skip to Main Content

ফিচার I পুষ্পভোজ

কেবল সুন্দর নয়, সুস্বাদুও বটে। তাই বিশ্বজুড়ে খাদ্য হিসেবে ফুলের রয়েছে কদর। এর ঔষধি গুণও তুলনাহীন। লিখেছেন শিবলী আহমেদ

ঠিক কবে থেকে ফুল খাওয়া শুরু হয়েছিল, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, মানুষের খাদ্যতালিকায় তা স্থান পায় ১৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। প্রাচীন গ্রিস, রোম ও মিসরে। কিন্তু জাফরান খাওয়ার ইতিহাস আরও পুরোনো। এ ফুলের গর্ভমু- শুকিয়ে মসলা হিসেবে খাদ্যের পদে মেশানো শুরু হয় ৩৫০০ বছর আগে। ব্রোঞ্জযুগেও জাফরান ব্যবহারের নজির মেলে। তখনকার গ্রিসে এটি ছিল ওষুধ। ফুল খাওয়ার শুরু যখনই হোক না কেন, বর্তমানে তা পানীয়, কেক, স্যালাড, মিষ্টান্ন ও আচারে যোগ হয়। সরাসরি পাপড়ি খাওয়া যায় এমন ফুলের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কা-, পাতা কিংবা ডাঁটা খাওয়ার চল। গোলাপের পাপড়ি ভোজ্য। এ উদ্দেশ্যে প্রথমে পুষ্পদল সংগ্রহ করে গোড়ার দিকটা ছেঁটে ফেলতে হয়। অবশিষ্টাংশ দিয়ে বানানো যায় জ্যাম, জেলি, ভিনেগার, জুস ও সিরাপ। রোজলিকার তথা গোলাপ মদিরাও তৈরি সম্ভব। সম্প্রতি এ ফুলের পাপড়ির মিশেলে দই তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। গাঁদাও ভোজ্য। এর পাপড়ি গুঁড়া করে জাফরানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাখনে মিশিয়ে তা খাওয়া যায়। এ ছাড়া সুশির পুরে দেওয়া হয়।
শজনে ফুলের চর্চড়ি ও বড়ার সুখ্যাতি লোকমুখে প্রচলিত। গরম ভাতের সঙ্গে খেতে পছন্দ করেন অনেকে। দেশের কিছু অঞ্চলে তরকারি হিসেবে ফুলটি রান্না করা হয়। ভোজনরসিকদের কাছে কুমড়া ফুলেরও কদর আছে। তা বেসনে ডুবিয়ে তেলে ভাজলে চপ তৈরি হয়। চালের গুঁড়া মিশিয়ে বানানো যায় পাকোড়া। দেশের কিছু অঞ্চলের মানুষ এই ফুল দিয়ে ঝোলের তরকারি রাঁধে। ভর্তা করে খাওয়া যায় শিমের ফুল। এই পদ তৈরির উদ্দেশ্যে তা অল্প আঁচে ভেজে পেঁয়াজ, মরিচ ও সরিষার তেল মেখে পিষে নিতে হয়। গরম ভাতের সঙ্গে খেতে সুস্বাদু। সূর্যমুখী ফুলের পাপড়িও খাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে তা ভাপে সেদ্ধ করে বা সাঁতলে নিতে হয়। এই ফুলের কুঁড়ি দিয়ে তরকারি রান্না সম্ভব। হোসটা ফুলের কুঁড়ি দিয়েও তা হয়। জাপান ও কোরিয়ায় পুষ্পটি ফোটে। পনিরে ভেজে খাওয়া যায় স্কোয়াশ ফুল। টিউলিপের পাপড়ি দিয়ে মজাদার অ্যাপেটাইজার হয়। কচুর ফুলও ভোজ্য। ভাজি করে খাওয়া যায়। ছোট চিংড়িযোগে এই পদের স্বাদ বাড়ে। কিছু ফুলের আচার হয়। যেমন প্রিমরোজ। তা ভাপে সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। আচার হয় চিকোরি ফুলেরও।
ভোজ্য পাপড়ি সমৃদ্ধ ফুলের সংখ্যা কম হলেও অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রহণ যায়, এমন পুষ্পের তালিকা দীর্ঘ। সাধারণত স্যুপ, স্যালাড, সস, ফেনসি পানীয়, মিষ্টান্ন, চা, কেক, পাস্তা ও ভাতের সঙ্গে যোগ করা যায়। যেমন স্যালাডে মেশানো হয় জবা, সূর্যমুখী, স্কোয়াশ, স্কারলেট রানার, সেজ, কুসুম ফুল, জনি জাম্প আপ, ইমপেশনস, ইংলিশ ডেইজি, ডিল, নীল ঝুমকা, অ্যাগেস্টাখি, ভায়োলেট ও গোলাপের পাপড়ি। ফেনসি পানীয়তে লেমন বার্গামোট, ইমপেশনস ও নীল ঝুমকা ফুল। মিষ্টান্নে লেমন বার্গামোট, ল্যাভেন্ডার, অ্যাগেস্টাখি ও কার্নেশন। কেকে ল্যাভেন্ডার, জনি জাম্প আপ, ভায়োলেট ও গোলাপ। স্যুপে সূর্যমুখী, স্কারলেট রানার, কুসুম ফুল। চায়ে জুঁই, চন্দ্রমল্লিকা, জবা ও লেমন বার্গামোট। পাস্তায় ও ভাতে ডানডেলায়ন এবং সসে কুসুম ফুল।

