skip to Main Content

ফিচার I স্যালাডিয়া!

বাঙালির স্যালাড মূল খাবারের অনুষঙ্গ। কিন্তু পাশ্চাত্যে এবং দূরপ্রাচ্যে এটি ভোজনের বিশেষ এক পদ। এমনকি প্রাতরাশও। স্যালাডের খানাতল্লাশি চালিয়েছেন সামীউর রহমান

ইউক্লিড আর পিথাগোরাসের উপপাদ্য পড়ে মনে হতে পারে, পৃথিবীর যাবতীয় রসকষহীন ব্যাপারগুলো গ্রিকরাই বহুকাল আগে আবিষ্কার করে ছাত্রজীবনকে কঠিন করে তুলেছে। সে জাতির তৈরি স্যালাড চেখে দেখলে ভেঙে যাবে ভুলটা। এটা তো তাদেরই আবিষ্কার!
গ্রিক স্যালাড হিসেবে পরিচিত খাবারটি স্থানীয়ভাবে পরিচিত গ্রামীণ স্যালাড বা গ্রীষ্মকালীন স্যালাড হিসেবে। চাক চাক করে কাটা টমেটো, শসা, ক্যাপসিকাম আর লেটুস পাতার উপর গ্রিক পনির এবং ওরিগানো ছিটিয়ে দিয়ে মাখানো হয় জলপাই তেলে। এটি ছিল গ্রিক কৃষকদের সকালের নাশতা বা দুপুরের খাবার। ভূমধ্যসাগরীয় খাবার পরিবেশন করা হয়, এমন রেস্তোরাঁয় প্রারম্ভিক পদ বা দুপুরের খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় খাদ্য ‘গ্রিক স্যালাড’, অনেক জায়গায় গ্রিক ঘরানার পনিরের বদলে ব্যবহৃত হয় স্থানীয় পনির। স্থানভেদে উপকরণে কিছুটা অদলবদল হলেও জলপাই তেলের ড্রেসিংটা থাকে অপরিবর্তিত।
সিজার স্যালাডটা মোটেও জুলিয়াস সিজারের টেবিল থেকে আসেনি, এসেছে সিজার কার্দিনির রেস্তোরাঁ থেকে। ইতালি থেকে অল্প বয়সেই পরিবারের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছিলেন কার্দিনি, খাবারের ব্যবসায় হাতেখড়ি পারিবারিক রেস্তোরাঁয়। লস অ্যাঞ্জেলেসে তার রেস্তোরাঁয় খেতে আসতেন হলিউডের অনেক তারকাই। তাদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এখানকার বিশেষ একটি স্যালাড, যেটা সিজার কার্দিনি বিশেষ একটা কায়দায় সব উপকরণ নেড়েচেড়ে পরিবেশন করতেন। সেটাই পরিচিত হয়ে ওঠে সিজার স্যালাড নামে। লেটুস পাতা, রুটির ভাজা টুকরো, লেবুর রস, জলপাই তেল, সেদ্ধ ডিম, রসুন কুচি, সর্ষে বাটা, পারমিজান পনির, গোলমরিচের গুঁড়া, উস্টারশায়ার সস—সব মিশিয়ে বিশেষ কায়দায় গ্রাহকদের সামনেই নেড়ে নেড়ে সব মিশিয়ে দিতেন বলেই সিজারের নামে পরিচিতি পায় এই স্যালাড। তার মেয়ে একটি পত্রিকায় জানিয়েছিলেন, ১৯২৪ সালের ৪ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের রসদপত্রের সরবরাহে ঘাটতি পড়েছিল। তখন ভাঁড়ারে যা আছে তাই দিয়েই চটজলদি কিছু একটা বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকেই নাকি সিজার স্যালাডের উৎপত্তি! তবে কার্দিনির ভাই অ্যালেক্স দাবি করেন, এই রেসিপি তাদের ঠাকুরদার কাছ থেকে পাওয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, রকওয়েল বিমানঘাঁটির একদল বিমানসেনা সিজার পরিবারের পানশালা ও রেস্তোরাঁয় এসে সারা রাত অনেক মৌজমাস্তির পর সকালের নাশতা চাইলে তখন তড়িঘড়ি করে বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই স্যালাড, যেটা পরবর্তীকালে পরিচিতি পায় ‘এভিয়েটর’স স্যালাড’ নামে।
