skip to Main Content

ফিচার I ত্বকচর্চার অষ্টমার্গ

আটটি ধাপে পরিচর্যা। ত্বকের সুস্থতা ও সৌন্দর্যের জন্য। তবে সঠিক উপাদান ও উপকরণেই সেটি সম্ভব

নিজ দেহ ত্বকের সঙ্গে সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন, পরিচর্যায় চলতি ধারাটাই মেনে চলতে হয়। এইট স্টেপ স্কিন কেয়ার এখন ইন ট্রেন্ড। ইনস্টাগ্রাম আর পিনটারেস্ট ঘাঁটলে এমনটা মনে হয়। আট ধাপের এই ত্বকের যত্নে কী করা যায়? প্রথমেই স্কিনের কেয়ার ভাগ করে নিতে হবে সূর্যের আসা-যাওয়ার ওপরে। প্রসাধন ব্যবহারের আগে দেখতে হবে দিন, নাকি রাত! দিনের বেলায় ত্বকচর্চা করতে হলে ডাবল ক্লিনজিং মাস্ট। এর পরে টোনার। ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে হবে। তৃতীয়তে সেরাম। এর পরে আইক্রিম। চোখের যত্ন তো হলো। এবার স্পট ট্রিটমেন্টের পালা। ময়শ্চারাইজারের চাহিদা ভুললে চলবে না। সময় নিয়ে ত্বকের ধরন বুঝে ময়শ্চার করে নিতে হবে। এরপরে কোমল কটন প্যাডে ফেস অয়েলের কয়েক ফোঁটা নিতে হয়। সব শেষে সানস্ক্রিন। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকুক।
বাইরে থেকে ফিরে ক্লিনজার-টোনার-সেরাম-আই ক্রিম-স্পট ট্রিটমেন্ট-ময়শ্চারাইজারের পরে রেটিনল! পরিবর্তন এখানেই। তারপরে ফেস অয়েলের প্রলেপে কমপ্লিট স্কিন নাইট কেয়ার।
ট্রেন্ডে গা ভাসাতে হবে, এমনও নয়। ত্বকে এই আট স্টেপ কেয়ার দরকার হবে, সেই বাধ্যতাও নেই। ক্লিনজার, ময়শ্চারাইজার আর সানস্ক্রিনেই ত্বকের যত্ন হতে পারে সম্পূর্ণ। ত্বকের ধরন যদি হয় শুষ্ক, তাহলে এর সঙ্গে যোগ করে নেওয়া যায় হাইড্রেটিং সেরাম। ব্রেক আউটস যদি দেখা দেয় স্কিনে, শুধু একটি রেটিনয়েড যোগ করে নিতে হবে। কোনো তাড়াহুড়া নয় যত্নে।
ত্বকের পরিচর্যায় শুরুতেই লাগবে ক্লিনজার। প্রথমে ব্যবহার করতে হবে অয়েল বেইজড ক্লিনজিং অয়েল। ওয়াইপসের প্রয়োজন নেই বললেই চলে। কটন বল ব্যবহার করতে হবে। এরপরের ধাপে ক্রিমি ক্লিনজার বেছে নিলে ভালো ফল পাওয়া যবে। দূষণ দূর করে পরিষ্কার হবে ত্বক। সব ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে ক্রিমি ক্লিনজার। অ্যাকনেপ্রবণ স্কিনে এটা মাস্ট।
পরের ধাপ টোনার। স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডগুলো এখন এটি তৈরি করছে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে। আগের মতো উপকরণটি আর অ্যালকোহল বেইজড নয়। টোনার এখন কোমল অনুভূতি দেয়। ত্বক হাইড্রেট করার ইনগ্রেডিয়েন্টস ড্রাই স্কিনের কেয়ার আর অ্যাকনে ট্রিটের জন্য এক্সফোলিয়েন্টস হিসেবে কাজ করে। বাজারে নানান লেবেলের টোনার পাওয়া যায়। তাই নিজের স্কিন বুঝে বেছে নিতে হবে সেরা ট্রিটমেন্ট। অ্যাকনে থাকলে, উপকরণে