আইসক্রিম ও দইয়ে ল্যাভেন্ডার দেওয়া হয়। এসব ছাড়া আমেরিকান এল্ডারবেরি, অ্যানিস হিসপ, আরুগুলা, ব্ল্যাক লোকাস্ট, ব্রুসোনেশিয়া কুর্জি, ক্যামোমিল, চারভিল, চায়নিজ হিবিস্কাস, চিকউইড, কসমস, ডায়ানথাস, জেরা নিয়াম, হলি হক, লাইলাক, লোভেজ, ওকবা, প্যাশন ফ্লাওয়ার, রোজমেরি, সেসবেনিয়া, গ্র্যান্ডফ্লোরা, স্নাপ ড্রাগন, কলা ও শাপলা ফুলের বিভিন্ন অংশ ভোজ্য। যেমন শাপলার ডাঁটা ভাজি করে খাওয়া যায়। এই ফুলের ভেতরে একপ্রকার দানা থাকে। তা দিয়ে খই হয়। খাওয়া হয় কলার মোচাও। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের গৃহিণীরা ডালের বড়ি বা চিংড়ি দিয়ে এর ঘণ্ট রাঁধে। বেগোনাস ফুলের পাতা ও কা- খাওয়া যায়। স্বাদে টক। ওয়াক্স বেগোনিসের পাতা কাঁচা কিংবা রেঁধে খাওয়া হয়। ক্রিসানথেমাম ফুলের পুরো গাছটিই ন্যাটিভ আমেরিকানরা স্যালাডে ব্যবহার করে। খাদ্য রং তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কর্নফ্লাওয়ার। তিক্ত স্বাদের ফুল ডেমস রকেটের পাতা মেশানো হয় স্যালাডে। তাতে স্বাদ বাড়ে। ভেজে বা সেদ্ধ করে খাওয়া যায় ডেনডেলায়নসের কচি পাতা। কখনো কখনো তা ভাতের উপর ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করা হয়। পিৎজার উপরে গার্ডেন সোরল ফুল দেওয়া হয়ে থাকে। স্যালাডে যোগ করা যায় নাস্টারশিয়ামের পাতা। প্রিমরোজের কুঁড়ি দিয়ে সুস্বাদু তরকারি হয়।
কিছু কিছু ফুলের বিভিন্ন অংশ খাওয়া হয় হার্ব হিসেবে। তেমনই একটি পুষ্প আলিয়াম। এর পুরো গাছটিই খাওয়ার উপযুক্ত। পাতা ও ফুল স্যালাডে যোগ হয়। ভেজিটেবল স্যুপে মেশানো যায়। সরিষার কচি পাতাও ভোজ্য। রন্ধনশিল্পে অ্যাঞ্জেলিকা ফুলের বীজ ও কা-ের কদর আছে। এর পাতা দিয়ে স্যালাড হয়। মাছ সংরক্ষণেও এটির ব্যবহার আছে। অনেক দেশে অ্যাঞ্জেলিকার কা- কাঁচা খাওয়া হয়। কেউ কেউ তাতে মাখন যোগ করে নেন।
কিছু কিছু সবজি আদতে ফুল। ওসব দিয়ে বিভিন্ন পদ রান্না সম্ভব। যেমন আর্টিচোক। এটিকে ফুল হিসেবেই গণ্য করা হয়। ব্রকলিও তাই। এটি মুলত ফুলের কুঁড়ি। তা স্যালাডে, তরকারিতে কিংবা ভাপে সেদ্ধ করে খাওয়া যায়।
পৃথিবীতে রয়েছে অনেক ফুল। সেসব খাওয়ার পদ্ধতিও ভিন্ন। সবই ভোজ্য নয়। কিছু কিছু বিষাক্ত। ফুলের ওপর অনেক সময় কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। তাই চাষেরগুলো এড়িয়ে প্রকৃতিতে জন্মানো পুষ্প খাওয়াই নিরাপদ। তবু সংগ্রহের পর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। খুব অল্প পরিমাণে খাওয়াই স্বাস্থ্যকর। বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। যেকোনো ফুল খাওয়ার আগে বৃন্ত, পুংকেশর ও গর্ভাশয় ফেলে দিতে হয়। এতে তিক্ত ভাব কমে। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ফুল খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় পুষ্পের পাপড়ি ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত থাকে। সেসব বেছে বেছে ফেলে দিতে হবে। সংগৃহীত ফুল সংরক্ষণের জন্য আর্দ্র কাগজে মুড়ে বায়ুরোধী বয়ামে রাখলে ভালো থাকবে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top