নিউইয়র্কের ওয়ালডর্ফ-অ্যাস্টোরিয়া হোটেলের হেঁশেলে জন্ম ওয়ালডর্ফ স্যালাডের। সেন্ট মেরির শিশু হাসপাতালের তহবিল সংগ্রহের নাচের অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের জন্য বিশেষ একটা পদ বানাতে চেয়েছিলেন হোটেলের প্রধান খানসামা অস্কার স্তিচিক্রি। তার হাতেই আখরোট, আপেল, আঙুরকে মেয়নেজ মাখিয়ে হালকা সেলেরি পাতার কুচি ছড়ানো এই স্যালাডের জন্ম। এটি পরিবেশন করা হয় ঠান্ডা করে। স্তিচিক্রি চেয়েছিলেন অ্যাপেটাইজার বা হালকা খাবার হিসেবে একটা পদ রাখতে, যেটা নাচের ফাঁকে অতিথিরা উপভোগ করবেন। শুধু এটাই নয়, অনেক রকম স্যালাডে কিংবা বার্গারে ব্যবহৃত ‘থাউজেন্ড আইল্যান্ড ড্রেসিং’ও তারই আবিষ্কার।
উৎসবে পার্বণে রুশদের টেবিলে ‘অলিভার স্যালাড’ থাকবেই, অনেক জায়গাতে যেটা পরিচিত রাশিয়ান স্যালাড নামেও। ১৮৬০-এর দশকে মস্কোর এক অভিজাত হোটেল ছিল হার্মিটেজ। সেখানকারই পাচক লুসিয়েন অলিভার যে স্যালাডটা পরিবেশন করতেন, সেটাই পরিচিতি পায় অলিভার স্যালাড হিসেবে। পরে রুশ রসনায় সেই স্যালাড এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে হারিয়ে যায় অলিভারের নামটাই। চৌকো করে কাটা সেদ্ধ আলু, সেদ্ধ ডিম, সেদ্ধ মুরগির মাংস অথবা সসেজ, আচার দেওয়া শসা, মটরশুঁটি, সেলেরি, পেঁয়াজ, আপেল—সবকিছু সর্ষে বাটা, মেয়নেজ, গোলমরিচগুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে পরিবেশন করতেন অলিভার। কোন উপকরণ কী অনুপাতে ব্যবহার—সবকিছুই গোপনে করতেন অলিভার। একদিন তার অনুপস্থিতিতে হার্মিটেজের আরেক কর্মী ইভানভ ঢুকে যান অলিভারের হেঁশেলে। উপকরণগুলো দেখে একটা আন্দাজ নিয়ে হার্মিটেজের চাকরি ছেড়ে মস্কো হোটেলে যোগ দেন ইভানভ, সেখানেই একই উপকরণ দিয়ে বানান ‘ক্যাপিটাল স্যালাড’। যদিও লোকে খেয়ে বলে, ঠিক অলিভারের মতো হয়নি, তাই নাম হয়ে যায় ‘কিছু একটা নেই’! অলিভারের স্যালাডের মূল ওস্তাদিটা ছিল ড্রেসিংয়ে। বলা হয়, হাঁসের কলিজা, ক্যাভিয়ার, বাছুরের জিভ, নানান ভেষজ এবং চিংড়ির খোসার গুঁড়াসহ অনেক কিছুই মিশিয়ে ড্রেসিংটা বানাতেন অলিভার। তার হাতে বানানো স্যালাডটা ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের আরও অনেক দেশেই। চেক প্রজাতন্ত্র, রুমানিয়া, পোল্যান্ডসহ অনেক দেশেই আছে রুশ স্যালাডের নিজস্ব সংস্করণ।
এ তো গেল ভিনদেশি সব স্যালাডের কাহিনি। এবারে খাঁটি দেশীয় কিছু স্যালাডের গল্প বলা যাক। মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পের কাবাবের দোকানগুলোতে কাঁচা পেঁপে, শসা, পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচের সঙ্গে তেঁতুলের টক মাখানো স্যালাডটা হয়তো মুখে লেগে আছে অনেকেরই। স্টার কাবাবের সর্ষে বাটা, টক দইয়ে মাখা পেঁয়াজ মরিচ আর শসার স্যালাডও জিভে আনে জল!

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top