skip to Main Content

ফিচার I শিয়ারে শিহরণ

এলিট শ্রেণি থেকে ফ্যাশনেবল মধ্যবিত্তের সঙ্গে প্রবেশ করেছে শিয়ারের ট্রেন্ড। বিচিত্র প্যাটার্নে, বহুমুখী ব্যবহারে

শিয়ার ফ্যাব্রিক একদমই কম ডেনসিটির বুননে তৈরি হয়ে থাকে। অনেকটা নেটের মতো। লঞ্জারে বা মহিলাদের অন্তর্বাসে ব্যবহৃত হয় এ কাপড়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুর বহুমাত্রিক ব্যবহারে ঝুঁকছে সবাই। শিয়ারের বেলাতেও তাই। হাল ফ্যাশনের মেয়েরা একে গ্রহণ করেছে লক্ষণীয়ভাবেই। দৈনন্দিন ক্যাজুয়াল পোশাকে কিংবা পার্টি বা ফরমালে— সবখানেই চোখে পড়ছে শিয়ারের বিশেষ ব্যবহার।
গ্লোবাল-লোকাল ট্রেন্ডে
শিয়ার একই সঙ্গে ক্ল্যাসিক ও ট্রেন্ডি। যুগ যুগ ধরে গথ ও পাঙ্ক, হরর ফ্যাশনপন্থী মেয়েরা শিয়ার ফ্যাশন ফলো করে যাচ্ছে। সবার চোখে বেশি আকর্ষণীয় হওয়ার তাগিদে। সেই বিবেচনায় এটি একধরনের ক্ল্যাসিক পাঙ্ক বা গথ কিংবা হরর স্টাইল। অন্যদিকে, শিয়ার এখন ট্রেন্ডি পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বেশ মার্জিত কায়দায়। পাশ্চাত্য থেকে শুরু করে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি দেশে এই ফ্যাশনের নির্দিষ্ট অনুসারী রয়েছে। ক্যাজুয়াল পোশাকে শিয়ারের ব্যবহার বেশি। পাশ্চাত্যে আন্ডার গার্মেন্টের উপরে শুধু শিয়ারের টপস পরে বের হতে দেখা যায়। আর স্টাইলিশ আন্ডার গার্মেন্টে ফিটিং শিয়ার পরার চলও রয়েছে সব দেশে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এই ট্রেন্ড খুব কম। এই অঞ্চলে টি-শার্ট বা অন্য টপসের উপরে স্টাইলিশ পোশাক হিসেবে মেয়েদের পরতে দেখা যায় শিয়ার বা ফিশনেট। এতে গেট আপে এক্সট্রা ভ্যালু অ্যাড হয়। ফুলস্লিভ শিয়ার টপস এখন সবচেয়ে ফ্যাশনেবল। শর্ট টপস আমাদের এখানে অত বেশি প্রচলিত না হলেও মিডিয়াম এবং লং টপসে শিয়ায়ের ব্যবহার লক্ষণীয়। তবে মজার ব্যাপার, শাড়ির সঙ্গে পরার ব্লাউজে এই কাপড়ের ব্যবহার এই অঞ্চলে অনেক পুরোনো। এটি শুরু হয়েছিল এলিট সমাজের একটা অংশ থেকে। এখন মধ্যবিত্তদের মধ্যে ঢুকে গেছে। ফ্যাশন চিন্তা যতই আধুনিক হচ্ছে, ততই বাড়ছে শিয়ার, ফিশনেটের মতো ফ্যাব্রিকের ব্যবহার।
রকমারি শিয়ার
মূলত টপে বেশি ব্যবহৃত হয় শিয়ার। তবে বটমেও রয়েছে অনেক ডিজাইন। এই টপসের বেশির ভাগই ফুলস্লিভ ও বডি ফিটেড। এগুলো কখনো কোনো পোশাকের উপরে পরা হয়। কখনো এটির উপরে অপেক্ষাকৃত ছোট পোশাক পরা হয়। হাফস্লিভের শিয়ার টপও দেখা যায়। তবে সেগুলো তেমন টাইট ফিটেড নয়, বরং ঢোলাঢালা। হাফস্লিভের মধ্যে দেখা যায় কেপ প্যাটার্ন। স্লিভে ফ্লেয়ার লক্ষণীয় অনেক সময়। হাফ বা ফুলস্লিভ দুটোতেই রয়েছে প্যাটার্নের বৈচিত্র্য। কোনোটি বেলুন প্যাটার্ন, কোনোটি গ্যাদার্ড, কোনোটি বেল বা হরাইজন্টাল কিংবা অন্য ফ্লেয়ার ফিট। লেন্থে প্রচুর বৈচিত্র্য