skip to Main Content
ra1514618060

ফিচার I রামেন

একে বলা যায় স্যুপ নুডলস। একটুখানি চুমুক আর খানিকক্ষণ দাঁতের কসরত মিলিয়ে জাপানি কমপ্লিট মিল রামেন। যারা গত শতকের আট কিংবা নয়ের দশকে বেড়ে উঠেছেন, তাদের জন্য সোজা বাংলায় এটা অনেকটা ফুজি নুডলসের মতোই। বাংলাদেশে গন্ডারের মতো এই নুডলসও এখন বিলুপ্ত। তবে এর পূর্বপুরুষেরা অর্থাৎ অথেনটিক জাপানি রামেন এখন ঢাকার রেস্টোর্যান্ট জগতে দাপটের সঙ্গে চরে বেড়াচ্ছে।
বলে রাখা ভালো, অলিখিত জাপানি জাতীয় খাবার রামেন কিন্তু আদপেই জাপানি নয়! জাত্যভিমানী জাপানি কীভাবে চীনা খাবারকে নিজেদের করে নিল, সেটা লিখতে গেলে আস্ত বই লিখে ফেলতে হবে; শুধু জেনে রাখা ভালো, বাণিজ্য আর যুদ্ধের কল্যাণে চীনা-জাপানি বন্ধু-শত্রু যে সম্পর্কের বীজ রোপিত হয়েছিল, তা-ই এখন রামেনে রূপ লাভ করেছে। শিনা সোবা নামের যে খাবার রামেন নামে নতুন পরিচয়ে পরিচিত হলো গত শতকের পাঁচ-ছয়ের দশকে, সেটার আক্ষরিক অর্থ চীনা বাজরা নুডলস।

জাপানজুড়ে এই নুডলসের এত বৈচিত্র্য যে লিখে শেষ করা যাবে না। কারণ একেক এলাকা, একেক মানুষের হাতে এর রেসিপি বিচিত্র দিকে বিবর্তিত হয়েছে। জাপানি একটা বই রয়েছে যার বাংলা নাম ‘১০০১টি রামেন রেসিপি’। তবে মোটা দাগে রামেনকে ভাগ করা যায় এর নুডলস আর স্যুপের বা ব্রথের ধরন দেখে। নুডলসের আকার-প্রকার বিভিন্ন হতে পারে। অনেকটা ইতালিয়ান পাস্তার মতোই। তবে কানসুই বা আলকেলাইন ওয়াটার (যাতে সোডিয়াম কার্বনেট, পটাশিয়াম কার্বনেট আর ফসফরিক অ্যাসিড থাকে) এই নুডলসের প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য, যেটা মঙ্গোলিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়। আর স্যুপের ধরনের ভেতরে জনপ্রিয় সামুদ্রিক শেওলা, টুনা, বিফ, পর্ক, মাশরুম আর অনিয়ন স্যুপ। বিফ ও পর্কের মাংস যেমন ব্যবহার করা হয়, তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে জ্বালিয়ে এর হাড়ও ব্যবহার করা হয় ব্রথ তৈরি করতে। আর চার ধরনের বেসিক ফ্লেভার হয় এসব স্যুপ নুডলসের- শয়ু (সয় সস), শিও (সল্ট), মিসো (চিকেন অ্যান্ড ফিশ ব্রথ), কারি (বোন-ভেজিটেবল)। কেবল টপিংয়ের বৈচিত্র্যেও রামেন হয়ে উঠতে পারে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের। নিশীথ সূর্যের দেশে স্লাইস বারবিকিউ মাংস, পেঁয়াজ পাতা, সেদ্ধ ডিম, বিন স্প্রাউট, দুধে গাজানো বাঁশ, মাংস, সামুদ্রিক শেওলা, মাছের ভর্তা, ভুট্টা, মাখন, মুরগি বা হাঁসের মাংস বেশ জনপ্রিয় টপিং। বিভিন্নভাবে এক বা একাধিক টপিং ব্যবহার করে স্বাদে বৈচিত্র্য আনা যায়। আর সিজনিং হিসেবে গোলমরিচ, তিল, রসুন, কমলার খোসা- এগুলো তো থাকেই।
জাপানে এগুলোর জন্য রেস্টোর্যান্ট তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে রয়েছে এর স্ট্রিট ভেরিয়েশনও। তবে রেস্টোর্যান্ট হোক বা স্ট্রিট- সব জায়গায় এটা খাওয়ার প্রচলিত ধরন হলো
রিফিল- নুডলস ও স্যুপ শেষ হয়ে গেলেও আরও একটু স্যুপ বাটিতে দেয়া হয়। ঢাকা শহরে অথেনটিক ফুডের চল হওয়ার পর থেকেই গুলশান অ্যাভিনিউর ইজুমি বা বনানীর ইচি বেশ সফলতার সঙ্গে পরিবেশন করে চলেছে রামেন। এ ছাড়া রয়েছে বাঙ্কা, টোকিও এক্সপ্রেস, উমাই, সামদাদো, ওয়াসাবি, কোবে, নাগাসাকি, টেকিয়া, টোকিও, কিয়োসি রেস্টোর্যান্টগুলোও মন্দ নয়। তবে কিয়োসি (উত্তরা) ছাড়া সবই গুলশান-বনানীকেন্দ্রিক। ইনস্ট্যান্ট রামেনও পাওয়া যায় সুপারশপগুলোতে।

আল মারুফ রাসেল
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top