skip to Main Content
food-benifit-ex.-kismis-into

ফুড বেনিফিট I কিশমিশ কিসসা

স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্য অটুট রাখতে এর জুড়ি নেই। শক্তিসঞ্চারেও তুলনাহীন। নানাভাবে এটি গ্রহণ করা যায়

শুকনো আঙুরকে বলা হয় কিশমিশ। তবে রঙভেদে কিশমিশের নামও ভিন্ন। সোনালি রঙের শুকনো আঙুরকে বলা হয় সুলতানা। এটি চাষ হয় তুরস্কে। লালচে কালো রঙের আঙুর কারেন্ট নামে পরিচিত। এর চাষ হয় দক্ষিণ গ্রিসের জান্তে দ্বীপে।
কিশমিশের রয়েছে হরেক রকমের পুষ্টিগুণ। কিশমিশের পানির মধ্যে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ করার আশ্চর্য ক্ষমতা। পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় প্রতি ১০০ গ্রামে কার্বোহাইড্রেট ৭৯.১৮, চিনি ৫৯.১৯, ফ্যাট ০.৪৬, প্রোটিন ৩.০৭, ডায়াটারি ফাইবার ৩.৭ গ্রাম। এ ছাড়া ভিটামিন বি৬ ০.১৭, ভিটামিন সি ২.৩, ভিটামিন ই ০.১২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম। মিনারেলের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৫০, আয়রন ১.৮৮, ম্যাগনেসিয়াম ৩২, পটাশিয়াম ৭৪৯, সোডিয়াম ১১, জিংক ০.২২ মিলিগ্রাম।
এতে রয়েছে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ। যা দেহের দুর্বলতা দূর করে। এর ডায়াটারি ফাইবার দেহের পরিপাক ক্রিয়া সঠিক রেখে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খাবারের আঁশ কলোরেকটাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এক চা চামচ কিশমিশে এক গ্রাম আঁশ পাওয়া যায়। মুখের ক্ষত ও সংক্রমণ সারাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। কিশমিশে আছে অলিয়ানোলিক অ্যাসিড। যা মুখের ভেতর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাধা দেয়। এ ছাড়া এতে থাকা বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস অস্টিওপোরোসিস রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম হাড় মজবুত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। তা ছাড়া এই খাবারে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (প্রদাহরোধী) উপাদান। যেগুলো বিভিন্ন ক্ষত থেকে সংক্রমণ হওয়া রোধ করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ক্ষতিকর র‌্যাডিক্যাল থেকে মুক্ত রাখে। আরও রয়েছে ক্যাটেচিন। এটি হলো পলিফেনলিক অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যানসার কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা দেয়।
দেহ রক্তশূন্য হলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে অবসাদ, ক্লান্তি ভর করে শরীরে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। কিশমিশে থাকা লৌহ উপাদান সরাসরি এনিমিয়া চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর ভিটামিন বি’র বিভিন্ন উপাদান নতুন রক্ত গঠনে সাহায্য করে। এতে থাকা উচ্চ মাত্রার কপার লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। কিশমিশের ট্যানিন, ফাইবার, ফেনলিক অ্যাসিড, পলিফেনল, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্তচাপ কমিয়ে আনে। হৃদ্পি- সুস্থ রাখে।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া কমায়। ফেনলিক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উপাদানগুলো জীবাণুনাশক পদার্থ, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের জন্য পরিচিত। এগুলোর বেশির ভাগই কিশমিশে বিদ্যমান। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সঙ্গে যুদ্ধ করে।
চোখের সমস্যা প্রতিরোধেও কিশমিশের রয়েছে জাদুকরী ক্ষমতা। কারণ, এতে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পলিফেনলিক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। এটি ফ্রি র‌্যাডিক্যালের মাধ্যমে ক্ষতি হওয়া চোখ রক্ষা করে। বয়স সম্পর্কিত ক্ষীণদৃষ্টি, ছানিতে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়।
অ্যাসিডোসিস হলো রক্তের অম্লতা দূরীকরণের একটি পর্যায়। যা টক্সিসিটি নামে পরিচিত। এর প্রভাবে দেহের চামড়ার রোগ, অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি, গেঁটে বাত, মূত্রাশয়ে পাথর হতে পারে। কিশমিশে রয়েছে যথেষ্ট ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম, যা অ্যাসিডোসিসের জন্য একটি প্রাকৃতিক দাওয়াই। উল্লেখ্য, দুটিই অ্যান্টাসিডের সাধারণ উপাদান।
