skip to Main Content

ফিচার I ভেগানিজম

প্রাণিজ উপাদান এড়িয়ে পরিবেশ ও শরীর সুস্থ রাখার আন্দোলন। ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। লিখেছেন শুভ্র মিসির

মনে করা হয়, সুস্থ থাকার প্রধান শর্ত সুষম খাবার। কী খাবেন আর কী খাবেন না, তা নিয়ে দেশে দেশে নানান সময়ে চালু হয়েছে বিভিন্ন মত ও সংস্কার। এসবই আমাদের জীবনধারায় প্রভাব ফেলে।
‘ভেগান’ বা ‘ভেগানিজম’ বর্তমানে বেশ আলোচিত। এটি প্রাণিজ খাবার ও পণ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকার চর্চা। ভেগানিজম নিয়ে কথা বলার আগে খানিক পেছন ফিরে তাকাতে হবে।
খাদ্যে প্রাণিজ আমিষ বর্জনের মাধ্যমে ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষাশীরা ইতিমধ্যে পৃথিবীজুড়ে বেশ আলোচিত। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের দিকে প্রাণী হত্যার বিরুদ্ধে নীতিগত বিরোধিতা করেন পিথাগোরাস। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রাণী ভক্ষণ মানুষের আত্মা ভক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত; এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, ‘মানুষের উচিত আত্মার হিসেবে সব জীবিত প্রাণীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো।’ ১৮৩৮ সালে ব্রিটিশ চিন্তক ও শিক্ষাবিদ জেমস পিয়েরোপন্ট গ্রেভস ‘আলকোট হাউজ’ নামে একটি আধ্যাত্মিক সংঘ ও বোর্ডিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আলকোট হাউজে প্রথম ভেজিটেরিয়ান ডায়েট চর্চা শুরু হয়। তারা ভেজিটেরিয়ান শব্দটি এক শ ভাগ উদ্ভিদভিত্তিক খাবার বোঝাতে ব্যবহার করতেন। আলকোট হাউজের একদল সমর্থকের সমন্বয়ে ১৮৪৭ সালে ব্রিটেনে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম ভেজিটেরিয়ান সোসাইটি। যদিও ভারতবর্ষ ও গ্রিসের কিছু অঞ্চলে তারও আগে খাদ্যতালিকা থেকে মাংস ও প্রাণিজ আমিষ বাদ দেবার চর্চা ছিল।
ভেজিটেরিয়ানদের আধুনিক রূপ ভেগানিজম। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভেগান বা ভেগানিজমের উদ্ভব ঘটে। ভেজিটেরিয়ান আর ভেগানের পার্থক্য আছে। ভেজিটেরিয়ান মানে হচ্ছে নিরামিষাশী আর ভেগান হচ্ছে উদ্ভিদভোজী। ‘ভেগান’ শব্দটি ১৯৪৪ সালে ডোনাল্ড ওয়াটসন প্রথম ব্যবহার করেন। প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করতেন তিনি। ‘নন-ডেইরি ভেজিটেরিয়ান’দের বোঝাতে তিনি শব্দটি ব্যবহার করেন। Vegitarian শব্দের প্রথম তিনটি ও শেষ দুটি বর্ণ নিয়ে Vegan শব্দটি তৈরি। ওয়াটসনের ভাষায়, ‘এটা হচ্ছে ভেজিটেরিয়ানের শুরু ও শেষ’। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভেগান সোসাইটির সহপ্রতিষ্ঠাতা। ১৯৫১ সালে এই সোসাইটি ভেগানিজম শব্দটির ব্যাখ্যা করে এভাবে- ‘মানুষের উচিত প্রাণীদের শোষণ না করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা’। ১৯৬০ সালে এইচ জে দিনশাহ আমেরিকান ভেগান সোসাইটি চালু করেন। ভেগানিজমের সঙ্গে অহিংসার জেন ধারণার যোগসূত্রের মাধ্যমে তিনি এই সোসাইটি গড়ে তোলেন। এর ভিত্তি হলো, জীবিত প্রাণীর প্রতি সহিংসতা পরিহার করা।
যারা ভেগান বা ভেগানিজম চর্চা করে থাকেন, তাদের মধ্যে কয়েকটি ভাগ ও প্রকার রয়েছে। প্রথমত ‘এথিক্যাল ভেগান’, এরা কোনো প্রয়োজনে প্রাণিজ পণ্য গ্রহণ এবং প্রাণীদের বাণিজ্যিক ব্যবহার বর্জন করে থাকেন। কোনো ধরনের মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত অথবা এসব দিয়ে তৈরি কোনো খাবার কিংবা প্রাণিজ উপকরণ বর্জন করেন। দ্বিতীয়ত, ‘ডায়েটারি ভেগান’। খাদ্যতালিকা থেকে তারা প্রাণীদের বাদ দেয়। তৃতীয়ত ‘এনভায়রনমেন্টাল ভেগানিজম’, এর অনুসারীরা প্রাণিজ পণ্য বর্জন করার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে পশুপালন ও খামার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে থাকেন। ভেগানদের আরেকটি পর্যায় হচ্ছে র ভেগান (Raw Vegan)। তাদের খাবার ১১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা ৪৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার উপরে রান্না করা হয় না। র ভেগানরা বিশ্বাস করে, এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় রান্না করা খাবারে সেই পুষ্টি উপাদান থাকে না, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
