skip to Main Content

ফিচার I পরিচর্যার পূর্বাপর

কার্দাশিয়ানদেরও অনেক আগে ছিলেন ক্লিওপেট্রা, নেফারতিতি, ভেনাস আর এথেনারা। বিশ্বজুড়ে যাদের সৌন্দর্যচর্চার রীতি আজও অনুকরণীয়

প্রাচীন গ্রিস, রোম, ভারত ও মিসরের মানুষেরাই ছিলেন সৌন্দর্যবিশ্বের শুরুর দিককার পথপ্রদর্শক। ক্লিওপেট্রা, নেফারতিতি, ভেনাস কিংবা এথেনা- এসব পৌরাণিক নারীর নিয়মিত সৌন্দর্যচর্চার রীতিগুলোই রূপসচেতনদের পাথেয় হয়ে ওঠে বিশ্বব্যাপী। এখনকার প্রথাসিদ্ধ সৌন্দর্যচর্চায়ও যার অনুকরণ হচ্ছে অহরহ। পৌরাণিক পরিচর্যার আদলে, আকর্ষণীয় নামের মোড়কে পরিচালিত হচ্ছে সময়ের হাই এন্ড সব ট্রিটমেন্ট।
মিল্ক বাথ
সেকাল
প্রাচীন মিসরীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল এই পরিচর্যা। রানি ক্লিওপেট্রাই পদ্ধতিটির প্রথম প্রচলন করেন। কথিত আছে, গাধার দুধে গোসল সারতেন তিনি। এ জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭০০ গাধার দুধ সংগ্রহ করা হতো। এই দুধ ত্বকের মৃতকোষ সারাইয়ে সাহায্য করতো। সঙ্গে ত্বকের তারুণ্যোজ্জ্বল দীপ্তি ধরে রাখতো দীর্ঘ সময়ের জন্য। এটি ছিল মুখত্বকের বলিরেখা সারানোর দারুণ দাওয়াই। এতে থাকা মিনারেল, ভিটামিন আর এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে রাখতো কোমল ও পরিষ্কার।
একাল
দুধে গোসল সারাটা দুষ্কর হলেও বাজারে সহজেই মিলে যায় এই উপকরণে তৈরি সাবান আর বাথ ক্রিম। দুধের কার্যকর উপাদানে তৈরি এসব পণ্য একই রকম ফল দেয় ত্বকে। তবে যারা প্রাচীন প্রথা অনুসরণ করেই পরিচর্যা সারতে চান, তাদের জন্যও রয়েছে ব্যবস্থা। বড় বড় সব বিউটি স্যালন আর স্পাগুলোতে পাওয়া যায় মিল্ক বাথ নেওয়ার সুযোগ। চাইলে বাসায়ও এই ট্রিটমেন্টের আনন্দ উপভোগ করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে বাথটাবের। প্রথমে তৈরি করে নিতে হবে একটা মিশ্রণ। দুই কাপ দুধের মধ্যে অর্ধেক কাপ মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে তা টাবের পানিতে ছেড়ে দিলেই চলবে। তৈরি মিল্ক বাথ ট্রিটমেন্ট।
সল্ট বাথ
সেকাল
গ্রিক, রোমান ও মিসরীয়দের মধ্যে এই পরিচর্যার প্রচলন ছিল। এর শুরু প্রাচীন রোমানিয়ান হেরোডিয়ান রাজত্বকালে। সে সময় মৃত সাগরে গোসলের প্রথা জনপ্রিয় হতে শুরু করে। রোমানিয়ান রাজা হেরোড দ্য গ্রেট প্রায় দুই শ বছর আগে মৃত সাগরকে প্রথম হেলথ রিসোর্টের আখ্যায় ভূষিত করেন। সে সময় সামুদ্রিক লবণের ব্যবহার বাড়ে গোসলে, স্ক্রাব হিসেবে। নানা ধরনের খনিজ আর ত্বকবান্ধব উপাদানের উপস্থিতি ত্বকচর্চায় এর কদর বাড়ায়। মৃতকোষ দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতেও ব্যবহার শুরু হয় সামুদ্রিক লবণের। ত্বকের নানা রকম সমস্যা সারাতেও দারুণ কার্যকর ছিল এগুলো।
একাল
মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মৃত সাগর এখনো বহাল তবিয়তে আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘প্রাকৃতিক স্পা’ হিসেবে পরিচিত এ জায়গাটিতে আজও বিপুলসংখ্যক সৌন্দর্যসচেতন দর্শনার্থী ভিড় জমান। ত্বক সমস্যা সারাতে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মৃত সাগরের সুবিধা উপভোগের জন্য এখন আর মধ্যপ্রাচ্যে দৌড়াতে হয় না। এই সাগরের লবণ এখন মিলে যায় বাজারে, বোতলবন্দি অবস্থায়। যা গোসলের পানিতে মিশিয়ে নিলে সল্ট বাথের কার্যকারিতা পাওয়া যায় বাসায় বসেই। অথবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে তৈরি করা যায় দারুণ বডি স্ক্রাব। এ ছাড়া স্পা সেন্টারগুলোতেও মেলে সল্ট বাথ নেওয়ার সুবিধা।
