skip to Main Content

ফিচার I চুল সুরক্ষায়

চুলের ট্রিটমেন্টও জরুরি। এই তপ্ত প্রকৃতিতে। চুল প্রাণবন্ত ও সুস্থ রাখার জন্য

পরিবেশের বিরূপ প্রভাবে, বিশেষত প্রকৃতির পটপরিবর্তনে ত্বক ও চুলের ব্যাপক ক্ষতি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। চুলের বেশির ভাগ অংশই থাকে বাইরের দিকে। ফলে, এর ক্ষতি হয় বেশি। চুল রক্ষায় তাই ভেতর থেকে যেমন পুষ্টির জোগান দিতে হয়, তেমনি বাইরের অংশ ভালো রাখাটাও সমান জরুরি। চুলের ঠিকঠাক ও কার্যকর যত্নের জন্য এক্সপেরিমেন্টের অন্ত নেই। পরিবেশের বিরূপতার সঙ্গে লড়াইয়ের রসদ হিসেবে এতে যোগ হচ্ছে যত্নের নিত্যনতুন পদ্ধতি। আজকাল প্রচলিত অন্যান্য হেয়ার কেয়ার ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি স্প্রে ব্যবহারের চল বেশ লক্ষণীয়। যেকোনো তরল উপাদান চুলে ভালোভাবে লাগানোর জন্য এটি বেশ কার্যকর পদ্ধতি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্প্রে পাওয়া যায়। তবে চাইলে ঘরে বসেও তৈরি করা যেতে পারে।
চুলের বৃদ্ধি আর উজ্জ্বলতায় প্রোটিন ট্রিটমেন্ট বেশ কার্যকর। বিভিন্ন কারণে চুল প্রাণহীন ও আর্দ্রতা হারাতে পারে। এ সমস্যা থেকে মুক্তির ভালো উপায় হতে পারে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট। পার্লারে অভিজ্ঞ কারও হাতে এটা করিয়ে নেয়াই ভালো। যদি সব সময় তা সম্ভব না হয়, বাড়িতেও করে নিতে পারেন। প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে এটি করা হয় বলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। চুলের দৈর্ঘ্য ও ঘনত্ব অনুযায়ী একটি বা দুটি ডিম ব্লেন্ড করে নিন। এর সঙ্গে অলিভ অয়েল, মধু ও টকদই মিশিয়ে নিতে হবে। মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। দইয়ে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা চুলকে ময়শ্চার করে। এই ট্রিটমেন্ট ডিপ কন্ডিশনিংয়েও সহায়তা করে। এ ছাড়া পানি, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, আমন্ড অয়েল ও ক্যামোমিল মিশিয়ে স্প্রে করে নিন। এতে চুল ঝলমলে হয়ে উঠবে।
চুল পড়া খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। দুশ্চিন্তা, অপর্যাপ্ত ঘুম, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অসুস্থতা, পরিবেশদূষণসহ নানা কারণে চুল পড়তে পারে। তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং কার্যকর ট্রিটমেন্টে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চুলে নিয়মিত হট অয়েল ট্রিটমেন্ট নেবেন। এতে গোড়া শক্ত হবে। ভালো কাজ দেবে ক্যাস্টর অয়েল। এতে বিদ্যমান ভিটামিন ই, মিনারেল, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া বন্ধ তো করেই, সঙ্গে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। এই তেল খুব ঘন বলে এর সঙ্গে যেকোনো হেয়ার অয়েল মিশিয়ে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে লাগিয়ে নিয়ে পরদিন চুল ধয়ে ফেলতে হবে। আমলকী তেলে দিয়ে সেদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার বোতলে সংরক্ষণ করুন। নিয়মিত এই তেল ব্যবহারে চুল পড়া কমে যাবে। প্রচুর পানি পান করুন। বিভিন্ন ফলের রস খেতে পারেন। চুল পড়া রোধে পাকা পেঁপের রস বেশ কার্যকর। মনে রাখবেন, খাদ্যাভ্যাস চুল পড়া কমানো এবং রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে। যেসব খাবার চুলের জন্য ক্ষতিকর, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। যতটুকু সম্ভব প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন।
চুল পড়া কমাতে ম্যাসাজ ভালো ফল দেবে। এর জন্য অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এসেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। তেল হালকা গরম করে আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার ত্বকে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে থাকুন। তোয়ালে হালকা গরম করে নিয়ে মাথায় বেঁধে রাখুন দশ থেকে পনেরো মিনিট। পরদিন কিংবা তেল লাগানোর দুই ঘণ্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন এই ট্রিটমেন্ট অব্যাহত রাখুন। ভালো ফল পাবেন।
অনেকের চুল জন্মগতভাবেই সিল্কি ও মসৃণ। তবে যাদের চুল এমনটা নয়, কিছু ট্রিটমেন্টে তা করিয়ে নেয়া যায়। অনেকেই কেমিক্যাল এড়িয়ে চলতে চান। তারা কিছু হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা মসৃণ ও ঝলমলে চুল পেতে পারেন। সিল্কি ভাব আনতে মেহেদি, টকদই ও ডিমের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুল সফট ও সিল্কি করে তুলবে। পালংশাক, মধু ও অলিভ অয়েল ব্লেন্ড করে মাথায় লাগান। ত্রিশ মিনিট পর ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এ ছাড়া পাকা কলা টক দইয়ের সঙ্গে ব্লেন্ড করে নিয়ে লাগাতে পারেন। প্যাকটি চুল মসৃণ ও ঝলমলে করে তুলতে বেশ কার্যকর।