থাকে এ ধারার টপসে। কখনো একদম বেসিক প্যাটার্নে সীমাবদ্ধ থাকে, কখনো অনেক লম্বাও করা হয়। তবে এখন সবচেয়ে ট্রেন্ডি বেসিক লেন্থের ভেতরে টিপিক্যাল ও ফ্লাফি বেইজড প্যাটার্ন। শুধু ফ্যাশনের প্রকাশ ঘটে, এমন শিয়ারে ব্যবহৃত হয় নানান রকম মোটিফ ডিজাইন। হতে পারে তা ফ্লোরাল অথবা অন্য কোনো নকশা। টপসের প্যাটার্ন বা অন্যান্য ডিজাইন যা-ই হোক, তা লাইনিংয়ের হিসাবে দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত, কোনো রকম লাইনিং ছাড়া শিয়ার টপ। দ্বিতীয়ত, লাইনিংসহ। লাইনিং অনেকভাবেই থাকতে পারে। কোনো টপের সঙ্গে ব্রা যুক্ত থাকতে পারে। কোনো কোনোটিতে স্লিভলেস বেসিক বডি। কোনো কোনো টপের শুধু একটি অংশে শিয়ার থাকে, বাকি সব নরমাল কাপড়। যেটির ব্যবহার প্রাচ্যে বেশি দেখা যায়। যেমন অনেক গাউনে শুধু পিঠের অংশ শিয়ার ফ্যাব্রিকে ডেভেলপড করা। বটমে শিয়ার ইন্টিমেট লুকে বেশি ব্যবহার করা হয়। আন্ডার গার্মেন্ট হিসেবে বেশি। কিন্তু ফেন্সি হাফপ্যান্টে শিয়ারের ব্যবহার এখন বেশ প্রচলিত। আর দুই ধরনের টাইটস রয়েছে শিয়ারের একটি ওয়েস্টসহ প্যান্টের মতো। অন্যটি শুরুই হয় থাই থেকে। মানে, ওয়েস্টলেস লেগ পিস। তবে এখন ট্রেন্ডি স্কার্ট দেখা যায় এই ফ্যাব্রিকে। ওগুলো হাফপ্যান্ট বা অন্য অন্তর্বাসের উপরে পরা হয়। টপ ও বটম আলাদা ছাড়াও শিয়ারের গার্মেন্ট হয়। এই দুই পার্ট একত্র করলে তা হয় জাম্পস্যুট। তবে বাকি সব ডিজাইন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক।
অন্যান্য পোশাক ও পরিবেশ
শিয়ার শুধু এলিট শ্রেণির জন্য, এই ধারণা অনেক আগেই ভেঙে গেছে। তবে পরিবেশ বুঝে পরতে হয় এসব পোশাক। আন্ডার গার্মেন্ট এবং উপরিভাগে— দুভাবেই শিয়ার পরা সম্ভব অনেক পরিবেশে। ফুলস্লিভ টপের উপরে হাফস্লিভ শিয়ার টপ পরা যেতে পারে। আবার পরিবেশ উপযোগী যেকোনো টপ বা কামিজের উপর শিয়ার পরা যেতে পারে। আড্ডা, ঘোরাঘুরির সময় ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে মানানসই শিয়ার। সে ক্ষেত্রে টি-শার্ট বা রাউন্ড নেক শার্টের সঙ্গে বেশি মানাবে। উপরে নাকি নিচে পরবেন, তা নিজের পছন্দের ব্যাপার। বিপরীতে থাকতে পারে গ্যাবার্ডিন বা ডেনিম বা ট্রেন্ডি জগার্স। মোটিফ ডিজাইন করা টপ পরা যেতে পারে স্কার্ট বা ডিভাইডারের সঙ্গে। পার্টি, উৎসবের জমকালো পোশাকে বরাবরের মতোই আসতে পারে শিয়ারের ব্যবহার। এই ফ্যাব্রিকে পছন্দের গাউনের একাংশ অথবা বিভিন্ন অংশ তৈরি হতে পারে। এখন দেশীয় পোশাকেও ব্যবহৃত হয় শিয়ারের বিশেষ পার্ট। এমনকি শাড়ির সঙ্গেও। আর পার্টি ব্লাউজে তো এটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। কামিজের উপরে শর্ট শিয়ার টপ এখন আমাদের পরিবেশে মামুলি হয়ে গেছে।

 আবদুল্লাহ আল কেমী
মডেল: মায়িশা ও এফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top