চিনি চর্চা
সেকাল
সৌন্দর্যচর্চায় চিনির ব্যবহার ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের মাঝে। বডি স্ক্রাব আর এক্সফোলিয়েটর হিসেবে অহরহই ব্যবহৃত হতো এটি।
একাল
চিনি দিয়ে রূপচর্চা এখনো জনপ্রিয়। তার প্রমাণ বাজার ভর্তি সুগার বেসড রেডিমেড স্ক্রাব আর এক্সফোলিয়েটর। অনেকে তো বাসায় বসেও তৈরি করে নিচ্ছেন এগুলো। চিনির সঙ্গে পরিমাণমতো লেবুর রস আর পানি মিশিয়ে। স্যালনগুলোতেও থাকছে সুগার বেসড বডি স্ক্রাবিংয়ের সুবিধা।
অলিভ অয়েল
সেকাল
সৌন্দর্যচর্চায় প্রাচীন মিসরীয় আর গ্রিকদের পছন্দের উপাদান। একই সঙ্গে অনেক ধরনের কাজে ব্যবহৃত হতো এটি। ত্বকের যত্নে পরিষ্কারক আর্দ্রতা রক্ষাকারী আর জীবাণুনাশক হিসেবে এই তেলের ব্যবহার জনপ্রিয় ছিল। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের অকাল বুড়িয়ে যাওয়া রোধে কার্যকর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া চুল আর নখের সুস্থ-সুন্দর ভাব ধরে রাখতেও এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক।
একাল
প্রি শ্যাম্পুইং ট্রিটমেন্ট, লিপ স্ক্রাব, মেকআপ রিমুভার, শাইন সেরাম, শেভিং ক্রিম, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বাম, কিউটিকল কন্ডিশনার, গোড়ালি ফাটারোধী ক্রিম- আপাদমস্তক সৌন্দর্যচর্চার সবেতেই এখন অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হচ্ছে।
গ্রিন টি ট্রিটমেন্ট
সেকাল
ত্বক পরিষ্কারক ছাড়াও অ্যাকনে আক্রান্ত ত্বক সারাইয়ে প্রাচীন ভারতীয়দের মধ্যে প্রচলিত ছিল গ্রিন টির ব্যবহার। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে পরিপূর্ণ গ্রিন টি ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধেও ব্যবহৃত হতো পৌরাণিক সৌন্দর্য পরিচর্যার অংশ হিসেবে।
একাল
সৌন্দর্যচর্চায় সবুজ চায়ের ব্যবহার আগের মতোই জনপ্রিয় এখনো। বিশ্বের বিখ্যাত সব কসমেটিকস ব্র্যান্ডের গ্রিন টি রেঞ্জের ব্যাপকতা দেখলেই বোঝা যায় এর কদর।
শামুকের শ্লেষ্মা
সেকাল
প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক হিপ্পোক্রেটসের হাত ধরেই সৌন্দর্যচর্চায় শামুকের শ্লেষ্মার ব্যবহার শুরু। সে সময় তিনি এই উপাদানের সঙ্গে সাওয়ার ক্রিম মেশাতেন ত্বকের জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য। তাতে কোমল হয়ে উঠতো ত্বক। রক্ষা পেতো পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা থেকে। কোলাজেন আর ইলাস্টেনের উৎপাদন বাড়াতেও কার্যকর ছিল মিশ্রণটি। যা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের সারাইয়ে সাহায্য করতো। কমাতো ফ্রি র‌্যাডিকেলের প্রভাব। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়াও রোধ করতো।
একাল
এখনো সৌন্দর্যচর্চায় শামুকের শ্লেষ্মা ব্যবহৃত হচ্ছে অহরহ। পার্লারগুলোতে মিলছে বিশেষায়িত এমন ফেসিয়াল, যাতে এটি সরাসরি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ডগুলোতে বাড়ছে স্লেইল রেঞ্জের উপস্থিতি। তৈরি হচ্ছে স্লেইল মিউকাসে তৈরি ক্রিম থেকে সেরাম।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: মিম মানতাশা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top