skip to Main Content

ফিচার I প্রসাধনের উচ্ছ্বাসে মধ্যপ্রাচ্য

মেকআপপ্রীতিতে কোনোভাবেই কম যান না আড়ালে অভ্যস্ত মধ্যপ্রাচ্যের নারীরা। আইনের সংস্কার আর সামাজিক সাইটগুলোর প্রভাবে এই অঞ্চল হতে চলেছে সৌন্দর্যপণ্যের হটস্পট

গেল এপ্রিলে জনপ্রিয় গায়িকা রিহানার বিউটি ব্র্যান্ড ফেনটির যাত্রা শুরু হয় সৌদি আরবে। প্রথমে অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল, এমন একটা অঞ্চল যেখানে মেয়েদের চেহারাই দেখা মুশকিল, সেখানে ফেনটির মতো হাইএন্ড ব্র্যান্ড টিকে থাকবে কী করে! এই বুঝি ভরাডুবিই ভাগ্যে লেখা আছে ব্র্যান্ডটির। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার, কোনো ধরনের আশঙ্কা ছাড়াই সৌদিতে বেশ ব্যবসা জমিয়েছে ব্র্যান্ডটি। সবুজ, নীল লিপস্টিকের পাশাপাশি এর চল্লিশটি ভিন্ন ভিন্ন শেডের ফাউন্ডেশনও বিকিয়ে গেছে শুরুর কদিনেই। এর পরপরই নড়েচড়ে বসেছে গোটা সৌন্দর্যবিশ্ব। নতুন করে সমীক্ষা শুরু হয়েছে সৌদিসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যের মেকআপ-বাণিজ্য নিয়ে। আর তখনই বেরিয়ে এসেছে অবাক করা সব তথ্য। ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের বরাতে জানা গেছে, গেল কয় বছরে শতকরা ৬.৪ হারে বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের ২৫.৪ বিলিয়নের মেকআপ বাজার। শুধু সৌদিতেই ২০১২ সাল পর্যন্ত মেকআপের রিটেইল সেল ছিল ৪৫০ মিলিয়ন ডলার, গেল বছর তা বেড়ে গিয়ে ঠেকেছে ৫৭৬ মিলিয়ন ডলারে। শুধু তা-ই নয়, কাটতি বেড়েছে পারসোনাল কেয়ার প্রডাক্টেরও। দুবাইয়ের দৌড় তো আরও দূরে। মধ্যপ্রাচ্যে মেকআপের জন্য খরচের ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থান এখন দুবাইবাসীর দখলে। সেখানে এক বছরে একজন সৌন্দর্যসচেতন ব্যক্তি গড়ে ২৮৯ ডলার খরচ করেন, যার মূল্যমান প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আর ইরান দখল করে রেখেছে এই সেক্টরের মার্কেট ভ্যালুর সর্বাধিক অংশ, বিপুল জনসংখ্যার বরাতে।
ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এর প্রধান কারণ দুটো। প্রথমত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোর প্রভাব। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর স্ন্যাপচ্যাটের এই যুগে রিহানা ও কার্দাশিয়ানদের মতো বিশ্বের বিখ্যাত সব বিউটি ইনফ্লুয়েন্সার চোখের পলকেই পাড়ি দিতে পারেন বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। এঁটে যান হাতের মুঠোয়। মধ্যপ্রাচ্য তো আর বিশ্বের বাইরে নয়। এখানে পর্দার আড়ালে থাকতেই অভ্যস্ত নারীরা। তবে সৌন্দর্যের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ অন্যদের থেকে কিছু কম নয়। যেখানে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যনির্বিশেষে ন্যাচারাল নো মেকআপ মেকআপ লুক নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, সেখানে মধ্যপ্রাচ্যে বরাবরই জনপ্রিয় চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া সাজ। নেকাবের আড়ালে নজরে না এলেও নজরকাড়া সাজই এই অঞ্চলের নারীদের বেশি পছন্দ। নিরীক্ষায় তাই কোনো অংশে কম যান না তারা। নতুন কোনো মেকআপ ব্র্যান্ড বা প্রডাক্ট বাজারে এলে তা নিয়ে মুখিয়ে থাকেন। পুরো চেহারায় চোখের যে যৎসামান্য অংশ দেখা যায়, তাকেই সাজিয়ে তোলেন মনের মতো করে। আইলাইনার, আইশ্যাডো তো আছেই, এমনকি আইল্যাশ পরতেও ভুল হয় না তাদের। পর্দার