skip to Main Content

ফিচার I সুরক্ষায় নতুন সূত্র

সানস্ক্রিনের পুরোনো ফর্মুলা খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না ত্বকে? বিকল্প কিন্তু এসেই গেছে

সানস্ক্রিন-সংক্রান্ত কিছু নিয়ম কখনোই বদলাবার নয়। যেমন এসপিএফ নিদেনপক্ষে ত্রিশ বা তার ওপর হওয়া চাই। সুইমিং কিংবা ঘেমে যাওয়ার পর রিঅ্যাপ্লাই করতে হবে সানস্ক্রিন। এমন অনেক না পাল্টানো নিয়মের সঙ্গে সঙ্গে এর সুবিধাগুলোও অপরিবর্তনীয়। তবে ফর্মুলা পাল্টে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পাল্টাচ্ছে এর কার্যকারিতাও। হয়ে উঠছে আরও বেশি শক্তিশালী। ব্যবহারবান্ধব।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পূর্ণ
সাম্প্রতিক ফর্মুলা। মূলত সানস্ক্রিনের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া হচ্ছে ত্বকবান্ধব সব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় আরও কার্যকরভাবে। সাধারণত ভিটামিন সি এবং ই সানস্ক্রিনের সঙ্গে বেশি মেশানো হয়। যা ত্বককোষের ওপর সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব তো পড়তেই দেয় না। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারাইয়েও সাহায্য করে। এ ছাড়া এডেলউইস এক্সট্রাক্ট থেকেও তৈরি হচ্ছে সানস্ক্রিন। এটি মূলত ডেইজি এবং সূর্যমুখী গোত্রের একধরনের পাহাড়ি ফুল, যাতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এ দিয়ে তৈরি সানস্ক্রিন ত্বকে ফ্রি র‌্যাডিকেল রশ্মির প্রভাব পড়তে দেয় না। রোজমেরিও উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত। যা ত্বকে ফ্রি র‌্যাডিকেলের উপদ্রব দমন করে। ত্বককে রক্ষা করে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে। অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টি থাকায় এ সানস্ক্রিনগুলো সহজেই স্পর্শকাতর ত্বকে ব্যবহার করা যায়। অ্যাভোকাডোতে থাকে ভিটামিন এ, ডি এবং ই এর মতো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই এ থেকে তৈরি সানস্ক্রিন সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব সারাইয়ে সাহায্য করে ত্বককে। সেই সঙ্গে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে গ্রিন টি-এর ব্যবহারও বছর-পুরোনো। তাই এ দিয়ে তৈরি সানস্ক্রিন শুধু সূর্য থেকে সুরক্ষাই দেয় না, ত্বকের কোলাজেন ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষাও করে। তবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সেরাম মেখে নেওয়া গেলে ভালো। পাঁচ-ছয় ফোঁটা সেরাম পুরো মুখে মাখিয়ে নিতে হবে। সম্পূর্ণভাবে শুষে নেওয়ার পর দিতে হবে সানস্ক্রিন। আরও শক্তিশালী সুরক্ষার জন্য।

গ্লিটারি গার্ড
দেখায় বডি গ্লিটারের মতো; কিন্তু আদতে সানস্ক্রিন। সূর্য থেকে সুরক্ষা দিতে সাম্প্রতিক এই পণ্য ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্লিটারি এ সানস্ক্রিনগুলো রাখা হয় প্যারাবেনমুক্ত। এসপিএফ ৫০ কিংবা এর বেশি থাকায় ত্বকে দেয় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা। পার্টি মুড বজায় রেখে। কারণ, ক্রিমি গোল্ড, শিমারি পিঙ্ক আর রেইনবো গ্লিটার দেওয়া সানস্ক্রিনগুলো গায়ে মাখলেই পুল সাইডেও তৈরি হয়ে যায় ডিসকো বলের মুড। সানস্ক্রিনগুলো এক ঘণ্টার বেশি সময় পানিরোধী থাকে। তাই ঘণ্টা দুয়েক পরপর রিঅ্যাপ্লিকেশন মাস্ট। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মেশানো থাকে অনেক গ্লিটারি সানস্ক্রিনে। মূলত ভিটামিন ই এবং গ্রিন ট্রি এক্সট্র্যাক্টযুক্ত থাকায় ত্বকে তৈরি হয় শক্তিশালী সুরক্ষাকবচ। ‘নন-ইরিট্যান্ট গ্লিটার’ দিয়ে তৈরি হয় বটে, কিন্তু এ সানস্ক্রিনগুলো ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান। জ্বালাপোড়া কিংবা চুলকানি হলে এগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আর মাখার সময় লক্ষ রাখতে হবে, যেন ত্বকের পুরোটা সানস্ক্রিন দিয়ে ভালো করে ঢাকা হয়।