বিএইচএ অথবা এএইচএ আছে এমন টোনার বেছে নেওয়া যায়। এতে বন্ধ পোরগুলো খুলে যাবে। ব্রেক আউট ঠেকাবে। সময়ের সঙ্গে ব্ল্যাক হেডস মিলিয়ে দিতে সাহায়ক হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্যও এএইচএ! কিন্তু ত্বক যদি হয় তৈলাক্ত, তাহলে বিএইচএর বাইরে কোনোভাবেই নয়। সুন্দর করে ত্বক ধুয়ে এক লেয়ার টোনার দিতে হবে! কটন বলে নিয়ে যত্নের সঙ্গে পুরো মুখে বুলিয়ে নিতে হয়। সকাল-রাত সব সময়েই ত্বক ময়শ্চার রাখতে ব্যবহার করা যায় টোনার। এর ময়শ্চারাইজিং গুণ ত্বক সুস্থ রাখবে।
ত্বকে পুষ্টির জন্য দরকার সেরাম। অল্প সময়ে ত্বকের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে এটি জরুরি। হেভি লিফটার হিসেবে সেরাম কাজ করবে। ভিটামিন সি বেশ জনপ্রিয় সৌন্দর্যসচেতনদের কাছে। সেরামটি ত্বককে ইনফ্লামেশন এবং ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। এর ব্যবহারে সতর্কতা দরকার। এটি এক দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।
চোখের চাই যত্নে। তাই এবার আই ক্রিমের পালা। এর ঘনত্ব ফেস ময়শ্চারাইজারের চেয়ে কম হয়ে থাকে। এটি ব্যবহার করতে হবে ময়শ্চারাইজারের আগে। নয়তো এটি ত্বকে পৌঁছাবে না। আই ক্রিম মোটেই স্কিন কেয়ার আবশ্যক নয়। ময়শ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহারে চোখের চারদিকে খেয়াল রাখতে হয়। আই মেকআপ বেছে নেওয়ার সময় নজর দিতে হবে অ্যাপ্লিকেটরের দিকে। রোলার বল অ্যাপ্লিকেটর আই ক্রিমকে ত্বকের সব থেকে কাছে মসৃণভাবে পৌঁছে দিতে পারে। চোখযত্নের পণ্য ফ্রিজে রাখাই ভালো। এতে চোখ এবং চোখের চারপাশের ত্বকের উপকার বেশি পাওয়া যাবে।
ত্বকের সুস্থতায় ঘুম অত্যন্ত জরুরি। তাই রাতের সময়টুকু সব থেকে ভালো ফেস কেয়ারের জন্য। ত্বকে জিস্ট, স্কারস অথবা ডার্ক স্পষ্ট থাকলে রাতেই যত্ন নেওয়া ভালো। কিন্তু রেগুলার অ্যান্টি এজিং অথবা রেটিনল ব্যবহারকারীরা দিনের বেলাটাকে বেছে নিতে পারে স্পট ট্রিটমেন্টের জন্য। স্কিন ময়শ্চারাইজ করার আগেই ট্রিটমেন্ট উপাদান ব্যবহার করে নিতে হয়। এতে ত্বক সরাসরি যত্ন পায়। স্পট পরিচর্যার উপাদানের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে নিয়াসিনামাইড (ভিটামিন বি থ্রি)। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। বেনজয়েল পারঅক্সাইড এবং স্যালিসাইলিক অ্যাসিড কোনোভাবেই একসঙ্গে নয়। এতে স্কিন ইরিটেশন তৈরি হতে পারে। স্পট ট্রিটমেন্টে যা-ই ব্যবহার করা হোক না কেন, মনে রাখতে হবে, একটার সঙ্গে অন্যটার মেলবন্ধনের চেয়ে বিচ্ছিন্নতাই ভালো। একটির পরে অন্যটি ব্যবহারের মধ্যে বিরতি দরকার। এতে ময়শ্চারাইজারের প্রলেপ পর্দার কাজ করে।
