skip to Main Content

ফিচার I করপোরেট ক্যাজুয়াল

বদলে যাচ্ছে করপোরেট ফ্যাশনও। ফুল ফরমাল থেকে স্মার্ট ক্যাজুয়ালে উত্তরণ সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। দীর্ঘদিন এই জগৎকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন শারমীন রহমান। ক্যারিয়ারের একটা বড় সময় এশিয়াটিক জেডব্লিউটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সম্প্রতি হেড অব রিটেইল অপারেশনস হিসেবে গ্রামীণফোনে যোগ দিয়েছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন করপোরেট পোশাকে পরিবর্তনের কার্যকারণ

ফ্যাশন ট্রেন্ড ক্রমাগত পরিবর্তনশীল। একই কথা খাটে করপোরেট ড্রেস কোডের সঙ্গে। এক দশক আগেও মতিঝিল অফিস পাড়ায় যে পোশাকে বিভিন্ন কর্মজীবীদের দেখা যেত, এখন সেই পোশাকে নতুনদের দেখা যায় না। করপোরেট ড্রেস কোডে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন বেশির ভাগ কর্মজীবীকে ফুল ফরমাল ড্রেসে নয়, ক্যাজুয়াল ড্রেসেই অফিসে আসতে দেখা যায়।
‘করপোরেট’ ড্রেস কোড বলতে বোঝায় বিজনেস সেক্টরের পোশাক, কিন্তু কাজের জায়গার পোশাক বলতে আরও অনেক কিছু বোঝায়। অফিসের পোশাক বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন ব্যাংকিং সেক্টরের কথা যদি আসে, তাহলে বলা যায়, ব্যাংকারদের ফরমাল ড্রেস পরতেই হয়। তবে সে ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। আগে স্যুট পরতে হতো, এখন সেভাবে রেগুলার স্যুট কেউ তেমন পরছে না। কিন্তু তাদেরকে টাই পরতে হয়। আবার সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির কথা যদি বলা হয়, যেমন হোটেল বা এয়ারলাইনসে খুবই প্রপার পোশাক পরতে হয়। সেটা ফরমাল আউটফিট। টেকনোলজি সেক্টরে যারা বিজনেস ডিপার্টমেন্টে কাজ করে, তাদের ফরমাল পোশাক পরতে হয়। এর বাইরে যারা হার্ডকোর টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে, তাদের তেমন নির্দিষ্ট ড্রেস কোড থাকে না। ক্যাজুয়াল ড্রেস পরলেও চলে। তবে সেটা একেক করপোরেশনে একেক রকম। বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ড্রেস কোড যেমন, ছোট স্টার্টআপে তেমন নয়। আবার মিডিয়া সেক্টরের ব্যাক অফিসে যারা চাকরি করে, তাদের ড্রেস কোড বা ফুল ফরমাল ড্রেস পরা জরুরি নয়। যারা কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট ডিল করে, তাদের ক্ষেত্রে ড্রেস কোডটা জরুরি। তারা চাইলে ফরমাল থেকে খুব বেশি হলে সেমি ফরমাল বা স্মার্ট ক্যাজুয়ালে নামতে পারে। ফুল ক্যাজুয়াল অ্যাটায়ারে তারা কখনোই অফিস করতে পারে না।
দেশের বাইরে মেয়েরা অফিসে প্যান্ট বেশি পরে এবং এতে তারা বেশি কমফোর্ট ফিল করে। কারণ, তারা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে। তাদের অনেক হাঁটতে হয়, মেট্রো বা সাবওয়ে ট্রেন ব্যবহার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন হচ্ছে স্কার্ট থেকে প্যান্টে শিফট করা। বাইরে আবার আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরতে হয়। এ জন্য লেয়ারিং করে পোশাক পরা হয় বেশি। আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে কোট বা জ্যাকেট পরা হয়ে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকার বড় মেট্রোপলিটন সিটির অফিসে যেসব মেয়ে কাজ করে, তারা অফিসে হাই হিল পরলেও একটি ক্যাজুয়াল শু সঙ্গে রাখে। কারণ, বেশির ভাগ সময় ওদের হেঁটে ট্রেন বা বাস ধরতে হয়। অনেকক্ষণ হাই হিল পরে থাকলে পায়ে ব্যথা হয় এবং এটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অফিসে যারা ক্যাজুয়াল পরে, তাদের পোশাক অবশ্যই অফিস এটিকেট অনুযায়ী হতে হবে। অনেক অফিসেরই থাকে ড্রেস ম্যানুয়াল, তাতে নানা নির্দেশনা থাকে। বিশেষত অফিসে খোলামেলা পোশাক, ডিপ নেকলাইনকে উৎসাহিত করা হয় না। ডিপ নেকলাইনে কাঁধ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, অফিসে এটা কাম্য নয়। উপযুক্তও নয়। এসব নিয়ম আন্তর্জাতিকভাবেও অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