ভেগানরা শুধু যে মাংস খাওয়া থেকে দূরে থাকে তা নয়, তারা প্রাণী থেকে উৎপাদিত কোনো কিছুই খায় না। যেমন ডিম, দুধ, পনির, মাখন- সেগুলো অনেক ভেজিটেরিয়ান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, ভেগানরা তা ছুঁয়েও দেখে না। ভেগানিজম ক্ষুদ্র মাত্রায় হলেও বর্তমানে বেশ প্রসারমান একটি আন্দোলন। আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন এবং ডায়েটিশিয়ান অব কানাডা- সুপরিকল্পিত ভেগান ডায়েটকে জীবনচক্রের সব ধাপের জন্য স্বাস্থ্যকর বলে ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে নতুন নতুন ভেগান রেস্টুরেন্ট। উদাহরণ হিসেবে জার্মানির উল্লেখ করা যেতে পারে। দেশটিতে রীতিমতো ভেগান বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। ভেগান সোসাইটি অব জার্মানির তথ্য, তাদের দেশে ভেগানের সংখ্যা বর্তমানে ছয় লাখের বেশি। এবং তা বাড়ছে। ইউরোপের প্রথম ভেগান সুপার মার্কেট চেইনশপ ‘ভেগানজ’-এর ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি জার্মানির রাজধানী বার্লিনে তাদের প্রথম শাখা উদ্বোধন করে। অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে আরও ১০টি শাখা খুলেছে ভেগানজ। এখানে খাবার ছাড়াও ভেগানদের উপযোগী সাড়ে চার হাজারের বেশি পণ্য পাওয়া যায়। জার্মানির ভেগান রেস্টুরেন্টগুলোয় কফিতে গরুর দুধের বদলে ব্যবহৃত হয় সয়া দুধ অথবা কাঠবাদামের দুধ। এর চর্চায় সাধারণ মানুষদের উৎসাহিত করতে সেখানে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ‘ভেগান স্প্রিং’ নামের খাদ্য মেলা। এখানে নানান পদের ভেগান খাবারের পাশাপাশি পাওয়া যায় ভেগান আইসক্রিম! দুধের বদলে এই আইসক্রিমে ব্যবহার করা হয় জলপাইয়ের তেল। এই বিশেষ তেলযুক্ত আইসক্রিম খাওয়ার পর অনেকক্ষণ তার মিষ্টি স্বাদ মুখে লেগে থাকে, ঠিক দুধের তৈরি আইসক্রিমের মতোই।
অন্যান্য দেশের দিকে তাকালেও দেখা যায় একই চিত্র। আন্তর্জাতিকভাবে ভেগান বা উদ্ভিদভোজীদের জয়যাত্রা অব্যাহত। বিশ্বের বিখ্যাত ও প্রধান খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৮ সালকে তো ‘ভেগান ফুড ট্রেন্ড’ বছর হিসেবেই ঘোষণা করেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের ভেগান মার্কেট ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৭ শতাংশ বাড়বে। আরেকটি গবেষণার তথ্য, বিশ্বজুড়ে প্রাণিজ দুধ বাদ দিয়ে নতুন ধারার ‘ডেইরি স্টাইল প্রডাক্ট’ তৈরির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
গুগল ট্রেন্ডের পরিসংখ্যানমতে, ২০০৪ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, অস্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইসরায়েলে ‘ভেগানিজম’ শব্দটি দিয়ে সার্চের হার খুব বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে গত তিন বছরে ৬০০ শতাংশ ভেগান বেড়েছে বলে জানিয়েছে রিসার্চ প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ডেটা। ২০১৭ সালে দেশটিতে ভেগান খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ১৪০ শতাংশ মানুষের। যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ ভেগান এবং প্রতিনিয়তই তা বাড়ছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও শুরু হয়েছে ভেগানদের জয়যাত্রা। ২০০৫-০৬ সালে ভারতের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভে বলছে, ভারতের ১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ প্রাণিজ পণ্য ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির গুজরাট প্রদেশে ভেগানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মহারাষ্ট্র প্রদেশে রয়েছে ৪ শতাংশ ভেগান। কলকাতাতেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভেগানদের জন্য সেখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ।
