skip to Main Content

ফিচার I ড্রাই ব্রাশিং

এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। মানে, শুষ্কতা দিয়ে শুষ্কতার সারাই। সুকৌশলে। জুতসই সামগ্রীর প্রয়োগে

দাঁতের পরিচর্যায় ব্রাশিং অপরিহার্য। অন্যদিকে চুল পরিপাটি রাখতেও অনেকের প্রথম পছন্দ হেয়ার ব্রাশ। কিন্তু ত্বক পরিচর্যায়? ব্রাশিংয়ের এই টেকনিক কিন্তু বহু পুরোনো। প্রি বাথ রিচুয়াল হিসেবে যা প্রচলিত ছিল রাজা-রানির রূপকথার আমলে। এখন সেই আভিজাত্য নেই বটে, কিন্তু আধুনিক সৌন্দর্যসচেতন নারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাই ব্রাশিংয়ের বাস্তবসম্মত ব্যবহার। হলিউড থেকে বলিউডের তারকারাও দারুণ মজেছেন এতে। মিলছে স্পা এবং বিউটি স্যালনগুলোর সার্ভিস লিস্টেও। দেহ থেকে মুখত্বক—সবেতেই এক্সফোলিয়েশনের জন্য দারুণ উপযোগী এ পদ্ধতি। তবে সাবধান! জানা চাই ড্রাই ব্রাশিংয়ের সঠিক কৌশল। ব্রাশটাও বেছে নিতে হবে ত্বক বুঝে। তবেই এই মৌসুমে শুষ্কতাকে বশে রাখা যাবে অনায়াসে।
ড্রাই ব্রাশিং। সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে শুকনো বডি অথবা ফেস ব্রাশ দিয়ে দেহ আর ত্বকে তা বুলিয়ে নেওয়া। তবে সেটা হতে হবে একটি নির্দিষ্ট কৌশল মেনে, দেহকাঠামোর মাপজোখ বুঝে। প্রতিটি স্ট্রোক হতে হবে সুচিন্তিত। তবেই মিলবে বডি ব্রাশিংয়ের পরিপূর্ণ কার্যকারিতা। বাজারে ব্রাশও মিলবে মেলা। বেছে নিতে হবে প্রয়োজন বুঝে। সিনথেটিক ব্রিসেলেরগুলো ব্যবহার একদম মানা। বরং গোট হেয়ার, বোর আর ভেগান নাইলনে তৈরি প্রাকৃতিক ব্রিসলের ব্রাশগুলো এ ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী। কোমল বলে সেসব ত্বকবান্ধব। আকারেও মিলবে ভিন্নতা। দেহের জন্য ক্ল্যাসিক ওভাল শেপ ছাড়াও আছে মাল্টিসাইডেড রাউন্ড ব্রাশ। কোনোটা হাতলসহ, আবার কোনোটা তা বাদে। মুখত্বকের ব্রাশগুলোর মধ্যে নরম নাইলনের ব্রিসলযুক্তগুলোর কদরই বেশি। এগুলোর সাইজ বডি ব্রাশের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে। ফলে চেহারার সব বাঁকে সহজে পৌঁছে যেতে পারে। যাদের আরও অত্যাধুনিক ড্রাই ব্রাশ প্রয়োজন, তাদের জন্য রয়েছে আয়নিক কপার ফাইবারে তৈরি ব্রাশ। প্রথমবার ব্যবহারে রুক্ষ মনে হলেও এর কার্যকারিতা এড়ানোর উপায় নেই।
ড্রাই ব্রাশিংয়ের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। দেহ আর মুখত্বক উভয় ক্ষেত্রেই।
লিম্ফেটিক সাপোর্ট
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি বড় অংশ লিম্ফেটিক সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল। বৈজ্ঞানিকভাবেই বেশির ভাগ লিম্ফ ভেসেলের বিস্তার ঠিক ত্বকের নিচেই। ফলে অনেকেরই দাবি, ড্রাই ব্রাশিং এই লিম্ফ সিস্টেমের সঞ্চালনকে সক্রিয় রাখে, রাখে উদ্দীপ্ত। ফলে ডিটক্সিফিকেশন হয় দেহ আর ত্বকের।
এক্সফোলিয়েশন
ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ ড্রাই ব্রাশিং। ত্বকের উপরিস্তরে জমে থাকা মৃত কোষ সারাইয়ের চমৎকার সমাধান। প্রাকৃতিক ব্রিসলের এসব ব্রাশ নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করে ঘষে-মেজে নিলেই নির্দিষ্ট সময় পর তা হয়ে ওঠে নরম। দেখায় পেলব আর মসৃণ। এক্সফোলিয়েশনের ফলে ত্বকে বাড়ে উজ্জ্বলতা। এমনকি ড্রাই ব্রাশিংয়ের বদৌলতে টিস্যু ও রক্তকোষগুলো আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এতে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক দ্রুত এবং সহজে শুষে নেয় যেকোনো স্কিন কেয়ার প্রডাক্টের উপকারী উপাদানগুলো।
