প্রি-লাভড স্টাইলগুলো ডকুমেন্ট করা হয়। ২০১৭ সালে তার অভিনীত ‘কলোসাল’ মুভির প্রোমো ট্যুরে তিনি শুধু সেকেন্ডহ্যান্ড ও সাসটেইনেবল ভিনটেজ পোশাক পরার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সুবাদে তাকে ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’তে ফ্লি মার্কেট থেকে কেনা একটি ড্রেসে দেখা যায়। অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে তিনি সবাইকে পরিবেশের খাতিরে সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক ক্রয়ের আহ্বান জানান। এরপর থেকে তাকে প্রায়ই বড় বড় ইভেন্টে ভিনটেজ পোশাকে দেখা যায়।
গত কয়েক বছরে অনেক সেলিব্রিটিকে হাই-প্রোফাইল ইভেন্টের রেড কার্পেটে ভিনটেজ পোশাকে হাজির হতে দেখা গেছে। যেমন, ২০২০ সালে গ্রিন কার্পেট ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ডসে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন হালের অন্যতম স্টাইল আইকন ‘স্পাইডারম্যান’ ও ‘ইউফোরিয়া’ খ্যাত অভিনেত্রী জেন্ডায়া। এতে তিনি পরেছিলেন ভিনটেজ ভারসাচি গাউন। জিয়ান্নি ভারসাচি অটাম/উইন্টার ’৯৬ কালেকশন থেকে নেওয়া বডিকন ড্রেসটি আগে সুপারমডেল নাওমি ক্যাম্পবেল ও কেট মসকে পরতে দেখা গেছে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাঁকজমকে আয়োজিত হয় এনএএসিপির (ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব কালারড পিপল) ইমেজ অ্যাওয়ার্ড। সেখানে জেন্ডায়াকে একটি গর্জাস গাউনে দেখা যায়। লাল, সবুজ ও কালো স্ট্র্যাপলেস ভিনটেজ গাউনটি বালমেইনের ১৯৫৬ সালের কালেকশন থেকে নেওয়া। জেন্ডায়াকে এই পোশাক বাছাই করতে উৎসাহ দেন তার দীর্ঘদিনের ‘ফ্যাশন পার্টনার ইন ক্রাইম’ স্টাইলিস্ট ল রোচ।
২০০৩ সালে মুক্তি পায় ‘রম-কম থার্টিন গোয়িং অন থার্টি’। এখানে অভিনেত্রী জেনিফার গারনারকে একটি লাইম গ্রিন ও পাউডার ব্লু রঙের ড্রেসে দেখা যায়। সম্প্রতি একই পোশাকে ‘দ্য ভয়েস’ শোতে উপস্থিত হতে দেখা গেছে সঙ্গীতশিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডেকে।
বর্তমানের আলোচিত র‌্যাপার কার্ডি বিও প্রি-লাভড পোশাকের অনুরাগী। ২০২১ সালে প্যারিস ফ্যাশন উইকে ‘থিয়েরি মাগলার: কতুরসিমে’ এক্সিবিশনের উদ্বোধনীতে তিনি রেড কার্পেট আলোকিত করেন একটি ভিনটেজ মাগলার গাউনে। সিক্যুইন ও পালকের সমন্বয়ে তৈরি পোশাকটি প্রথম দেখা যায় অটাম/উইন্টার ’৯৫ কালেকশনে।
‘গেম অব থ্রোনস’ তারকা মেইসি উইলিয়ামসকেও ভিনটেজ পোশাকে দেখা গেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আয়োজিত জিকিউ মেন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে তিনি হাজির হয়েছিলেন ভিনটেজ আলেকজান্ডার ম্যাককুইন স্লিপ গাউনে।

 ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top