দিনে দুবার ময়শ্চারাইজার মাস্ট। ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে হবে এই প্রসাধন। আর্দ্রতার ওপরই ত্বকের সুস্থতা ও সৌন্দর্য নির্ভর করে। এ কারণে ময়শ্চারাইজার হতে হবে কোমল এবং হায়ালুরনিক সমৃদ্ধ। এটি স্কিন কেয়ারের শেষ ধাপ। এরপরে মেকআপ লেয়ার নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে অন্তত পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। নাইট কেয়ারের ময়শ্চারাইজারে ত্বক সব থেকে বেশি যত্ন আশা করে। কারণ, এই সময়েই স্কিন আপনাআপনিই সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তাই সৌন্দর্যপণ্য বেছে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো যেন হায়ালুরনিক অ্যাসিড, লিপিড এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ হয়।
রেটিনল, ভিটামিন এ ডেরিভেটিভস সমৃদ্ধ ত্বক যত্নের উপাদান। এটি ত্বকের সেল টার্নওভার গতি বাড়িয়ে দেয়। মসৃণ করে। রিংকেল দূর করে সময়ের সঙ্গে। রেটিনল চার থেকে ছয় মাস সময় নেয়। এর বাইরে এটি কোলাজেন উৎপাদন এবং সেলের এক্সফোলিয়েশন ত্বরান্বিত করে। এতে ডার্কস্পষ্ট অনেকটাই অস্পষ্ট হয়ে আসে, স্কার স্মুথ হয়, পোরগুলো পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। ব্রেক আউট কমায় আর স্কিন উজ্জ্বল করে। রেটিনল নামের এই ম্যাজিক ব্যবহারে চাই ধৈর্য এবং রুটিন। প্রথম সপ্তাহে এক রাতে মাত্র একবার ব্যবহার করতে হয়। পরের সপ্তাহে দুই রাতে দুবার। এমন করে টানা দুই সপ্তাহ। এর পরেরটিতে তিনবার! এমন করে পরের তিন সপ্তাহ। তারপরে প্রতি রাতে স্বল্প পরিমাণে রেটিনল! এটি চলবে!
ত্বক অতি সংবেদনশীল হলে প্রথমে ময়শ্চারাইজারের প্রলেপ এবং তারপরে রেটিনল। এই দুই লেয়ারের শেষে আরেক লেয়ার ময়শ্চারাইজার নিশ্চিত করতে হবে। ময়শ্চারাইজারের দুই লেয়ারের মাঝে রেটিনল থাকুক স্যান্ডউইচ হয়ে।
ফেস অয়েল ত্বকের উপকারে যতটা কার্যকর, তার থেকে বেশি ফলপ্রদ অন্যান্য প্রডাক্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে। অয়েল অন্য উপাদান পেনিট্রেট করে ত্বকের খুব কাছে পৌঁছাতে পারে। তাই স্কিনের শেষ প্রলেপ হিসেবে থাকুক ফেস অয়েল। এতে সব উপাদান নিজ নিজ গুণ প্রকাশের সুযোগ পাবে।
সব ধাপ শেষে ডে কেয়ারের ক্ষেত্রে এবার ত্বককে প্রটেকশন দেওয়ার পালা। সূর্যের তাপে কোনোভাবেই ত্বকের ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। তাই চাই সানস্ক্রিন। এসপিএফ হতে হবে অন্তত ৩০! হতে পারে, ফাউন্ডেশন ও ময়শ্চারাইজারের নিজস্ব এসপিএফ রয়েছে। মোটেই তা যথেষ্ট নয় ত্বকের যত্নের জন্য। সব শেষে সানস্ক্রিনের প্রলেপ দিতে হবে।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top