skip to Main Content

ফিচার I জে-বিউটি

বিশ্বজুড়ে জাপানি সৌন্দর্যপণ্যের জয়জয়কার। প্রাকৃতিক উপাদান, বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া, নতুনতর উদ্ভাবনের গুণে

নিজেকে সুন্দর রাখার জন্য যারা সচেষ্ট, তাদের জন্য বিউটি ব্র্যান্ডগুলো তৈরি করছে নিত্যনতুন সৌন্দর্যপণ্য। গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার। এখন এটি রীতিমতো একটি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতা। তা যেমন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন দেশের মধ্যেও। বিশ্ববাজারে নিজেদের স্থান অক্ষুণœ রাখার জন্য বিউটি প্রডাক্ট উৎপাদন এবং এ নিয়ে গবেষণা চলছে বিভিন্ন দেশে। এগুলোর মধ্যে জাপান ও কোরিয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
জাপানি সৌন্দর্যপণ্য, রূপচর্চারীতি ও অভ্যাস জে-বিউটি নামে পরিচিত। বেশ কয়েক দশক ধরে এর কদর দুনিয়াজুড়ে। কারণ, জাপানি সৌন্দর্য পদ্ধতি ও তাদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম। তাদের সৌন্দর্যের দর্শন স্বাস্থ্যের যত্নের বেশ কাছাকাছি। তাই জাপানিজ রুটিনের ভিত্তি হলো ত্বকের যত্ন। তারা বিশ্বাস করে, সৌন্দর্য নির্ভর করে সুস্থ ত্বকের ওপর। জাপানিদের এই রূপ-রুটিন ঠিক করা হয় অল্প বয়স থেকেই এবং তারা যেকোনো সমস্যার তাৎক্ষণিক নিরাময়ের চেয়ে সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি পছন্দ করে।
নিজেদের সৌন্দর্যসেবা ও গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখতে তারা নির্ভর করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও যুক্তির ওপর। একটি পণ্যের গুণাগুণ ও এর সুবিধা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত না হলে তা লঞ্চ হবে না- এই নিয়ম মেনে চলার নীতি প্রতিটি জাপানি ব্র্যান্ডের রয়েছে। তাই এখানকার বিউটি প্রডাক্টের ওপর সৌন্দর্যপ্রেমীদের নির্ভরশীলতা বেশি।
বিশ্ববাজার বিশেষ করে পশ্চিমা বাজার ইদানীং ঝুঁকেছে প্রাকৃতিক ও হোলিস্টিক লাইফস্টাইলের প্রতি। ক্ষত সারিয়ে তোলার পর কী ঘটছে, কীভাবে ঘটছে তা নিয়েও সেখানকার ব্র্যান্ডগুলোর উদ্বেগ লক্ষণীয়। এদিক থেকে জাপানিরা অনেক অগ্রসর। আর জাপানি সৌন্দর্য যে প্রকৃতিপ্রাণিত, তা কারও অজানা নয়। এ ব্যপারে তারা জোর দেয় পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতার ওপর। ফলে ডিপ ক্লিনজিং তাদের রূপচর্চার বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তা যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক পরিবেশে ও উপকরণে হওয়াটাই মূল শর্ত। তারা মনে করে, এটাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লাভের সেরা উপায়। তাই বিউটি প্রডাক্টের পশ্চিমা বাজারে জে-বিউটির কদর একটু বেশিই।
অনেকেই ভাবেন, কেন জে-বিউটি সবার এত প্রিয়? প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন ছাড়াও পণ্যের গুণগত মান, উপাদান ও কার্যকারিতা সম্পর্কিত গবেষণা ও উদ্ভাবনে জাপানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেশ উন্নত ও অগ্রসর। বিশেষ করে এসপিএফ প্রডাক্ট, ক্রিম ও ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে। আজকের বিশ্বে এ ধরনের পণ্যের ব্যবহারই বেশি। জাপানিজ বিউটি ব্র্যান্ডই প্রথম যুগান্তকারী সব ফর্মুলা ও বিজ্ঞানসম্মত পণ্য বাজারজাত করেছে। সম্প্রতি রিলিজ হওয়া শিশেডোর এসেনসিয়াল ডে ক্রিম, এসপিএফ টুয়েনটি এর একটি উদাহরণ। ত্বকের পুনরুজ্জীবিত ও পুনর্গঠনে গ্রহণযোগ্য পণ্য তৈরিতে এ ধরনের নিউরো টেকনোলজির ব্যবহার এই প্রথম। শুধু ত্বকের যত্নে নয়, জাপানি মেকআপেও এসেছে চমৎকার সব টেক্সচার ও দীর্ঘ সময় থাকার উপযোগী ফর্মুলার মেকআপ কিটস।