ভেগানিজম নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, শহরে থাকা উচ্চবিত্ত মানুষের মধ্যেই উদ্ভিদভোজী বা ভেগান হওয়ার প্রবণতা বেশি। মূলত প্রাণী অধিকার ও পরিবেশ রক্ষা- ভেগান আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি অবশ্যই থাকে স্বাস্থ্য সচেতনতা। মূলত এই তিনটি যুক্তি ও বিশ্বাসের ওপরই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ও এগিয়ে চলছে ভেগানিজম। ভেগানদের জীবনচর্চা ও সতর্কতায় প্রাকৃতিক সুরক্ষার দিকটি বিশেষভাবে নজরে থাকে। জাতিসংঘ সম্প্রতি পরিবেশ রক্ষায় মাংস উৎপাদন কমানোর ওপর জোর দিয়েছে। সংস্থাটির খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পেছনে ২০ শতাংশ দায়ী পশু এবং পশুজ উপকরণ ব্যবহার করে পরিচালিত শিল্পগুলো। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাণিজ্যিক পশুপালনের একেকটি খামার থেকে প্রায় ৩৭ শতাংশ মিথেন গ্যাস নিগর্মন হয়, যা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ২০ গুণ বেশি প্রভাব রাখছে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর গোচারণের সুবিধার্থে মাইলের পর মাইল বনভূমি কাটা পড়ে। ফলে প্রতিবছর বাতাসে কার্বন নির্গমন বাড়ে ২৪০ কোটি টন। এই আন্দোলনে সম্পৃক্তরা চান, পরিবেশ যেন ভালো থাকে।
খাবার ও পরিবেশের পাশাপাশি ভেগানদের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও। বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো পরিবেশের কথা ভাবছে। এগুলোর তৈরি পোশাক এবং বিভিন্ন পণ্যে পশুর চামড়া, লোম, হাড়, দাঁত ইত্যাদি ব্যবহার বর্জন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের শেষে ভোগ ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ডে প্রভাব রাখবে ভেগান প্রডাক্ট। এ থেকে বোঝা যায়, নামি ফ্যাশন হাউজগুলোর অধিকাংশই পোশাক ও বিভিন্ন অনুষঙ্গ তৈরিতে পশুর হাড়, চামড়া, লোম ইত্যাদি এড়িয়ে চলবে। ভেগান ফ্যাশনে চামড়ার পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আনারসের বর্জ্য, আপেলের খোসা, মাশরুম ইত্যাদি। এই তথ্য দিয়েছেন ব্রিটিশ ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্টনি। গেল বছরের জুলাই মাসে সান ফ্রান্সিসকোর বায়োটেক ফার্ম বোল্ট থ্রেডের সঙ্গে মিলিত হয়ে ইস্ট ব্যবহার করে ভেগান ফ্রেন্ডলি সিল্ক তৈরিতে সফল হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউজার্সিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মডার্ন মিডো শুরু করেছে প্রথম বায়োফেব্রিকেটেড লেদার ব্র্যান্ড ‘জোয়া’। ফার্মেন্টেড ইস্ট ব্যবহার করে কোলাজেন উৎপাদনের মাধ্যমে কৃত্রিম লেদার দিয়ে এই ব্র্যান্ডের পোশাকগুলো তৈরি।
ভেগানিজম নিয়ে সাধারণ মানুষই শুধু নয়, এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন বিশ্বখ্যাত সব তারকাও। ভেগান সেলিব্রিটিদের তালিকা দীর্ঘ, তাতে রয়েছেন সংগীত তারকা ব্রায়ান অ্যাডামস, জেনিফার লোপেজ, মাইলি সাইরাস, অ্যারিয়ানা গ্রান্ডি, বিয়ন্সে ও তার স্বামী জে-জেড। আরও আছেন হলিউড তারকা ব্রাড পিট, লিয়াম হ্যামসওর্থ, অস্কারজয়ী জেরার্ড লেটো, জেমস ক্রমওয়েল, নাটালি পোর্টম্যান, অ্যানা হ্যাথওয়ে, অ্যালিসিয়া সিলভারস্টোন, আলান পেজ, জেসিকা সিম্পসন, ডেমি মুর, উডি হ্যারেলসন, পামেলা অ্যান্ডারসনদের মতো তারকা।
ভেগানরা প্রাণিজ আমিষ পরিহার করে চলেন বলে তাদের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ইতিমধ্যে উঠেছে নানান প্রশ্ন। এই প্রশ্নকারীদের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভারেস্টই জয় করে ফেলেছেন এক ভেগান। তার নাম কুন্তল জৈশের। প্রথম ভেগান হিসেবে ২০১৬ সালে এভারেস্ট জয় করছেন ভারতের গুজরাটে জন্ম নেওয়া কুন্তল। ১৫ বছর আগে আমেরিকায় পড়াশোনা করতে গিয়ে প্রথম ভেগানিজমের সঙ্গে পরিচয় তার। তখন থেকেই ভেগান চর্চা করছেন তিনি। এভারেস্ট অভিযানের সময় বেস ক্যাম্পে পাওভাজি, ভেগান কেক, পোহা ইত্যাদি খেয়ে দিব্যি সুস্থই ছিলেন কুন্তল।
ভেগানিজম বর্তমান সময়ে আলোচিত এক জীবনচর্চার নাম। এই জীবনচর্চা শুধু আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য নয়, বরং প্রাণী, প্রকৃতি ও পরিবেশের সুস্থতায়ও অবদান রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top