লোমকূপ পরিষ্কার
ড্রাই ব্রাশিংয়ের ফলে এক্সফোলিয়েট হয় ত্বক। ফলে লোমকূপ থেকে বেরিয়ে আসে তাতে জমে থাকা তেল, ধুলা, ময়লা। পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার হয় বলে দৃশ্যমানও কম হয় লোমকূপ। বাড়ে মসৃণ অনুভূতি।
রক্তপ্রবাহের বিস্তার
নিয়মিত ড্রাই ব্রাশিংয়ের ফলে ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ে স্বাভাবিকভাবেই। অনেকের ত্বকে লালচে আভা দেখা যেতে পারে, তবে ভয়ের কিছু নেই। নতুন নতুন ড্রাই ব্রাশিংয়ের ফলে এটা হতে পারে। তবে এই চর্চা অব্যাহত রাখলে সমস্যাটি আর থাকে না।
শক্তিসঞ্চারী
দেহ উদ্দীপ্ত হয় এ প্রক্রিয়ায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালবেলা ড্রাই ব্রাশিংয়ের মোক্ষম সময়। এর ফলে শরীর সারা দিনের জন্য উজ্জীবিত থাকে।
দেহ আর মুখত্বক—দুই জায়গাতেই ড্রাই ব্রাশিং সম্ভব। তবে কৌশল খানিকটা ভিন্ন। খেয়াল রাখতে হবে স্ট্রোক আর প্রেশারের ওপরও। অনেকেই ব্রাশে তেল ব্যবহার করেন ব্রাশিংয়ের আগে। এ ক্ষেত্রে গোসলের পরে তা করতে হবে। তবে তেল ছাড়া ড্রাই ব্রাশিংয়ের উপযুক্ত সময় গোসলের আগে।
বডি বিউটি
শুরু করতে হবে পা থেকে। পাতা থেকে লম্বা আপওয়ার্ড স্ট্রোকে পায়ের উপরিভাগ পর্যন্ত ব্রাশ বোলাতে হবে। প্রতিটি অঙ্গ থেকে স্ট্রোক দেহের মাঝের দিকে আসা চাই। হাতের বেলাতেও তাই। তালু থেকে ব্রাশ বুলিয়ে তা বুকের দিকে টেনে আনতে হবে। পেট আর বগলের ক্ষেত্রে স্ট্রোক হতে হবে সার্কুলার মোশনে। ক্লকওয়াইজ। ব্রাশ করতে হবে দেহের পেছনের অংশেও। একই নিয়মে। গলা যেন বাদ না পড়ে। প্রতি অংশে অন্তত দশবার করে স্ট্রোক দেওয়া প্রয়োজন। ব্রাশিং শেষে সারতে হবে গোসল। এতে ত্বকের মৃত কোষগুলো পরিষ্কার হবে। তারপর আর্দ্র ত্বকেই মেখে নিতে হবে ময়শ্চারাইজার। সপ্তাহে অন্তত দুবার। তবে ত্বক বেশি স্পর্শকাতর হলে একবার করলেই চলবে।
ফেস ফর্মুলা
বডি ব্রাশিংয়ের চেয়ে কোমল হতে হবে ফেস ব্রাশিংয়ের স্ট্রোকগুলো। কারণ, দেহত্বকের চেয়ে মুখত্বক অনেক বেশি কোমল ও সংবেদনশীল। শুষ্ক, পরিণত ত্বকে সপ্তাহে দুবার ফেস ব্রাশিং যথেষ্ট। ত্বক তৈলাক্ত হলে করা যাবে চারবার পর্যন্ত। পরিপূর্ণ পরিষ্কার এবং শুকনা চেহারায় করতে হবে ফেস ব্রাশিং। হালকা হাতে, ছোট ছোট স্ট্রোকে সারতে হবে পুরো সেশন। শুরু করতে হবে গলা থেকে। আপওয়ার্ড স্ট্রোকে উঠে আসতে হবে চিবুক আর কানের নিচ অব্দি। চিবুকে দিতে হবে ইনভারটেড ‘ইউ’ স্ট্রোক। গালে আপ এবং আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে সার্কুলার মোশনে বোলাতে হবে ব্রাশ। ঠোঁটের উপরের অংশেও। ডানে আর বামে। নাকের ডগায় সার্কুলার মোশন আর খাড়া অংশে আপওয়ার্ড স্ট্রোক দিয়ে উঠে যেতে হবে দুই আইব্রাওয়ের মাঝ অব্দি। চোখের চারপাশে সাবধান। হালকা আপওয়ার্ড আর সার্কুলার মোশন চাই এই অংশে। সবশেষে কপাল। মাঝ থেকে আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে একবার ডানে আবার বামে বোলাতে হবে ব্রাশ। দশ মিনিটের কম সময় লাগবে পুরো প্রক্রিয়ায়।

সতর্কতা

 ত্বকে কোনো ধরনের সংক্রমণ থাকলে প্রক্রিয়াটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত
 ব্রাশিংয়ের পর ব্যবহৃত ব্রাশ অবশ্যই পরিষ্কার করা চাই
 ড্রাই ব্রাশ করা ত্বকে সানস্ক্রিন মাখতেই হবে। কারণ, এ ধরনের ত্বক সূর্যে বেশি প্রভাবিত হয়
 জাহেরা শিরীন
মডেল: লিন্ডা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top