কিশমিশ হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও পলিফেনলের প্রাকৃতিক উৎস। যেগুলোর মধ্যে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী উপাদান রয়েছে। জিনে ভেজানো সোনালি রঙের কিশমিশ অনেকের কাছে জনপ্রিয় একটি দাওয়াই। কারণ, এটি দীর্ঘদিনের ব্যথা, বিশেষ করে বাত ব্যথা দূর করে।
পুষ্টি উপাদান বাড়াতেও এর ভূমিকা অসামান্য। কিশমিশে ভিটামিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, সিলেনিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান রয়েছে। এগুলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
রাতভর ভিজিয়ে রাখা কিশমিশ বা কিশমিশের পানি লিভারকে পরিষ্কার রাখে। এতে রয়েছে বায়োফ্লেভনয়েডস। যাতে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের সক্রিয়তা থেকে স্বাস্থ্যকে সুরক্ষা দেয়। মূলত কিশমিশের পানি লিভারের সুস্থতার উন্নয়ন ঘটায়। রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্যচর্চায় এটি গভীরভাবে কাজ করে। লালচে কালো রঙের কিশমিশ ত্বক ও চুলচর্চায় উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে। রাখে টানটান ও তারুণ্যময়।
সোরিয়াসিস (প্রদাহজনিত রোগ) এবং ব্রণের জটিল অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি দিতে এটি সাহায্য করে।
নিখুঁত ত্বক সবাই চান। তবে বিভিন্ন টক্সিন থেকে রক্তের সুরক্ষা কঠিন। এর ফলে ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক। সৃষ্টি হয় মলিন ও ব্রণযুক্ত ত্বক। এ ক্ষেত্রে কালো কিশমিশ প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে কাজ করে। লিভার ও কিডনিতে খুব দ্রুত কার্যকর। এ ছাড়া ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যাল সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়। এই প্রক্রিয়া ত্বক পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।
কালো কিশমিশে আছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। এগুলো সূর্যরশ্মি, ধুলাবালুজনিত ক্ষতি সুরক্ষা দেয়। এ ছাড়া ত্বককোষের ডি অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) বিভাজনকে প্রতিরোধ করতে পারে। ফলে পেশির কার্যক্রম সঠিকভাবে চালিত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। দৈনন্দিন সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে কিশমিশ নিলে চুল ঘন ও উজ্জ্বল হয়। ভিটামিন সি ত্বককোষের ক্ষতি হওয়া প্রতিরোধ করে। কিশমিশের প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্যগুলো মাথার ত্বকের জ্বলুনি, খুশকির সমস্যা প্রতিরোধ করে। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, যা আমাদের দেহের জন্য জরুরি। এই উপাদান রক্তসংবহনতন্ত্র সুষ্ঠু রাখে। মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখতে দেহের সংবহনতন্ত্রের সুস্থতা গুরুত্বপূর্ণ। এতে চুল ঝরে পড়া কমে এবং আগা ফাটা রোধ হয়।
প্রতিদিন খাবারে কালো কিশমিশ রাখলে অকালে চুল পাকা রোধ হয়। চুলের রঙ স্বাভাবিক থাকে। এর উচ্চ মাত্রার আয়রন এবং ভিটামিন সি মিনারেল শোষণে কার্যকর। চুলের পুষ্টি জোগাতে এটি অত্যন্ত সহায়ক।
কিশমিশ বিভিন্ন খাবারে যোগ করা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে এটি পরিবেশন করা হয়। ব্রকোলি সালাদে এটি খাওয়া যায়। গাজর আর কিশমিশের সালাদও খুব জনপ্রিয় কোনো কোনো দেশে। সতেজ সবজির সঙ্গেও অনেকে কিশমিশ খেয়ে থাকেন। হালকা খাবার হিসেবে এর বেশ কদর রয়েছে। ঢাকনাযুক্ত চকলেটের কিশমিশ, দই-কিশমিশ ঝটপট শক্তিদায়ক খাবারের তালিকায় সেরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, এর পানি দেহে রক্তসঞ্চালন সঠিক রাখে। সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ দিন কিশমিশের পানি খেতে বলা হয়। তৈরি করাও খুব সহজ। প্রথমে ১৫০ গ্রাম কিশমিশ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর ২ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে পুরো রাত। পরদিন কিশমিশ ছেঁকে নিয়ে পানি হালকা গরম করতে হবে। তবে তা পান করার পরবর্তী ৩০ মিনিটের মধ্যে কিছুই খাওয়া যাবে না।

 রেন্টিনা চাকমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top