skip to Main Content

ফিচার I উষ্ণতার জন্য

শীতে শরীর উষ্ণতা চায়। সে জন্য চাই এমন খাবার, যাতে দেহকে গরম রাখা যায়। রোগবালাই থেকেও রক্ষা হয়

আজকাল সন্ধ্যা হলেই শীতল হাওয়া একটু হলেও কাঁপুনি তুলছে। মানে, তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে দেহের অন্দরের তাপমাত্রাও। এই সুযোগে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধতে পারে। তাই ঠান্ডাকে কিছুতেই ঘেঁষতে দেওয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ কিছু খাবারই পারে শরীর চাঙা রাখতে। তেমন কিছু খাবার নিয়ে এবারের আয়োজন।
আদা চা: শহুরে জীবন চা ছাড়া কি চলে? কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই যেতে হয় টং দোকানে। শীত হলে তো কথাই নেই। এ মৌসুমে আদা চা শরীর চাঙা রাখতে বেশ কার্যকর। এ সময় অন্তত দুধ চা ছেড়ে আদা চায়ের আড্ডায় যোগ দিতে পারেন।
ডিম সবজি: শুধু গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিলে চলবে না। শরীরকে বাঁচাতে খেতে হবে ডিম। এ ছাড়া পছন্দের যেকোনো সবজি। চাইলে সবজিতেই দিতে পারেন ডিম। এটি একদিকে প্রোটিনের ঘাটতি মিটিয়ে শক্তি বাড়াবে, অন্যদিকে পেট ভরে সবজি খাওয়ার কারণে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
শালগম: মাটির নিচের সবজি সব সময়ই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য ভালো। এগুলোর মধ্যে আরও কার্যকর শালগম। প্রতিদিনের সবজিতে গাজর বা মুলার পাশাপাশি খেতে পারেন। এটি শরীরকে গরম রাখার পাশাপাশি জোগাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
গাজর: শীতকালে সর্দি-কাশির উপদ্রব থেকে বাঁচতে চাইলে খেতে হবে গাজর। কারণ, এই সবজি ভিটামিন সিতে ঠাসা। প্রতিদিনের খাদ্যে গাজরের অন্তর্ভুক্তি ঘটালে রোগভোগের আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে শরীরও ভেতর থেকে চাঙা হয়ে ওঠে।
গরুর মাংস: গা গরম রাখার আরেকটি উল্লেখযোগ্য খাবার গরুর মাংস। তবে এটি কখনোই বেশি খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে নানা ধরনের রোগ হতে পারে। তবে ডায়েট চার্ট মেনে গরুর মাংস খেলে সেই শঙ্কা নেই।
মসলাদার স্যুপ: শীতের সন্ধ্যায় স্যুপের বিক্রি যেন একটু বেড়েই যায়। কারণ এটি শরীর গরম রাখে। তবে খেয়াল রাখবেন, স্যুপ যেন একটু মসলাদার হয়। যেন লবঙ্গগুঁড়া, দারুচিনি বা এলাচি থাকে। এসব মসলা একদিকে স্যুপকে স্বাদে গন্ধে উপভোগ্য করে তোলে। অন্যদিকে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।
তিলপাট্টি: তিল ও গুড় দিয়ে বানানো মচমচে মিষ্টিজাতীয় এই খাবার শীতকালে শরীরকে চাঙা রাখতে যথেষ্ট সহায়ক। গুড় শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে, তিল দেহের তাপমাত্রা ভারসাম্য রাখে। এ ছাড়া রক্তস্বল্পতার চিকিৎসায় গুড় ও তিল কার্যকর।
লাড্ডু: রস, ময়দা, চিনি, ঘি, বাদাম ও এলাচি দিয়ে বানানো হয় নানা রকম লাড্ডু। এই উপাদানগুলো শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। ফলে কমে আসে রোগভোগের আশঙ্কা।
কমলালেবু: ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘এ’ রয়েছে এমন ফল শীতকালে বেশি মাত্রায় খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কারণ, এই দুটি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
তিসির বীজ: পরিমাণমতো তিসির বীজ হালকা ভেজে নিন। তারপর তাতে অল্প করে গুড়, বাদাম ও পেঁপের বীজ মেশান। শীতকালজুড়ে খেলে শরীর নিয়ে কোনো চিন্তাই থাকবে না। এই উপাদানগুলো প্রতিটিই শরীরবান্ধব। শুধু তা-ই নয়, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি মেটাতেও এগুলোর মিশ্রণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