এডিবল এডিশন
সানস্ক্রিন গায়ে মাখার কসরত শেষ হয়ে এলো। টুপ করে মুখে পুরে নিলেই চলবে। না! সানস্ক্রিন খেয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। বরং সানস্ক্রিনের সুবিধাগুলোই দেবে- এমন সাপ্লিমেন্ট রাখা যেতে পারে সংগ্রহে। উৎপাদকদের দাবি, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে যে ত্বক ক্যানসারের উৎপত্তি, তা কাটাতে সাহায্য করে নিকোটিনামাইড (একধরনের ভিটামিন বি থ্রি) যুক্ত ক্যাপসুলগুলো। যার সফলতা ২৩ ভাগ পর্যন্ত। এমনকি পুরো দেহকে ইউভিএ এবং ইউভির মতো ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত করে ক্যাপসুলগুলো। কিন্তু আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ বলছে ভিন্ন কথা। ক্যাপসুলগুলোকে ‘ফলস সেন্স অব সিকিউরিটি’ বলে আখ্যায়িত করে ভোক্তাদের সতর্ক করার চেষ্টাও করছে প্রতিষ্ঠানটি। এফডিএ বলেছে, ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট পিল কখনোই ত্বকের সানবার্ন রুখতে পারে না। এমনকি ত্বককে ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে এগুলো কতটুকু কার্যকর, তা নিয়েও সন্দেহ থেকেই যায়।

পোশাকে প্রতিরক্ষা
এসপিএফের মতো ইউপিএফ এখন ট্রেন্ডে দারুণ ইন। ইউপিএফ অর্থাৎ আলট্রাভায়োলেট প্রোটেকশন ফ্যাক্টর। পোশাকে বিল্ট ইন সান প্রোটেকশন হিসেবে ইউপিএফ ব্যবহৃত হচ্ছে অহরহ। ফলে সান সেফ পোশাকগুলো পরে নিলেই চলবে। আলাদা করে সানস্ক্রিন মাখার হ্যাপা থাকবে না। সাধারণত ১৫ থেকে ৫০ ইউপিএফ যুক্ত পোশাক মিলে যায় বাজারে। এগুলোতে আলাদা করে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যা সূর্যরশ্মিকে ত্বক পর্যন্ত পৌঁছাতে দেয় না। অ্যাথলেজার ব্র্যান্ড অ্যাথলেটা ছাড়াও প্যাটাগনিয়ার মতো আউটডোর ক্লদিং ব্র্যান্ডগুলো সান সেফ স্টাইল পোশাক তৈরি করছে সূর্য থেকে সুরক্ষার জন্য।

সানস্ক্রিন কেনার সময়
বাজারে হরেক রকম ফর্মুলা আর এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিনের স্তূপ থেকে নিজের পছন্দসই এবং প্রয়োজনীয়টা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সামান্য কৌশলী হওয়া চাই। অনেকেরই হয়তো জানা, সানস্ক্রিন মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে- ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল।
ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনে উপাদান হিসেবে থাকে অ্যাকটিভ মিনারেল। যেমন টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড ও জিঙ্ক অক্সাইড।

এগুলো সূর্যের ক্ষতিকর ইউভিএ রশ্মিকে ত্বক পর্যন্ত পৌঁছাতে দেয় না। তার আগেই একে প্রতিফলিত করে, বিক্ষিপ্ত করে দেয়।
অন্যদিকে কেমিক্যাল সানস্ক্রিনে থাকে অক্সিবেনজোন, অক্টিনোক্সেট, অক্টোস্যালেট, অ্যাবোনেনজোনের মতো উপাদান। এগুলো কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ত্বকের সংস্পর্শে আসা ইউভিএ রশ্মিকে তাপে পরিণত করে এবং তা ত্বকে বসতে দেয় না; বরং চারপাশে ছড়িয়ে দেয়। তবে এ ধরনের সানস্ক্রিনের সমস্যা হচ্ছে, ত্বকে এর থেকে যে তাপ তৈরি হয়, তা পিগমেন্টেশন আর রোজাশিয়ার মতো সমস্যা তৈরি করে। সুস্থ সুন্দর ত্বকের জন্য যার কোনোটাই কাম্য নয়। তাই সানস্ক্রিন কেনার সময় বোতল বা টিউবটা উল্টে নিয়ে এর উপাদান তালিকায় চোখ বুলিয়ে নিন। পরামর্শ থাকবে টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড অথবা জিঙ্ক অক্সাইডযুক্ত সানস্ক্রিন কেনার।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: নিকি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top