skip to Main Content

ফিচার I নিশিখাদ্য

দেহঘড়ি ঠিকমতো সচল রাখার জন্য চাই নিয়মিত ঘুম। তবে রাত্রি জাগরণ জরুরি হলে খেতে হয় সুষম ও প্রযোজ্য খাবার। লিখেছেন শিবলী আহমেদ

শরীরের প্রতিটি কোষ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। হরমোন, মস্তিষ্কের রাসায়নিক এবং এনজাইমগুলো সময়মতো নিঃসৃত হয়। জৈবিক এক ঘড়ি অনুসরণ করে ঘটছে কাজগুলো। জিনও তাল মেলায় সেই ছন্দে। এই নিয়ম ভেঙে যেতে পারে যাপনের রুটিনে বদল ঘটলে। বিশেষ করে খাওয়া ও ঘুমের তারতম্যে। রাত জাগা মানেই দেহঘড়ির স্বাভাবিক ছন্দের বিপর্যয়। এর খারাপ প্রভাব পড়ে শরীর ও মনে। জীবিকার তাগিদে রাত জাগতে হয় অনেককেই। বিশেষ করে যারা বিশ্বঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অফিস করেন। অকারণে জেগে থাকা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। তাদের ঘুমে ভাগ বসায় স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এসবের আসক্তিতে গভীর রাত পর্যন্ত জাগেন কেউ কেউ। স্ক্রিনে চোখ রেখে রাত কাটিয়ে দেওয়া মানুষও আছে। আবার, সারা দিনের অফিস শেষে বিনোদনের সময় মেলে রাতেই। সপ্তাহান্তে ঘরে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে সিনেমা দেখার সময় পাওয়া যায় তখন। ফলে, কারণে হোক কিংবা অকারণে, মাঝেমধ্যে রাত জাগতেই হয়। তখন বাড়তি শক্তির চাহিদা বাড়ে শরীরে। না বুঝে এটা-সেটা খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে; বিশেষ করে অ্যাসিডিটি। ক্লান্তির কারণে পরবর্তী দিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এসব এড়াতে রাত জাগার জন্য চাই পূর্বপ্রস্তুতি। খাদ্য গ্রহণেও সতর্কতা জরুরি। নির্ঘুম রাতের খাদ্য পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।
রাত জাগলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঘুমালে যে মেটাবলিজম ঘটে, জেগে থাকলে তা হয় না। ক্ষুধা পায়। এটা অনেক সময় মানসিক কারণে হতে পারে। নিয়মিত জাগা ও মধ্যরাতে খাওয়ার সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে ভুঁড়ির প্রসারণ। রাতের খাবার অনেক সময় হজম হয় না। এর বাজে প্রভাব পড়ে লোয়ার অ্যাবডোমিনে। চর্বির কারণে কোমরের পরিধিও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে ডায়াবেটিস ও অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের ঝুঁকিতে পড়তে হয়। রাত জাগতে বাধ্য হলে সাড়ে আটটার মধ্যেই ডিনার করা ভালো। ১০টা ৩০ মিনিটে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। কেননা, এটি ধীরে ধীরে শরীরে প্রোটিন ও সুগারের জোগান দেয়। ফলে ক্ষুধা লাগে দেরিতে। দুধের সঙ্গে ইসবগুল, তোকমা কিংবা ফাইবার জাতীয় খাবার মিশিয়ে খেতে পারলে আরও সুফল পাওয়া যাবে। এগুলো খেলে সারা রাত পেট ভরা থাকবে। নিশীথের অফিসকর্মীরা থিন অ্যারারুট বিস্কুট খেতে পারেন। এতে গ্যাস হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। দুধের সঙ্গে এই বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে। বেকারি বা বাদামজাতীয় খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ফলের মধ্যে পেঁপে খাওয়া যেতে পারে। অন্যান্য ফল না খেলেই ভালো হবে। যেমন কলা খাওয়া উচিত হবে না। ক্র্যাকার্স ও মুড়ি খাওয়া যেতে পারে। এগুলো প্রয়োজনীয় ক্যালরির জোগান দেবে। চিনি, মিষ্টি বা ক্রাঞ্চি খাবার না খাওয়াই শ্রেয়। আগেই বলা হয়েছে, রাতের ক্ষুধা অনেকাংশেই মানসিক ব্যাপার। এটা মুখ থেকে তৈরি হয়। এই তাড়না দমনে বারবার দাঁত মাজা যেতে পারে। জিভে একটি লং অথবা একটু আদাকুচি দিয়ে রাখলে মানসিক ক্ষুধার নিয়ন্ত্রণ হবে।
সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে সপ্তাহে এক রাত জাগেন কেউ কেউ। এ সময় খাওয়ার জন্য চিপস নিয়ে বসেন অনেকে। কিন্তু তা স্বাস্থ্যোপযোগী নয়। সিনেমা দেখতে দেখতে তেলহীন, নরম এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া উত্তম। দই খাওয়া যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা মধ্যরাতে লো ফ্যাট দুধ, ঘরে তৈরি মুড়ি, চিড়া অথবা খই খেতে পারেন। অনেকে এ সময় ভাত খান। এতে শর্করার মেটাবলিজমে বিঘ্ন ঘটে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। ওজনও বৃদ্ধি পেতে পারে।
মোদ্দাকথা, মধ্যরাতের খাবার হতে হবে হালকা। প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ। রাত জাগলে শরীরে শুষ্ক ভাব আসে। তা দূর করতে ১ চা-চামচ ঘি খাওয়া যেতে পারে। তবে কোলেস্টেরল বাড়ার ঝুঁকি থাকলে নয়। ঘুম তাড়াতে অতিমাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত হবে না। শরীর আর্দ্র রাখতে ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। এ জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর হচ্ছে পেঁপের জুস।
রাত না জাগাই ভালো। কেননা ঘুমের ঘাটতিতে শরীরে অনেক ধরনের হেরফের ঘটে। করটিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়। চেহারা মলিন হয়ে যায়। সর্দি-কাশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হতে শুরু করে। ইমোশন বাড়ে। স্মৃতিশক্তি কিছুটা হলেও লোপ পায়। নিয়মিত রাত জাগার কুফল তো আরও আশঙ্কার। ঘুমের ঘাটতি ডিএনএতে পরিবর্তন আনে। যার প্রভাবে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্নায়বিক ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ হতে পারে। মানসিক সমস্যা হয়। মেজাজ খিটখিটে হওয়ার পাশাপাশি মস্তিষ্কে চাপ বাড়ে। উদ্বেগ, অবসাদ ও বাইপোলার ডিজঅর্ডার হতে পারে। দীর্ঘকাল রাতে কম ঘুমানো মানুষের কেউ কেউ আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন। ঘুমের অনিয়ম কর্মোদ্যম কমিয়ে দেয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণেও অক্ষম হয়ে যেতে পারে রাত জাগা মানুষ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এমনকি কণ্ঠস্বরের বদল ঘটে। রাত জাগলে স্বর ভারী হয়। নিয়মিত নির্ঘুম থাকলে ভোকালে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ অভ্যাস চোখের জন্যও ক্ষতিকর। মায়োকিমিয়া হতে পারে, যা চোখের খিঁচুনিজনিত রোগ। ড্রাই আই জটিলতাও দেখা দেয়। নিয়মিত রাত জাগলে মিসক্যারেজ ও প্রিটার্ম বেবি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

 শিবলী আহমেদ
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top