skip to Main Content

ফিচার I সিকুইন

আউটফিটে দৃষ্টি ধরে রাখার জন্য। সব সময়ের উপযোগী হয়ে ফ্যাশনে ফিরে এসেছে। লিখেছেন সারাহ্ দীনা

পোশাকেও রোদের চিকচিক তারার ঝিকমিক! নজরকাড়া আউটফিটের এই অর্নামেন্টেশনের নাম সিকুইন। তুতেনখামেনের মৃতদেহ ঢেকে রাখতে যে কাপড় ব্যবহার করা হয়েছিল, সেখানে ছিল স্বর্ণমুদ্রার সারি। ধারণা করা হয়, আভিজাত্য প্রকাশ করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। তখন থেকেই এখন পর্যন্ত সিকুইন রূপে অনন্য। সিকুইন ওয়ার্কে প্রথম দিকে, ১২৮৪ সালে ব্যবহার করা হয়েছিল গোল্ড কয়েন। এরপরে সে স্থান দখল করে নিয়েছিল মেটাল এবং ভারী প্লাস্টিক। ফ্যাব্রিকের ওপরে সারি সারি একই ডিজাইনের ধাতব অথবা প্লাস্টিকের তৈরি ক্ষুদ্র চাকা বসিয়ে তৈরি করা হয় এই নকশা। তখন তা হাতেই বানানো হতো। ১৪০০-এ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি নকশা করেছিলেন সিকুইন মেশিনের। গত শতকের চল্লিশের দশক থেকে ফ্যাশনের মূল ধারায় এটি যোগ হয়। এখন পিভিসি ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে সিকুইন ওয়ার্ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এতে ভিনাইল প্লাস্টিকের সংযোজন শুরু। পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে সচেতনতার এই সময়ে নতুনের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় মানুষের। তারই পরিক্রমায় এই উপাদান পায় নতুন মাত্রা। ডিস্কোবলের মতো রংবেরঙের এই নকশার জনপ্রিয়তায় আসে নতুন জোয়ার।
নাইন টু নাইনের সময় চলছে এখন। সকাল নয়টায় কাজে বেরিয়ে রাত নয়টার পার্টিতেও মানিয়ে নেওয়ার মতো পোশাকের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। সিকুইন অর্নামেন্টেড ড্রেসেও যে এমন করার সুযোগ নেই, তা নয়। সে ক্ষেত্রে শুধু টপেই রাখা যেতে পারে এটি। বটমে নয়। এরই সঙ্গে শ্রাগ, লং কটি কিংবা ব্লেজারে করে নেওয়া যায় টুইনিং। পার্টি জয়েনের আগে শুধু টপ আর বটমেই জুতসই। বাকি সময়ের জন্য লেয়ার করলে ঝলমলে উৎসবে পাওয়া যাবে নতুন লুক।
ডে টাইম সিকুইন ড্রেস
দিনের বেলা পরতে চাইলে এমন ড্রেস বেছে নেওয়া যেতে পারে, যেখানে পুরো বডি সিকুইন থাকলেও হবে হাই অ্যান্ড লো লুক। সম্পূর্ণ পোশাক এক রঙের না হয়ে টপ আর বটমে দুটি কালার থাকলে বেশ লাগবে। রঙের বৈপরীত্য ছন্দ তৈরি করবে।
শ্রাগ, অর্থাৎ লং কটি বেশ চলছে ইদানীং। ট্রেঞ্চ কোটের কাটিং আবারও ফিরছে ফ্যাশনে। এমন পোশাকের ইনার পার্টে, লাইনিং সিকুইন ওয়ার্ক দারুণ মানিয়ে যাবে। এর সঙ্গে পেয়ারআপ করতে হবে যে টপ-বটমে, সেগুলো থাকতে পারে বেসিক ম্যাট লুকের। টপ আর লেয়ারের পাশাপাশি সিকুইন ওয়ার্কের স্কার্টও বেছে নেওয়া যায়। ডে লাইটে প্যাস্টেল কালারে বেশ লাগবে। টপে রাখা যায় অলটাইম ব্রাইট, হোয়াইট। এ পেয়ারে স্নিগ্ধ সৌন্দর্য প্রকাশিত হবে।
ক্রপ টপে সিকুইন মাদকতা ছড়ায়। মেটাল কালারের ক্রপ টপ পেয়ার করে নেওয়া যায় বেলবটমের সঙ্গে। বেশ মানাবে। স্ট্রিট ফ্যাশনেও দারুণ জেল্লা বাড়াতে পারে এই অর্নামেন্টস। রিপড জিনসের সঙ্গে সিকুইন ওয়ার্কের টপ, আর লেয়ার করে ব্লেজার। পায়ে থাকতে পারে এঙ্কেল বুট। এটা যদি হয় স্নেক ইফেক্টের, তাহলে স্টাইল আইকন ম্যাডোনাকে মনে পড়ে যাবে এমন ফ্যাশনিস্তাকে দেখলে। ডে টাইম ওয়্যারড্রোবে সিকুইন না চাইলে অ্যাকসেসরিসে রাখা যেতে পারে। মুমু টোট থেকে ক্লাচ- সব ধরনের ব্যাগেই মানিয়ে যায় এই ওয়ার্ক। এক রঙ ফ্যাব্রিকের সঙ্গে দারুণ মানাবে অ্যানিমেল প্রিন্ট, রেইনবো এবং ফ্লোরাল প্রিন্ট। লেপার্ড, টাইগার, স্নেক ইফেক্ট প্রিন্ট আর সিকুইন, সৌন্দর্য বাড়াবে।