ছেলেদের ব্যাপারটা খুব সহজ। তারা ক্যাজুয়াল ড্রেস পরলেও এর একটা সীমা আছে। যেমন, শর্টস পরে অফিসে আসা সম্ভব নয়। ছেলেরা স্মার্ট ক্যাজুয়াল ড্রেসই বেশি পরছে। যেমন স্যুটের সঙ্গে হয়তো টাই পরছে না। আবার স্যুট-টাই কোনোটাই পরছে না। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় ফুল স্যুট পরা আরামদায়ক নয়। তাই শুধু প্যান্ট-শার্ট পরে অনেকে অফিসে যায়। বাংলাদেশেও ছেলেরা স্মার্ট ক্যাজুয়াল ড্রেসই বেশি পরে। ফরমাল জুতার বদলে ক্যাজুয়াল শু বা ক্যাজুয়াল লোফার পরতে পারে।
আমাদের দেশে অফিসের মেয়েরা এখনো সালোয়ার-কামিজেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে এর পরিবর্তে লং কুর্তা ও প্যান্ট অফিসে পরা উচিত। এ দেশের মেয়েরা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরলেও ফরমাল প্যান্ট-শার্ট পরে, জিনসের প্যান্ট খুব একটা পরে না। বিজনেস স্যুট পরা মেয়েদের সংখ্যা এখানে খুবই কম। অনেক মেয়ে অফিসে শাড়ি পরে আসে। বাংলাদেশে শাড়ি ফরমাল ড্রেস হিসেবে পরা হয়। মিটিং বা ইভেন্টে শাড়ি পরে আসে। ক্যাজুয়াল আউটফিটে মেয়েরা অফিসে জিনস খুব কম পরে। পরলেও লং কুর্তা বা টপের সঙ্গে পরে। ক্রপ টপ বা ছোট পোশাক কেউ পরে না। শার্ট-প্যান্ট পরলেও টাক ইন করার অভ্যাসটা মেয়েদের খুব একটা নেই, শার্টটা বাইরেই রাখে।
মেয়েদের অফিস-পোশাক হিসেবে সালোয়ার-কামিজের চেয়ে প্যান্ট-কুর্তা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। এর সঙ্গে স্কার্ফও পরা যেতে পারে। আর কুর্তায় পকেট থাকলে আরও ভালো। মোবাইল ফোন ক্যারি করা যায়। অন্যদিকে, সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে বড় একটা ওড়না থাকে, দেখতে খুব ড্রেসি লাগে। এর সঙ্গে হাই হিলের বদলে ব্লক হিল পরা যায়।
তবে এ কথা সত্যি, সব ক্ষেত্রে ড্রেস কোড এখনো উঠে যায়নি বা পুরোপুরি ক্যাজুয়াল হয়ে যায়নি। বলা যায়, পোশাকরীতি শিথিল হয়েছে। বেশ কটি বহুজাতিক সংস্থায় অনেকে এখন শার্ট-প্যান্ট-টাই পরে যাচ্ছে না। পোলো শার্ট পরে যায়। রাউন্ড নেক টি-শার্ট নয়। কেউ কিন্তু ছেঁড়া বা ফেড জিনস পরে না, ফরমাল জিনস বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরে যায়। খেয়াল করলে দেখা যাবে, ওয়ার্কিং আওয়ার বা কাজের সময় এখন আর আগের মতো নেই। ৯-৫টা নয়, এখন মানুষ লম্বা সময় ধরে অফিসে থাকে এবং প্রচুর কাজ করে। এতটা সময় অফিসে থাকার জন্য ফুল ফরমাল ড্রেস স্বস্তিকর নয়। অনেক অফিস কর্মচারীদের প্রোডাক্টিভিটির কথা চিন্তা করে ড্রেস কোড শিথিল করেছে। যাতে তারা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে। ক্যাজুয়াল পোশাক ফরমাল পোশাকের তুলনায় বরাবরই আরামদায়ক। তাই ড্রেস কোড শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ক্যাজুয়ালের দিকেই ঝুঁকছে।
যেসব অফিস বা বিজনেস সেক্টরে কাস্টমার ডিল করতে হয়, সেগুলো এখনো ফরমাল ড্রেস কোড থেকে পুরোপুরি বের হতে না পারলেও অন্যান্য সেক্টরের বিভিন্ন অফিস এখন এ ব্যাপারে অনেক নমনীয় হয়েছে। আবার ক্যাজুয়াল পরলেও ন্যূনতম নির্দেশনা থাকে। যেমন কালার, কলার, স্লিভ বা শু গাইডলাইন।
আমাদের দেশে বিজনেস সেক্টর বা সার্ভিস সেক্টরে ফরমাল অ্যাটায়ার থেকে ক্যাজুয়াল অ্যাটায়ারে শিফট খুব ধীরে হচ্ছে। আবার আমরা বাইরের ট্রেন্ড বেশি ফলো করি। ইন্টারন্যাশনালি পরিবর্তন হলে বাংলাদেশেও হয়। যেমন আগে দেখা যেত ব্যাংকে সবাই একই স্যুট প্যান্ট শার্ট টাই পরে আসে, অনেকটা ইউনিফর্মের মতো। আজকাল কিন্তু সবাই এক রকম পরে না। এখন একটা গাইডলাইন থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরে এই পরিবর্তনটা হতে অনেক সময় লেগেছে।
প্রয়োজন অনুযায়ী সবকিছুরই বদল ঘটে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ড্রেস কোড থাকা ভালো। তবে ফরমাল ড্রেস কোড যে হতে হবে, সেটারও কোনো যুক্তি নেই। কমফোর্ট এবং প্রোডাক্টিভিটির কথা মাথায় রেখে অফিসের ড্রেস কোড হওয়া উচিত। যেখানে কাস্টমার ডিল করার প্রয়োজন নেই, কিংবা কোম্পানির ব্র্যান্ড রিপ্রেজেন্ট করা লাগছে না, সেখানে ফরমাল ড্রেস না পরে স্মার্ট ক্যাজুয়াল ড্রেস পরা যেতেই পারে। কাজের পোশাক সময়, আবহাওয়া, উপলক্ষ, প্রয়োজনীয়তা, প্রোডাক্টিভিটি—সবদিক বিবেচনা করেই হওয়া উচিত।

অনুলিখন: ফাহমিদা সিকদার
মডেল: অনিক ও মোহিনি
ওয়্যারড্রোব: ওটু ও রুলমেকার শার্টস
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top