skip to Main Content

ফিচার I সুইডেনের বাঙালি রন্ধনশিল্পী

সুইডেনে এক বঙ্গসন্তান রসনার নীরব নিরীক্ষায় ঋদ্ধ বাংলাদেশকে উপস্থাপন করে চলেছেন প্রায় দুই দশক। স্বশিক্ষিত রন্ধনশিল্পী নাহিদ হাসানকে নিয়ে লন্ডন থেকে লিখেছেন সৈয়দ বেলাল আহমেদ

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে কেবল বন্যাপীড়িত একটি দরিদ্র দেশের ভাবমূর্তিতেই দেখানো হয়। সাংবাদিক হিসেবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে আমি ঘুরে বেড়াই। বিশেষত ভ্রমণ ও রসনা লেখক হওয়ার জন্যই এক দশক ধরে খাদ্যবৈচিত্র্যের সন্ধানে আমার এই উৎসুক পরিব্রাজন। যেখানে যাই সেখানকার রসনার স্বাদ গ্রহণ করি আর তা নিয়ে লিখি। তা ছাড়া খাদ্যবৈচিত্র্যের সন্ধান ও ভ্রমণ আমার কাছে অ্যাডভেঞ্চারও বটে। অনেক ক্ষেত্রেই তা আবিষ্কারের মতো। কারণ, এটা আগে থেকে অনুমান করা যায় না; বরং আচমকা এর রূপ-রং-রস-গন্ধ-স্বাদের আনন্দ উপভোগ করা যায়। অনেক সময়েই এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়, যা চমকে দেওয়ার মতোই। উদাহরণ হিসেবে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লিউব্লিয়ানা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা যেতে পারে। স্লোভেনিয়া একটি নবীন দেশ। একসময় যুগোস্লাভিয়ার অন্তর্গত ছিল। স্বাধীন হয়েছে ১৯৯১ সালে।
যা হোক, গোটা স্লোভেনিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় লিউব্লিয়ানাকে আমি খুব ভালোভাবে জানি। কিন্তু আমি জানতাম না যে এখানেই ‘বাংলাদেশ বার’ নামে একটি পানশালা আছে। অবশ্য অনেক পরে এটা আবিষ্কার করি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো, ওই পানশালা কোনোভাবেই বাংলাদেশ বা বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এমনকি সেখানে বাংলাদেশের কোনো খাদ্য কিংবা পানীয়ও পাওয়া যায় না। কেবল ওই বারের ফেসবুক পেজে একটি বেঙ্গল টাইগারের ছবি আছে। মালিক আর নিয়মিত খদ্দেরদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, বারটি যে এলাকায় সেটি মাঝেমধ্যেই প্লাবিত হয়। সে জন্য ওই পানশালা ও রেস্তোরাঁর নাম ‘বাংলাদেশ বার’। স্থানীয় পর্যটন নির্দেশিকায়ও ‘বাংলাদেশ’ সম্পর্কে এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ প্রবল গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা। বাংলাদেশিরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে গোটা বিশ্বকেই বরং সাহায্য করছে।
তবে এই বন্যার সঙ্গে অন্য রকম এক সফলতার গল্পের যোগসূত্র তৈরি করা যেতে পারে। বাংলাদেশের নাহিদ হাসানের কথাই ধরি, এই মানুষটি বন্যার কারণে একসময় সুইডেনের স্টকহোমে চলে আসেন। তিনি এখন সেখানে বাংলাদেশিদের উদ্যোগে ‘শান্তি গ্রুপ’-এর একটি রেস্তোরাঁ চেইন অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে চালাচ্ছেন।
শান্তি কালচার ও শান্তি আলটিমার দ্বারোদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে কথা হয় নাহিদের সঙ্গে। তার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশি রসনাকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করা। কিন্তু কেন?
