skip to Main Content

টেকসহি I ভাড়াই ভালো?

ফ্যাশনের পরিবেশবান্ধব এ বিকল্প নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক। সমীক্ষায় সীমাবদ্ধতা প্রমাণিত হলেও তা উতরে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা

প্যানডেমিক শুরুর দু-এক বছর আগে থেকে ফ্যাশন বিশ্বে পোশাক ভাড়া নেওয়ার বিশেষ সার্ভিসের কথা শোনা যাচ্ছিল। এটি জনপ্রিয় করে রেন্টাল কোম্পানি রেন্ট দ্য রানওয়ে, যার বোর্ড কমিটিতে আছেন হলিউড অভিনেত্রী গিনেথ পেল্ট্রো ও ক্যারি সাইমন্ডসের মতো সেলিব্রিটিরা। দুজনই নিজের বিয়ের পোশাক ও জি সেভেন সম্মেলনে পরার ড্রেস ভাড়া নিয়েছিলেন।
খোলা চোখে এই রেন্টাল ফ্যাশন ফাস্ট ফ্যাশনের সম্পূর্ণ বিপরীত রূপ বা এর পরিবেশবান্ধব বিকল্প বলা যায়। পোশাক ভাড়া দেওয়াকে ফ্যাশনের টেকসই সংকটের একটি ‘উত্তর’ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে ভিন্ন কথা।
ফিনল্যান্ডভিত্তিক জার্নাল এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারস পোশাকের মালিকানা ও শেষ পরিণতির পাঁচটি অবস্থার সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতার সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে পোশাক ভাড়া করাকে টেকসই সংকটের সমাধান তো নয়ই, বরং অন্যতম কারণ বলা হয়েছে। মানে সর্ষের ভেতরেই ভূতের বসবাস! দেখা গেছে, রেন্টাল ফ্যাশন পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর সবচেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ জন্য দায়ী করা হয়েছে প্যাকেজিং ও ডেলিভারি ব্যবস্থাকে। ভাড়াটেদের কাছে জামাকাপড় পৌঁছে দেওয়া এবং ফিরিয়ে এনে ওয়্যারহাউসে জমা করা—এই প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ গাড়ি ব্যবহার করা হয়, তা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বেশ বড় ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া রেন্টাল ফ্যাশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ড্রাই ক্লিনিং। এটিও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণাপত্রটি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যারা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে পোশাক ভাড়া নিয়ে পরতেন, তারাও বেশ দ্বিধায় পড়ে গেছেন। আবার অনেকে বলছেন, গবেষণাটিতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
গবেষকেরা সমীক্ষাটিতে বেইজ, রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল ও শেয়ার—জিনসের এই পাঁচ ধরনের ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণকে বিবেচনায় নিয়েছেন।
বেইজ: একটি নতুন জোড়া জিনস কেনা, ২০০ বার পরা ও ফেলে দেওয়া।
রিডিউজ: ইতিমধ্যে ওয়্যারড্রোবে আছে এমন এক জোড়া জিনস ২০০ বার পরা এবং অবশেষে সেটা ফেলে দেওয়া।
রিইউজ: একটি নতুন জোড়া জিনস কেনা, ২০০ বার পরা ও পুনরায় বিক্রি করা। বাতিল হওয়ার আগে সেটি আরও ১০০ বার পরা।
রিসাইকেল: একটি নতুন জোড়া জিনস কেনা, ২০০ বার পরা ও রিসাইকেল করা।
শেয়ার: এক জোড়া জিনস ভাড়া করা ও ফেরত দেওয়ার আগে ১০ বার পরা (জিনসটি ২০ বার ভাড়া দেওয়া হয় এবং বাতিল করার আগে মোট ২০০ বার পরা হয়)।
পর্যবেক্ষণ শেষে গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, এই দৃশ্যকল্পে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সবচেয়ে কম প্রভাব ফেলে রিডিউজ, অর্থাৎ নিজের কাছে থাকা পোশাকগুলো কয়েক বছর ধরে বারবার পরিধানের পর ফেলে দেওয়াই ভালো। এরপরের অবস্থানটি রিইউজের। রিডিউজ ও রিইউজের মধ্যে ভিন্নতা সামান্যই। আশ্চর্যজনকভাবে টেক্সটাইল রিসাইকেলে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ অনেক বেশি দেখানো হয়েছে (যদিও এটি বেইজ অর্থাৎ কাপড় কিনে পরিধান করে ফেলে দেওয়ার চেয়ে ভালো)। পাঁচটি দৃশ্যকল্পের ভেতর বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বেশি প্রভাব ফেলে বড় মাপের ড্রেস রেন্টাল সার্ভিসগুলো।