পছন্দসই চুলসজ্জায় তাপ প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে; কিন্তু এটা মাথার ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকর। তাই বলে তো আর গর্জাস বা পারফেক্ট ওয়েভি স্টাইল কিংবা অন্যান্য হেয়ারস্টাইল থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা যায় না। আয়রন বা কার্লারের মতো তাপ প্রয়োগের যন্ত্রগুলো ব্যবহারের আগে চুলে সিরাম প্রয়োগ বেশ জরুরি। ভালো ব্র্যান্ডের কোনো সিরাম কিনে আনতে পারেন বা চাইলে নিজেও তৈরি করে নিতে পারেন।
স্প্রে বোতলে ২০০ মিলি পানি ঢেলে নিয়ে তাতে দুই থেকে তিন ফোঁটা নারকেল তেল, চার/পাঁচ ফোঁটা বাদাম তেল ও সামান্য কন্ডিশনার যোগ করুন। এতে কন্ডিশনার অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। কারণ, এটি ফেনা তৈরি করে। চাইলে ল্যাভেন্ডার অয়েল বা পছন্দমতো সুন্দর গন্ধের কোনো তেলও যোগ করতে পারেন। এবার বাকি পানি ঢেলে স্প্রে বোতলটি ঝাঁকিয়ে ভালো করে সব উপকরণ মিশিয়ে নিন। ফেনা কমে এলে এটি ব্যবহারের উপযোগী হবে। যদি বাজার থেকে হেয়ারস্টাইলিং স্প্রে কিনে থাকেন, তবে চুল রক্ষা করার জন্য বেছে নিন তাপ প্রতিরোধক স্প্রে। এতে ক্ষতি কম হবে।
নারকেলকে মূলত ভারত-ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলের ফল ধরা হয়। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল। তাই সৌন্দর্যচর্চায় এ তেলের বহুবিধ এবং বৈচিত্র্যময় ব্যবহার রয়েছে বিশ্বজুড়ে।
ভিটামিন ই, কে এবং আয়রনের উপস্থিতির কারণে চুলে ডিপ কন্ডিশনিংয়ের জন্য এটি দারুণ উপযোগী। সাধারণভাবেও ব্যবহার করা যায়, তবে এর আগে কিছুটা গরম করে নিলে ভালো। পুরো চুলে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রেখে দিতে হবে কয়েক ঘণ্টা, যাতে ভালোভাবে তেলটা শোষণ করে নিতে পারে চুল। চুলের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং টিকিয়ে রাখতে এর জুড়ি নেই।
চুলে আলাদা উজ্জ্বলতা আনার জন্য আজকাল নানা রকম হেয়ার সিরাম ব্যবহার করা হয়। যেগুলোতে সিলিকনের উপস্থিতি অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, চুলের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য আন-রিফাইন্ড কোকোনাট অয়েল একেবারে ম্যাজিক্যাল। ব্যবহার করতে হবে হেয়ার মাস্কের মতো করে অথবা ইনটেনসিভ হেয়ার কন্ডিশনার হিসেবে।
তেল চুলকে দেয় খনিজ, ভিটামিন ও এসেনসিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড, যা চুল শুধু সুন্দরই করে তোলে না, গোড়া করে মজবুত এবং এর উন্নতিও সাধন করে। বেশ কার্যকর ও বহুল প্রচলিত তেল হচ্ছে নারকেল তেল। সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব, খুশকি ও অন্যান্য ক্ষতির হাত থেকে এটি রক্ষা করতে পারে। চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে এটি সহায়তা করে। কিছু কারি পাতা নারকেল তেলে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। চাইলে জবা ফুলও ফুটিয়ে নিতে পারেন কারি পাতার বদলে। এবার ঠান্ডা করে শুকনো স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন। মাথার ত্বকে স্প্রে করে নিন। এর সুবিধা হলো, গোড়ায় ও পুরো চুলে তেল ভালোভাবে পৌঁছাবে। এবার ম্যাসাজ করে নিন। এতে মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়বে।
এই মিশ্রণ শুষ্ক চুলে স্প্রে করে নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। নারকেল তেল, জলপাই তেল ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিতে হবে। স্প্রে করার আগে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিন।
টিপস
 সাদা সিরকা বা আপেল সাইডার ভিনেগার কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন
 বাড়িতে রাঙানো চুলে ট্রিটমেন্ট করিয়ে নেয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ, অমø বা অ্যাসিড বিদ্যমান আছে এমন উপকরণ যেমন টকদই, লেবু- এসব ব্যবহারে চুল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে
 যতটা সম্ভব হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। যদি করতেই হয়, তবে চুল থেকে দূরে রেখে বা ঠান্ডা বাতাসে চুল শুকিয়ে নেবেন। বেছে নিতে পারেন এয়ার ড্রায়ার
 চেষ্টা করুন সব সময় চুল যাতে পরিষ্কার থাকে। প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার আগে মাথায় স্কার্ফ জড়িয়ে নেবেন। এটি রোদ থেকেও সুরক্ষা দেবে

 তাসমিন আহমেদ
মডেল: মাইশা ও সূর্য
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top