স্বশিক্ষিত রন্ধনশিল্পী নাহিদ হাসান ও তাঁর ভাই নাঈমের মোট ৬টি রেস্তোরাঁ আছে সুইডেনের রাজধানীতে। আলটিমা চমৎকার আর পরিপাটি একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁ। পাশাপাশি কালচার ক্লাব বাংলাদেশি স্বাদের অধিষ্ঠান।
নাহিদ হাসান বলেন, ‘ইউরোপে বাংলাদেশিরা একটা সময় পর্যন্ত ভারতীয় রসনাকেই একচেটিয়াভাবে প্রমোট করেছে। এর মধ্য দিয়ে পরোক্ষে তারা ভারতকেই তুলে ধরেছে বিশ্বের কাছে। এটাই আমার ভাবনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, ভারতীয় খাবারের চেয়ে বাংলাদেশি খাবার অনেক বেশি সুস্বাদু ও বৈচিত্র্যময়। এই চিন্তা থেকেই আমি এখানে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁর ব্যবসা চালু করি।’
‘সুইডেন যেমন সুন্দর দেশ, এর রাজধানী স্টকহোমও ততটাই মনোহর শহর। কিন্তু আমার শিকড়, আমার বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি। বাংলাদেশের অসাধারণ সব খাবার, যা আমার মা আমাকে রেঁধে খাওয়াতেন, বাংলার প্রতিটি গ্রামে, ঢাকার রাস্তায় যেসব খাবার পাওয়া যায়, সেগুলোকেই সুইডেনে জনপ্রিয় করার বিষয়কে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই। খাবারের পাশাপাশি বাংলাদেশের আতিথেয়তা ও সেবা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি কুজিনের সঙ্গে সুইডেনের মানুষকে পরিচিত করানোর পাশাপাশি বাংলার আতিথেয়তায় সুইডিশদের মুগ্ধ করতেই আমার এই নতুন উদ্যোগ।’ বললেন নাহিদ।
ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা নাহিদের। বাবা আয়ুর্বেদ চর্চা করতেন। রান্নাবান্নার প্রতি তাঁর আগ্রহটা পারিবারিক আবহ থেকেই। মায়ের রসুইয়ের সৌরভ আর সকালে স্থানীয় রেস্তোরাঁর পরোটার স্বাদ নাহিদকে আজও স্মৃতিমেদুর করে।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের বন্যা তাঁর জীবনকে বদলে দেয়। সেবার বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বৈরী এই পরিস্থিতিতে ১৯ বছরের কিশোর নাহিদকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর বাবা-মা। তাঁদের এক আত্মীয় সে সময় সুইডেনে থাকতেন। তিনি জানান, সুইডেন থাকার জন্য খুব সুন্দর জায়গা। অবশ্য ভালোমতো পরিশ্রম করা গেলে। এই অবস্থায় সুইডেনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নাহিদ হাসান। কিছুদিন নরওয়ের অসলোতে পড়াশোনার পর ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে সুইডেনের লিঙ্কোপিং স্টেশনে পা রাখেন তিনি।
শুরুতে সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়েছে নাহিদের। নিস্তব্ধ, সুনসান রাস্তাঘাট, খাবারের জন্য চাল কিংবা মসলা না পাওয়া ইত্যাদি প্রাণচঞ্চল ঢাকার সঙ্গে মেলাতে পারছিলেন না। অবশ্য ধীরে ধীরে পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে লিঙ্কোপিংয়ের গ্লোবাল জিমনেসিয়ামে দুই সেমিস্টার পার করে চলে আসেন স্টকহোমে। ডিজাইনে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্তও নেন। এখানে তিন বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে একটি অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করে থাকা শুরু করেন। ফিত্তিয়া শহরতলিতে। বেশি আয়ের জন্য স্থানীয় একটি ডাইনারে কাজ শুরু করেন। আর বাসায় তারা ভাগ করে রান্না করতেন। মসলা বলতে একমাত্র প্যাপরিকাই ভরসা।