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর জাপানিজ সৌন্দর্যপণ্যকে অনেকেই বাজারে নতুন কোরিয়ান বিউটি প্রডাক্ট বলে ভুল করে থাকেন। সম্প্রতি কোরিয়ান বিউটি দশ ধাপের ত্বকের যত্নে রুটিন ও ক্লাউডলেস ও গোল্ডেন ফেস বিউটি ট্রেন্ড দিয়ে বিউটি মার্কেটে নাম করেছে। তবে তা জাপানি বিউটি মার্কেটকে হটিয়ে দেবে, এমনটা নয়। যদিও বিভিন্ন ব্র্যান্ড, এক্সিকিউটিভ ও ইন্ডাস্ট্রির অনেকেরই প্রশ্ন, কোরিয়ার নেক্সট কী? বিউটি ওয়ার্ল্ডে কোন বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে দেশটি? কিছু সংবাদমাধ্যম আরও এগিয়ে। বলছে, জে-বিউটি হচ্ছে কে-বিউটির উত্তরাধিকারী। এমন পারস্পরিক তুলনা ও সম্পর্ক নিয়ে জাপানিজ সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা বেশ বিরক্ত। ‘কোরিয়ান পণ্য চমৎকার সব প্যাকেজিংয়ের পাশাপাশি ফর্মুলা ও কালারের জন্য পরিচিত। আর জে-বিউটি মানসম্মত উৎপাদন, সমৃদ্ধ পণ্য ও প্রাগ্রসর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু’- এমনটাই বলেছেন আমেরিকার শিশেডো কসমেটিকসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস গ্রান্ট। কয়েক দশক ধরে জে-বিউটির জনপ্রিয় বিভিন্ন প্রডাক্ট দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া জাপানি হেয়ার ও স্কিন কেয়ার ট্রেন্ডে সঙ্গে ক্রেতাদের চমৎকার যোগাযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়, সব ধরনের বিউটি প্রডাক্ট, অরিজিনাল প্যাকেজিং এবং কিছু রীতিবিরুদ্ধ উপকরণ ব্যবহার করে কোরিয়ান কসমেটিকস বৈশ্বিক প্রসাধনী শিল্পে ঝড়ের বেগে প্রবেশ করেছে। তারা বেশ সুনামও কুড়িয়েছে। তাই কীভাবে জে-বিউটি এই প্রতিদ্ব›দ্বীর মোকাবিলা করবে বা সাফল্য ধরে রাখবে, তা নিয়েই মিডিয়াগুলোর যত আলোচনা। কিন্তু তারা ভুলে গেছে যে জাপানি সৌন্দর্যপণ্য কয়েক দশক ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে বেশ মর্যাদার সঙ্গেই। সেই অবস্থান অক্ষুণ্ন কোরিয়ান বিউটির ক্রেজের এই সময়েও।
এর পেছনে রয়েছে জাপানিদের বিভিন্ন সৌন্দর্যরীতি বা পদ্ধতি, সময়ের সঙ্গে মানিয়ে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। জাপানিরা বিশেষ করে স্কিন কেয়ারে সব সময় টাইম-অনারড মেথড ও ট্র্যাডিশনের ওপর গুরুত্ব দেয়। তাদের সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের এই রীতি শত শত বছরের পুরোনো। কাবুকি ও গেইশা শিল্পের ধরন সম্পর্কে জানতে গেলেই বোঝা যাবে সেখানে রয়েছে সাজসজ্জা, ত্বকের যত্ন ও মেকআপ প্রয়োগরীতির দীর্ঘ ইতিহাস। সৌন্দর্য নিয়ে যাদের চিন্তাভাবনা এতকাল আগে থেকে, যা এখনো চলমান, তাদের পণ্যের বাজার বিস্তৃত থাকবে, এমনটি স্বাভাবিক। নামি জাপানি ব্র্যান্ডগুলো এখনো তাদের পণ্যে ঐতিহ্যের ধারা বহমান রেখেছে সবুজ চা, ক্যামেলিয়া অয়েলের মতো দেশীয় উপকরণগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে। তবে অবশ্যই এতে অত্যাধুনিক ফর্মুলা ও উন্নত প্রযুক্তিতে গুণগত মান যাচাই করে নেওয়া হয়। তাই ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্যপণ্য উৎপাদনের ঝোঁক থাকলেও জে-বিউটি অভিনব। তাই জাপানের অনুকরণে, এখন আমেরিকান ব্র্যান্ডও অ্যান্টিবডি টেকনোলজি ব্যবহার করে বার্ধক্যের ছাপ মন্থর করার জন্য সিরামাইড উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে।
জে-বিউটি তার ধারাবাহিকতা, ঐতিহ্য ও বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদন ব্যবস্থার বদৌলতে সৌন্দর্যপণ্যের বাজারে স্বমহিমায় দৃঢ় অবস্থানে থাকবে- এমনটাই বলছেন বোদ্ধারা।

 আহমেদ বুবলি
মডেল: প্রিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top