skip to Main Content

ফিচার I বাহ্ ব্লাউজ!

শাড়ির সঙ্গে চাই ফ্যাশনেবল ব্লাউজ। কেবল ট্রেন্ডি হতে নয়, বাঙালিয়ানার প্রকাশেও
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডিজাইনের ব্লাউজের ট্রেন্ড আসে। একসময় শাড়ির নিচে ব্লাউজ পরার প্রচলনই ছিল না। ব্রিটিশদের রাজত্বপূর্ব সময়ে বাংলার নারী-পুরুষ সবার পোশাক ছিল প্রায় এক রকম। ধুতির মতো করে একধরনের কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখতো তারা। আবার অনেকে চারকোনা দুই টুকরা কাপড় পরত। উপরের অংশে যে কাপড় পরত তাকে বলা হতো উত্তরীয়। নিচের অংশটুকু ছিল অন্তরীয়। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে নারীদের এ ধরনের পোশাক জুতসই ছিল না। এরপর ব্রিটিশ আমলে নারীদের শরীরের উপরের অংশে আসে ব্লাউজ পরার চল। সেই থেকে আজ অব্দি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের ব্লাউজের ট্রেন্ড আসছে যাচ্ছে। আজ ব্লাউজের যে ডিজাইন সবাই অনুসরণ করছে, কাল তা থাকছে না।