‘আমার বিশেষত্ব ছিল ক্যানড মাকরেল মাসালা। টিনবন্দি ম্যাকরেল মাছকে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ আর ধনে সহযোগে ভাজা। তিন বন্ধুই স্বীকার করে নেন আমার ম্যাকরেল ভাজা ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলোর থেকে সুস্বাদু।’ বললেন নাহিদ।
নাহিদের লক্ষ্য ছিল ডিজাইনার হওয়া। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁ দেওয়ার আলাপ জমে উঠলে সেই লক্ষ্য ধূসর হতে থাকে। ‘অথচ আমি চাইছিলাম সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা। ভালো গানও গাইতাম। কিন্তু তা দিয়ে আমি আর কীই-বা করতে পারতাম। বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনে যুক্ত হয়ে বড়জোর নাটকে অভিনয় করেই বাকি জীবন কেটে যেত? তখন ভাবলাম আসলে রান্নাও তো একটা শিল্প। তাই রেস্তোরাঁ তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করিনি। আমাদের রেস্তোরাঁয় কিছু সিগনেচার ডিশ করার চেষ্টা করেছি, যা সুইডেনে আগে কখনোই পাওয়া যেতো না।’
গোথেনবার্গের আয়রন মার্কেটে সেই বাহাত্তরে প্রথম ভারতীয় রেস্তোরাঁ চালু হয়। আশির দশকে এসে স্টকহোমে ভারতীয় রেস্তোরাঁ খোলার হিড়িক পড়ে যায়। এরপর নব্বই সালে হাসান পাটোয়ারীর ‘ইন্দিরা’ চালু হয়। সেখানে সন্ধ্যা আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ওয়েটারের কাজ পান নাহিদ হাসান। এভাবেই নিজের রেস্তোরাঁ খোলার জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে থাকেন। বছরের পর বছর তিনি হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন। এমনও দিন গেছে, খাওয়ার সময়টুকুও পাননি। মাঝ নব্বইয়ে তার ভাই নাঈম চলে আসেন স্টকহোমে। এই সময়ে কিছু ঋণ জোগাড় করতে সক্ষম হন। এর সঙ্গে যোগ করেন জমানো অর্থ আর বন্ধুদের শেয়ার। সম্মিলিত মূলধনে ২০০০ সালের নভেম্বরে নাহিদ চালু করেন ‘শান্তি’। এই নামের নেপথ্যে ছিল শান্তির বাণী প্রচার। কারণ, নাহিদের কথায়, ‘সে সময় ইরাক যুদ্ধ চলছিল; তাই রেস্তোরাঁর নাম রাখা হয় শান্তি।’
‘ভারতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহ আমার রেস্তোরাঁর প্রসারে সাহায্য করেছে ঠিকই, কিন্তু এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ, প্রথম ৬ মাস আমাদের রেস্তোরাঁ একপ্রকার ফাঁকাই থাকত। ফলে একসময় আমরা লাঞ্চের আগেই রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতাম। এমনকি গ্যাসের বিল দিতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। পরিবর্তনটা আসে আকস্মিকভাবেই। জনপ্রিয় দৈনিক ‘ডিএন নিউজপেপার’ আমাদেরকে হাই রেটিং দেয়। এমনকি আমরা তাদের গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ডও পাই। এরপরের দিন থেকেই শুরু হয় টেবিল বুকিংয়ের ফোন আসা। শান্তি ভরে উঠতে থাকে। তবে কর্মচারী জোগাড় করে পুরোদমে চালানোর আগে আবারও একটা বন্ধ্যা সময় পার করতে হয়। এরই মধ্যে আমরা পেয়ে যাই আরও ইতিবাচক মন্তব্য। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