চিক্কি: গুড় ও বাদাম দিয়ে বানানো সুস্বাদু এই পদ যেমন মুখরোচক, তেমনি শরীরের পক্ষে উপকারী। কারণ, গুড় একদিকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে; অন্যদিকে বাদাম শরীরকে গরম রাখে। ফলে অসুস্থ হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।
পেঁয়াজ: বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ যত বেশি থাক, খাবারে এর ব্যবহার শরীরকে বাঁচাবে ঠান্ডার হাত থেকে। চীনে প্রাচীন ঔষধি হিসেবে পেঁয়াজের রস ব্যবহারের প্রচলন ছিল। চীনারা এখনো বিশ্বাস করে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় পেঁয়াজের গরম ঝোল শরীরের সব অবসাদ কাটাতে সক্ষম। এই শীতে খাবারে পেঁয়াজ বাড়িয়ে খেয়ে দেখতে পারেন। খেতে পারেন সুস্বাদু ফ্রেঞ্চ অনিয়ন স্যুপ।
ঘি: স্বাস্থ্যসচেতনেরা ঘি এড়িয়ে চললেও ঠান্ডায় শরীরকে সচল রাখতে এটি দারুণ কার্যকর। এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। এটি কেবল শরীরকে গরমই করে না, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ঘিয়ে ভাজা পেঁয়াজ খেলে সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা দূর হয় নিমেষেই।
আদা: শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় আদা। তাই শীতে শরীর সুস্থ রাখার উপযুক্ত উপায় এটি। পাশাপাশি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি সর্দি-কাশির নিরাময়েও সহায়ক। স্যুপ বা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে আদা খেতে পারেন। কাঁচাও খাওয়া যায়।
সরিষা: সরিষার তেল, সরিষা বাটা অথবা সরিষার শাক- সবকিছুই শরীরকে রাখে গরম। সরিষা বাটা রান্নায় ব্যবহার করলে স্বাদও বাড়ে। সর্ষের তেল হাতে-পায়ে মালিশ করেও শরীরকে রাখা যায় গরম।
তিল: যাদের তিলের খাজা পছন্দ, এই শীতে যত ইচ্ছে খেতে পারেন মজাদার এই খাবার। কারণ, ছোট্ট ছোট্ট তিলের দানাতেই রয়েছে শরীরকে গরম রাখার দারুণ সব উপাদান। বারবিকিউ সসে মাখানো চিকেন উইংসের উপরে ভাজা তিল ছড়িয়ে খেতেও দারুণ মজা।
মধু: সর্দি, কাশি, ফ্লু ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়তে অনন্য এক উপাদান মধু। মিষ্টিজাতীয় খাবার হলেও মধুতে নেই বাড়তি ক্যালরির ঝামেলা। এ ছাড়া শরীর গরম রাখতে বেশ কার্যকর।
বাদাম: বিভিন্ন জাতের বাদাম যেমন চিনাবাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম ইত্যাদি ভালো কোলেস্টেরল, ভিটামিন, ফাইবার ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। শীতে স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম খেতে পারেন।
দারুচিনি: শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে এই মসলা বেশ সহায়ক। আলাদা স্বাদ আনতে স্যুপ, রান্না করা খাবার, স্যালাডের সঙ্গে দারুচিনি মিশিয়ে নিতে পারেন। গরম পানীয়, যেমন চায়ের সঙ্গে এটি মেশাতে পারেন।
রসুন: সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কার্যকর। পাশাপাশি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন তিন-চার কোয়া রসুন সরাসরি বা রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পারেন।
মরিচ: মরিচের মধ্যে ক্যাপসাসিন নামের একধরনের উপাদান থাকে, যা শরীরকে শীতকালে গরম রাখে। কাঁচা, গুঁড়ো ও বাটা মরিচ শীতের রান্নায় একটু বাড়িয়ে দিন। শরীর গরম হবে। তবে কাঁচা মরিচটাই ভালো।
মসলা: মসলাদার রান্না শরীরকে গরম রাখে। কিন্তু তাই বলে বেশি পরিমাণে মসলাদার খাবার খাওয়া উচিত নয়। কেননা তাতে শরীর গরম হবে, কিন্তু স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। তবে মসলাদার খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পানি পান বাড়িয়ে দিলে সেই শঙ্কা কমবে।
ড্রাই ফ্রুটস: খেজুর, অ্যাপ্রিকট এবং অন্যান্য ড্রাই ফ্রুট শরীরে উষ্ণতা স্বাভাবিক রাখার জন্য কার্যকর।

 তৌহিদুল ইসলাম তুষার
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top