skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I গমের গুণ

এই শস্যদানায় আছে অফুরান পুষ্টি। চারা, এমনকি পাতায়ও। বিচিত্র রোগের দাওয়াই

দশ হাজার বছর আগেও গম ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বুনো আগাছা। সেখান থেকে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে শস্যটি। তুচ্ছ আগাছা থেকে হয়ে ওঠে জরুরি তৃণ। এটি মানুষের খাবারের বৃহৎ অংশের জোগান দেয়। বর্তমানে ভূপৃষ্ঠের সোয়া দুই লাখ বর্গকিলোমিটার জুড়ে গমের চাষ হয়। তৃণটির এমন গুরুত্বের পেছনের মূল কারণ এর পুষ্টিগুণ। এর প্রতি ১০০ গ্রামে আছে ৩২৭ কিলো ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৭১.১৮ গ্রাম, সুগার ০.৪১ গ্রাম, আঁশ ১২.২ গ্রাম, ফ্যাট ১.৫৪ গ্রাম, প্রোটিন ১২.৬১ গ্রাম, থায়ামিন ০.৩৮৩ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.১১৫ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ৫.৪৬৪ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ০.৯৫৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.৩ মিলিগ্রাম, ফোলেট ৩৮ মাইক্রোগ্রাম, কোলিন ৩১.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ১.০১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১.৯ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩.১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১২৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৮৮ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ৩.৯৮৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৬৩ মিলিগ্রাম। সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ২.৬৫ মিলিগ্রাম, পানি ১৩.১ গ্রাম এবং সেলেনিয়াম ৭০.৭ মাইক্রোগ্রাম। গমের দানার ব্যবচ্ছেদে তিনটি অংশ পাওয়া যায়। তুষ, অ্যান্ডোস্পার্ম ও জার্ম।
তুষ মূলত গমের বাইরের অংশ। এতে আঁশ, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। মাঝের অংশকে অ্যান্ডোস্পার্ম বলে; যা কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর। একেবারে ভেতরে থাকে ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন। গমের এসব উপাদান শরীরের নানা ধরনের বালাই সারাইয়ে কাজ করে।
গম সাধারণত পিষে খাওয়া হয়। এ থেকে তৈরি আটা দিয়ে রুটি হয়, যা বেশ উপাদেয় খাদ্য। খোসাসহ গম পিষলে আটার রং লালচে হয়, অন্যথায় সাদা। উভয় প্রকার আটার পুষ্টি ও খাদ্যগুণ আলাদা। লালটি বেশি উপকারী। এতে অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ থাকে, যা কোলেস্টেরল কমায়। ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে চিনি ও শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষতিকর ফ্যাট হটায়। ক্ষুধা প্রশমন করে ওজন কমায়। ফলে স্থূল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আটা স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে। এতে লিগনান নামের উপাদান আছে, যা ক্যানসার প্রতিরোধী। লাল আটার তুলনায় সাদাটির পুষ্টিমান কিছুটা কম।
গমের আটা খাওয়া ছাড়াও পান করা যেতে পারে এ শস্যের চারার রস। ফসলি মাঠ ছেড়ে তা সরাসরি উঠে এসেছে মানুষের খাদ্যতালিকায়। পশ্চিমা বিশ্ব এর হদিস পায় ১৯৩০ সালে। তবে তা পানের ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। সে সময়ের মিসর ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় অভিজাতরা গমের চারার রস পান করত।