রেস্তোরাঁয় জনসমাগম বাড়তে থাকে। অন্যদিকে অথেনটিক খাবার পরিবেশনে মনোযোগী হন নাহিদ। লাঞ্চের ৭০ ভাগই থাকত চিকেন টিক্কার অর্ডার। এই একঘেয়েমি কাটাতেই শুরু হয় নিরীক্ষা। ছোট ছোট পদ বানাতে থাকেন, যা মেনুতে থাকত না।
২০০৮ সালে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নাহিদ খোলেন তার দ্বিতীয় রেস্তোরাঁ ‘শান্তি সফট কর্নার’। কিন্তু তৃতীয়টি চালু না হওয়া অবধি তাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছিল না। তৃতীয় উদ্যোগ ‘টাচ অব বেঙ্গল’। ব্রিটেনের বাইরে এটাই প্রথম কোনো রেস্তোরাঁ, যেখানে কেবল বাঙালি রসনাই পরিবেশিত হয়।
রেস্তোরাঁয় কাজ করার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন নাহিদ। বলেন, ‘সবাইকে দেখি, প্রতিদিন একই কারি রান্না করে তা পরিবেশন করে। এটাই আমাকে ভীষণ অবাক করে। আমরা যে তরকারি রোজ খাই, সেটা রান্না করে পরিবেশন করলে কেমন হয়। এই ভাবনা থেকেই আমি কাজ শুরু করি।’
এর কিছুদিন পরেই শুরু হয় নাহিদের নতুন উদ্যোগ। ২০১৪ সালের মার্চে চালু করেন গসিপ। এটা বাংলাদেশি পথখাবারের রেস্তোরাঁ। স্টকহোমের কালচারাল ডিস্ট্রিক্টে। শুরুর দিন থেকেই তিল ঠাঁই মেলে না। বাংলাদেশে কখনোই যাননি এমন বাংলাদেশিদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায় গসিপে। ‘বাংলাদেশের পথের ধারের চায়ের দোকানের আদলে এই রেস্তোরাঁকে সাজাতে চেয়েছি। তাই খবরের কাগজ দিয়েই অভ্যন্তর সজ্জা করেছি। আর মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইনি বলেই মেনুতে পদের সংখ্যা রেখেছি অনেক কম।’
নাহিদ খাবারদাবার নিয়ে নানা রকম নিরীক্ষা পছন্দ করেন। এখনো তিনি তাই নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে খাবারের লেটেস্ট ট্রেন্ড বোঝার চেষ্টা করেন। বললেন, ঢাকায় গেলেই আমি পুরান ঢাকায় যাই। এখানকার খাবার অসাধারণ। বাংলাদেশি স্টাইলের গরুর মাংসের ভুনা আর খিচুড়ি, বিরিয়ানি তো লা জবাব। এসব পদ আমি আমার রেস্তোরাঁর মেনুতে যোগ করেছি আমার স্মৃতি থেকে রান্না করে। কারণ, আমি সেখানকার সাধারণ রেস্তোরাঁগুলোর শেফদের সঙ্গে কথা বলে তাদের রান্নার বিস্তারিত ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করি।
কেবল বাংলাদেশি খাদ্য নয়, সংস্কৃতিও এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেন নাহিদ। বাঙালিমাত্রেই সংস্কৃতিমনা। আর আমাদের তো রয়েছে সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এ জন্যই তিনি চান, এখানকার মানুষ জানুক বাংলা সাহিত্য সম্পর্কেও। তাই নিজের রেস্তোরাঁয় রেখেছেন রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের প্রতিকৃতি। রবীন্দ্রনাথ সুইডেনে এসেছিলেন শতবর্ষ আগে নোবেল পুরস্কার নিতে। উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্কের সেই সূত্র তিনি বুঝতে চান। কারণ, বাংলাদেশ আর সুইডেন উভয় দেশই সংস্কৃতির দিক থেকে যেমন ঋদ্ধ, তেমনি রসনাবৈচিত্র্যেও তুলনাহীন।
লেখক: লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং কারি লাইফ ম্যাগাজিনের সম্পাদক।

ছবি: লেখক

[লন্ডনের জনপ্রিয় ফুড ম্যাগাজিন কারি লাইফের সঙ্গে নিবন্ধ বিনিময়ের অংশ হিসেবে এই লেখা প্রকাশিত হলো।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top