skip to Main Content

ফিচার I মাশরুম মিল্ক

পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মাশরুমের বেশ কদর। বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়ার পাশাপাশি এর রয়েছে পাউডার। তবে একাধিক ভোজ্যছত্রাকের মিশেলে তৈরি হয় এক প্রকার মাশরুম মিল্ক। দেশে খুব একটা প্রচলিত না হলেও বিভিন্ন রেসিপিতে তা ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে

কী নেই মাশরুমে? একে বলা চলে পুষ্টির মহা আধার। রোগ সারাইয়ে যেন পথ্যতুল্য। খেতেও সুস্বাদু এবং প্রাপ্ত পুষ্টিমানে অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় দামে সুলভ। ফলে বিশ্বব্যাপী চাহিদা তুঙ্গে। আজকাল প্রায় সব ধরনের খাবারেই তা যুক্ত করে থাকেন রসুইকরেরা। এখন বিভিন্ন মাশরুমজাত খাদ্যও মেলে। যেমন মাশরুম মিল্ক। বেশ উপাদেয় হলেও আমাদের দেশে এখনো খুব একটা প্রচার-প্রসার পায়নি। সাধারণ মাশরুমের তুলনায় এর মিল্কের পুষ্টিমান বহুগুণে বেশি হতে পারে। কেননা, প্রায় ৬ প্রকারের মাশরুমজাতীয় ভোজ্যছত্রাকের নির্যাসের সঙ্গে শুকানো নারকেলের গুঁড়ার মিশেলে তৈরি হয় মাশরুম মিল্ক। নানা প্রকারের মাশরুম দিয়ে তৈরি বলে এতে বিভিন্ন উপকারী উপাদান থাকে, যা স্বাস্থ্যগঠনে বেশ কাজে লাগে। চাগা, রেইশি, লায়ন্স মেইন, মাইটাকে, কর্ডিসেপস ও টারকি টেইল—এই ছয় প্রকার মাশরুমের নির্যাস রয়েছে পুষ্টিকর মাশরুম মিল্কে। ছেলেবুড়ো সবার জন্যই উপাদেয়।
মাশরুম মিল্ক বেশ ঘন হয়ে থাকে। গুঁড়া মিল্কও মেলে। সেটি পানিতে গুলে পান করা যেতে পারে। পানীয়টি খুব দ্রুত সময়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মাশরুম মিল্ক পাউডারে অনেক সময় বাদাম যুক্ত করা হয়। সঙ্গে থাকতে পারে দারুচিনিও। কোনো কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যোগ করে চালের গুঁড়া। এই পাউডারমিশ্রিত পানীয় টনিক হিসেবে পান করার চল রয়েছে।
টনিক তৈরিতে এক কাপ গরম কিংবা ঠান্ডা পানিতে ১ টেবিল চামচ মাশরুম মিল্ক পাউডার মেশাতে হয়। স্বাদ বাড়াতে মধু যোগ করা যেতে পারে। কেউ কেউ মেশান ম্যাপল সিরাপ। তবে এসব না মিশিয়েও পান করা যেতে পারে। মেশালে তা ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। এই টনিক সরাসরিই খাওয়া যায়। পানীয়টি একাধারে তৃষাহরা ও ক্ষুধানাশী। নিমেষেই শরীরের শক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে যাদের কোনো না কোনো পানীয় পানের অভ্যাস আছে, তারা চাইলে তাতে মাশরুম মিল্ক মিশিয়ে নিতে পারেন; বিশেষ করে চা কিংবা কফিতে। শরীর চাঙা হবে। ফুরফুরে মেজাজে থাকা যাবে দিনভর। শিশুদেরকেও খাওয়ানো যেতে পারে স্মুদির সঙ্গে মিশিয়ে। কলার স্মুদির সঙ্গে মাশরুম মিল্ক বেশ আগ্রহ নিয়ে খায় শিশুরা।
স্ন্যাকস, ডেজার্ট কিংবা স্যালাড—সবকিছুতেই যুক্ত করা যায় মাশরুমের এই গুঁড়া। আজকাল লাতে-তেও দেওয়া হয় এটি। বেকড আইটেম, এমনকি পুডিংয়েও মেশানো যায়। ফাঙ্গি চিয়া সিড পুডিংয়ে মাশরুম গুঁড়া মিশিয়ে খেয়ে থাকেন অনেকে। তা ছাড়া বিভিন্ন মেইনডিশেও এর ব্যবহার হচ্ছে হরহামেশা।
যে পদের সঙ্গেই খাওয়া হোক, মাশরুম মিল্ক পাউডার থেকে বেশ কিছু স্বাস্থ্যোপকারিতা মেলে। এতে প্রচুর আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতা সারাতে পারে। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মাশরুম মিল্ক বেশ উপকারী। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কোলেস্টেরল কমায়। পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামের দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা স্ট্রোক, নার্ভের ডিজিজ ও ক্যানসার থেকে রক্ষা করে; বিশেষ করে স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় মজবুত করতে এবং গাঁটের ব্যথা কমাতে নিয়মিত পান করা যেতে পারে মাশরুম মিল্কের টনিক। এতে ভিটামিন ডি-ও মেলে। মাশরুম মিল্কের এনজাইম খাদ্য হজম এবং অন্ত্রের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও খাওয়া যেতে পারে মাশরুম মিল্ক। বিশেষ করে বয়স বাড়ার কারণে যাদের স্মৃতি কমতে থাকে, তারা এটি নিয়মিত পান করলে বেশ উপকার পাবেন। তা ছাড়া জন্ডিস ও হেপাটাইটিস বি সারাতেও কার্যকর এই গুঁড়া। কিডনির সমস্যা দূর করতেও মাশরুম মিল্ক পাউডারের জুড়ি নেই।
জেনে রাখা ভালো, মিল্কি মাশরুম এবং মাশরুম মিল্ক এক বিষয় নয়। বাংলাদেশে মাশরুম মিল্ক পাউডার খুব একটা প্রতুল নয়। দেশের কিছু অনলাইনে মাশরুমের গুঁড়া পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেগুলো হয়তো মাশরুম মিল্ক পাউডার নয়। অনেকে মাশরুম স্যুপ পাউডারকেও মিল্ক পাউডার ভেবে ভুল করে বসেন। মিল্ক পাউডারে কী কী উপাদান থাকে, তা আগে বলা হয়েছে। মাশরুমের মিল্ক পাউডার বিদেশ থেকে আনিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বড় বড় রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন ডিশেও মিলতে পারে এই মিল্ক। তবে এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো। কখন কী পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে, তা বিজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top