skip to Main Content

ফিচার I সেকালের প্রসাধনী

এখনকার সৌন্দর্যপণ্য থেকে একেবারেই আলাদা ছিল প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রসাধনী। অকৃত্রিম, প্রাকৃতিক, এমনকি পশুর বর্জ্যও ব্যবহৃত হতো তখনকার রূপচর্চায়

প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বাক্যটি হলো ‘প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি’। কিন্তু হাজার বছর আগে যখন প্রক্রিয়াজাত কৃত্রিম প্রসাধনী তৈরি হয়নি, তখন প্রাকৃতিক উপাদানই ছিল সৌন্দর্যচর্চার মূল উপকরণ।
বর্তমানে সৌন্দর্যচর্চায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নানা প্রসাধনী। আবার এর ব্যবহারেও আসছে নতুন সব কৌশল।
পার্টি বা বিয়েবাড়ির সাজসজ্জায় হেয়ারস্টাইল টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত একটি প্রসাধনী হচ্ছে সুপার হোল্ড হেয়ার জেল। প্রাচীনকালে এমন উপকরণ তৈরি করা হতো পশুর চর্বি থেকে। তিন হাজার বছর আগে মিসরীয়রা ব্যবহার করতো এটি। সে সময় তারা সুগন্ধিও ব্যবহার করতো। যা তৈরি হতো মধু, ওয়াইন ও ফুলের নির্যাস থেকে। ওষুধ হিসেবেও এসব ব্যবহৃত হতো।
প্রাচীনকালেও চুল পড়া বা টাক থেকে মুক্তির উপায় খুঁজেছে মানুষ। প্রাচীন গ্রিসে মল, মূত্র ও ঋতুস্রাবের রক্ত দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তা মাথায় ব্যবহার করা হতো দ্রুত চুল গজানোর জন্য।
ত্বক সজীব ও প্রাণবন্ত করতে রোমের নারীরা কুমিরের মল ও কাদার মিশ্রণ গরম করে গায়ে মাখত। এরপর তা রোদে শুকিয়ে নিতো।
চুল কাটা বা অপ্রয়োজনীয় চুল থেকে মুক্তি পেতে প্রাচীনকালে মানুষ পিউমিস ব্যবহার করতো। এ পাথর ঘষে তারা চুলের সৌন্দর্য বাড়াতো।
চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আরবের নারীরা তাদের চুল উটের মূত্রে ভিজিয়ে রাখত। এতে নাকি উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যও ভালো থাকতো।
তাং রাজবংশের লোকেদের মাঝে সৌন্দর্যের ধারণা ছিল কিছুটা ভিন্ন। তারা মনে করতো যে মেয়ের পা যত ছোট তারা তত সুন্দর। এ জন্য সে সময় ৪ থেকে ৭ বছর বয়সের মেয়েদের বিশেষ ধরনের জুতা পরানো হতো। এতে তাং বংশের মেয়েদের পা ছোট থাকতো।
টুডর রাজবংশের নারীরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে একধরনের বিষাক্ত মিশ্রণ ব্যবহার করতেন। তারা ভিনেগার ও সাদা সিসা দিয়ে মিশ্রণটি তৈরি করতেন। সে সময় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের খাবারে তা মেশানো হতো।
রানি এলিজাবেথের সময় চুলের রঙ লাল করতে খনিজ উপাদানে তৈরি মিশ্রণ জনপ্রিয় ছিল। সে সময় সিসা, গন্ধক, কলিচুন ও পানি দিয়ে তৈরি মিশ্রণটি সোনালি রঙের চুলে লালচে কিংবা তামাটে রঙে পাল্টে দিতো। মিশ্রণটি আবার বমি বমি ভাব, নাক দিয়ে রক্ত পড়া এবং মাথাব্যথার ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হতো।
লিপস্টিক নারীর সৌন্দর্যচর্চায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রসাধনী। রানি এলিজাবেথের সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া মিষ্টিকুমড়ার ভেতরের পোকা পিষে এটি তৈরি করা হতো।
রঙিন চুল বর্তমানে জনপ্রিয় একটি ট্রেন্ড। শত শত বছর আগেও এই ট্রেন্ড ছিল, শুনে অবাক হতে পারেন অনেকেই। মধ্যযুগে ভেনিসের নারীরা তাদের চুলের রঙ পাল্টাতো। সে সময় প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহার করা হতো সিংহের মূত্র। চুলে তা লাগিয়ে রোদে শুকালেই পাল্টে যেত চুলের রঙ।

 জাহিদুল হক পাভেল
মডেল: আফরোজ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top