অনেকেই যুক্তি দেখান, পোশাক ভাড়া করে পরা টেকসই; কারণ, এটির সঙ্গে পুনর্ব্যবহারের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে এই গবেষণায় একটি রেন্টাল সার্ভিসের অনেক দিক বিবেচনা করা হয়েছে। যেমন পোশাক কেনা, প্রতিটি পোশাক ভাড়া দেওয়ার মাঝে ড্রাই ক্লিনিং করা, প্যাকেজিংয়ের উপকরণ, পরিবহন। এগুলো বিবেচ্য বিষয় হিসেবে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই সমীক্ষায় বেশ কিছু ফাঁক রয়ে গেছে।
পরিবেশের ওপর প্রভাবের জন্য গবেষকেরা পানির ব্যবহার, বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য উৎপাদন বা মানুষের প্রভাবের ওপর ফোকাস করেননি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সম্ভাবনাসূচক হিসেবে তারা শুধু কার্বন নিঃসরণের দিকে দৃষ্টিপাত করেন।
সমীক্ষাটির কেন্দ্রবিন্দু ছিল কেবল এক জোড়া জিনস। অন্য কোনো ধরনের পোশাক এ গবেষণায় রাখা হয়নি। স্বয়ং গবেষকেরাই বলেছেন, সিনথেটিক ড্রেস বিশ্লেষণ করলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত।
গবেষণাটিতে মালিকানাধীন এক জোড়া জিনসকে ২০০ বার পরার কথা বলা হয়েছে। আবার ভাড়া দেওয়া জিনসের পরিধান সংখ্যাও একই। এটা কতটা যুক্তিসংগত, এ নিয়ে প্রশ্ন রাখা যায়। এক জোড়া মালিকানাধীন জিনস বা অন্য যেকোনো পোশাক ২০০ বারের কমও পরা হতে পারে, আবার একজন ভাড়াটে একটি ভাড়া নেওয়া পোশাক নির্দিষ্ট সময়ে চাইলে দশবারের বেশি পরতে পারেন বা ওই পোশাক বিশবারের বেশিও ভাড়া দেওয়া হতে পারে। গবেষকেরা ধরে নিয়েছিলেন, একটি পোশাক ভাড়া নিতে বা ভাড়াটের কাছে পৌঁছে দিতে ২ কিলোমিটার বা ১ দশমিক ২৪ মাইল গাড়ি চালানো লাগবে। যদি এ ক্ষেত্রে লো-কার্বন ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা হয়, তাহলে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ বেইজ দৃশ্যকল্পের মতো হবে। অন্যদিকে রেন্টাল দৃশ্যকল্পে যদি একটি জিনস ২০ বারের বেশি ভাড়া দেওয়া হয়, তাহলে এই কার্বন নির্গমনের মাত্রা দ্বিগুণ হবে।
গবেষণাটিতে কেবল বড় মাপে রেন্টাল কোম্পানিগুলোর কথা ধরা হয়েছে, যারা বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণে কাপড় কিনে স্টকে জমিয়ে রাখে। স্টকে কাপড় জমিয়ে রাখা খুব পরিবেশবান্ধব কাজ নয়। তবে এ ধরনের কোম্পানি বেশ নামকরা ও পরিচিত হলেও এদের সংখ্যা কিন্তু কম। এর চেয়ে বেশি রয়েছে পিয়ার-টু-পিয়ার রেন্টাল সার্ভিস, যারা স্টকে বেশি বিনিয়োগ করে না।
সমীক্ষাটির এসব সীমাবদ্ধতার জন্য সত্যিকার অর্থে বলা যায় না যে, জামাকাপড় কিনে কিছুদিন পরে ফেলে দেওয়া, ভাড়া করার চেয়ে ভালো। কয়েকজন ফ্যাশন সাংবাদিক গবেষণাটি প্রকাশের পর ভালোভাবে চিন্তাভাবনা না করেই এমন খবর ছাপিয়েছেন, যা একটি ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। পুরো খবর না পড়ে কেবল হেডলাইন দেখে অনেকে ধরে নিতে পারেন, ‘রেন্টাল ফ্যাশন খারাপ, তার বদলে কাপড় কিনে পরে ফেলে দেওয়া আসলে পরিবেশের জন্য অত ক্ষতিকর হবে না’—যা মোটেও ঠিক নয়। অনেক পরিবেশবাদী, ফ্যাশন বিশ্লেষক এখনো বলছেন, পোশাক ভাড়া করে পরিধান করা ফ্যাশনের টেকসই সমাধানের একটি অংশ। কারণ, এটি আমাদের অল্প পোশাক কিনতে সাহায্য করে।
তবে সবকিছু বিবেচনা করলে রেন্টাল ফ্যাশন পুরোপুরি সাসটেইনেবল নয়। এতে কিছুটা হলেও লুকায়িত পরিবেশগত ক্ষতি রয়েছে। তা এড়ানোরও বেশ কিছু উপায় আছে। এ জন্য বড় বড় রেন্টাল কোম্পানি তাদের লজিস্টিক সিস্টেমকে পরিবেশবান্ধব করতে পারে। যেমন জীবাণুবিয়োজ্য প্যাকেজিং, কার্বন-নিউট্রাল ডেলিভারি সিস্টেম, পরিবেশবান্ধব লন্ড্রি সিস্টেম, রিসাইকেল বা আপসাইকেল পোশাক মজুত ইত্যাদি। এ ছাড়া পোশাক ভাড়া নিতে চাইলে সাসটেইনেবল রেন্টাল সার্ভিস বেছে নিতে হবে। অন্যদিকে পিয়ার-টু-পিয়ার রেন্টাল সার্ভিস অর্থাৎ নিজের এলাকা বা শহরে থাকে এমন কারও কাছ থেকে কোনো পোশাক ভাড়া করা বা ধার নেওয়া যেতে পারে।

 ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top