skip to Main Content

ফিচার I ডুনেডিনে প্রোজ্জ্বল পূর্ণা

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজির ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পাঠরত। পড়ার ফাঁকে সৃজনে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষর। মিলেছে দেশি-বিদেশি স্বীকৃতি। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত আইডি ইন্টারন্যাশনালে অংশগ্রহন ও স্বীকৃতির অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার রোকাইয়া আহমেদ পূর্ণা

২০১৮ সালের শুরুতেই অংশগ্রহণের সুযোগ আসে আইডি ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন উইকে। এটা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ৫ বছর পর থেকে এই আসরে যোগ হয় নতুন ধারা আইডি ইন্টারন্যাশনাল এমারজিং ডিজাইনার্স অ্যাওয়ার্ড। প্রতিবছর এই সময়ে অনুষ্ঠিত হয় নিউজিল্যান্ডের ডুনেডিনে। এ বছর চতুর্দশ বছর পূর্ণ করল এই প্রতিযোগিতা। এই আসরে অংশগ্রহণ আমার জন্য বড় একটা সুযোগ। কারণ, সেখানে যাওয়ার আগে আমাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে হয়েছে। আমি ভীষণই খুশি উদীয়মান তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারদের জন্য নিউজিল্যান্ডের এই আন্তর্জাতিক আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পেরে। কারণ, সেখানে নিজের মেধা ও সৃজনশীলতা উপস্থাপন করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের পাশাপাশি দেশকে সম্মানিত করার। এ বছর বিভিন্ন দেশের মোট ৪৪ জন প্রতিভাবান তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারের কালেকশন উপস্থাপিত হয়। প্রত্যেকেই ছিলেন ভাবনা স্বাতন্ত্র্যে ঋদ্ধ। তাদের কালেকশনে বিষয়বৈচিত্র্য ছিল দেখার মতো। নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে লিঙ্গসমতা, প্রকৃতি প্রভৃতি নানা বিষয় তারা কাপড়ের ক্যানভাবে উপস্থাপন করে বিশ্বের ফ্যাশনপ্রেমীদের নতুন ফ্যাশন উপহার দেওয়ার পাশাপাশি দিয়েছেন কোনো না কোনো বার্তা। অনেকের কাজেই লক্ষ করা গেছে নিজ দেশের বুননশৈলী। অনেকে আবার কাজ করেছেন বাতিল উপকরণ দিয়ে। কেউ ব্যবহার করেছেন আপহোলস্ট্রি ম্যাটেরিয়াল। ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটানোর পাশাপাশি টেকসই ফ্যাশনকে তুলে ধরাই ছিল সিংহভাগের লক্ষ্য।
এবার অংশ নেওয়া ২১ দেশের ৪৪ জন ডিজাইনারের মধ্যে ১২ জনকে দেওয়া হয় ‘২০১৮ আইডি ইন্টারন্যাশনাল এমারজিং ডিজাইনার অ্যাওয়ার্ড’। এই তালিকায় আমারও স্থান হয়। এ ছাড়া আমি আমার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছি অন্ট্রাপ্রেনর অ্যাওয়ার্ড। আমার কালেকশনে ব্যবহার করেছি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতে বোনা সুতি ও খাদি। যোগ করা হয় টিনসেল। আমার কালেকশন তৈরি করা হয় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায়। আমি চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার পাশাাপাশি তাকে কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করতে। যাতে করে দেশের জনবলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এই পদ্ধতি যে সোশ্যাল করপোরেট রেসপনসিবিলিটির অনুশীলনকেও যে উদ্বুদ্ধ করে, তা আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি। আমার আরও একটি বিষয় ছিল নিজের শিকড় বিস্মৃত না হওয়া। আমার দেশ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর ইতিহাসকে তুলে ধরার প্রয়াস সব সময়ই থাকে। প্রাধান্য পায় আমার কাজে। প্রাধান্য পায় উপকরণ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও। তাঁত, খাদি, পাটসহ নানা দেশীয় উপকরণই আমি ব্যবহার করে থাকি। আমি মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করি পাশ্চাত্যের নিত্যনতুন উপায়ের সঙ্গে দেশীয় উপকরণ ও প্রক্রিয়া। এবারের এই আসরে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ হয়েছে। জানতে পেরেছি তাদের কর্মপ্রক্রিয়া। স্পষ্ট হয়েছে আমাদের সীমাবদ্ধতা। কারণ, অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে উন্নত সুবিধা আর সুযোগ পেলে অন্যদের সমকক্ষ হয়ে ওঠা সম্ভব আমাদের পক্ষে।
নিউজিল্যান্ডের ভিসা পাওয়া সহজ ছিল না। এত দূরের পথ পাড়ি দেওয়া নিয়েও শঙ্কা ছিল। কিন্তু সবকিছুতেই পাশে ছিল পরিবার। পাশাপাশি আমার ইউনিভার্সিটিও। সবার সম্পূর্ণ সহায়তাতেই এই প্রাপ্তি সম্ভব হয়েছে।
এর আগের কিছু সাফল্যের কথা এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা যেতে পারে। ২০১৫ সালে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছি বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্সের টিভিসির জন্য। আমার ইউনিভার্সিটির ‘প্লে উইথ স্টিচ’ প্রতিযোগিতায় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে প্রথম হই। ‘ডেনিম অ্যান্ড জিনস ইন্টারন্যাশনাল ২০১৫ প্রদর্শনীতের অংশ নিই। আপ সাইক্লিং হ্যাট ডিজাইন করে প্রথমও হই। আমার ড্রেস স্থান পায় প্রদর্শনীতে। ২০১৭ সালে একই আসরে কুইজ অ্যান্ড ড্রেস মেকিংয়ে প্রথম রানারআপ হই। সেবারই ইন্টারন্যাশনাল লয়ওন লুম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হই প্রথম বাংলাদেশি ইয়ং ডেলিগেট এবং ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে। উইভিং টেকনিক শিখি ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে। এসডিসি ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইন কম্পিটিশনে বাংলাদেশ রিজিওনাল হিটে প্রথম রানারআপ হয়েছি। আমার থিম ছিল ওয়েস্ট কটন রিসাইকেল, রিইউজ অ্যান্ড মেকিং সাসটেইনেবল এমপ্লয়মেন্ট সেক্টর ফর আন্ডার প্রিভিলেজড পিপল অ্যান্ড প্র্যাকটিসিং সিএসআর। ২০১৭ সালে উহান ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন উইকে অংশ নিয়ে এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমার থিম ছিল ‘রিটার্ন অব গাজীর পট’। বাংলাদেশি পটচিত্র গাজীর পটকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ফ্যাশনে তুলে ধরার প্রয়াস পাই। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডসের সাক্সন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে দুটি বাইং টু প্রজেক্ট করেছি। কস্টিউম ডিজাইন করেছি টেলিভিশন সিরিয়াল আয়নাবাজিতে।

অনুলিখন: আছিয়া আলম দিনার
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top