skip to Main Content

ফিচার I নারীর খাবার

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা কেমন হওয়া চাই নারীর জন্য? তার শরীর সাধারণ ঝুঁকিগুলো কীভাবে এড়াতে পারে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে? লিখেছেন শিবলী আহমেদ

প্রকৃতিগতভাবেই নারী-পুরুষের গড়ন ভিন্ন। পার্থক্য স্বাস্থ্যে ও যৌনস্বাস্থ্যে। নারীর শারীরিক, মানসিক ও জৈবিক ছাড়াও পুষ্টি প্রয়োজনীয়তায় পুরুষের থেকে আলাদা। তাই তাদের খাবারে প্রয়োজন বাড়তি হিসাব-নিকাশ। নিয়মিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, প্রোটিন, আয়রন, এনজাইম, এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার নারীর জন্য জরুরি বলে মনে করেন পুষ্টিবিদেরা। শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন, ক্যালসিয়াম স্বল্পতা, প্রিমিন্সট্রেশন সিনড্রোম, জরায়ু, স্তন ও মলাশয়ের ক্যানসার, স্তন ব্যথা, শিশু জন্মদানে সমস্যা, মুড সুইং, গর্ভকালীন ও গর্ভ-পরবর্তী সমস্যা, ত্বকে বলিরেখা, ইউরিন ইনফেকশন, শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, স্থূলতা, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, অস্থিসন্ধির ব্যথা, হাড় ক্ষয়, ভিটামিন ডির স্বল্পতা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, দুর্বল ডিম্বাণু, পিরিয়ডকালীন বিষণœতা, উর্বরতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, স্ট্রোকের ঝুঁকি, হতাশা, উচ্চ রক্তচাপ, প্রদাহ, পেট ব্যথা ইত্যাদি ক্ষেত্রে খাবারের দিকে নারীর বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের এক পরিসংখ্যান বলেছে, ৫০ শতাংশের বেশি নারীর শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে। অন্য আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, ৫৯ শতাংশ নারী অ্যানেমিয়ালে এবং প্রতি ১০ জনে ৭ জন নারী ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীর খাদ্যতালিকায় সুষম খাদ্য না থাকার কারণে এসব হয়। তাই পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এমন সব খাবারের হদিস দিয়েছেন, যেসব খেলে তারা সুস্থ থাকবেন।
আপেল: এ ফলে কেয়ারসেটিন মানের একটি উপাদান আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন কেয়ারসেটিন গ্রহণ করলে শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশনের ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তা ছাড়া আপেলে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা নারীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দুধ: ক্যালসিয়ামের অভাব নারীর সাধারণ একটি সমস্যা। এর ঘাটতি দূর করতে পারে দুধ। যেকোনো বয়সী নারীর জন্যই প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়া উচিত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এতে হাড়ের সমস্যা এবং প্রিমিন্সট্রেশন সিনড্রোম দূর হয়। দীপ্তিময় ত্বক পেতে দুধ পান করা ভালো। এতে ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে। স্তন ও মলাশয়ের ক্যানসারের আশঙ্কা কমাতে দুধের জুড়ি নেই।
ওটস: এটি নারীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এতে থাকা ফলিক অ্যাসিড গর্ভবতীদের জন্য জরুরি। দুধের মতো ওটসও প্রিমিন্সট্রেশন সিনড্রোম দূর করে। পাশাপাশি মুড সুইংও প্রতিরোধ করে। এসব ছাড়াও নারীর হৃদপি- কর্মক্ষম রাখতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওটস খুব সহায়ক।
স্ট্রবেরি: ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে এ ফল বিশেষ কার্যকর। তা ছাড়া বলিরেখা দূর করে স্ট্রবেরি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদপি- সুস্থ রাখতেও সক্ষম এ ফল।
কাঠবাদাম: নারীশরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূরীকরণে কাঠবাদামের প্রভাব অনেক। ওজন কমানোর পাশাপাশি ক্যানসার প্রতিরোধেও কাজ করে কাঠবাদাম। নারীর খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন এক আউন্স কাঠবাদাম রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টি বিশারদেরা।
শাকসবজি: অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করতে, গর্ভকালীন প্রয়োজনীয় ফলিক অ্যাসিডের চাহিদা পূরণে এবং মলাশয়ের ক্যানসার রোধে শাকসবজি ভালো। তা ছাড়া নারীর ভিটামিন, খনিজ ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতেও নিয়মিত এটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। নারীর ডিমেনশিয়া, হৃদ্রোগ ও চোখের সমস্যা দূর করতে খাদ্য তালিকায় রাখুন সবুজ শাকসবজি। শাকের মধ্যে পালংশাক বেশি খেলে প্রিমিন্সট্রেশন সিনড্রোমজনিত সমস্যা যেমন স্তনে ব্যথা কমে।