নাইট টাইম সিকুইন ড্রেস
রাতের উৎসবে নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করতে চাইলে সিকুইন বেছে নেওয়া যেতে পারে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্যারি করলে যেকোনো পোশাকেই দ্যুতি ছড়াবে। আর সেই পোশাকের অলংকরণে যখন সিকুইন, তখন তা অনন্য।
রিহানা সুরে সুরে বলেছেন, ‘শাইন ব্রাইট লাইক আ ডায়মন্ড’। সিকুইনের দারুণ ঝলকে আপনি শাইন করতে পারেন।
রাতের পার্টিতে সিকুইনের বডিকোন, পাইপ ড্রেস সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এই ড্রেসের বেল্ট হিসেবে কোমরে তা থাকলে ফোকাস পরিবর্তন হবে। ভিন্ন রকম ফ্যাব্রিক বেছে নিয়ে বেল্টে বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে নন-গ্লিটারি ফ্যাব্রিকও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে। বেসিক কালারেও ভালো দেখাবে।
শিমারিং এফেক্টে কিছু রং অনন্য। যেমন ইলেকট্রিক ব্লু, মিন্ট গ্রিন, পিংক, ইয়েলো। ২০২১-এ বছরজুড়ে এসব রঙের ছটা মন মাতাবে।
তুতেনখামেনের পোশাকে সিকুইনের কথা বলা হয়েছে আগেই। সেখান থেকে এই অর্নামেন্টেশনে যোগ হলো গোল্ড। এখন এই ধাতু ব্যবহার করা না হলেও মেটালিক সিকুইন রয়েছে গোল্ডেনের চাহিদা। ধাতব অন্যান্য রঙের প্রতিও আকৃষ্ট হয়েছে ফ্যাশনসচেতনেরা। কখনো রুপালি আবার কখনো তামাটে ছটাও নজর কেড়েছে সোনালির পাশাপাশি।
সিকুইন ওয়ার্কের টারটেল নেক নি লেংথ ড্রেস রাতের পার্টি লুকের জন্য জুতসই। মেটালিক সিকুইন করা এ ধরনের পোশাক স্লিভলেসও হতে পারে।
মিডি স্কার্টের লেয়ারে লেয়ারে সিকুইনের ঝলক দারুণ আকর্ষণীয়। এর সঙ্গে ট্যাংটপ মানানসই।
বটমে সিকুইন ওয়ার্ক সাজের ভিন্নতা এনে দিতে পারে। ট্রাউজারের নিচের অংশে এই কাজ থাকলে এর সঙ্গে সিল্ক কিংবা স্যাটিন ফ্যাব্রিকের টপ বেছে নেওয়া যায়। ফোকাস পয়েন্ট তখন বটমেই থাকবে।
আবার বটমে এ লাইন কাট প্যান্ট চাইলে সঙ্গে ঢিলেঢালা প্যাটার্নের টি-শার্টও পরা যেতে পারে।
সিকুইনের কাজ করা ফ্রিল দেওয়া ড্রেসের মাদকতার জুড়ি নেই। একটার পরে একটা ফ্রিলের লাইন প্রতিটি স্টেপে সৌন্দর্য ছড়াবে। প্যাস্টেল শেডের ফ্রিল ড্রেস বেছে নেওয়া যায়। বেশ মানাবে। মেটাল কালারের লাইট শেডও রাখা যেতে পারে সংগ্রহে।
কিমোনো জাপানিদের পোশাক হলেও বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। লেয়ারিংয়ে ঝুঁকেছে ফ্যাশনপ্রেমীরা। সিকুইনের কিমোনো এবারের ট্রেন্ড হিসেবে আলোড়ন তুলবে। ট্যাংটপ আর ডেনিমের সঙ্গে লেয়ারিং করে নেওয়া যায়। র‌্যাপ ড্রেসও এবার থাকবে চাহিদার তালিকায়। বেসিক ফ্যাব্রিকে সিকুইন কেপ হতে পারে মানানসই।
ডিস্ক সিকুইন পার্টিওয়্যার তুলে রাখা যায় রাতের জন্যই। বেসিক কালারের ওপরে বিপরীত কিংবা উজ্জ্বল রঙ ডিস্ক সিকুইনে স্নিগ্ধতা তৈরি করে।
স্পারক্লিং সিকুইনের ম্যাক্সি ড্রেস নজর কাড়বে। স্লিট কাটেও দুর্দান্ত দেখাবে।
আশির দশকের অ্যাপিল ছিল অফ শোল্ডার সিকুইন ড্রেস। ফ্যাশনের রাউন্ড দ্য ক্লকে এই ট্রেন্ড ফিরবে।
সিকুইন ড্রেস ফোকাস ধরে রাখে। তাই এই পোশাকের সঙ্গে অ্যাকসেসরিজ বেছে নিতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। এই অর্নামেন্টেশনে পরিমিতিবোধের প্রকাশও দরকার।

মডেল: সুপ্তি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ভায়োলা বাই ফারিহা
ছবি: ফারাবী তমাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top