আড়ালে মেকআপ নিয়ে চলে কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আর মেকআপের প্রতি ভোক্তার এমনতর আকর্ষণই মধ্যপ্রাচ্যের এ বাজারকে বিস্তৃত করছে দিন দিন। বাড়াচ্ছে ব্যাপকতা। তৈরি করছে শক্তিশালী সৌন্দর্যসাম্রাজ্য। দ্বিতীয়ত, আইনের অনেক পরিবর্তনের কারণে পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সৌন্দর্যবাজার। ২০১২ সালে কিং আবদুল্লাহ যখন আইন প্রণয়ন করলেন যে মেয়েরা কসমেটিকস ও লঞ্জারে স্টোরের জন্য কাজ করতে পারবে, তখনই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। শত শত সৌদি নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পান। ফলে সামর্থ্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচ করার হাত আরও সম্প্রসারিত হয়। মেকআপের প্রতি ঝোঁকের সঙ্গে যোগ হয়ে যা কাটতি বাড়ায় সৌন্দর্যপণ্যের। অন্যদিকে, বিউটি সেক্টরে ছেলের বদলে মেয়ে বিক্রয়কর্মীদের বর্ধিত হার বাজার বাড়ানোর দারুণ প্রভাবকে পরিণত হয়। আগে মেকআপ যাচাই করে মানানসইটি বাছাইয়ের কাজটা হতো ছেলে বিক্রয়কর্মীদের হাতে। ফলে অনেক সৌন্দর্যসচেতন পর্দানশিন নারীও অচেনা পুরুষের সংস্পর্শ এড়াতে আর চেহারা দেখানোর অস্বস্তি থেকে বাঁচতে এড়িয়ে যেতেন মেকআপ প্রডাক্ট কেনার পুরো প্রক্রিয়া। কিন্তু এখন তারাই স্বস্তির সঙ্গে সারেন এই কাজ। ফলাফল, বাড়তি অনেক ভোক্তা যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের মেকআপের বিদ্যমান বাজারে। এতে বড় হচ্ছে বাজার।
আন্তর্জাতিক বিউটি ব্র্যান্ডগুলো আগ্রহী হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের মেকআপ বাজারে। দেখা মিলছে স্টার্টআপ মেকআপ কোম্পানিরও। যারা মধ্যপ্রাচ্যের সনাতন কৌশলগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের অত্যাধুনিক সব ফর্মুলার মিশ্রণে তৈরি করছে পণ্য। যা প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোকে টক্কর দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। গ্রিন প্রডাক্ট থেকে কালার থেরাপি- সবেতেই সফলতার মুখ দেখছে কোম্পানিগুলো। এসবের মধ্যে ইজিল স্কিনকেয়ার লাইন, আর্কেডিয়া ফ্র্যাগরেন্স, প্রিসমোলজি, সিফা স্কিনকেয়ার আর রিপেয়ার কেয়ার নামের মিডল ইস্টার্ন কোম্পানিগুলোর নাম না নিলেই নয়। মধ্যপ্রাচ্য যে শুধু প্রতিষ্ঠান দিয়েই সৌন্দর্যবিশ্বকে গেল কয় বছরে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে, তা নয়। হুদা কাত্তান, হানাদি দিয়ার, নুরা আফিয়ার মতো আন্তর্জাতিক মানের বিউটি ব্লগারও তৈরি হয়েছে এই অঞ্চলে। যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন বিশ্বের বিউটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য। নিজস্ব বিউটি লাইন দিয়ে মাতিয়ে চলছেন বিশ্ব। প্রভাবিত করছেন নিজস্ব সৌন্দর্যভাবনায়। আলোকিত করছেন অভিজ্ঞতায়।
ফলে গোটা সৌন্দর্যবিশ্বে প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র। বিশেষজ্ঞদের সমর্থন তো আছেই, সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যেরও দাবি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সৌন্দর্যবিশ্বের ৪৪৫ বিলিয়নের বাজারে দাপুটে স্থান দখলে নেবে তারা। হয়ে উঠবে মেকআপের নেক্সট হটস্পট।

ু জাহেরা শিরীন
মডেল: ওশিন
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: সিকোসো
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top