টমেটো: টমেটোতে লাইকোপিন নামের একধরনের উপাদান থাকে, যা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া হার্ট ভালো রাখতেও টমেটো কার্যকর।
ডিম: সন্তান জন্মদানে অক্ষম- এমন বেশ কজন নারীকে নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছিল ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষকেরা দেখতে পান, তাদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ নারীর শরীরে যথাযথ পরিমাণে ভিটামিন ডি আছে। বাকিরা এ উপাদানের ঘাটতিতে ভুগছেন। ডিমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি বিদ্যমান।
কলা: হরমোনের স্বাভাবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত কলা খেলে ডিম্বাণুর দুর্বলতা দূর হয় এবং এর উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এতে থাকা ভিটামিস বি৬ ঋতুস্রাব নিয়মিত করে। ঋতুকালীন বিষণœতাও কাটিয়ে তোলে কলা। অনেকেই মাসিকের সময় ডায়রিয়ায় ভোগেন। কলা তাদের জন্য ভালো পথ্য হতে পারে।
বাদাম: কলার মতো বাদামও ডিম্বাণুর উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এতে প্রচুর ভিটামিন ই বিদ্যমান। এ ছাড়া বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডিম্বাণুর সুরক্ষা দেয়।
মটরশুঁটি: নারীশরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মটরশুঁটি খাওয়া জরুরি। জিংকের অভাবে শরীরে এসট্রোজোন ও প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। মটরশুঁটি জিংকের আধার। তা ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও প্রোটিন থাকে। এ দুটি উপাদান মেনোপোজের পর শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে মটরশুঁটি কাজে আসে।
লেবু: লেবু খেলে গর্ভধারণে সুবিধা হয়। তা ছাড়া এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
বাঁধাকপি ও লেটুস পাতা: ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর জোগান দেওয়ার পাশাপাশি এ দুটি সবজি নারীর হাড় মজবুত করে।
বাতাবি লেবু: নারীর স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে বিশেষ কার্যকর এ লেবু।
পাকা পেঁপে ও গাজর: এ দুইয়ে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা জরায়ু ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।
দই: পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীর শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। এ বয়সে বেশি করে দই খাওয়া দরকার।
তিসির তেল: স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। তিসি ফাইবারের ভালো উৎস, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এর তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। তা ছাড়া বাত ও হজমজনিত সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
স্যামন: এ মাছ আয়রনের ভালো উৎস। এটি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এ উপাদান নারীর মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। হতাশা কমাতে ও মুড সুইংয়ের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে স্যামন।
আখরোট: স্তন ও জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন। এটি বাতজ্বর ও হতাশা কমায়।
মিষ্টিআলু: গর্ভাবস্থায় এবং যেসব মা শিশুকে স্তন পান করা, তারা মিষ্টিআলু খেলে শিশুর ফুসফুস শক্তিশালী হয়।
ক্র্যানবেরি: খাদ্যতালিকায় নিয়মিত ক্র্যানবেরি রাখলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এটি ইউরিন ইনফেকশনের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি মূত্রনালির সংক্রমণ, মলাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ক্র্যানবেরি।
পিরিয়ডের সময় যেসব খাবার খেলে উপকৃত হওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে পানি, মাছ, লাল মাংস ও ডার্ক চকলেট। ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্যথা হলে হালকা কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন। এতে ব্যথায় আরাম পাবেন। এ সময় শরীরের ক্ষয় পূরণ করতে বেশি করে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন। ঋতুকালীন ব্যথা কমাতে ও বিষণ্নতা দূর করতে খেতে পারেন লাল মাংস ও ডার্ক চকলেট।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top