গমের চারা গজানোর পর তা দুভাগ হওয়ার শুরুতেই কেটে আনতে হয়। পিষে রস তৈরি করে খালি পেটে দৈনিক এক থেকে দুই চামচ পান করা স্বাস্থ্যকর। এই রসে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি, ই ও কে বিদ্যমান। আছে প্রোটিন এবং ১৭ রকমের অ্যামাইনো এসিড। পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাংগানিজ ও সেলেনিয়ামও পাওয়া যায়। রসের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই বিশুদ্ধ ক্লোরোফিল। সব মিলিয়ে গমের চারা থেকে তৈরি এ তরল পান করলে শরীরের বিভিন্ন অসুখ সারে। দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রক্ত পড়ার সমস্যা দূর করে। কোষ্ঠবদ্ধতা, বদহজম, বমি ভাব, অম্বল, বুক ও গলা জ্বালা, পাকস্থলীতে ঘা, অন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণসহ পেটে কৃমির উৎপাত থেকে রেহাই দেয়। হজমশক্তি বাড়ায়। ঠান্ডা লাগা এবং বুকে সর্দি বসে যাওয়া রোধ করে। হাঁপানির কবল থেকেও মুক্তি দিতে পারে গমের কচি চারার রস। যৌন হরমোনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে। এতে লিভার পরিশুদ্ধকারী উপাদান আছে। গমের কচি চারার রসের সবচেয়ে উপকারী উপাদান হচ্ছে ক্লোরোফিল। বেশি পরিমাণে উপস্থিত থাকায় এর অপর নাম হয়েছে রক্ত উৎপাদক। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য পথ্য হতে পারে এই রস। এর ক্লোরোফিল মানুষের টিস্যুতে সরাসরি দ্রবীভূত হয়ে তা সতেজ করে তোলে। এ ছাড়া উপাদানটি দেহকোষের র‌্যাডিকেল ধ্বংস করে। কচি গমপাতা কপার সমৃদ্ধ প্রোটিনের আধার; যা বার্ধক্যজনিত রোগ-ব্যাধি রুখে দিতে পারে। ত্বকের নানা প্রকার সংক্রমণ, আলসার, চামড়ার পুনর্গঠন ইত্যাদি চিকিৎসায় ক্লোরোফিল ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ শরীরের ভেতর ও বাইরের ক্ষতিকর জীবাণু নির্মূল করে। দেহে জমে থাকা ওষুধের ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশও দূরীভূত করে ক্লোরোফিল। এ ছাড়া সাইনোসাইটিস চিকিৎসায় বিশেষভাবে কার্যকর।
মানুষের অন্তঃকর্ণ ও বহিঃকর্ণের চিকিৎসাও সম্ভব গমের কচি চারার রসের মাধ্যমে। অনেক সময় ঠান্ডা লেগে কানে ব্যথা কিংবা ভেতরে ঘা ও ফোড়া হয়। ওসব ফেটে পুঁজ ও রক্ত পড়ে। এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীকে গমের চারার রস পান করানোর পাশাপাশি আক্রান্ত স্থানে লাগানো যেতে পারে। সেরে ওঠার সম্ভাবনা আছে। চর্মরোগও প্রতিকার করে এই রস। সাধারণত শরীরের রক্ত দূষিত হলে ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন একজিমা, ফুসকুড়ি ইত্যাদি। গমের চারার রস পান করলে রক্ত পরিশোধিত হয়। কিডনিও পরিষ্কার থাকে। এ ছাড়া হৃদপিন্ড ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য তা উৎকৃষ্ট পথ্য হতে পারে। হাড়ের যত্নেও কাজে আসে। মুখের পাইওরিয়ার সমস্যা দূর করতে এই রস লাগিয়ে রাখা যেতে পারে ক্ষতস্থানে। আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসাতেও কার্যকর। এই তরলে তুলা ভিজিয়ে আক্রান্ত অংশে প্রয়োগ করলে সপ্তাহান্তেই উপকার পাওয়া যাবে।
গমের চারার রস পান করলে শরীরে শক্তি বাড়ে। কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এতে থাকা অক্সিজেন শরীরে ঢুকে মেজাজ ফুরফুরে করে। থাইরয়েডের সমস্যাও সমাধান হয় গমের চারার রস পানে। রূপচর্চায়ও কম যায় না। যৌবন ধরে রাখতে এই রস উপকারী। নিয়মিত পান করলে চুল ঘন কালো হওয়ার পাশাপাশি সিল্কি হয়। গমের চারা বাটা মেহেদির মতো মাথার ত্বকে মাখলে খুশকি দূর হয়। বিষক্রিয়ানাশক হিসেবেও এর কদর আছে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top