ব্লাউজের বর্তমান ট্রেন্ড
আসন্ন উৎসব পয়লা বৈশাখের জন্য নতুন শাড়ির সঙ্গে নতুন ডিজাইনের ব্লাউজও বানাতে পারেন। এখনকার ট্রেন্ড অনুযায়ী নারীরা এমনভাবে বর্ণিল সব ব্লাউজ বানাচ্ছেন, যেন এক ব্লাউজ পরা যায় কয়েক ধরনের শাড়ির সঙ্গে। হাল ফ্যাশনে সবচেয়ে বেশি চলছে কোল্ড শোল্ডার ব্লাউজ। এই ডিজাইনের ব্লাউজ একই সঙ্গে ফ্যাশনেবল এবং সর্বজনগৃহীত। আবার অফ শোল্ডার ব্লাউজের চল এসেছে অনেক আগেই। কিন্তু প্রাগ্রসর মানসিকতা ও পরিবেশ না থাকায় অনেকে চাইলেও সেই ফ্যাশনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না। অন্যদিকে, ফ্যাশনপ্রিয় নারীরা ব্যাকলেস অথবা অফ শোল্ডার- যা-ই হোক না কেন, ট্রেন্ডি থাকবেনই। ব্যাকলেস ব্লাউজ যারা পরতে চান, কিন্তু আড়ষ্ট বোধ করেন, তাদের ব্লাউজের পেছনের ডিজাইনে নেট কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে ফ্যাশন থাকলো, পরিবেশগত অস্বস্তি এড়িয়ে নিজের মনোবাসনাও পূর্ণ হলো। ব্লাউজে সৌন্দর্য সৃষ্টির অনেক ধরনের এমবেলিশমেন্ট করা হয়। এক কালারের ব্লাউজের শুধু হাতাটুকুতে এমব্রয়ডারি করা যায়। আবার সামনের ও পেছনের গলায় অনেকে ব্লাউজের পেছনের পুরো অংশটুকু অথবা গোটা ব্লাউজেই এমব্রয়ডারি করিয়ে নিতে পারেন নিজের পছন্দমতো মোটিফে। ফ্যাশন ও ট্র্যাডিশন- এই দুয়ের সামঞ্জস্যে অনেকেই পরেন ফ্লোরাল ব্লাউজ। সত্তর-আশির দশকে ফ্লোরাল জর্জেট শাড়ি ছিল খুব জনপ্রিয়। আর এখন বেড়েছে ফুলেল মোটিফের ব্লাউজের জনপ্রিয়তা। এক কালার জর্জেট বা স্যাটিনের শাড়ির সঙ্গে বোট গলার স্লিভলেস বা থ্রি কোয়ার্টার স্লিভ ফ্লোরাল ব্লাউজ মানিয়ে যায় প্রায় সব নারীকেই। হাই নেক, বোট নেক ছাড়া আরেক ধরনের ব্লাউজ হচ্ছে হল্টারনেক। যদিও ফ্যাশনিস্তা বা মডেলদের ছাড়া হল্টারনেক ব্লাউজ কাউকে বেশ একটা পরতে দেখা যায় না। বুদ্ধি খাটিয়ে একটু কাস্টম করে টেইলরকে দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন নতুন ডিজাইনের হল্টারনেক ব্লাউজ। গরমের সময় দিনের বেলার পার্টিগুলোতে স্লিভলেস, ব্যাকলেস এবং হল্টারনেক ব্লাউজই সবচেয়ে আরামদায়ক। ফ্যাশনেবলও বটে। হাতার ও গলার ডিজাইনে সামঞ্জস্য রেখেই বিভিন্ন ডিজাইন করছেন ডিজাইনাররা। সে ক্ষেত্রে যদি স্লিভলেস ব্লাউজের কথা বলা হয়, তাহলে দেখা যায় এর সঙ্গে ছোট গলার ডিজাইনই বেশি মানানসই। সাধারণত স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি বা অফিসে পরে যেতে পারেন এমন সিম্পল ডিজাইনের ব্লাউজ। কিন্তু ট্রেন্ডি লুক নেয়ার জন্য অবশ্যই হাল ফ্যাশনের আশ্রয় নিতে হবে। ব্লাউজের হাতার ডিজাইনে বর্তমানে ডিশ স্লিভের জনপ্রিয়তা অনেক। এটি অনেকটা চায়নিজ হাতা বা বাটারফ্লাই হাতার মতো। পার্থক্য শুধু দৈর্ঘ্য। কনুই পর্যন্ত বা তার থেকে একটু লম্বাও বানাতে পারেন। আবার ডিশ হাতার সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজের পেছনের গলার ডিজাইনও হতে পারে ভিন্ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানানসই হয় বড় ভি গলার ডিজাইন। এই ধরনের ব্লাউজ বেশ ফ্যাশনেবল করতে পারেন ভি কলারের সন্ধিস্থলে অতিরিক্ত কাপড় রেখে সেখানে বো ডিজাইন করে। চাইলে একটা সিম্পল গাঁট বেঁধেই ব্লাউজটিতে আনতে পারেন নান্দনিক বৈচিত্র্য। গলায় ও হাতায় ফ্রিলের ব্যবহারে নিজেকে ট্র্যাডিশনাল লুকে সাজাতে পারেন। সাদা চিকেন লেইসের ফ্রিল অথবা ব্লাউজের সঙ্গে মানানসই বা কন্ট্রাস্ট কালারের ফ্রিল ব্যবহার করা যেতে পারে। এমন ফ্রিল দেয়া ব্লাউজের সঙ্গে সুতি বা গরদ শাড়িতে জড়িয়ে নিয়ে নিজেকে রবীন্দ্রনাথের নাটক বা কথাসাহিত্যের নায়িকা ভাবতে পারেন! ফ্রিলের মধ্যে একটু ফিউশন আনা হয়েছে হাল ফ্যাশনে। স্লিভলেস ব্লাউজের বড় গলায় পাড়ের মতো চওড়া করে টিস্যু বা জর্জেট কাপড়ের ফ্রিল দিয়ে করা যেতে পারে ফিউশন। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় টাইডাই বা ভেজিটেবল ডাই এবং গামছা প্রিন্টের ব্লাউজের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের কথা। রঙ এবং চাকচিক্যের দিক থেকে টাইডাই বা ভেজিটেবল ডাইয়ের ব্লাউজ খুব সাধারণ। আবার গামছা প্রিন্টেও খুব একটা পরিবর্তন আসে না। চাইলে এই সাধারণ কাপড়ের ব্লাউজের হাতা ও গলার ডিজাইনে ভিন্নতা এনে তা ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে করে তুলতে পারেন অনন্যসাধারণ। আর এ ধরনের ব্লাউজে ফ্যাশন কম থাকলেও আছে এক শ ভাগ বাঙালিয়ানা। আরেক রকম ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে ঘটি হাতা। ঘটি হাতার ব্লাউজের চল আগে যেমন ছিল, এখনো রয়েছে। ছোট ঘটি হাতার পাশাপাশি এখন লম্বা ঘটি হাতাও পরে অনেক নারী। তবে এমন ডিজাইনের ব্লাউজ শুধু উৎসব অনুষ্ঠানেই পরতে দেখা যায় এখন। আবার শার্টের ডিজাইনেও বানানো যেতে পারে ব্লাউজ। শার্টের মতো গলা পর্যন্ত বোতাম আর লম্বা হাতায় কাফ ডিজাইন দিয়ে এই ব্লাউজ তৈরি হতে পারে। তবে এ দেশের আবহাওয়ায় এমন ব্লাউজ আরামদায়ক হবে না। অনেকেই লম্বা ব্লাউজ পরতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সে ক্ষেত্রে কোমরের দৈর্ঘ্যে লোয়ার বাস্টের পরের অংশ থেকে দুই সাইডে কামিজের মতো করে কাটা থাকলে ব্লাউজের ফিটিং ভালো হবে আর পরতেও আরামদায়ক।
হাইনেক, রাউন্ড নেক, শার্ট কলার কি শেরওয়ানি কলার- এমন একেক ডিজাইনের ট্রেন্ড এসেছে একেক সময়ে। ব্লাউজের হাতার বৈচিত্র্যও ট্রেন্ডেরই অন্তর্গত। আজ যে ট্রেন্ড চলছে, কাল তা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাই যতটুকু পারা যায় যুগোপযোগী ট্রেন্ড গ্রহণ করার মাধ্যমে নিজেকে স্মার্ট ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হয়।

 বুশরা আফরিন
মডেল: সূর্য, মাইশা ও মাহি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: বিশ্বরঙ
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top