skip to Main Content

ফিচার I দুটি বই

লোকজ শিল্পকলা নিয়ে দুইটি বই। পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়ে সমৃদ্ধ। নির্ভরযোগ্য

ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশা
বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ
দাম: ৩০০০ টাকা
প্রকাশক: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ
বিশ্বে যে কয়টি বয়নশিল্প আজও অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে, জামদানি সেগুলোর একটি। বাস্তবতা এই যে, জামদানির নকশা সংরক্ষণ নিয়ে সেভাবে কেউ মাথায় ঘামায়নি। তবে আমেরিকান অ্যাম্বাস্যাডারস ফান্ড ফর কালচারাল প্রিজারভেশনের আর্থিক আনুকূল্যে কাজটি করেছে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ। নকশাগুলো চিহ্নিত করা, সেগুলোর নমুনা বোনানোর পাশাপাশি নামগুলো নিশ্চিত করার দুরূহ কাজ সম্পাদনের পর তা বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশা’ শীর্ষক এই বইয়ের একাধিক রচনায় উপস্থাপিত হয়েছে জামদানির ইতিহাস, এর বাণিজ্যিক দিক এবং জামদানি বয়নের কৌশলগত নানা বিষয়। পাশাপাশি ৬৭টি নকশাকে প্রথমবারের মতো মুদ্রণের মধ্য দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মুদ্রণে পৃষ্ঠপোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। মূল প্রকল্পের সমন্বয়ক ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সাবেক সভাপতি শাহিদ হোসেন শামীম। এ ছাড়া বইটিতে বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ লিখেছেন রুবি গজনবী, হামিদা হোসেন ও চন্দ্র শেখর সাহা। এই বইয়ের সম্পাদনায় অবদান রেখেছেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বইটি মুদ্রণে সহায়তা করেছে নিমফিয়া পাবলিকেশন। প্রতিটি নিবন্ধে মিলবে অজানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গবেষকদের জন্য এটি বিশেষ আকরগ্রন্থ হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। বয়নশিল্পীদের জন্য সহায়কও হবে নকশা মুদ্রিত হওয়ায়। এমনকি জামদানি নকশাকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্র আরও সুপ্রশস্ত হবে এই বইয়ের সূত্রে।

বাংলাদেশের তাঁতশিল্প
শাওন আকন্দ
দাম: ২৪০০ টাকা
প্রকাশক: দেশাল
১২ পর্বে বিভক্ত এই বইটিতে তাঁতশিল্পের উদ্ভব থেকে উদ্বর্তন, যন্ত্রের বিবর্তন, তাঁতিদের কথা, বাজার, বিক্রি মুনাফা, মজুরি, সুতা, রঙ ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ক্লেশসাধ্য এই কাজের জন্য লেখক শাওন আকন্দ অবশ্যই ধন্যবাদার্হ হবেন। প্রকাশক প্রসিদ্ধ ফ্যাশন হাউজ দেশাল। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বেশ গুছিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে এই বই প্রকাশের নেপথ্য কারণ। আর চারুশিল্পী লেখক শাওন আকন্দ গ্রন্থটি রচনার প্রেক্ষাপট চমৎকারভাবে বিধৃত করেছেন। তাতে করে বইয়ের মূল বিষয়ে ঢুকে পড়ার পথ সুগম হয়েছে। টানা তিন বছরের জরিপ, গবেষণা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষ করে তবেই লেখার কাজে হাত লাগিয়েছেন লেখক। এ জন্য তিনি যথেষ্ট ঘুরেছেন দেশের তাঁতসমৃদ্ধ অঞ্চলে। এমনকি সূত্র খুঁজতে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। পশ্চিম বাংলা আর উত্তর প্রদেশের নানা বয়ন এলাকা পরিভ্রমণ করে সংগ্রহ করেছেন বইকে বিশ্বস্ত করে তোলার উপাদান। এর মধ্য দিয়ে লেখক উদ্ঘাটনের প্রয়াস পেয়েছেন ভারতীয় উপমহাদেশ এবং বাংলাদেশের তাঁতশিল্পের উদ্ভব থেকে ঘটমান বর্তমানের নানা সত্য ও বাস্তবতা। বইটিতে প্রচুর ছবি স্থান পেয়েছে। সেগুলোর সিংহভাই সাদাকালো। মাঝেমধ্যে রঙিন ছবিও রয়েছে। লেখকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেই বলতে হয়, বাংলাদেশের বয়নশিল্প নিয়ে কোনো আকরগ্রন্থ বস্তুত নেই। সেই শূন্যতা অনুধাবনে পর্বতপ্রমাণ দায়িত্ব নিয়ে কাজটি শাওন আকন্দ সুসম্পন্ন করেছেন, তা বলা যায়। গবেষক তো বটেই, এ বিষয়ে আগ্রহী যেকোনো পাঠকের কাছে বইটি বিশেষভাবে আদৃত হবে।

 শেখ সাইফুর রহমান
sksaifurrahman@gmail.com
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top